বিষ্ণুপুরাণ

বিষ্ণু পুরাণ (সংস্কৃত: विष्णुपुराण) অষ্টাদশ হিন্দু মহাপুরাণের অন্যতম তথা একটি প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। পরাশর ও তার শিষ্য মৈত্রেয়ের মধ্যে কথোপকথনরূপে বিধৃত এই পুরাণ ছয়টি অংশে বিভক্ত। মূল উপজীব্য বিষয় বিশ্বসৃষ্টি, দেবাসুরের সংগ্রামকাহিনি, বিষ্ণুর অবতারদের কথা ও কিংবদন্তি রাজাদের বংশবৃত্তান্ত।

বিষ্ণুপুরাণ
তথ্য
ধর্মহিন্দুধর্ম
রচয়িতাঋষি পরাশর
ভাষাসংস্কৃত
অধ্যায়১২৬
শ্লোক২৩,০০০

মনে করা হয়, এই পুরাণের শ্লোকসংখ্যা ২৩,০০০। যদিও পুরাণে প্রাপ্ত শ্লোকের আসল সংখ্যা সাত হাজারেরও কম। পূর্ব ও পশ্চিম ভারতে বিশেষ স্থানীয় গুরুত্বসহকারে রচিত পুথিগুলির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই এবং তাদের কোনো অংশই অনাবিষ্কৃত থাকেনি। মূল পাঠ ও টীকা উভয় ক্ষেত্রেই একটি সূচনা, মধ্যাংশ ও সমাপ্তি-অংশ দেখা যায়। এবং এই রচনা যে সম্পূর্ণ তা নিয়েও কোনো মতদ্বৈধতা নেই। এই রকম বিপরীতধর্মী ঘটনার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণও অবশ্য জানা যায়নি।

বিষয়বস্তু

গ্রন্থের আরম্ভ হয় সৃষ্টি ও চার যুগের বর্ণনা দিয়ে। এছাড়াও প্রথম অংশে আলোচিত হয়েছে, রুদ্রের কাহিনী, সমুদ্র মন্থনের কথা, বিষ্ণুর পরমভক্ত ধ্রুবের কাহিনি ও প্রাচীন রাজা বেণপৃথুর উপাখ্যান। পরবর্তী অংশের উপজীব্য পৃথুর উত্তরাধিকার প্রচেতাদের কাহিনি, হিরণ্যকশিপুপ্রহ্লাদের প্রসিদ্ধ উপাখ্যান, বিভিন্ন অঞ্চল, জাতি, পর্বত ও নদী সহ পরিচিত বিশ্বের কিছু ভৌগোলিক বিবরণ, বিশ্বধারণা ও জড়ভরতের বিভিন্ন জন্মের কাহিনি। তৃতীয় অংশের আলোচ্য বিষয় মন্বন্তর, ব্যাসদেবযাজ্ঞবল্ক্য ঋষি, সূর্য, যম, ভক্ত শতধনুশৈব্য, চতুর্বর্ণচতুরাশ্রমের কথা। চতুর্থ অংশে প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত সূর্য ও চন্দ্রবংশের রাজাদের বিবরণ লিখিত আছে। এছাড়াও কলিযুগে ‘আবির্ভূত হবেন’ এমন কিছু রাজার তালিকাও দেওয়া হয়েছে। আর একটি তালিকায় রয়েছে শিশুনাগ, নন্দমৌর্য প্রভৃতি মগধ রাজাদের কথা। পরবর্তী অংশে জন্ম থেকে যদুবংশ ধ্বংস পর্যন্ত কৃষ্ণজীবনী আলোচিত হয়েছে। ষষ্ঠ ও শেষ অংশে ভাবী কলিকালে সৃষ্টি ধ্বংস তথা পুরাণসকলের গুরুত্বের কথা আলোচিত হয়েছে।

কলিযুগের রাজারা দুর্নীতিপরায়ণ হবেন এবং তাঁদের প্রজাদের সম্পত্তি দখল করতে থাকবেন। তখন মর্যাদার একমাত্র মাপকাঠি হবে সম্পত্তি ও অর্থ; মিথ্যাই হবে সাফল্যের প্রধান মাধ্যম। জীবনধারণের সর্বজনমান্য পন্থা হবে দুর্নীতি। শেষে অর্থলোলুপ রাজাদের সমর্থন করতে না পেরে কলিযুগের মানুষেরা পর্বতমধ্যস্থ উপত্যকায় আশ্রয় নেবে।

বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ একটি পৃথক পুরাণ যা আলোচ্য পুরাণের একটি পরিশিষ্টাংশ।

হোরাস হেম্যান উইলসন এই পুরাণকে প্রাচীনতম পুরাণ বলে মনে করেন। তার মতে প্রথম খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই গ্রন্থের রচনা।[1] যদিও গেভিন ফ্লাডের মতে, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে এই পুরাণ রচিত হয়।

পাদটীকা

  1. Wilson (2006), p. xii.

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

  • Mani, Vettam. Puranic Encyclopedia. 1st English ed. New Delhi: Motilal Banarsidass, 1975.

আরও দেখুন

  • রামের বংশবৃত্তান্ত
  • কৃষ্ণের বংশবৃত্তান্ত

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.