বিশ্বশান্তি সূচক

বিশ্বশান্তি সূচক (ইংরেজি: Global Peace Index) বা জিপিআই বিভিন্ন নির্দেশক ব্যবহারের মাধ্যেম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক পর্যায়ের শান্তির অবস্থান নির্ণয় করে। ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস (আইইপি) কর্তৃক প্রতি বছর এ সূচক প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শান্তি বিশেষজ্ঞদের সংগঠন, বিভিন্ন স্তরের বুদ্ধিজীবী, উপাত্তের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বিশ্বশান্তি সূচক তৈরী করা হয়।

বিশ্ব মানচিত্রে শান্তিপ্রিয় দেশসমূহের অবস্থান; অধিকতর লাল রঙে চিত্রিত দেশগুলোয় কম শান্তি বিরাজমান

তালিকাটি প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল মে, ২০০৭ সালে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সাংবাৎসরিকভিত্তিতে বিশ্বশান্তি সূচক প্রকাশ করা হয়। কর্তৃপক্ষ দাবী করছে যে, ২০১২ সালে বিশ্বের ১৫৮টি দেশের পরিস্থিতির গতিধারার উপর শান্তির সূচকে প্রভাব ফেলা হয়।[1] ২০১১ সালে ১৫৩ দেশকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছিল যা ২০০৭ সালে ছিল ১২১টি দেশ।

গবেষণাটি অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোক্তা স্টিভ কিলেলিয়া'র মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন - কফি আনান, দালাই লামা, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, সাবেক ফিনিশ প্রেসিডেন্ট মার্তি আহতিসারি, মুহাম্মদ ইউনুস, অর্থনীতিবিদ জেফ্রে সাচ, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসন এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার

কর্তৃপক্ষ সূচকে ব্যবহৃত নির্দেশকসহ দেশের অভ্যন্তরে নির্দেশক হিসেবে সহিংসতার মাত্রা এবং অপরাধ প্রবণতার উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সামরিক ব্যয় এবং যুদ্ধ-কৌশলকে প্রধান মানদণ্ড ধরেছেন। প্রতিবছর সূচকটি একযোগে লন্ডন, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্কস্থিত জাতিসংঘ কার্যালয় এবং ব্রাসেলসে প্রকাশ করা হয়।

সূচকের ধারণা

শান্তি ক্ষেত্রে অবস্থানরত প্রাতিষ্ঠানিক এবং অভিজ্ঞদের সাথে নিয়ে আর্থিক বুদ্ধিমত্তা ইউনিটের নেতৃত্বে একদল গবেষক কাজ করছেন। তাঁরা বিশ্বের সর্বত্র শান্তিক্ষেত্রে ব্যবহৃত ২৩টি নির্দেশককে পরিমাপক হিসেবে নিয়েছেন। ২০০৮ সালের পূর্বে নির্দেশক ছিল ২৪টি। নিচের সারণীতে নির্দেশকগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।[2]

ক্রমিক নং
নির্দেশক
উৎসস্থল
সাল
সঙ্কেত
১।বহিঃস্থ ও অভ্যন্তরীণ যুদ্ধইউসিডিপি২০০৪-২০০৯মোট নম্বর[3]
২।বহিঃস্থ যুদ্ধে মৃত্যুইউসিডিপি২০১০মোট নম্বর[3]
৩।অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে মৃত্যুইউসিডিপি২০১০মোট নম্বর[3]
৪।অভ্যন্তরীণ সংঘাতের স্তরইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
৫।প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্কইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
৬।সমাজে অপরাধের মাত্রাইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
৭।উদ্বাস্তু ও বহিষ্কৃত নাগরিকের সংখ্যাইউএনএইচসিআর ও আইডিএমসি২০০৯-২০১০নাগরিক হিসেবে উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর শতাংশের হার
৮।রাজনৈতিক স্থিরতাইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
৯।মানবাধিকারে শ্রদ্ধা প্রদর্শনঅ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল২০০৯গুণবাচক পরিমাপক
১০।সন্ত্রাসবাদ আইনইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
১১।নরহত্যার সংখ্যাইউএনসিটিএস২০০৫-২০০৯শিশুহত্যাসহ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নরহত্যা
১২।সন্ত্রাসী অপরাধের মাত্রাইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
১৩।সন্ত্রাসে নির্দেশনাইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
১৪।কারাগারে আটক ব্যক্তির সংখ্যাআইসিপিএস২০১০কারারুদ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা
১৫।পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার সংখ্যাইউএনসিটিএস২০০৮-২০১০সরকারি নিরাপত্তা কর্মকর্তার সংখ্যা[4]
১৬।জিডিপি'র শতাংশে সামরিক ব্যয়আইআইএসএস২০০৯-২০১০আর্থিক লেনদেন[5]
১৭।সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যাআইআইএসএস২০১০স্থায়ী নিয়োগ
১৮।প্রধান অস্ত্রশস্ত্র আমদানীএসআইপিআরআই২০০৯-২০১০প্রধান অস্ত্রশস্ত্র আমদানী[6]
১৯।প্রধান অস্ত্রশস্ত্র রপ্তানীএসআইপিআরআই২০০৯-২০১০প্রধান অস্ত্রশস্ত্র রপ্তানী[6]
২০।জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অর্থ প্রদানআইইপি২০০৭-২০১০মোট সংখ্যা
২১।ভারী অস্ত্রশস্ত্রের সংখ্যাআইইপি২০০৯জনগোষ্ঠী অনুপাতে[7]
২২।ছোট ও হাল্কা অস্ত্রের ব্যবহারইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড
২৩।সামরিক সক্ষমতাইআইইউ২০১০-২০১১গুণবাচক মানদণ্ড

শীর্ষস্থানীয় শান্তিপূর্ণ দেশ

সবচেয়ে কম সূচকের অধিকারী দেশগুলো শান্তিপূর্ণ দেশের মর্যাদা পায়। সবুজ রঙে চিত্রিত দেশগুলো ঐ বছরের জন্য সেরা হিসেবে বিবেচিত।[8] তালিকার সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে সোমালিয়া

দেশ ২০১২ স্থান ২০১২ সংখ্যা ২০১১ স্থান ২০১১ সংখ্যা ২০১০ স্থান ২০১০ সংখ্যা ২০০৯ স্থান ২০০৯ সংখ্যা ২০০৮ স্থান ২০০৮ সংখ্যা ২০০৭ স্থান ২০০৭ সংখ্যা
 আইসল্যান্ড ১.১১৩ ১.১৪৮ ১.২১২ ১.২২৫ ১.১৭৬
 ডেনমার্ক ১.২৩৯ ১.২৮৯ ১.৩৪১ ১.২১৭ ১.৩৪৩ ১.৩৭৭
 নিউজিল্যান্ড ১.২৩৯ ১.২৭৯ ১.১৮৮ ১.২০২ ১.৩৫০ ১.৩৬৩
 কানাডা ১.৩১৭ ১.৩৫৫ ১৪ ১.৩৯২ ১.৩১১ ১১ ১.৪৫১ ১.৪৮১
 জাপান ১.৩২৬ ১.২৮৭ ১.২৪৭ ১.২৭২ ১.৩৫৮ ১.৪১৩
 অস্ট্রিয়া ১.৩২৮ ১.৩৩৭ ১.২৯০ ১.২৫২ ১০ ১.৪৪৯ ১০ ১.৪৮৩
 আয়ারল্যান্ড ১.৩২৮ ১১ ১.৩৭০ ১.৩৩৭ ১২ ১.৩৩৩ ১.৪১০ ১.৩৯৬
 লুক্সেমবুর্গ ১.৩৪১ ১৩ ১.৩৪১ ১.৪৪৬
 স্লোভেনিয়া ১.৩৩০ ১০ ১.৩৫৮ ১১ ১.৩৫৮ ১.৩২২ ১৬ ১.৪৯১ ১৫ ১.৫৩৯
 ফিনল্যান্ড ১.৩৪৮ ১.৩৫২ ১.৩৫২ ১.৩২২ ১.৪৩২ ১.৪৪৭

সার্ক দেশসমূহের অবস্থান

দেশ ২০১২ স্থান ২০১২ সংখ্যা ২০১১ স্থান ২০১১ সংখ্যা ২০১০ স্থান ২০১০ সংখ্যা ২০০৯ স্থান ২০০৯ সংখ্যা ২০০৮ স্থান ২০০৮ সংখ্যা ২০০৭ স্থান ২০০৭ সংখ্যা
 ভুটান ১৯ ১.৪৮১ ৩৪ ১.৬৯৩ ৩৬ ১.৬৬৫ ৪০ ১.৬৬৭ ২৬ ১.৬১৬ ১৯ ১.৬১১
   নেপাল ৮০ ২.০০১ ৯৫ ২.১৫২ ৮২ ২.০৪৪
 বাংলাদেশ ৯১ ২.০৭১ ৮৩ ২.০৭০ ৮৭ ২.০৫৮ ৯০ ২.০৪৫ ৮৬ ২.১১৮ ৮৬ ২.২১৯
 শ্রীলঙ্কা ১০৩ ২.১৪৫ ১২৬ ২.৪০৭ ১৩৩ ২.৬২১ ১২৫ ২.৪৮৫ ১২৫ ২.৫৮৪ ১১১ ২.৫৭৫
 ভারত ১৪২ ২.৫৪৯ ১৩৫ ২.৫৭০ ১২৮ ২.৫১৬ ১২২ ২.৪৩৩ ১০৭ ২.৩৫৫ ১০৯ ২.৫৩০
 পাকিস্তান ১৪৯ ২.৮৩৩ ১৪৬ ২.৯০৫ ১৪৫ ৩.০৫০ ১৩৭ ২.৮৫৯ ১২৭ ২.৬৯৪ ১১৫ ২.৬৯৭

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, সারা দেশ, মুদ্রিত সংস্করণ, ১৪ জুন, ২০১২ইং, পৃষ্ঠা - ৩
  2. All information in indicator table from "Global Peace Index: Indicators"। Vision of Humanity। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৭
  3. In this case, a conflict is defined as, "a contested incompatibility that concerns government and/or territory where the use of armed force between two parties, of which at least one is the government of a state, results in at least 25 battle-related deaths in a year."
  4. Excludes militia and national guard forces.
  5. This includes, "cash outlays of central or federal government to meet the costs of national armed forces—including strategic, land, naval, air, command, administration and support forces as well as paramilitary forces, customs forces and border guards if these are trained and equipped as a military force."
  6. This includes transfers, purchases, or gifts of aircraft, armoured vehicles, artillery, radar systems, missiles, ships, engines
  7. Weapons defined in four categories: armoured vehicles, artillery, combat aircraft, major fighting ships.
  8. All information in the table of rankings from:
    • Institute for Economics and Peace, Economist Intelligence Unit (২০১১)। "Global Peace Index: 2011 Methodology, Results & Findings" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 47। ২০১২-০৩-১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-১৩
    • Institute for Economics and Peace, Economist Intelligence Unit (২০১০)। "Global Peace Index: 2010 Methodology, Results & Findings" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 9। ২০১২-০৩-১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১০
    • Institute for Economics and Peace, Economist Intelligence Unit (২০০৮)। "Global Peace Index: 2008 Methodology, Results & Findings" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 58। ২০০৮-০৯-১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৭
    • Institute for Economics and Peace, Economist Intelligence Unit (২০০৭)। "Global Peace Index: Methodology, Results & Findings" (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 44। ২০০৮-০৫-২৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৭
    Both are linked from: Vision of Humanity (২০০৮)। "EIU Reports - Documents - Global Peace Index"। ২০১২-০৩-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.