বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক হল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আলিপুর সদর মহকুমার একটি প্রশাসনিক বিভাগ। ব্লকটির সদর বাখরাহাটে অবস্থিত।[3]
বিষ্ণুপুর ২ | |
---|---|
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক | |
বিষ্ণুপুর ২ বিষ্ণুপুর ২ | |
স্থানাঙ্ক: ২২.৩৮১২° উত্তর ৮৮.২৬৮০° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
মহকুমা | আলিপুর সদর |
আয়তন | |
• মোট | ৮১.৭১ বর্গকিমি (৩১.৫৫ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৯ মিটার (৩০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২,১৪,৫৩১ |
• জনঘনত্ব | ২,৬০০/বর্গকিমি (৬,৮০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা[1][2] |
• অতিরিক্ত সরকারি | ইংরেজি[1] |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫.৩০) |
পিন কোড | ৭৪৩৫০৩ |
টেলিফোন কোড | +৯১ ৩৩ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি-১৯ থেকে ডব্লিউবি-২২, ডব্লিউবি-৯৫ থেকে ডব্লিউবি-৯৯ |
লোকসভা কেন্দ্র | ডায়মন্ড হারবার |
বিধানসভা কেন্দ্র | সাতগাছিয়া |
ওয়েবসাইট | www |
ভূগোল
বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকটি ২২°২২′৫২″ উত্তর ৮৮°১৬′০৫″ পূর্ব অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ব্লকটির গড় উচ্চতা ৯ মিটার (৩০ ফু)।
এই ব্লকের উত্তর দিকে আলিপুর সদর মহকুমার ঠাকুরপুকুর মহেষতলা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, পূর্ব দিকে ওই মহকুমারই বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, দক্ষিণ দিকে ডায়মন্ড হারবার মহকুমার ফলতা ও মগরাহাট ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক দু’টি এবং পশ্চিম দিকে আলিপুর সদর মহকুমার বজবজ ১ ও বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক দু’টি অবস্থিত।[4][5]
ডিস্ট্রিক্ট স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক ফর সাউথ টোয়েন্টি-ফোর পরগনাস-এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৮১.৭১ বর্গ কিলোমিটার। এই ব্লকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি, এগারোটি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৬৭টি গ্রাম সংসদ, ৬২টি মৌজা এবং ৫২টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। ব্লকটি বিষ্ণুপুর থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অধীনস্থ।[6]
বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পঞ্চায়েত সমতির অধীনস্থ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হুল বাখরাহাট, চক এনায়েতনগর, চণ্ডী, গোবিন্দপুর কালীচরণপুর, কঙ্গনবেড়িয়া, খাগড়ামুড়ি, নহাজারি, মৌখালি, পঞ্চানন, পাথরবেড়িয়া, জয়চণ্ডীপুর ও রামকৃষ্ণপুর বোরহানপুর।[7]
জনপরিসংখ্যান
জনসংখ্যা
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ২১৪,৫৩১; এর মধ্যে গ্রামীণ জনসংখ্যা ১৩৮,৯৭৯ এবং নগরাঞ্চলীয় জনসংখ্যা ৭৫,৫৫২। ব্লকে মোট পুরুষের সংখ্যা ১০৯,৬০৩ (৫১ শতাংশ) এবং মোট মহিলার সংখ্যা ১০৪,৯২৮ (৪৯ শতাংশ)। মোট ২১,৩৫১ জনের বয়স ছয় বছরের নিচে। তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্ত জনসংখ্যা ৩৩,৩৭৮ (১৫.৫৬ শতাংশ) এবং তফসিলি উপজাতি-তালিকাভুক্ত জনসংখ্যা ৮৭ (০.০৪ শতাংশ)।[8]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৯০,৬১৬; তার মধ্যে ৯৮,০২৭ জন ছিলেন পুরুষ এবং ৯২,৫৮৯ জন ছিলেন মহিলা। ১৯৯১-২০০১ দশকে এই ব্লকের দশকীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির নথিবদ্ধ হার ছিল ১৪.৮৭ শতাংশ। উল্লেখ্য, উক্ত দশকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের দশকীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ২০.৮৯ শতাংশ ও ১৭.৮৪ শতাংশ।[9][10][11]
বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে অবস্থিত জনগণনা নগরগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী জনসংখ্যা দেওয়া হল): নহাজারি (১৭,৪২২), নাদাভাঙা (৫,৯২৭), কঙ্গনবেড়িয়া (৬,৬৫৭), বোড়া গগনগোহালিয়া (৫,২৭৪), চন্দনদহ (৫,৬৫৬), বড়কালিকাপুর (৪,৬৫০), পাথরবেড়িয়া (৪,৬৯৮), রামকৃষ্ণপুর (৫,৯৭১), আমতলা (৮,৭৬৫), কৃপারামপুর (৩,৭৭৮) ও চক এনায়েতপুর (৬,৭৫৪)।[8]
এই ব্লকের বড়ো গ্রামগুলি (৪০০০+ জনসংখ্যা-বিশিষ্ট) হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী জনসংখ্যা দেওয়া হল): খাগড়ামুড়ি (৫,৭৩৪), জয়চণ্ডীপুর (৪,৫৪১), গোবিন্দপুর (৫,৫৮৮), সুলতানগঞ্জ (৪,৪৮৬), বোরহানপুর (৭,২১৮), গঙ্গারামপুর (৪,০১৬), এনায়েতনগর (৪,৬১৭), মিরপুর (৪,৬৭৬) ও চণ্ডী (১৩,৩৩২)।[8]
ব্লকের অন্যান্য গ্রামগুলির অন্যতম (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী জনসংখ্যা দেওয়া হল): মৌখালি (৩,৭০৫)।[8]
সাক্ষরতা
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১৫৫,৫৫৪ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী জনসংখ্যার ৮১.৩৭ শতাংশ); এর মধ্যে মোট সাক্ষর পুরুষের সংখ্যা ৮৪,৪৯৫ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী পুরুষ জনসংখ্যার ৮৬.৪৪ শতাংশ) এবং মোট সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৭১,০৫৯ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মহিলা জনসংখ্যার ৭৬.০৫ শতাংশ)। লিঙ্গবৈষম্য (মহিলা ও পুরুষ সাক্ষরতার হারের পার্থক্য) ছিল ১০.৩৯ শতাংশ।[8] উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সাক্ষরতার হার ৭৭.৫১ শতাংশ,[12] যেখানে পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ৭৭.০৮ শতাংশ[13] এবং ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ।[13]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে অন্যূন ছয় বছর বয়সীদের মধ্যে মোট সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩.৪২ শতাংশ; এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরতার হার ছিল ৮১.৭৭ শতাংশ এবং মহিলা সাক্ষরতার হার ছিল ৬৪.৫৪ শতাংশ। উক্ত জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সাক্ষরতার হার ছিল ৬৯.৪৫ শতাংশ, পুরুষ সাক্ষরতার হার ছিল ৭৯.১৯ শতাংশ ও মহিলা সাক্ষরতার হার ছিল ৫৯.০১ শতাংশ।[9]
টেমপ্লেট:দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলিতে সাক্ষরতা
ভাষা ও ধর্ম
২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট জনংখ্যার ৯৭.৯ শতাংশের মাতৃভাষা বাংলা; ১.৫ শতাংশের মাতৃভাষা হিন্দি, ০.৩ শতাংশের মাতৃভাষা উর্দু এবং ওড়িয়া ও তেলুগু-ভাষী লোকের সংখ্যা ০.১ শতাংশ করে।[14]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে হিন্দু জনসংখ্যা ১৩২,৮৪৪ (মোট জনসংখ্যার ৬১.৯২ শতাংশ), মুসলমান জনসংখ্যা ৮০,৬৫১ (মোট জনসংখ্যার ৩৭.৬০ শতাংশ) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ১,০৩৬ (মোট জনসংখ্যার ০.৪৮ শতাংশ)।[15]
এই অঞ্চলে হিন্দুদের অনুপাত একই সময়কালে ২৩.৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৫.০৬ শতাংশ। ২০১১ সালে এখানে খ্রিস্টানদের হার ছিল ০.৮ শতাংশ।[16]
গ্রামীণ দারিদ্র্য
২০০৯ সালে প্রকাশিত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মানবোন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ১০.৬২ শতাংশ পরিবারের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে। ২০০৫ সালে আয়োজিত একটি গ্রামীণ পরিবার সমীক্ষায় জানা যায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট ৩৪.১১ শতাংশ পরিবারের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে, যে হার রাজ্য বা জাতীয় হারের তুলনায় অনেকটাই বেশি। সুন্দরবনের জনবসতি অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার অত্যধিক। এই অঞ্চলের অন্তর্গত তেরোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে দারিদ্র্যের অনুপাত ৩০ শতাংশের বেশি এবং আটটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৪০ শতাংশেরও বেশি পরিবারের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে।[17]
অর্থনীতি
জীবিকা
২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট শ্রমজীবীর মধ্যে কৃষকের সংখ্যা ছিল ৪,৭৮৭ (মোট শ্রমজীবীর ৫.৯৬ শতাংশ), কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১০,৯২৭ (মোট শ্রমজীবীর ১২.৮১ শতাংশ), কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৩,৭০৫ (মোট শ্রমজীবীর ১২.৮১ শতাংশ) এবং অন্যান্য শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৫১,৫৭৬ (মোট শ্রমজীবীর ৬৪.১৮ শতাংশ)।[18] ব্লকের মোট শ্রমজীবীর সংখ্যা ছিল ৮০,৩৬৫ (মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪৬ শতাংশ) এবং অ-শ্রমজীবীদের মোট সংখ্যা ছিল ১৩৪,১৬৬ (মোট জনসংখ্যার ৬২.৫৪ শতাংশ)।[19]
পরিকাঠামো
ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, সাউথ টোয়েন্টি-ফোর পরগনাস, ২০১১-এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট ৫২টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। ১০০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ৫১টি গ্রামে (৯৮.০৮ শতাংশ) পানীয় জল সরবরাহ করা হয়, তেরোটি গ্রামে (২৫.০০ শতাংশ) ডাকঘর আছে, ৪৮টি গ্রামে (৯২.৩১ শতাংশ) টেলিফোন সংযোগ (ল্যান্ডলাইন, পাবলিক কল অফিস ও মোবাইল ফোন সহ) আছে, ২৭টি গ্রামে (৫১.৯২ শতাংশ) পাকা রাস্তা রয়েছে এবং উনিশটি গ্রামে (৩৬ শতাংশ) পরিবহন যোগাযোগ (বাস ও রেল পরিষেবা এবং নাব্য জলপথ) সুলভ। তিনটি গ্রামে (৫.৭৭ শতাংশ) কৃষি ঋণ সংস্থা এবং ছয়টি গ্রামে (১১.৫৪ শতাংশ) ব্যাংক পরিষেবা সুলভ।[20]
কৃষি
১৯৪৬ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে শুরু হওয়া তেভাগা আন্দোলনে বৃহত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এরপর কৃষকদের ভূম্যধিকার রক্ষার তাগিদে অপারেশন বর্গা কর্মসূচি গৃহীত হয়। বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ১১১.০৩ একর জমি অধিগৃহীত ও তার স্থায়ী অধিয়াক্র অর্পিত হয়েছে। অর্পিত জমির মধ্যে ৮৪.৮১ একর (৭৬.৮৮ শতাংশ) বণ্টিত হয়েছে। মোট পাট্টাদারের সংখ্যা ৪২৪।[21]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, ব্লকে মোট ২১টি ফার্টিলাইজার ডিপো, ৩৭টি সিড স্টোর ও ৪৪টি রেশন দোকান আছে।[22]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, এই ব্লকের ১,৯৫৩ হেক্টর জমিতে প্রধান শীতকালীন ফসল আমন ধান উৎপাদিত হয়েছিল ৭৫২ টন এবং ৫৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফসল বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছিল ১,৭১২ টন।[22]
মৎস্যচাষ
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট ১,২২৫ হেক্টর এলাকায় কার্যকরীভাবে মৎস্যচাষ করা হয়। এই পেশায় মোট ৯,৯৮৫ জন যুক্ত এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫,৯৪০ টন।[22] উল্লেখ্য, মৎস্যচাষ সমগ্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলারই জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ২০০১ সালের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি লোক এই জেলায় মৎস্যচাষের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে ২.৫৭ লক্ষ মানুষের বাস সুন্দরবন বসতি অঞ্চলের তেরোটি ব্লকে।[23]
ব্যাংক পরিষেবা
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে চোদ্দোটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয় রয়েছে।[22]
অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা অনুন্নত অঞ্চলের তালিকাভুক্ত। এই জেলাটি অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। ভারত সরকার সৃষ্ট এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট ২৭২টি জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের এগারোটি জেলা রয়েছে।[24][25]
পরিবহণ ব্যবস্থা
বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ১১টি প্রান্তিক বাস রুট রয়েছে। নিকটবর্তী রেল স্টেশনটি ব্লক সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।[22]
শিক্ষাব্যবস্থা
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ১০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯,২২৩ জন, তিনটি মধ্য বিদ্যালয়ে ৫০৪ জন, এগারোটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫,৩৫৬ হন এবং বারোটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০,৫৮৪ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করত। ব্লকের একটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ২,২৮১ জন, একটি প্রযুক্তিগত/পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯৯ জন এবং বিশেষ ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ৩২০টি প্রতিষ্ঠানে ১১,৫৬১ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে।[22]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৫২টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে দু’টি গ্রামে কোনও বিদ্যালয় নেই, ২৮টি গ্রামে দুই বা ততোধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, ষোলোটি গ্রামে অন্তত একটি প্রাথমিক ও একটি মধ্য বিদ্যালয় আছে এবং তেরোটি গ্রামে অন্তত একটি মধ্য ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে।[26]
ব্লকের একমাত্র সাধারণ ডিগ্রি কলেজটি হল বিদ্যানগর কলেজ। ১৯৬৩ সালে বিদ্যানগরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।[27]
স্বাস্থ্য পরিষেবা
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কিছু কিছু অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক-দূষিত।[28] জেলার বারোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ভূগর্ভস্থ হলে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে। যে সব এলাকার ভূগর্ভস্থ হলে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিকের (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মান হল প্রতি লিটারে দশ মাইক্রোগ্রাম) তুলনায় বেশি, সেখানকার টিউবওয়েল থেকে জলের নমুনা সংগৃহীত হয়েছে। আর্সেনিক-দূষিত সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলি হল: বারুইপুর, ভাঙর ১, ভাঙড় ২, বিষ্ণুপুর ১, বিষ্ণুপুর ২, বাসন্তী, বজবজ ২, ক্যানিং ১, ক্যানিং ২, সোনারপুর, মগরাহাট ১ ও মগরাহাট ২। [29]
২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে একটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং আঠারোটি বেসরকারি নার্সিং হোমে মোট ২১৫টি শয্যা ও ৩৯ জন ডাক্তার (বেসরকারি বাদে) সুলভ ছিল। ব্লকে মোট ২৬টি পরিবার কল্যাণ উপকেন্দ্র রয়েছে এবং হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলির অন্তর্বিভাগে ১,৭৭৪ জন এবং বহির্বিভাগে ১৩১,২৭৫ জন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।[22]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের দু’টি গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এগারোটি গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, সাতটি গ্রামে মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং এগারোটি গ্রামে ওষুধের দোকান আছে। মোট ৫২টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে উনিশটি গ্রামে কোনও ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া যায় না।[30]
আমতলায় অবস্থিত ৫০টি শয্যাবিশিষ্ট আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল হল এই ব্লকের প্রধান সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র। নহাজারি ডাকঘর এলাকায় সামালি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দশটি শয্যা রয়েছে। এছাড়া চরশ্যামদাস ডাকঘর এলাকায় মৌখালিতেও একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এটি ছয় শয্যাবিশিষ্ট।[31][32][33]
তথ্যসূত্র
- "Fact and Figures"। Wb.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯।
- "52nd REPORT OF THE COMMISSIONER FOR LINGUISTIC MINORITIES IN INDIA" (পিডিএফ)। Nclm.nic.in। Ministry of Minority Affairs। পৃষ্ঠা 85। ২৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯।
- "BDO Offices under South 24 Parganas District"। West Bengal Public Library Network, Government of West Bengal। ৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "District Census Handbook: South 24 Parganas, Series 20, Part XII B" (পিডিএফ)। Map of South 24 Parganas with CD block HQs and Police Stations (on the fourth page)। Directorate of Census Operations, West Bengal, 2011। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "South Twenty-four Parganas"। CD block/ tehsil map। Maps of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "District Statistical Handbook 2014 South 24 Parganas"। Table No. 2.1, 2.2। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "Blocks and Gram Panchayats in South 24 Parganas"। South 24 Parganas District Administration। ২৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৬।
- "CD block Wise Primary Census Abstract Data(PCA)"। 2011 census: West Bengal – District-wise CD blocks। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৬।
- "District Statistical Handbook – 2010-11 – South 24 Parganas"। South 24 Parganas at a glance, Tables 2.2, 2.4 (b), 4.5। Bureau of Applied Economics and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৬।
- "Provisional Population Totals, West Bengal. Table 4"। Census of India 2001 – South 24 Parganas। Census Commission of India। জুলাই ১৯, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২০।
- "Provisional Population Totals, West Bengal. Table 4"। Census of India 2001। Census Commission of India। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২০।
- "District Census 2011"। Population Census 2011। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬।
- "Provisional population tables and annexures" (পিডিএফ)। Census 2011:Table 2(3) Literates and Literacy rates by sex। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- "Census of India 2011, West Bengal, District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, Series – 20, Part XII-A, Village and Town Directory" (পিডিএফ)। Page 53, Table 11: Population by Mother-tongue in South 24 Parganas district 1961-2001। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "C1 Population by Religious Community"। West Bengal। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৬।
- "District Census Handbook South Twentfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Pages 52-53: Religion। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৮।
- "District Human Development Report: South 24 Parganas"। Pages 42-43, Chapter 3.8: Poverty Scenario in South 24 Parganas। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook South Twentyfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 33: Distribution of Workers by Sex in Four Categories of Economic Activity in Sub-district 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook South Twentyfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 30: Number and percentage of Main workers, Marginal workers and Non workers by Sex, in Sub-districts, 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 111, Table 36: Distribution of villages according to availability of different amenities, 2011। Directorate of Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Human Development Report: South 24 Parganas"। (1) Chapter 1.2, South 24 Parganas in Historical Perspective, pages 7-9 (2) Chapter 3.4, Land reforms, pages 32-33। Development & Planning Department, Government of West Bengal, 2009। ২০১৬-১০-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৯।
- "District Statistical Handbook 2014 South 24 Parganas"। Table No. 16.1, 18.1, 18.3, 20.1, 21.2, 4.4, 3.1, 3.2, 3.3 – arranged as per use। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Human Development Report: South 24 Parganas"। Pages 76 , Chapter 4.5.2: Non-agriculture, (i) Pisciculture। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Backward Regions Grant Funds: Programme Guidelines" (পিডিএফ)। Ministry of Panchayati Raj, Government of India। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Backward Regions Grant Fund"। Press Release, 14 June 2012। Press Information Bureau, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook, South 24 Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 931-932, Appendix I A: Villages by number of Primary Schools and Appendix I B: Villages by Primary, Middle and Secondary Schools। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৯।
- "Vidyanagar College"। College Search। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৯।
- "Groundwater Arsenic contamination in West Bengal-India (19 years study)"। Groundwater arsenic contamination status of North 24-Parganas district, one of the nine arsenic affected districts of West Bengal-India। SOES। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৮।
- "High arsenic levels in South"। The Statesman, 24 June 2007। ২০০৭-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৮।
- "District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Pages 927-929, Appendix I: Summary showing total number of villages having Educational, Medical and other amenities – CD block level। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৯।
- "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Rural Hospitals। Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।
- "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Block Primary Health Centres। Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।
- "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Primary Health Centres। Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।