বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক হল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আলিপুর সদর মহকুমার একটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক। ব্লকটির সদর বিষ্ণুপুরে অবস্থিত।[3]
বিষ্ণুপুর ১ | |
---|---|
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক | |
বিষ্ণুপুর ১ বিষ্ণুপুর ১ | |
স্থানাঙ্ক: ২২.৩৮১২° উত্তর ৮৮.২৬৮০° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
মহকুমা | আলিপুর সদর |
আয়তন | |
• মোট | ১১৬.৩৬ বর্গকিমি (৪৪.৯৩ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৯ মিটার (৩০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২,৩২,৩৬৫ |
• জনঘনত্ব | ২,০০০/বর্গকিমি (৫,২০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা[1][2] |
• অতিরিক্ত সরকারি | ইংরেজি[1] |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫.৩০) |
পিন কোড | ৭৪৩৫০৩ |
টেলিফোন কোড | +৯১ ৩৩ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি-১৯ থেকে ডব্লিউবি-২২, ডব্লিউবি-৯৫ থেকে ডব্লিউবি-৯৯ |
লোকসভা কেন্দ্র | ডায়মন্ড হারবার |
বিধানসভা কেন্দ্র | বিষ্ণুপুর (তফসিলি জাতি) |
ওয়েবসাইট | www |
ভূগোল
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অবস্থান ২২.৩৮১২° উত্তর ৮৮.২৬৮০° পূর্ব অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই অঞ্চলটির গড় উচ্চতা ৯ মিটার (৩০ ফু)।
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উত্তর দিকে আলিপুর সদর মহকুমার ঠাকুরপুকুর মহেশতলা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, পূর্ব দিকে বারুইপুর মহকুমার সোনারপুর ও বারুইপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক দু’টি, দক্ষিণ দিকে ডায়মন্ড হারবার মহকুমার মগরাহাট ১ ও মগরাহাট ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক দু’টি এবং পশ্চিম দিকে আলিপুর সদর মহকুমার বিষ্ণুপুর ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অবস্থিত।[4][5]
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডিস্ট্রিক্ট স্ট্যাস্টিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক-এ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ১১৬.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। এই ব্লকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি, এগারোটি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৬৮টি গ্রাম সংসদ, ৮৭টি মৌজা, ৮৪টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। সমগ্র ব্লকটি বিষ্ণুপুর থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অন্তর্গত।[6]
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল: আমগাছিয়া, আঁধারমানিক, ভাণ্ডারিয়া কাস্তেকুমারী, দক্ষিণ গৌরীপুর চকধীর, জুলপিয়া, কেওড়ডাঙা, কুলেরদাড়ি, পানাকুয়া, পশ্চিম বিষ্ণুপুর, পূর্ব বিষ্ণুপুর ও রসখালি।[7]
জনপরিসংখ্যান
জনসংখ্যা
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জনসংখ্যা ২৩২,৩৬৫; এর মধ্যে গ্রামীণ জনসংখ্যা ২০৪,৩৮৫ এবং শহরাঞ্চলীয় জনসংখ্যা ২৭,৯৮০। ব্লকে মোট পুরুষের সংখ্যা ১১৮,৭১৭ (মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ) এবং মোট মহিলার সংখ্যা ১১৩,৬৪৮ (মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ)। ২৬,৯৯৩ জনের বয়স ছয় বছরের কম। তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্তদের সংখ্যা ১০৮,৪৩২ (৪৬.৬৬ শতাংশ) এবং তফসিলি উপজাতি-তালিকাভুক্তদের সংখ্যা ১০০ (০.০৪ শতাংশ)।[8]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ছিল ২০৬,২৭৬; এর মধ্যে ১০৬,৪৭১ জন ছিলেন পুরুষ এবং ৯৯,৮০৫ জন মহিলা। ১৯৯১-২০০১ দশকে এই ব্লকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নথিবদ্ধ হার ছিল ১৫.৩৩ শতাংশ। উল্লেখ্য, উক্ত দশকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ২০.৮৯ শতাংশ ও ১৭.৮৪ শতাংশ। ২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্লকে তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্তদের সংখ্যা ছিল ১০০,৫৩৯ (মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ) এবং তফসিলি উপজাতি-তালিকাভুক্তদের সংখ্যা ছিল ১,৬৪২।[9][10][11]
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত জনগণনা নগরগুলি হল (২০১১ সালের জনসংখ্যা বন্ধনীতে দেওয়া হল): দৌলতপুর (৬,৫৬৮), ভাসা (৫,৫৫৯), বিষ্ণুপুর (৫,০৩০) ও কন্যানগর (১০,৮২৩)।[8]
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বড়ো গ্রামগুলি (৪,০০০ বা ততোধিক জনসংখ্যা-বিশিষ্ট) হল (২০১১ সালের জনসংখ্যা বন্ধনীতে দেওয়া হল): খড়িবেড়িয়া (৪,০০৭), বাগি (৭,২৩৫), বকেশ্বর (৪,৯৪০), আমগাছি (১০,১৭৯), গন্ধবাদুলি (৪,১৯৪), দক্ষিণ গৌরীপুর (৯,০৬৪), কাষ্ঠমহল (৫,১৫৬), কমলিখালি (৪,৮০৪), কেওড়াডাঙা (৪,২০৫), রসখালি (৯,৩৯৯) ও আঁধারমানিক (৬,৬৭৬)।[8]
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্যান্য গ্রামগুলি হল (২০১১ সালের জনসংখ্যা বন্ধনীতে দেওয়া হল): চকধীর (১,২৩৯), পানাকুয়া (৩,৭৯৩), জুলপিয়া (২,৯৬৮), ভাণ্ডারিয়া (৩,৮৮৩), কাস্তেকুমারী (৩,১০০), কুলেরদাড়ি (২,৫১১) ও দৌলতাবাদ (৩,৬৪৯)।[8]
সাক্ষরতা
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১৬০,৮৭১ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী জনসংখ্যার ৭৮.২১ শতাংশ); এর মধ্যে সাক্ষর পুরুষের সংখ্যা ৮৯,২৩১ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী পুরুষ জনসংখ্যার ৮৫.০৩ শতাংশ) এবং সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৭১,৬৪০ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মহিলা জনসংখ্যার ৭১.২৯ শতাংশ)। লিঙ্গবৈষম্য (মহিলা ও পুরুষ সাক্ষরতার হারের পার্থক্য) ছিল ১৩.৭৪ শতাংশ।[8] উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সাক্ষরতার হার ৭৭.৫১ শতাংশ,[12] যেখানে পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ৭৭.০৮ শতাংশ[13] এবং ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ।[13]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে অন্যূন ছয় বছর বয়সীদের ৭১.৯৩ শতাংশ ছিল সাক্ষর। পুরুষ সাক্ষরতার হার ছিল ৮২.৪৭ শতাংশ এবং মহিলা সাক্ষরতার হার ছিল ৬০.৬১ শতাংশ। উক্ত জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সাক্ষরতার হার ছিল ৬৯.৪৫ শতাংশ, পুরুষ সাক্ষরতার হার ছিল ৭৯.১৯ শতাংশ ও মহিলা সাক্ষরতার হার ছিল ৫৯.০১ শতাংশ।[9]
টেমপ্লেট:দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলিতে সাক্ষরতা
ভাষা ও ধর্ম
২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট জনংখ্যার ৯৭.৯ শতাংশের মাতৃভাষা বাংলা; ১.৫ শতাংশের মাতৃভাষা হিন্দি, ০.৩ শতাংশের মাতৃভাষা উর্দু এবং ওড়িয়া ও তেলুগু-ভাষী লোকের সংখ্যা ০.১ শতাংশ করে।[14]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট হিন্দু জনসংখ্যা ১৪৭,৬৩৬ (মোট জনসংখ্যার ৬৩.৪৬ শতাংশ), মোট মুসলমান জনসংখ্যা ৭২,২১৯ (মোট জনসংখ্যার ৩১.০৪ শতাংশ) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ১২,৭৮০ (মোট জনসংখ্যার ৫.৫০ শতাংশ)। এই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ১২,২৩৫।[15] উল্লেখ্য, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় ১৯৬১ সালে হিন্দু জনসংখ্যার হার ছিল ৭৬.০ শতাংশ; ২০১১ সালে তা কমে হয় ৬৩.২ শতাংশ। একই সময়কালে জেলার মুসলমান জনসংখ্যার হার ২৩.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ৩৫.৬ শতাংশ। ২০১১ সালে জেলায় খ্রিস্টান জনসংখ্যার হার ছিল ০.৮ শতাংশ।[16]
গ্রামীণ দারিদ্র্য
২০০৯ সালে প্রকাশিত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মানবোন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ১৬.৫৯ শতাংশ পরিবারের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে। ২০০৫ সালে আয়োজিত একটি গ্রামীণ পরিবার সমীক্ষায় জানা যায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট ৩৪.১১ শতাংশ পরিবারের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে, যে হার রাজ্য বা জাতীয় হারের তুলনায় অনেকটাই বেশি। সুন্দরবনের জনবসতি অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার অত্যধিক। এই অঞ্চলের অন্তর্গত তেরোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে দারিদ্র্যের অনুপাত ৩০ শতাংশের বেশি এবং আটটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৪০ শতাংশেরও বেশি পরিবারের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার নিচে।[17]
অর্থনীতি
জীবিকা
২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট শ্রমজীবীর মধ্যে কৃষকদের সংখ্যা ৮,৩৪২ (মোট শ্রমজীবীদের ৯.৯০ শতাংশ), কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা ১৫,৬৮৭ (মোট শ্রমজীবীদের ১৮.৬২ শতাংশ), কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সংখ্যা ১৩,৭১৮ (মোট শ্রমজীবীদের ১৬.২৮ শতাংশ) এবং অন্যান্য শ্রমিকের সংখ্যা ৪৬,৪৯৩ (মোট শ্রমজীবীদের ৫৫.১৯ শতাংশ)।[18] এই সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট শ্রমজীবীর সংখ্যা ৮৪,২৪০, যা মোট জনসংখ্যার ৩৬.২৫ শতাংশ এবং অ-শ্রমজীবীর সংখ্যা ১৪৫,১২৫, যা মোট জনসংখ্যার ৬৩.৭৫ শতাংশ।[19]
পরিকাঠামো
ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, সাউথ টোয়েন্টি-ফোর পরগনাস, ২০১১-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট ৮৪টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম আছে। ১০০ শতাংশ গ্রামেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ৮৩টি গ্রামে (৯৮.৮১ শতাংশ) পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। উনিশটি গ্রামে (২২.৬২ শতাংশ) ডাকঘর রয়েছে। ৭৮টি গ্রামে (৯২.৮৬ শতাংশ) টেলিফোন সংযোগ (ল্যান্ডলাইন, পাবলিক কল অফিস ও মোবাইল ফোন-সহ) রয়েছে। ৪৮টি গ্রামে (৫৭.১৪ শতাংশ) পাকা রাস্তা রয়েছে এবং ২৫টি গ্রামে (২৯.৭৬ শতাংশ) পরিবহন যোগাযোগ (বাস পরিষেবা, রেল পরিষেবা ও নাব্য জলপথ) রয়েছে। একটি গ্রামে (১.১৯ শতাংশ) কৃষি ঋণ সংস্থা এবং চারটি গ্রামে (৪.৭৬ শতাংশ) ব্যাংক রয়েছে।[20]
কৃষি
১৯৪৬ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে শুরু হওয়া তেভাগা আন্দোলনে বৃহত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এরপর কৃষকদের ভূম্যধিকার রক্ষার তাগিদে অপারেশন বর্গা কর্মসূচি গৃহীত হয়। বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ২০৫.৯২ একর জমি অধিগৃহীত এবং তার স্থায়ী অধিকার অর্পিত হয়। অর্পিত জমির ৮৭.৭৭ একর বা ৪২.৬২ শতাংশ বণ্টিত হয়েছিল। মোট ৪২৪ জন জমির পাট্টা অর্থাৎ নথিপত্র পেয়েছিলেন।[21]
২০১৩-১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৪৫টি ফার্টিলাইজার ডিপো, ২৭টি সিড স্টোর এবং ৪৭টি রেশন দোকান আছে।[22]
২০১৩-১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ১,০২১ হেক্টর জমিতে প্রধান শীতকালীন ফসল আমন ধান উৎপাদিত হয় ৭৫২ টন এবং ৭,১৫৮ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফসল বোরো ধান উৎপাদিত হয় ২২,৪৬৮ টন।[22]
সেচব্যবস্থা
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট ৯১.৫৯ হেক্টর জমিতে নদী থেকে জলসেচের ব্যবস্থা রয়েছে।[22]
মৎস্যচাষ
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট ৩৭৬ হেক্টর এলাকা জুড়ে মৎস্যচাষ করা হয়। মোট ৫,০৬৫ জন এই পেশায় নিযুক্ত এবং বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ২৩,১২০ কুইন্টাল।[22] উল্লেখ্য, মৎস্যচাষ সমগ্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলারই জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ২০০১ সালের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি লোক এই জেলায় মৎস্যচাষের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে ২.৫৭ লক্ষ মানুষের বাস সুন্দরবন বসতি অঞ্চলের তেরোটি ব্লকে।[23]
ব্যাংক পরিষেবা
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও পাঁচটি গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয় রয়েছে।[22]
অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা অনুন্নত অঞ্চলের তালিকাভুক্ত। এই জেলাটি অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। ভারত সরকার সৃষ্ট এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট ২৭২টি জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের এগারোটি জেলা রয়েছে।[24][25]
পরিবহণ ব্যবস্থা
বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে চোদ্দোটি প্রান্তিক বাস রুট রয়েছে। নিকটতম রেল স্টেশনটি ব্লক সদরের থেকে চোদ্দো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।[22]
শিক্ষাব্যবস্থা
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ১০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ১০,৩১৮ জন ছাত্রছাত্রী, সতেরোটি মধ্য বিদ্যালয়ে মোট ১,৯৩৬ জন ছাত্রছাত্রী, পাঁচটি উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ১,১৮৮ জন ছাত্রছাত্রী এবং তেরোটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট ১০,৫৮৬ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। ব্লকের মোট তিনটি প্রযুক্তিগত/পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ১,৮০৬ জন ছাত্রছাত্রী এবং বিশেষ ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত মোট ৩৩৭টি প্রতিষ্ঠানে মোট ১১,৫৫৭ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন।[22]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৮৪টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে চারটি গ্রামে কোনও বিদ্যালয় নেই, ৩২টি গ্রামে দুই বা ততোধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, ৩১টি গ্রামে অন্তত একটি প্রাথমিক ও একটি মধ্য বিদ্যালয় রয়েছে এবং উনিশটি গ্রামে অন্তত একটি মধ্য ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[26]
স্বাস্থ্য পরিষেবা
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কিছু কিছু অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক-দূষিত।[27] জেলার বারোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ভূগর্ভস্থ হলে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে। যে সব এলাকার ভূগর্ভস্থ হলে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিকের (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মান হল প্রতি লিটারে দশ মাইক্রোগ্রাম) তুলনায় বেশি, সেখানকার টিউবওয়েল থেকে জলের নমুনা সংগৃহীত হয়েছে। আর্সেনিক-দূষিত সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলি হল: বারুইপুর, ভাঙর ১, ভাঙড় ২, বিষ্ণুপুর ১, বিষ্ণুপুর ২, বাসন্তী, বজবজ ২, ক্যানিং ১, ক্যানিং ২, সোনারপুর, মগরাহাট ১ ও মগরাহাট ২। [28]
২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল, একটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ও পাঁচটি বেসরকারি নার্সিং হোম রয়েছে। মোট শয্যাসংখ্যা ১২৬ ও চিকিৎসকের সংখ্যা ২১ (বেসরকারি বাদে)। ব্লকে মোট ২৮টি পরিবার কল্যাণ উপকেন্দ্র রয়েছে। ব্লকের হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলির অন্তর্বিভাগে ২৬,১৫৬ জন এবং বহির্বিভাগে ২০৯,৭২৯ জন রোগী চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।[22]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সাতটি গ্রামে একটি সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, দু’টি গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩৪টি গ্রামে প্রাথমি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, দু’টি গ্রামে মাতৃ ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং ১৮টি গ্রামে ওষুধের দোকান রয়েছে। মোত ৮৪টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে ২৯টি গ্রামে কোনও রকম স্বাস্থ্য পরিষেবা সুলভ নয়।[29]
চণ্ডী-দৌলতাবাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এই ব্লকের নেপালগঞ্জ ডাকঘর এলাকায় অবস্থিত। এই দশ শয্যাবিশিষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্রটি বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের প্রধান সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এছাড়া এই ব্লকের জুলপিয়া (ডাকঘর – আঁধারমানিক) ও আমগাছিতে (ডাকঘর – নেপালগঞ্জ) দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এই দু’টির প্রথমটি ছয় শয্যাবিশিষ্ট এবং দ্বিতীয়টি দশ শয্যাবিশিষ্ট।[30][31][32]
তথ্যসূত্র
- "Fact and Figures"। Wb.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯।
- "52nd REPORT OF THE COMMISSIONER FOR LINGUISTIC MINORITIES IN INDIA" (পিডিএফ)। Nclm.nic.in। Ministry of Minority Affairs। পৃষ্ঠা 85। ২৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯।
- "BDO Offices under South 24 Parganas District"। West Bengal Public Library Network, Government of West Bengal। ৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "District Census Handbook: South 24 Parganas, Series 20, Part XII B" (পিডিএফ)। Map of South 24 Parganas with CD block HQs and Police Stations (on the fourth page)। Directorate of Census Operations, West Bengal, 2011। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "South Twenty-four Parganas"। CD block/ tehsil map। Maps of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "District Statistical Handbook 2014 South 24 Parganas"। Table No. 2.1, 2.2। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- "Blocks and Gram Panchayats in South 24 Parganas"। South 24 Parganas District Administration। ২৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৬।
- "CD block Wise Primary Census Abstract Data(PCA)"। 2011 census: West Bengal – District-wise CD blocks। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৬।
- "District Statistical Handbook – 2010-11 – South 24 Parganas"। South 24 Parganas at a glance, Tables 2.2, 2.4 (b), 4.5। Bureau of Applied Economics and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৬।
- "Provisional Population Totals, West Bengal. Table 4"। Census of India 2001 – South 24 Parganas। Census Commission of India। জুলাই ১৯, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২০।
- "Provisional Population Totals, West Bengal. Table 4"। Census of India 2001। Census Commission of India। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২০।
- "District Census 2011"। Population Census 2011। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬।
- "Provisional population tables and annexures" (পিডিএফ)। Census 2011:Table 2(3) Literates and Literacy rates by sex। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- "Census of India 2011, West Bengal, District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, Series – 20, Part XII-A, Village and Town Directory" (পিডিএফ)। Page 53, Table 11: Population by Mother-tongue in South 24 Parganas district 1961-2001। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "C1 Population by Religious Community"। West Bengal। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৬।
- "District Census Handbook South Twentfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Pages 52-53: Religion। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৮।
- "District Human Development Report: South 24 Parganas"। Pages 42-43, Chapter 3.8: Poverty Scenario in South 24 Parganas। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook South Twentyfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 33: Distribution of Workers by Sex in Four Categories of Economic Activity in Sub-district 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook South Twentyfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 30: Number and percentage of Main workers, Marginal workers and Non workers by Sex, in Sub-districts, 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 111, Table 36: Distribution of villages according to availability of different amenities, 2011। Directorate of Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Human Development Report: South 24 Parganas"। (1) Chapter 1.2, South 24 Parganas in Historical Perspective, pages 7-9 (2) Chapter 3.4, Land reforms, pages 32-33। Development & Planning Department, Government of West Bengal, 2009। ২০১৬-১০-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৯।
- "District Statistical Handbook 2014 South 24 Parganas"। Table No. 16.1, 18.1, 18.3, 20.1, 21.2, 4.4, 3.1, 3.2, 3.3 – arranged as per use। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Human Development Report: South 24 Parganas"। Pages 76 , Chapter 4.5.2: Non-agriculture, (i) Pisciculture। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Backward Regions Grant Funds: Programme Guidelines" (পিডিএফ)। Ministry of Panchayati Raj, Government of India। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Backward Regions Grant Fund"। Press Release, 14 June 2012। Press Information Bureau, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "District Census Handbook, South 24 Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 931-932, Appendix I A: Villages by number of Primary Schools and Appendix I B: Villages by Primary, Middle and Secondary Schools। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৯।
- "Groundwater Arsenic contamination in West Bengal-India (19 years study)"। Groundwater arsenic contamination status of North 24-Parganas district, one of the nine arsenic affected districts of West Bengal-India। SOES। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৮।
- "High arsenic levels in South"। The Statesman, 24 June 2007। ২০০৭-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৮।
- "District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Pages 927-929, Appendix I: Summary showing total number of villages having Educational, Medical and other amenities – CD block level। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৯।
- "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Rural Hospitals। Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।
- "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Block Primary Health Centres। Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।
- "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Primary Health Centres। Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।