বীরেন রায়
বীরেন রায় (২৮ আগস্ট ১৯০৯ – ২২ জানুয়ারি ১৯৯৬) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি বৈমানিক তথা বিমান চালক ও লেখক। [1] ঊনবিংশ শতকের দক্ষ প্রশাসক এবং বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি ছিল তার। [2]
বীরেন রায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২২ জানুয়ারি ১৯৯৬ ৮৬) | (বয়স
পেশা | বৈমানিক ও লেখক |
দাম্পত্য সঙ্গী | মেঘমালা রায় |
পিতা-মাতা | সৌরেন্দ্র রায় (পিতা) শ্যামাসুন্দরী দেবী (মাতা) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
বীরেন রায়ের জন্ম ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট বৃটিশ ভারতের কলকাতার বেহালার এক বিত্তশালী পরিবারে। পিতা সৌরেন্দ্র রায় এবং মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী। তার প্রপিতামহ রায়বাহাদুর অম্বিকাচরণ রায় ছিলেন আদালতের অনুবাদক। তিনি সেসময় সাতশো টাকা পেনশন পেতেন। ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম হওয়ায় বীরেন রায়ের আচার-আচরণে তার প্রভাব পড়েছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি উপনয়নে যে দশ হাজার গিনি উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন, তা খরচ করে কালাপানি পার হয়ে ইংল্যান্ডে যান। বীরেন রায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতনি মিনি'র প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে – ফলে তাকে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে অবশ্য তিনি এম.এ., এম আর এ এস ডিগ্রি লাভ করেন। মিনি'রা ব্রাহ্মসমাজ ভুক্ত ছিলেন, মিনি'র প্রতি তার আকর্ষণ রোধ করতে এক লক্ষ টাকার পণ ও বিমান কিনে দেওয়ার টোপ দিয়ে জয়পুরের এক কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। কিন্ত তার পিতাই তার শ্বশুরের হয়ে বিমান কিনে দেন। এদিকে এক লক্ষ টাকা আদায় করতে তিনি বিমানে জয়পুর যান শ্বশুরের কাছে। পরে তিনি পিতার কৌশল ইত্যাদি সবকিছুই অনুধাবন করতে পারেন। [2] বীরেন রায় পরে একজন দক্ষ বিমান চালক হয়ে ওঠেন।
কর্মজীবন
ধনী পরিবারের সন্তান হয়ে বীরেন রায় বর্ণময় জীবনযাপন অতিবাহিত করেছেন। এক সময় দক্ষিণ কলকাতা পৌরাধ্যক্ষ হন। সেই সূত্রে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অফ মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস -এ প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সময়েই তিনি জার্মানির চান্সেলর হিটলারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং তার সঙ্গে যে সখ্যতা গড়ে ওঠে তা শেষদিন পর্যন্ত বজায় ছিল। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর গোপন জীবনেও অনেকবার তিনি বৈমানিক হিসাবে সঙ্গী হয়েছিলেন। কিন্তু নেতাজীর ক্রিয়াকলাপ নিয়ে কোন কথাই সমক্ষে আনেন নি। পরবর্তীতে তিনি কমিউনিস্ট আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। মুজফ্ফর আহমেদসহ বহু কমিউনিস্ট কর্মীদের গোপন আস্তানা ছিল তার বালিগঞ্জের বাড়িটি। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র "স্বাধীনতা" জন্য প্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বেহালার বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হালকা বিমান উড়ান কেন্দ্র ছাড়াও বেহালার সিনেমা হল (অজন্তা, ইলোরা, নটরাজ), মাতা শ্যামাসুন্দরীর নামে বালিকা বিদ্যালয়, আর্য সমিতি, চ্যারিটেবল চিকিৎসা কেন্দ্র ইত্যাদি তারই প্রতিষ্ঠিত।
বীরেন রায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখালেখিও করতেন। ব্রিটিশ ভারতে শ্রমিক আন্দোলন, বিমান চালনা, যোগা ও রেডিও ও অন্যান্য যন্ত্রাদি নির্মাণ নিয়ে বই লিখেছেন। তিনটি ভাষায় তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা আটচল্লিশ। অনেক পত্র পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, সম্পাদনা করেছেন কয়েকটি পত্রিকা। উল্লেখযোগ্য রচিত গ্রন্থ গুলি হল–
- খেয়ালী (১৯৩০)
- বেতার রহস্য (১৯৩০)
- জনতাপুরী (১৯৩০)
- মুসাফির (১৯৩৫)
- বেতার বিজ্ঞান ও যন্ত্রনির্মাণ (১৯৩৭)
- Flying for All (১৯৩৬)
- Mahabharata (১৯৫৭)
তিনি বেহালা সম্পর্কে স্মৃতিকথায় লিখেছেন- আত্মশক্তির গল্পকথা। [1] ব্রিটিশ ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের উপর তার রচিত নাটক ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বাজেয়াপ্ত করে। [2]
জীবনাবসান
বীরেন রায় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়রি কলকাতায় ৮৬ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। তার জীবদ্দশাতেই বেহালার একটি রাস্তার নামকরণ হয় - বীরেন রায় রোড।
তথ্যসূত্র
- অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৭২,২৭৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- "Man who flew in the face of conventions"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৩।