বৈশ্বিক শহর

বৈশ্বিক শহর অথবা বিশ্ব শহর অথবা কখনো কখনো আলফা শহর অথবা ওয়ার্ল্ড সেন্টার, হচ্ছে এমন একটি শহর যাকে সাধারণ অর্থে বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধারনাটি এসেছে ভূগোল, নগর অধ্যয়ন এবং এটা ধরে নিয়ে যে বিশ্বায়ন হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থবাণিজ্য কার্যক্রমে অবদান রাখার উপর ভিত্তি করে চিহ্নিত করা কতগুলো বিশালভাবে প্রস্তুতকৃত, বিশেষায়িত এবং সুসংগঠিত ভৌগোলিক অঞ্চল

বৈশ্বিক শহরের সবচেয়ে জটিল ব্যখ্যাটি হচ্ছে যে শহরকে গঠনকারী উপাদান সমূহের বিশ্ব আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় প্রভাব থাকতে হবে।[1] সমাজবিজ্ঞানী সাস্কিয়া সাসসেন ১৯৯১ সালে তার দা গ্লোবাল সিটিঃ নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও;-এ প্রথম মহানগরী শব্দটির বিরোধিতা করে বৈশ্বিক শহর শব্দটি জনপ্রিয় করে তোলেন। [2] যদিও ১৮৮৬ সালের মে মাসে লিভারপুল শহর এর বর্ণনা করতে গিয়ে দা ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ নামক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে অসংখ্য বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ে গঠিত শহর সমূহের ব্যখ্যায় বিশ্বশহর শব্দটির ব্যবহার পাওয়া যায়।[3] পরে ১৯১৫ সালে প্যাট্রিক গেড্ডেসবিশ্ব শহর শব্দটির ব্যবহার করেন।[4] সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য বিষয়কে কম গুরুত্ব দিয়ে শব্দটিকে একটি শহরের প্রভাব এবং 'অর্থনৈতিক রাজধানী' এর সমার্থক ধরা হয়।[5][6]

ক্ষেত্র

বৈশ্বিক শহরের তকমাটিকে লাভজনক এবং আকাঙ্ক্ষিত হিসেবে গণ্য করায়, অসংখ্য সংগঠন বিশ্ব শহর অথবা নবিশ্ব শহর এর শ্রেণীবিন্যাস এবং তালিকা করা চেষ্টা করে। [4] যদিও অগ্রগামী বৈশ্বিক শহরগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে,[7] তবে শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে অন্যান্য শহরগুলোকেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[4] নির্বাচনের ক্ষেত্র হতে পারে একটি সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড (যদি উৎপাদন ক্ষমতার ভিত্তিতে ক বৃহত্তম শহর হয় তবে ক একটি বৈশ্বিক শহর)[4] অথবা কোন বিষয়ে বিশেষ দৃঢ়তা প্রদর্শনের (যদি ক শহরের উৎপাদন বিভাগ খ সংখ্যক শহরের সম্মিলিত উৎপাদন বিভাগের চেয়ে বড় হয় তবে ক একটি বৈশ্বিক শহর) ভিত্তিতে। [4]

বৈশিষ্ট্য

এই শ্রেণীবিভাগ থেকে শহরগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে যদি কোন শহর অপেক্ষাকৃত কম বহুজাতিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কম পরিচিত হয়। যদিও কি কি উপাদান একটি বৈশ্বিক শহরের সূচনা করে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে, তবুও বৈশ্বিক শহরের কিছু আদর্শ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:[8]

  • বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সেবা,[9] অর্থনীতি, সঞ্চয়, আবাসন, ব্যাংকিং, accountancy এবং মার্কেটিং-এ উল্লেখযোগ্যতা।
  • বেশকিছু বহুজাতিক কর্পোরেশনের সদর দপ্তর।
  • অর্থনৈতিক সদর দপ্তরের অস্তিত্ব, একটি স্টক একচেঞ্জ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
  • একটি বিশাল এলাকার বাণিজ্য ও অর্থনীতির উপর প্রভাব
  • বন্দর ও কন্টেইনারের সুবিধাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল।
  • বৈশ্বিক পর্যায় নিত্যনৈমিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা।
  • ব্যবসা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং রাজনীতিতে নতুন চিন্তাধারা ও উদ্ভাবনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
  • বৈশ্বিক ত্থ্যজালে গণমাধ্যম ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
  • জাতীয় প্রভাবের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক তাৎপর্য।
  • সেবাখাত এবং তথ্যখাতে অধিবাসীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান।
  • বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং গবেষণার সুবিধাদি সহ উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।[10]
  • বহুমুখী অবকাঠামো যাতে দেশের সেরা আইনি, স্বাস্থ্য এবং বিনোদনের সুবিধা রয়েছে।

সূচক

জিএডব্লিউসি স্টাডি

জিএডব্লিউসি এর তালিকাভুক্ত শহর সমূহের মানচিত্র (২০১০ এর তথ্য)

জন বিভারস্টক, রিচার্ড জি. স্মিথ এবং পিটার জে. টেইলর একসাথে গ্লোবালাইজেসন এন্ড ওয়ার্ল্ড সিটিস রিসার্চ নেটওয়ার্ক (জিএডব্লিউসি) প্রতিষ্ঠা করেন। জিএডব্লিউসি রিসার্চ বুলেটিন ৫ এ চারটি উন্নত উৎপাদক সেবা: একাউন্টেন্সি, এডভারটাইজিং, ব্যাংকিং/অর্থনীতি এবং আইন এর সাথে শহর সমূহের সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে বৈশ্বিক শহরের তালিকা প্রকাশ করে।[7] জিএডব্লিউসি এর তালিকায় বৈশ্বিক শহরের তিনটি স্তর এবং বেশকিছু উপস্তর চিহ্নিত করা হয়।[11] ২০০৪ সালের তালিকায় কিছু নতুন মানদণ্ড যোগ করা হয়, অর্থনীতিকে রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ডের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের তালিকাটি ১৯৯৮ সালের অনুরূপ ছিল, যেখানে শহর গুলোকে আলফা বৈশ্বিক শহর (চারটি উপশ্রেণী), বিটা বৈশ্বিক শহর (তিনটি উপশ্রেণী), গামা বৈশ্বিক শহরে (তিনটি উপশ্রেণী) ভাগ করা ছাড়াও কিছু শহরকে উচ্চ সক্ষমতাসক্ষমতা শ্রেণীতে যোগ করা হয়। তালিকার একটি নমুনা নিচে দেয়া হল।[11]

গ্লোবাল পাওয়ার সিটি ইনডেক্স

টোকিওর মরি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ইন্সটিটিউট অফ আরবান স্ট্র্যাটেজিস ২০১৬ সালে বৈশ্বিক শহরের উপর একটি গঠনমূলক অধ্যয়ন প্রকাশ করে। তাদের তালিকায় শহরগুলো ৬টি শ্রেণীতে বিভক্তঃ অর্থনীতি, গবেষণা ও উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক বিনিময়, বাসযোগ্যতা, পরিবেশ এবং অধিকার; এদের সাথে ৭০টি পৃথক নির্দেশক ও ছিল। এই তালিকায় সেরা দশ শহরের বিষয়ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ ও প্রকাশ করা হয় যেমনঃ ব্যবস্থাপক, গবেষক, শিল্পী, পর্যটক ও অধিবাসীর সংখ্যা।[12]

গ্লোবাল সিটি ইনডেক্স

২০০৮ সালে আমেরিকান জার্নাল Foreign Policy শিকাগো ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ.টি. কিয়ারনি এবং শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল এফেয়ারস এর সাথে যৌথভাবে এবং সাসকিয়া সাসসেন, Witold Rybczynski এবং অন্যান্যদের পরামর্শ নিয়ে বৈশ্বিক শহরের একটি তালিকা প্রকাশ করে।[13] Foreign Policy উল্লেখ করে যে বিশ্বের বৃহত্তম এবং পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী শহরগুলো বৈশ্বিক লক্ষ নির্ধারণ করে, আবহাওয়া ভিত্তিক ঝুঁকি নির্ণয় করে এবং বৈশ্বিক মৈত্রীর ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। এই শহরগুলো সেই দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি এবং তাদের আশেপাশের অঞ্চলের প্রবেশদ্বার।"[14] ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে তালিকাটি পরিমার্জন করা হয়।[15]

গ্লোবাল ইকোনমিক পাওয়ার ইনডেক্স

২০১৫ সালে রিচার্ড ফ্লোরিডা কর্তৃক সংকলিত একটি জরিপের জরিপ ২য় গ্লোবাল ইকোনমিক পাওয়ার ইনডেক্স প্রকাশিত হয় দা আটলান্টিকে ( মার্টিন প্রোস্পারিটি ইন্সটিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত একটি নাম্ভিত্তিক জরিপ থেকে আলাদা প্রমাণিত হতে[16] ), যেখানে ৫টি ভিন্ন বিষয়ের উপর শহরগুলোর ৫টি ভিন্ন ভিন্ন তালিকা প্রকাশ করা হয়।[16][17]

দা ওয়েলথ রিপোর্ট

"দা ওয়েলথ রিপোর্ট" (মৌলিক অর্থ ও সম্পদের উপর একটি বৈশ্বিক পর্যালোচনা) লন্ডন ভিত্তিক আবাসন প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাংক এলএলপি এবং সিটি প্রাইভেট ব্যাংক এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি। এই রিপোর্টের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে একটি "বৈশ্বিক শহর জরিপ", যা তৈরি করা হয়েছে এইচএনডব্লিউআই দের (high-net-worth individuals অর্থাৎ উচ্চ-গড় আয়ের অধিকারী ব্যক্তি যাদের কাছে বিনিয়োগযোগ্য পঁচিশ মিলিয়ন ডলার সম্পদ আছে। বৈশ্বিক শহরের জরিপের জন্য সিটি প্রাইভেট ব্যাংকের নিজস্ব অর্থ উপদেষ্টাগণ এবং নাইট ফ্রাংকের বিলাসী সম্পদ বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞেস করা হয় যে তাদের দৃষ্টিতে কোন কোন শহর এইচএনডব্লিউআইদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, রাজনৈতিক ক্ষমতা, জ্ঞান এবং প্রভাবএবং জীবনযাত্রার মান এই দৃষ্টিকোণগুলো থেকে।[18][19]

গ্লোবাল সিটি কম্পিটিটিভনেস

২০১২ সালে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (দা ইকনমিস্ট গ্রুপ), বৈশ্বিক শরগুলোর অর্থ, ব্যবসা, মেধা এবং পর্যটক আকর্ষণের ভিত্তিতে শহরগুলোর একটি তুলনামূলক শ্রেণীবিভাগ প্রকাশ করে।[20]

জিএডব্লিউসি চিত্রশালা

আলফা++

আলফা+

আলফা

আলফা–

বিটা+

বিটা

বিটা-

তথ্যসূত্র

  1. Sassen, Saskia - The global city: strategic site/new frontier
  2. Sassen, Saskia - The Global City: New York, London, Tokyo. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ মার্চ ২০১৫ তারিখে (1991) - Princeton University Press. আইএসবিএন ০-৬৯১-০৭০৬৩-৬
  3. "UK History"। History.ac.uk। ১৮ ডিসেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১২
  4. Doel, M. & Hubbard, P., (2002), "Taking World Cities Literally: Marketing the City in a Global Space of flows", City, vol. 6, no. 3, pp. 351–68. Subscription required
  5. "Asian Cities Pay Hidden Price for Global Status"The Diplomat। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
  6. "The World's Most Influential Cities"Forbes। ১৪ আগস্ট ২০১৪।
  7. GaWC Research Bulletin 5, GaWC, Loughborough University, 28 July 1999
  8. Pashley, Rosemary. "HSC Geography". Pascal Press, 2000, p.164
  9. J.V. Beaverstock, World City Networks 'From Below', GaWC, Loughborough University, 29 September 2010
  10. K. O'Connor, International Students and Global Cities, GaWC, Loughborough University, 17 February 2005
  11. "The World According to GaWC". GaWC. Retrieved 21 November 2012.
  12. "Global Power City Index 2016"। Tokyo, Japan: Institute for Urban Strategies at The Mori Memorial Foundation। অক্টোবর ২০১৬।
  13. "2012 Global Cities Index and Emerging Cities Outlook"। ২০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১২
  14. মূল মানদণ্ড গুলো হচ্ছে "ব্যবসায়িক কার্যক্রম" (৩০%), "নাগরিকের আয়" (৩০%), "তথ্যের আদানপ্রদান" (১৫%), "সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা" (১৫%) এবং "রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা" (১০%). "The 2008 Global Cities Index"Foreign Policy (November/December 2008)। ২১ অক্টোবর ২০০৮। ৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-৩১ অজানা প্যারামিটার |= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  15. "2014 Global Cities Index and Emerging Cities Outlook"। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৬
  16. Richard Florida (৩ মার্চ ২০১৫)। "Sorry, London: New York Is the World's Most Economically Powerful City"। The Atlantic Monthly Group। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৫Our new ranking puts the Big Apple firmly on top.
  17. "The Top 10 most powerful cities in the world"। Yahoo! India Finance। ১১ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৩
  18. "The Wealth Report 2015"Knight Frank LLP। ১৮ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
  19. "Global Cities Survey" (পিডিএফ)
  20. "Benchmarking global city competitiveness" (পিডিএফ)Economist Intelligence Unit। Economist Intelligence Unit। ৯ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.