বুয়েনোস আইরেস
বুয়েনোস আইরেস (স্পেনীয়: Buenos Aires; আ-ধ্ব-ব: [ˈbwenos ˈajɾes] ;বুয়েনোস্ আইরেস্ অর্থাৎ "অনুকূল বায়ুপ্রবাহ") দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বভাগে অবস্থিত রাষ্ট্র আর্জেন্টিনার পূর্ব-মধ্যভাগে অবস্থিত দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। নগরীটি দক্ষিণ আমেরিকার আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে ২৪০ কিলোমিটার ভেতরে রিও দে লা প্লাতা নামক অতিপ্রশস্ত মোহনার পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর। নগরীটি আর্জেন্টিনার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। আদিতে লোকালয়টির নাম ছিল "পুয়ের্তো নুয়েস্ত্রা সেনিওরা সান্তা মারিয়া দেল বুয়েন আইরে" (Puerto Nuestra Señora Santa María del Buen Aire, "কুমারী মেরির অনুকূল বায়ুপ্রবাহের বন্দর")। পরে নামটি সংক্ষিপ্ত হয়ে বুয়েনোস আইরেস (অনুকূল বায়ুপ্রবাহ) নাম ধারণ করে।
বুয়েনোস আইরেস নগরী সিউদাদ আউতোনোমা দে বুয়েনোস আইরেস (Ciudad Autónoma de Buenos Aires) | |
---|---|
রাজধানী নগরী এবং স্বশাসিত নগরী | |
বুয়েনোস আইরেস স্বায়ত্তশাসিত নগরী | |
উপর থেকে, বাম থেকে ডানে: বাণিজ্যিক এলাকা, আইনসভার প্রাসাদ, পুয়েন্তে দে লা মুহের (নারীদের সেতু), ঔপনিবেশিক আমলের নগরভবন কাবিলদো, রাষ্ট্রপতির বাসভবন কাসা রোসাদা, পুয়ের্তো মাদেরো বন্দর, লা বোকা এলাকার কামিনিতো গলি, নুয়েবে দে হুলিও ও আভেনিদা কোররিয়েন্তেস রাজপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত ওবেলিস্কো স্মৃতিস্তম্ভ এবং মহানগর মহাগির্জা (ক্যাথেড্রাল) | |
পতাকা প্রতীক | |
ডাকনাম: লা রেইনা দেল প্লাতা ("এল প্লাতা-র রাণী")[1][2] লা সিউদাদ দে লা ফুরিয়া ("ক্ষিপ্ত নগরী")[3] | |
বুয়েনোস আইরেস নগরী বুয়েনোস আইরেস নগরী | |
স্থানাঙ্ক: ৩৪°৩৬′১২″ দক্ষিণ ৫৮°২২′৫৪″ পশ্চিম | |
দেশ/রাষ্ট্র | আর্জেন্টিনা |
প্রতিষ্ঠা | ২রা ফেব্রুয়ারি ১৫৩৬ (পেদ্রো দে মেন্দোসা কর্তৃক) ১১ই জুন ১৫৮০ (হুয়ান দে গারাই কর্তৃক) |
সরকার | |
• ধরন | স্বশাসিত নগরী |
• শাসক | নগর আইনসভা |
• সরকার প্রধান | ওরাসিও রোদ্রিগেস লাররেতা |
• সিনেটরবৃন্দ | মার্তিন লুস্তো, মারিয়ানো রেকাল্দে,গুয়াদালুপে তাইলিয়াফেররি |
আয়তন | |
• রাজধানী নগরী এবং স্বশাসিত নগরী | ২০৩ বর্গকিমি (৭৮ বর্গমাইল) |
• স্থলভাগ | ২০৩ বর্গকিমি (৭৮.৫ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৪,৭৫৮ বর্গকিমি (১,৮৩৭ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ২৫ মিটার (৮২ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১০ সালের জনগণনা)[4] | |
• ক্রম | ১ম |
• পৌর এলাকা | ২৮,৯১,০৮২ |
• মহানগর | ১,৫৫,৯৪,৪২৮ |
সময় অঞ্চল | আস (ART) (ইউটিসি−৩) |
এলাকা কোড | ০১১ |
মাউসূ (২০১৬) | ০.৮৮৫ অতি উচ্চ (২য়)[5] |
ওয়েবসাইট | www |
মূল বুয়েনোস আইরেস নগরীটি একটি বৃহত্তর মহানগর এলাকার কেন্দ্রে অবস্থিত, যার নাম গ্রান বুয়েনোস আইরেস (বৃহত্তর বুয়েনোস আইরেস)। মূল বুয়েনোস আইরেস নগরীটিকে ১৮৮০ সালে একটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। মূল নগরীর আয়তন প্রায় ২০৩ বর্গকিলোমিটার এবং এটি ৪৮টি বাররিও (Barrio) বা এলাকা নিয়ে গঠিত। ২০১০ সালে মূল বুয়েনোস আইরেস নগরীতে ২৯ লক্ষ লোকের বাস ছিল, ফলে এটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি নগরী। শহরের বেশির ভাগ অধিবাসী জীবনের এক বড় অংশ একই বাররিওতেই কাটিয়ে দেয়। অন্যদিকে গ্রান (বৃহত্তর) বুয়েনোস আইরেস মহানগর অঞ্চলটি বুয়েনোস আইরেস নগরী এবং এর ১৯টি উপশহর নিয়ে গঠিত। উপশহরগুলিকে পার্তিদো (Partido) বা পৌরসভা নামে ডাকা হয়। ৪৭৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট বৃহত্তর বুয়েনোস আইরেস এলাকাতে ২০১০ সালে ১ কোটি ৬০ লক্ষ অধিবাসী বাস করত, যা আর্জেন্টিনার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এটি দক্ষিণ আমেরিকার ৫টি অতিমহানগরীর একটি (সাঁউ পাউলু-র পরে এবং রিউ দি জানেইরু, বোগোতা ও লিমা-র আগে)। দুই আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে এটি সাঁউ পাউলু, মেক্সিকো নগরী ও নিউ ইয়র্ক নগরীর পরে ৪র্থ বৃহত্তম মহানগর এলাকা।[4]
বুয়েনোস আইরেস নগরীটি রিও দে লা প্লাতা নামের একটি মোহনার তীরে অবস্থিত। বিশালাকার এই মোহনাটি পারানা নদী ও উরুগুয়াই নদীর মিলনে সৃষ্ট হয়েছে। রিও দে লা প্লাতার উপস্থিতির কারণে নগরীর জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। একই অক্ষাংশের অন্যান্য অন্তর্দেশীয় অবস্থানের তুলনায় এখানকার গ্রীষ্মকালগুলি অপেক্ষাকৃত শীতল এবং শীতকালগুলি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ। শীতকালে কদাচিৎ তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নামে; তুষারপাত অত্যন্ত বিরল। দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত বলে জুলাই মাস হল এখানকার শীতলতম মাস; এসময় সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ১৫° সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ৮° সেলসিয়াস। জানুয়ারি মাস হল সবচেয়ে গরম মাস; এসময় সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩০° সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০° সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারি; গড়ে বছরে প্রায় ১১৫০ মিমি বৃষ্টিপাত হয় এবং সারা বছর ধরেই বৃষ্টি হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া বেশ আর্দ্র থাকে বলে স্বাভাবিকের তুলনায় কম তাপমাত্রাতেও অনেক কষ্ট হতে পারে।
সাঁউ পাউলু ও মেক্সিকো নগরীর পরে বুয়েনোস আইরেস লাতিন আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র। আর্জেন্টিনার সিংহভাগ আমদানি ও রফতানি এই নগরীর বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এখানে দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরটি অবস্থিত। আর্জেন্টিনা কৃষিপ্রধান দেশ, তাই প্রতি জুলাই মাসে বুয়েনোস আইরেসে গবাদি পশু ও কৃষি মেলা বসে। এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ধাতুর দ্রব্য প্রস্তুত, মোটরযান নির্মাণ ও খনিজ তেল প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প-কারখানা আছে। এছাড়া বস্ত্র, কাগজ, রাসায়নিক দ্রব্য, মুদ্রণ, প্রকাশনা গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাত।
বুয়েনোস আইরেসের অধিবাসীদেরকে স্থানীয় স্পেনীয় ভাষাতে পোর্তেনিওস (Porteños, "বন্দরের লোক") নামে ডাকা হয়। এখানকার তিন-চতুর্থাংশ লোক শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। ১৮৮০-র দশক থেকে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত মূলত স্পেন ও ইতালি থেকে আগত বহু লক্ষ অভিবাসী শহরে বসতি স্থাপন করে এবং তাদের বংশধরেরা নগরীর সংস্কৃতির উপরে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গ্রামীণ ও মফস্বল এলাকা থেকে আগত মেস্তিসো তথা মিশ্র জাতির লোকেরা বৃহত্তর বুয়েনোস আইরেসের এক বৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গঠন করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও রাশিয়া থেকে আগত অভিবাসী, ইহুদী ইউরোপীয় (জার্মান) অভিবাসী, সিরিয়া ও লেবানন থেকে আগত মুসলমান ও খ্রিস্টান আরব সম্প্রদায়, এ সবই শহরের জনগোষ্ঠীকে বৈচিত্র্য দান করেছে। কিন্তু এরা সবাই মূলত আর্জেন্টিনীয় স্পেনীয় ভাষাতেই কথা বলে, ফলে নগরীতে ভাষার বৈচিত্র্য ততটা নেই। শহরের সিংহভাগ মানুষ (৮৫%) রোমান ক্যাথলিক মন্ডলীর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ভ্যাটিকানের রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পূণ্যপিতা (পোপ) ফ্রান্সিস বুয়েনোস আইরেসের বাসিন্দা ছিলেন; তিনি দক্ষিণ আমেরিকা তথা পশ্চিম গোলার্ধ থেকে আগত প্রথম খ্রিস্টান ধর্মগুরু।
সাংস্কৃতিক, শৈল্পিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে বুয়েনোস আইরেস শহরটির প্রভাব আর্জেন্টিনাকে ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও প্রসারিত; মাদ্রিদ ও মেক্সিকো নগরীর সাথে এটি স্পেনীয় ভাষাভাষী বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাংস্কৃতিক নগরী। হোর্হে লুইস বোর্হেস, হুলিও কোর্তাসার ও মানুয়েল পুইগের মতো বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকেরা বুয়ানোস আইরেসের অধিবাসী ছিলেন। এখানকার গ্রন্থ প্রকাশনা শিল্প উন্নত; প্রতি বছর এপ্রিল মাসে তিন সপ্তাহব্যাপী বইমেলাতে সারা বিশ্ব থেকে ১০ লক্ষেরও বেশি পর্যটক ঘুরতে আসে। ১৮২১ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম বুয়েনোস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লক্ষেরও বেশি ছাত্র পড়াশোনা করে এবং জাতীয় গ্রন্থাগারে ২০ লক্ষেরও বেশি গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপির সংগ্রহ আছে। বুয়েনোস আইরেসে অনেক জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আছে। ১৯০৮ সালে নির্মিত ২৫০০টি আসনবিশিষ্ট তেয়াত্রো কোলন একটি বিরাট গীতিনাট্যশালা, যেখানে নিয়মিতভাবে ধ্রুপদী নৃত্য (ব্যালে), ধ্রুপদী সঙ্গীত, গীতিনাট্য বা অপেরার আয়োজন করা হয়। আরও আছে মুসেও দে আর্তে লাতিনোআমেরিকানো দে বুয়েনোস আইরেস (Museo de Arte Latinoamericano de Buenos Aires) বা সংক্ষেপে মালবা (MALBA), যেখানে লাতিন আমেরিকার শিল্পকলার প্রদর্শনী রয়েছে। নগরীর জনপ্রিয় সঙ্গীত ও নৃত্যের অঙ্গনও প্রাণবন্ত। বুয়েনোস আইরেসেই ১৯শ শতকের শেষদিকে ট্যাঙ্গো (তাঙ্গো) নাচের উদ্ভব ঘটে। ১১ই ডিসেম্বর জাতীয় ট্যাঙ্গো (তাঙ্গো) নাচের দিবস পালিত হয়।
বুয়েনোস আইরেসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফুটবল ক্লাব দল আছে, ২৫টিরও বেশি। লা বোকা এলাকার বোকা জুনিয়র্স এবং নুনিয়েস এলাকার রিভার প্লেট ফুটবল ক্লাব দলের মধ্যকার দ্বৈরথ কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে। ফুটবলের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের অন্যতম দিয়েগো মারাদোনার ক্রীড়াজীবন এই শহরেই শুরু হয়েছিল। টেনিস (গিয়ের্মো বিইয়াস ও গাব্রিয়েলা সাবাতিনির নাম উল্লেখ্য), ঘোড়দৌড়, মোটরগাড়ি প্রতিযোগিতা (ডাকার ও ফরমুলা ১), রাগবি, বাস্কেটবল, গলফ এখানাকার লোকদের প্রিয়।
বুয়েনোস আইরেস শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে এসেইসা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি অবস্থিত। এছাড়া শহরটি বিমান,সড়ক ও রেলপথে আর্জেন্টিনার সমস্ত অঞ্চল এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের সাথে সংযুক্ত। মূল নগরীতে একটি পাতালরেল ব্যবস্থা আছে, তবে শহরতলীগুলি থেকে রেল ও সড়কপথে বাস গণপরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।
বুয়েনোস আইরেস নগরীতে দেশের মূল সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবন, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, নগর উদ্যান ও প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি অবস্থিত। নগরীর পরিকল্পনাবিদেরা ২০শ শতকের শুরুতে এটিকে একটি ইউরোপীয় নগরী বিশেষত ফ্রান্সের প্যারিসের আদলে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, ফলে শহরে প্রশস্ত বৃক্ষশোভিত রাজপথ, কারুকার্যখচিত সরকারি ভবন, বিশাল চত্ত্বর ও নগর-উদ্যানের প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হয়। নগরীর কেন্দ্রে প্লাসা দে মাইয়ো (Plaza de Mayo) চত্ত্বরটি অবস্থিত, যার চতুর্পার্শ্বে ১৯শ শতকে নির্মিত উচ্চ স্থাপত্যশৈলীর সরকারি কার্যালয় ভবনগুলি উঠে গেছে। এদের মধ্যে শহরের অন্যতম প্রতীক কাসা রোসাদা নামের বারান্দাযুক্ত রাষ্ট্রপতির প্রাসাদটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। নগরীর বাণিজ্যিক এলাকাটির নাম মিক্রোসেন্ত্রো; এখানে কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত ফ্লোরিদা সড়কটি ধরে প্লাসা সান মার্তিন নামের একটি ব্যস্ত নগর উদ্যানে পৌঁছানো যায়। রেকোলেতা একটি উচ্চমার্গীয় এলাকা যেখানে অভিজাত সব বিপণীর পাশাপাশি ১৮২২ সালে স্থাপিত লা রেকোলেতা সমাধিস্থলটি অবস্থিত; এই সমাধিস্থলে আর্জেন্টিনার বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমাধি ও মূর্তি আছে, যাদের মধ্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের পত্নী এবা পেরনের সমাধিটি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। সান তেলেমো এলাকাতে খোয়া পাথরে বাঁধানো সড়ক ও একটি জনপ্রিয় প্রাচীন দ্রব্যের মেলা আছে। নগরীর ইতালীয় অধ্যুষিত এলাকাটির নাম লা বোকা; এখানে বর্ণিল কামিনিতো গলি এবং লা বোম্বোনেরা ফুটবল খেলার স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। পালের্মো এলাকার বৃক্ষশোভিত সড়কগুলির ধারে বহু চলতি শৈলীর দোকান, রেস্তোরাঁ ও বার চোখে পড়ে। চামড়ার দ্রব্য কেনা, পারিইয়া নামের মাংসের স্টেক খাবার দোকানে খাওয়া ও ট্যাঙ্গো নৃত্যে অংশ নেওয়া পর্যটকদের পছন্দের কিছু কর্মকাণ্ড।
বুয়েনোস আইরেস লোকালয়টিতে প্রথম ১৫৩৬ সালে স্পেনীয়রা উপনিবেশ স্থাপন করে। কিন্তু স্থায়ী বসতি গড়তে ১৫৮০ সাল লেগে যায়। এরপর প্রায় ২০০ বছর ধরে শহরটি ধীরে ধীরে কলেবরে বৃদ্ধি পায়। ১৭৭৬ সালে এটি রিও দে লা প্লাতা নামের এক বৃহৎ স্পেনীয় ঔপনবেশিক প্রদেশ বা উপরাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯শ শতকের শুরুতে আর্জেন্টিনা স্পেনীয় শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু ১৮৫৩ সালে বুয়েনোস আইরেস ও এর পারিপার্শ্বিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত একই নামের প্রদেশটি আর্জেন্টিনার নতুন সংবিধান অস্বীকার করে এবং আর্জেন্টিনার সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশের অন্যান্য প্রদেশের সাথে বিরাম দিয়ে দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। শেষ পর্যন্ত এটিকে একটি কেন্দ্রশাসিত জেলা ও জাতীয় রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হলে ১৮৮০ সালে এটি অন্যান্য প্রদেশের সাথে যুদ্ধে ক্ষান্ত দেয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধের আগে এসে এটি একটি সমৃদ্ধিশালী বন্দরে পরিণত হয়। গোটা ২০শ শতকে ধরেই নগরীর অর্থনীতি ও শিল্পখাত উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। তবে ১৯৯০-এর দশকের শেষ থেকে আর্জেন্টিনার অর্থনীতিতে ধ্স নামার পর থেকে শহরে ধনী-গরীবের বৈষম্য বেড়েছে ফলে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর লোকের সংখ্যা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দারিদ্র্য ও অপরাধের কারণে নগরীর জীবনযাত্রার মানে ব্যাঘাত ঘটেছে। তা সত্ত্বেও শহরটির মানব উন্নয়ন সূচক অতি উচ্চ।
চিত্রসম্ভার
তথ্যসূত্র
- Corsalini, Claudio (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "En la 'Reina del Plata', sólo el 3% de las calles tiene nombre de mujer"। Perfil (Spanish ভাষায়)। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৭।
- Argentina: A Short History by Colin M. Lewis, Oneworld Publications, Oxford, 2002. আইএসবিএন ১-৮৫১৬৮-৩০০-৩
- "Spanish-language article"। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০২০।
- "Censo 2010. Resultados provisionales: cuadros y grá" (স্পেনীয় ভাষায়)। ২০ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
- "Información para el desarrollo sostenible: Argentina y la Agenda 2030" (পিডিএফ) (Spanish ভাষায়)। United Nations Development Programme। ২৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
- ওপেনস্ট্রিটম্যাপে বুয়েনোস আইরেস সম্পর্কিত ভৌগোলিক উপাত্ত