ব্যজঁসোঁ
ব্যজঁসোঁ (ফরাসি : [bəzɑ̃ˈsɔ̃]) ফ্রান্সের বুর্গনিয়ে-ফ্রঁশ-কোঁতে রেজিওঁর দুব দেপার্তমঁর রাজধানী। শহরটি জুরা পর্বত ও সুইজারল্যান্ড সীমান্তের নিকটে পূর্ব ফ্রান্সে অবস্থিত। ব্যজঁসোঁতে বুর্গনিয়ে-ফ্রঁশ-কোঁতে রেজিওঁ কাউন্সিলের সদর দপ্তর অবস্থিত এবং এটি এই রেজিওঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি ফ্রান্সের ১৫টি যাজকীয় প্রাদেশিক আসনের একটি এবং ফরাসি সেনাবাহিনীর দুটি বিভাগের একটি। ২০১৭ সাল মোতাবেক এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ১১৫,৯৩৪ জন, যেখানে মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ছিল ২৫১,৭০০ জন। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেজিওঁ।
ব্যজঁসোঁ | |
---|---|
প্রেফ্যক্ত্যুর ও কম্যুন | |
পতাকা প্রতীক | |
নীতিবাক্য: প্লুত অ দিও ("যদি ঈশ্বর চান") বা ইউটিনাম | |
ব্যজঁসোঁ অবস্থান লুয়া ত্রুটি মডিউল:তথ্যছক_মানচিত্র এর 86 নং লাইনে: bad argument #1 to 'sqrt' (number expected, got nil)। | |
ব্যজঁসোঁ | |
স্থানাঙ্ক: ৪৭°১৪′২৪″ উত্তর ৬°১′১২″ পূর্ব | |
দেশ | ফ্রান্স |
নগরের পৌরসভা | ব্যজঁসোঁ |
ক্যান্টন | ব্যজঁসোঁ-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ |
আন্তঃগোষ্ঠী | গ্রঁ ব্যজঁসোঁ মেত্রোপোল |
সরকার | |
• মেয়র (২০২০-২০২৬) | অ্যান ভিনিয়ো (দ্য গ্রিন্স) |
আয়তন১ | ৬৫.০৫ বর্গকিমি (২৫.১২ বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা (২০১৬) | ১২২ বর্গকিমি (৪৭ বর্গমাইল) |
• মহানগর (২০১৬) | ১,৬৫২ বর্গকিমি (৬৩৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (Jan. 2017) | ১,১৫,৯৩৪ |
• ক্রম | ৩৪তম |
• জনঘনত্ব | ১,৮০০/বর্গকিমি (৪,৬০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা (২০১৬) | ১,৩৫,৩৪৯ |
• পৌর এলাকার জনঘনত্ব | ১,১০০/বর্গকিমি (২,৯০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর (২০১৬) | ২,৫১,২৯৩ |
• মহানগর জনঘনত্ব | ১৫০/বর্গকিমি (৩৯০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | সিইটি (ইউটিসি+০১:০০) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | সিইএসটি (ইউটিসি+০২:০০) |
আইএনএসইই/ডাক কোড | ২৫০৫৬ /২৫০০০ |
ওয়েবসাইট | http://www.besancon.fr/ |
১ ফ্রান্সের ভূমি রেজিস্টার তথ্য, যার ভেতর হ্রদ, পুকুর, হিমবাহ > ১ বর্গকি.মি.২(০.৩৮৬ বর্গ মাইল বা ২৪৭ একর) এবং নদীর মোহনা অন্তর্ভূক্ত নয়। |
ফ্রান্সের অন্যতম সবুজ এই শহরটি ইউরোপের মধ্যে উন্নত মানের জীবন যাপনকারী শহর বলে গণ্য।[1] শহরটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এর অদ্বিতীয় স্থাপত্যকর্মের জন্য ব্যজঁসোঁকে ১৯৮৬ সাল থেকে "শিল্পকলা ও ইতিহাসের শহর" বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এছাড়া প্রকৌশলী ভোবঁর নির্মিত দুর্গসমূহের জন্য ২০০৮ সাল থেকে শহরটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
ইতিহাস
প্রাচীন ইতিহাস
আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে ব্রোঞ্জ যুগে গোল উপজাতি দুব নদীর তীরে বসতি স্থাপন করে। খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দী থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত শহরটির ঠিক পূর্বে আল্পস পর্বতের অবস্থানের কারণে শহরটি সামরিক গুরুত্ব বহন করত, কারণ পর্বতটি প্রাকৃতিক বাধার সৃষ্টি করে।
জুলিয়াস সিজার তার গোল বিজয় সম্পর্কিত বর্ণনায় ভেসোন্তিও-কে (লাতিন ভাষায়) সেকুয়ানির বৃহত্তম শহর, ছোট গোলীয় উপজাতি হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এর চারপাশে কাঠের খুঁটার তৈরি বেড়ার কথা উল্লেখ করেন।
মধ্যযুগ
৮৪৩ সালে ভের্দ্যুঁ চুক্তি শার্লমাইনের সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করে দেয়। ব্যজঁসোঁ বুরগুন্ডির ডিউকশাসিত এলাকার অধীনস্থ লোতারাঁগিয়ার অংশ হয়। ১০৩৪ সাল থেকে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে শহরটি আর্চবিশপীয় অবস্থা ধারণ করে। ১১৫৭ সালে সম্রাট ফ্রেডরিক বারবারোসা ব্যজঁসোর ডায়েটের কর্তৃত্ব লাভ করেন। সেখানে কার্ডিনাল অরলান্দো বান্দিনেল্লি (পরবর্তী কালে পোপ তৃতীয় আলেকজান্ডার ও পোপ চতুর্থ আদ্রিয়ানের উপদেষ্টা) সম্রাটের কাছে প্রকাশ্যে বলেন যে রাজকীয় মর্যাদা কঠোর নয়, যার ফলে তাকে জার্মান যুবরাজদের ক্রোধের স্বীকার হতে হয়। ১১৮৪ সালে পবিত্র রোমান সম্রাটের অধীনে এটি সায়ত্বশাসিত শহরে পরিণত হয়।
আধুনিক ইউরোপ
১৮১৪ সালে অস্ট্রীয়রা শহরটিতে হানা দেয় এবং বোমা বর্ষণ করে। এছাড়া ১৮৭০-৭১ সালের ফ্রাঙ্কো-প্রুসীয় যুদ্ধে শহরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিরা সিটাডেল দখল করে নেয়। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত জার্মানরা একশর কাছাকাটি ফরাসি প্রতিরোধকারী যুদ্ধাদের হত্যা করে। ১৯৪২ সালে মিত্রপক্ষ রেলওয়ে কমপ্লেক্সে বোমা বর্ষণ করে এবং পরের বছর জার্মানরা চারদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রসর হওয়া প্রতিরোধ করে।
১৯৪০ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ব্যজঁসোঁ ইন্টার্নমেন্ট ক্যাম্প ও ফ্রন্টস্ট্যালাগ ১৪২-এর অবস্থান ছিল, যেখানে জার্মানরা ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী ৩-৪০০০ নারী ও শিশুদের আটকে রাখে। সেখানকার অবস্থা এতটাই কঠোর ছিল যে শতাধিক অন্তরীণ ব্যক্তি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া, আমাশয় ও হিমদংশনে মারা যায়।[2]
ভূগোল
ব্যজঁসো ফ্রান্সের উত্তর-পূর্ব কোণে দুব নদীর তীরে জ্যুরা পর্বতে পাদদেশে অবস্থিত। এটি রাজধানী শহর প্যারিস থেকে ৩২৫ কিলোমিটার (২০২ মাইল) পূর্বে, বুরগুন্ডির দিজোঁ থেকে ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) পূর্বে, সুইজারল্যান্ডের লোজান থেকে ১২৫ কিমি (৭৮ মা) উত্তর-পশ্চিমে ও বুর্গনিয়ে-ফঁশ-কোঁতের বেলফোর থেকে ১০০ কিমি (৬২ মা) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।
শিক্ষা
ব্যজঁসোঁতে ফ্রঁশ-কোঁতে বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ২০১৮ সাল মোতাবেক, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৪,০০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, তন্মধ্যে ৩,০০০ বিদেশি শিক্ষার্থী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম জৈবচিকিৎসা প্রযুক্তি শাখার জন্য বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট আইএসআইএফসি খোলা হয়।[3] এই শহরে অতিক্ষুদ্র প্রযুক্তি ও বলবিদ্যা শাখার জন্য প্রুযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একোল নাশিওনাল সুপেরিওর দ্য মেকানিক অ দে মাইক্রোতেকনিক (ইএনসিএমএম) অবস্থিত। এছাড়া এখানে অস্থানীয়দের জন্য দশটি ভাষা (ফরাসি, আরবি, চীনা, ইংরেজি, জার্মান, ইতালীয়, জাপানি, পর্তুগিজ, রুশ ও স্পেনীয়) এবং অনুরোধের ভিত্তিতে অন্য কোন পরিচিত ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড লিঙ্গুইস্টিকস অবস্থিত। এই সেন্টারে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪,০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। শহরটি ফ্রান্সের অন্যতম সুন্দর শিল্পকলা সমৃদ্ধ শহর হিসেবে সুখ্যাত।
তথ্যসূত্র
- Considering surface green spaces per inhabitant, Numbers available on the encyclopedia site Quid, at the bottom of the page ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে
- শেকসপিয়ার, নিকোলাস (২০১৩)। Priscilla: The Hidden Life of an Englishwoman in Wartime France। হারভিল সেকার।
- "Institut Supérieur d'Ingénieurs de Franche-Comté (Besançon) web site"। ১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০।
বহিঃসংযোগ
- প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট (ফরাসি ভাষায়)