ব্যঞ্জনবর্ণ

ব্যঞ্জনবর্ণ হচ্ছে এমন কিছু বর্ণ যারা অন্য কোনো বর্ণের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে না।[1] বিশ্বের প্রতিটি ভাষায় এধরনের কিছু বর্ণ রয়েছে। বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা মোট ৩৯টি।

পরিচয়

যেসব বর্ণ উচ্চারিত হওয়ার সময় মুখগহ্বরের কোথাও না-কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হয় তাদের বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ।[2] ব্যঞ্জনবর্ণগুলো উচ্চারিত হতে অন্য বর্ণের সাহায্যের প্রয়োজন হয়; এরা অন্যান্য বর্ণের সাহায্যে (মূলতঃ স্বরবর্ণের) উচ্চারিত হয়ে থাকে।

বাংলা ভাষার ব্যঞ্জনবর্ণ

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন সংখ্যক ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। বাংলা ভাষায় মোট ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে; এগুলো হলঃ

ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি
ড়ঢ়য়

সংশোধক বর্ণ

সংশোধক
চিহ্নচিহ্নের নামকাজ
খণ্ড ত"ত" এর খণ্ড রূপ
অনুস্বার"ঙ" এর খণ্ড রূপ
বিসর্গ"হ্" এর আরেকটি রূপ, র এবং স বিলুপ্ত হয়ে বানানে বিসর্গ আসতে পারে, যেমন পুনর>পুনঃ, নমস> নমঃ
চন্দ্রবিন্দুস্বরের নাসিক্যবোধক চিহ্ন

শ্রেণিবিভাগ-

উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ গুলিকে সাধারণত ৪ ভাগে ভাগ করা হয়।

১) স্পর্শ বর্ণ ২) উষ্মবর্ণ ৩) অন্তঃস্থ বর্ণ ৪) অযোগবাহ বর্ণ/ আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ

১) স্পর্শ বর্ণ- ক থেকে ম পর্যন্ত ২৫ টি বর্ণ উচ্চারণের সময় জিভের কোনো না কোনো অংশের সঙ্গে কণ্ঠ,তালু,মূর্ধা,দন্ত,ওষ্ঠের কারোর না কারোর সাথে স্পর্শ ঘটে।তাই এদের স্পর্শ বর্ণ বলা হয়।

উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী এই ২৫ টি বর্ণকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়।প্রতিটি ভাগকে বলা হয় বর্গ।তাই এদের অপর নাম বর্গীয় বর্ণ।প্রতিটি বর্গে আছে ৫ টি করে বর্ণ, এদের মধ্যে প্রথম বর্ণের নাম দিয়ে প্রতিটি বর্গের নামকরণ করা হয়।যেমন - ক - বর্গ, চ - বর্গ, ট - বর্গ, ত-বর্গ, প- বর্গ।

২) উষ্মবর্ণ - উষ্ম শব্দের অর্থ গরম। উচ্চাারণের সময় বাগযন্ত্রের মধ্যে দিয়ে গরম বায়ু নির্গত হয় বলে শ,ষ,স,হ এই ৪টি বর্ণকে উষ্মবর্ণ বলে।

৩) অন্তস্থঃবর্ণ -অন্তস্থঃ শব্দটির অর্থ মাঝে অবস্থিত।য,র,ল,ব ৪টি বর্ণ স্পর্শবর্ণ ও উষ্মবর্ণের মাঝে অবস্থিত বলে এদের অন্তস্থঃ বর্ণ বলে। অন্তঃস্থ বর্ণে যে ব আছে তার উচ্চারণ উঅ৷ বন শব্দের ব-এর মতো নয়৷ বাংলাবর্ণমালা থেকে অন্তঃস্থ ব বিলুপ্ত হয়েছে আবার অন্তঃস্থ বর্ণ রূপে ব-কে দেখানো হয়েছে —এটা বর্গীয় ব সম্পর্কে ভুল তথ্যের উৎস ৷

৪) আশ্রয়স্থানভাগী বা অযোগবাহবর্ণ - \° ও ঃ এর নিজস্ব কোনো উচ্চারণ নেই এরা সবসময় এদের আগে যে বর্ণটি থাকে তাকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয় তাই এদের আশ্রয়স্থানভাগী বা অযোগবাহবর্ণ বলে।

উচ্চারণ রীতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ গুলিকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়।১) মহাপ্রাণবর্ণ ২) অল্পপ্রাণবর্ণ ৩) ঘোষবর্ণ ৪) অঘোষবর্ণ ৫) অনুনাসিক বা নাসিক্যবর্ণ

১) মহাপ্রাণবর্ণ- প্রাণ শব্দের অর্থ নিঃশ্বাস বায়ু, প্রতিটি বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ উচ্চারণের সময় হ জাতীয় নিঃশ্বাসবায়ু জোরে বেরিয়ে আসে। তাই এদের মহাপ্রাণবর্ণ বলে। যেমন খ -( ক+হ), ঘ- (গ+হ) ইত্যাদি।

২) অল্পপ্রাণবর্ণ - প্রতিটি বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণগুলি উচ্চারণের সময় হ জাতীয় নিঃশ্বাস বায়ু বেরিয়ে আসে না তাই এদের অল্পপ্রাণবর্ণ বলে। যেমন - ক, গ ইত্যাদি।

৩) ঘোষবর্ণ- ঘোষ শব্দের অর্থ গাম্ভীর্য। প্রতি বর্গের তৃতীয়, চতুর্থবর্ণের উচ্চারণ গাম্ভীর্যপূর্ণ তাই এদের ঘোষবর্ণ বলে।যেমন-গ,ঘ,ইত্যাদি।

৪) অঘোষবর্ণ - প্রতিটি বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণের উচ্চারণ মৃদু ও গাম্ভীর্যহীন তাই এদের অঘোষবর্ণ বলা হয়।যেমন- ক,খ ইত্যাদি।

৫) অনুনাসিক বা নাসিক্যবর্ণ- প্রতিবর্গের শেষবর্ণ এবং \° এর উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসবায়ু আংশিকভাবে নাসিকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এর ফলে উচ্চারণ কিছুটা নাকিসুরের হয়।তাই এদের অনুনাসিক বা নাসিক্যবর্ণ বলে। যেমন-ঙ,ঞ ইত্যাদি।

মাত্রা

ব্যঞ্জনবর্ণে মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয়। বাংলা বর্ণের আদিরূপ ব্রাহ্মী লিপিতে কোনো মাত্রা দৃষ্ট হয় না কিন্তু বর্তমানে বিকশিত বর্ণমালায় অধিকাংশ ব্যঞ্জনই মাত্রাযুক্ত। ব্যঞ্জনবর্ণগুলোর মধ্যে ২৫ টি পূর্ণমাত্রিক,৮ টি অর্ধমাত্রিক ও ৬ টি মাত্রাহীন বর্ণ রয়েছে।

পূর্ণমাত্রিক অর্ধমাত্রিক মাত্রাহীন
ক ঘ চ ছ জ ট ঠ ড ঢ ত দ ন ফ ব ভ ম য র ল ষ স হ ড় ঢ় য় খ গ ঝ ণ থ ধ প শ ঙ ঞ ৎ ং,ঃ ,ঁ

ইংরেজি ব্যঞ্জনবর্ণ

ইংরেজি ভাষায় বর্ণ মোট ২৬টি, এদের মধ্যে ব্যঞ্জনবর্ণ মোট ২১টি। এগুলো হলোঃ B C D F G H J K L M N P Q R S T V W X Y Z

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বর্ণ। স্নাতক বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি। ২০১০ সংস্করণ।
  2. বর্ণ। বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি (পাঠ্যবই)। অষ্টম শ্রেণী। ২০১৫ সংস্করণ।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.