বেলিজ
বেলিজ মধ্য আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশে, ক্যারিবীয় সাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। বেলিজ মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষুদ্র ও স্বল্পবসতিপূর্ণ দেশগুলির একটি। এর উত্তরে মেক্সিকো, পশ্চিমে ও দক্ষিণে গুয়াতেমালা এবং পূর্বে ক্যারিবীয় সাগর। দেশটির তটরেখার দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার। উপকূল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে সমুদ্রের মধ্যে একটি প্রবাল বাধ আছে, যার নাম বেলিজ প্রবাল বাধ। ভৌগোলিকভাবে বেলিজ ইউকাতান উপদ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত। বেলিজের উত্তর অর্ধাংশ নিম্ন জলাভূমি প্রকৃতির; এখানে কৃষিকাজ দুরূহ। বেলিজের দক্ষিণ অংশটিতে একটি সরু উপকূলীয় সমভূমি আছে, যার পাশে হঠাৎ অনেক উঁচু পাহাড় ও পর্বত উঠে গেছে; পার্বত্য অঞ্চলটির নাম মায়া পর্বতমালা। দেশের তিন-চতুর্থাংশ এলাকা অরণ্যে আবৃত।
বেলিজ | |
---|---|
![]() পতাকা
![]() জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
| |
জাতীয় সঙ্গীত: "ল্যান্ড অফ দ্য ফ্রি" | |
![]() | |
রাজধানী | বেলমোপান |
বৃহত্তম নগরী | বেলিজ শহর |
সরকারি ভাষা | ইংরেজি[1] |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | বেলিজান |
সরকার | সংসদীয় গণতন্ত্র |
• রাজা | তৃতীয় চার্লস |
• গভর্ণর-জেনারেল | Froyla Tzalam |
• প্রধানমন্ত্রী | ডিন ওলীভার ব্যারৌ |
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে | |
• তারিখ | ২১শে সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ |
আয়তন | |
• মোট | ২২,৯৬৬ কিমি২ (৮,৮৬৭ মা২) (১৫১তম) |
• পানি/জল (%) | ০.৭ |
জনসংখ্যা | |
• ২০০৯ আনুমানিক | ৩০৭,৮৯৯[2] (১৭৭তম) |
• ঘনত্ব | ১৩.৪১ /কিমি২ (৩৪.৭ /বর্গমাইল) (১৯৮তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০০৯ আনুমানিক |
• মোট | $২.৬১৪ বিলিয়ন (১৭৮তম) |
• মাথাপিছু | $৭,৯১৪ (৭৪তম) |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৯) | ![]() ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ৯৩তম |
মুদ্রা | ডলার (BZD) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি-৬ |
কলিং কোড | ৫০১ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .bz |
|

উপকূলীয় শহর বেলিজ সিটি দেশের বৃহত্তম শহর ও দেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এটি দেশটির রাজধানী ছিল। ১৯৬১ সালে একটি হারিকেন ঘূর্ণিঝড়ে শহরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করলে দেশের অভ্যন্তরে বেলিজ সিটি থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে বেলমোপান শহরে নতুন রাজধানী নির্মাণ করা হয়।
বেলিজ জাতিগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বিচিত্র দেশ। এখানকার অনেক লোক কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা মিশ্র আফ্রিকান-ইউরোপীয় রক্তের লোক, যাদেরকে ক্রেওল ডাকা হয়। এছাড়াও এখানে বহু মায়া আদিবাসী ও মেস্তিসো (আদিবাসী আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের মিশ্র জাতি) লোকের বাস। এছাড়াও এখানে ইউরোপীয় ও এশীয়রা স্বল্প সংখ্যায় বাস করেন। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে কৃষাঙ্গ ও অর্ধ-কৃষ্ণাঙ্গ ক্রেওলদের তুলনায় মেস্তিসোদের অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেস্তিসোরা বর্তমানে বেলিজের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে।
বর্তমান বেলিজ এলাকাটি অতীতে মায়া সভ্যতার অংশ ছিল। মায়া সভ্যতা ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিকাশ লাভ করে এবং ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। মায়ারা ছিল দক্ষ কৃষক; তারা তখনকার যুগের সবচেয়ে অগ্রসর একটি সভ্যতা নির্মাণ করেছিল। তারা অনেক কারুকার্যময় মন্দির নির্মাণ করে। মায়া সভ্যতার প্রাচীন নগরগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখতে অনেক পর্যটক এখন বেলিজে বেড়তে আসে। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য ও মনোরম সৈকতগুলিও পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করে।
বেলিজ প্রায় দুই শতক ধরে ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। এটি আমেরিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত সর্বশেষ ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৭৩ পর্যন্ত এর নাম ছিল ব্রিটিশ হন্ডুরাস। প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুয়াতেমালা ঐতিহাসিক কারণে বেলিজকে নিজের অংশ বলে দাবী করে আসলেও বেলিজ নিজের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রচারণা চালায়। ১৯৮১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর এটি স্বাধীনতা অর্জন করে। বর্তমানে এটি কমনওয়েলথ অফ নেশনসের একটি সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্ক জিইয়ে রেখেছে। বেলিজের প্রধান ভাষা ইংরেজি। বেলিজের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি ভাষা তাই ইংরেজি ভাষাভাষী ব্রিটিশ ক্যারিবীয় দ্বীপগুলির মত। কিন্তু এর সংস্কৃতি আবার মধ্য আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির মত। বেলিজের রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি মধ্য আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক।
১৬৩৮ সালে পিটার ওয়ালেস নামের একজন স্কটল্যান্ডীয় জলদস্যু বেলিজ নদীর মোহনাতে একটি লোকালয় স্থাপন করেন বলে ধারণা করা হয়। ওয়ালেসের নামের স্পেনীয় উচ্চারণ থেকেই "বেলিজ" নামটি এসেছে বলে অনুমান করা হয়। আরেকটি তত্ত্ব অনুযায়ী মায়া ভাষার শব্দ বেলিক্স থেকে এসেছে যার অর্থ "কাদাপানি" অথবা অন্য আরেকটি মায়া শব্দ বেলিকিন থেকে এসেছে যার অর্থ "সমুদ্রমুখী দেশ"।
বেলিজের অর্থনীতি মুক্তবাজার প্রকৃতির। ২০শ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কাঠ রপ্তানি ছিল এর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। বর্তমানে চিনি ও লেবু জাতীয় ফল রপ্তানি দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। বর্তমানে সেবাখাত দেশটির বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাত। এছাড়া পর্যটন বিদেশী আয়ের অন্যতম একটি উৎস। বেলিজের মুদ্রার নাম বেলিজ ডলার।
ইতিহাস

আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- "বেলিজ ভ্রমণ"। ১৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭।
- "সিআইএ পৃথিবীর ফেক্টবুক: বেলিজ"। ১৩ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০০৯।
- "মানুষ উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০০৯। মানুষ উন্নয়ন নির্দেশক গতিধারা: টেবিল জি" (পিডিএফ)। জাতিসংঘ। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৫।
বহিঃসংযোগ
- বেলিজের সরকার - সরকারি ওয়েবসাইট।
- রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে
- বেলিজ জাতীয় জরুরী অবস্থা ব্যবস্থাপনা সংস্থা - সরকারি ওয়েবসাইট।
- বেলিজ পর্যটন বোর্ড- সরকারি পর্যটন ওয়েবসাইট।
- Belize Wildlife Conservation Network - Belize Wildlife Conservation Network
- Belize information on globalEDGE
- Country Page from Encyclopaedia Britannica
- LANIC Belize page
- সিআইএ প্রণীত দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এ বেলিজ-এর ভুক্তি
- Belize at UCB Libraries GovPubs
- কার্লিতে বেলিজ (ইংরেজি)