বিষ্ণু নারায়ণ ভাতখন্ডে
পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখন্ডে (জন্ম: আগস্ট ১০, ১৮৬০ - মৃত্যু: সেপ্টেম্বর ১৯, ১৯৩৬)[1] ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন প্রথিতযশা পণ্ডিতজন।
ততকালীন বোম্বাই এর কাছে বালকেশ্বর নামক স্থানে ভাতখন্ডেজী জন্মগ্রহণ করেন। অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান ছিলেন তিনি, সুতরাং শিক্ষালাভে তার কোনও অসুবিধা হয়নি। স্কুলে শিক্ষার পাশাপাশি তিনি সঙ্গীতের দিকে আকৃষ্ট হন। ছোটবেলায় মায়ের কাছে ভজন শিখেছিলেন। সঙ্গীতচর্চা চলতে থাকে এবং সঙ্গীত প্রতিয়োগিতায় তিনি কয়েকটি পুরস্কারও পান। একইসঙ্গে প্রকাশ পায় তার সাহিত্যিক দক্ষতাও। এরপর সেতার শিখতে শুরু করেন। বেনারসের সুপ্রসিদ্ধ সেতারী পান্নালাল বাজপেয়ীর শিষ্য বল্লভদাসজীর কাছে সেতার শিক্ষা শুরু করেন। তারপর বিখ্যাত বীণকার আলি হোসেনের শিষ্য গোপালজীর কাছেও সেতার শেখেন। ১৮৮৪ সালে তিনি এফ. এ. পাশ করেন। সঙ্গীত শিক্ষার জন্য বোম্বাই এর গায়ন উত্তেজক মন্ডলী নামক সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের সভ্য হন। তারপর রাওজী বুয়া বেলবাগকর এর কাছে শিখতে শুরু করেন ধ্রপদ গান। এই সময়েই মহম্মদ হোসেন ও বিলায়েত হোসেনের কাছে খেয়াল শিক্ষা করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি সঙ্গীতে এমন দক্ষতার পরিচয় দেন যে গায়ন উত্তেজক মণ্ডলীর সঙ্গীত পরিচালনার ভার তার ওপরেই অর্পণ করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি যাদের নির্বাচন করতেন, তারাই সেখানে গান গাওয়ার সুয়োগ লাভ করত। ১৮৮৬ সালে ভাতখন্ডেজী বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. পাশ করেন এবং ১৮৯০ সালে এল. এল. বি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আইন ব্যবসায়েও তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন এবং সম্মানলাভ করেন। কিন্ত সঙ্গীতের প্রতি তার আকর্ষণ এত প্রবল ছিল য়ে আইন ব্যবসায়ে বেশি সময় খরচ না করে সঙ্গীত চর্চাতেই বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতেন। হিন্দি, গুজরাতি, তেলুগু ও সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করে তিনি এইসব ভাষায় রচিত সঙ্গীত পুস্তকাদি পাঠ করতে শুরু করলেন। ১৮৯৫ সাল পর্য়ন্ত প্রায় সারা ভারতের সঙ্গীত সম্পর্কিত পুস্তক অধ্যয়নের কাজে ব্যাপৃত থাকেন। মাঝে মধ্যে এইসব বিষয়ে নানা জায়গায় বক্তৃতা করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি বেড়়িয়ে পড়েন পথে, ভরতবর্ষের তাবৎ অঞ্চলের সঙ্গীতের গতিপ্রকৃতি আত্মস্থ করার জন্য শুরু হয় এক সঙ্গীত মুশাফিরের দীর্ঘ যাত্রা। ১৯০৪ সাল পর্যন্ত তিনি দাক্ষিনাত্য ভ্রমণ করেন। আলোচনা করেন গুণী সঙ্গীতজ্ঞদের সঙ্গে সংগ্রহ করেন অসংখ্য গানের রাগরূপ। ১৯০৭ সালে আসেন কলকাতায় রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। দীর্ঘ আলোচনা হয় তাদের মধ্যে।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তিনি একটি রেনেসাঁ নিয়ে এসেছিলেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগসমূহকে তিনি বর্তমানের প্রচলিত ঠাট কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এর আগে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগসমূহের ছিল রাগ (পুরুষ), রাগিণী (মহিলা) ও পুত্রা (সন্তান) ভাগে বিভক্ত।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
হিন্দুস্থানী সঙ্গীত-পদ্ধতি, প্রথম খন্ড, পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখন্ডে, পৃষ্ঠা-৫-৬