বিল বোস
উইলিয়াম এরিক বোস (ইংরেজি: Bill Bowes; জন্ম: ২৫ জুলাই, ১৯০৮ - মৃত্যু: ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭) ইয়র্কশায়ারের ইল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত পেশাদার ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৩২ থেকে ১৯৪৬ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ফাস্ট বোলারের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিং করতেন ‘লফটি’ ডাকনামে পরিচিত বিল বোস।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | উইলিয়াম এরিক বোস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ইল্যান্ড, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড | ২৫ জুলাই ১৯০৮|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ ৭৯) অটলি, পশ্চিম ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | লফটি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৯১ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম / মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৬৪) | ২৫ জুন ১৯৩২ বনাম ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৫ জুন ১৯৪৬ বনাম ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৮ – ১৯৩৭ | মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৯ – ১৯৪৭ | ইয়র্কশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ জুলাই ২০১৮ |
১৯২৯ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল বিল বোসের। এ সময়ে তিনি ৩৭২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ১৬৩৯টি উইকেট পেয়েছেন। ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছেন ৯/১২১ ও ২৭বার খেলায় দশ উইকেট পেয়েছেন তিনি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৫৩১ রান তুলেছেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান করেছেন অপরাজিত ৪৩*। খুবই স্বল্পসংখ্যক খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম হিসেবে রানের তুলনায় উইকেট পেয়েছেন বেশি। নিজেকে দক্ষ ফিল্ডার হিসেবে দাবী না করলেও ১৩৮টি ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন।
ইয়র্কশায়ার ও এমসিসি’র পক্ষে খেলেছেন তিনি। একাধারে দশ মৌসুম এমসিসির মাঠকর্মী দলের সদস্য ছিলেন। এর সদস্যরা দল নির্বাচন করার অধিকার পেতেন। ফলে তিনি ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে খেলেন। তবে, ১৯৩৮ সালের পূর্ব-পর্যন্ত এমসিসির বিপক্ষে আর খেলেননি।
টেস্ট আঙ্গিনায় ইংল্যান্ডের পক্ষে পনেরোবার অংশ নিয়েছেন। তন্মধ্যে, ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের বডিলাইন সিরিজও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২২.৩৩ গড়ে ৬৮টি টেস্ট উইকেট পান। সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৬/৩৩। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে তেরো মৌসুম ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলেন বিল বোস।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবন বিঘ্নিত হয়। ঐ সময়ে তার দল আটবার চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভে সক্ষমতা দেখায়। বহুলাংশেই এর নেতৃত্বে ছিলেন হেডলি ভেরিটি ও তিনি স্বয়ং।
বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ‘গানারী কর্মকর্তা’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আটক হবার পূর্ব-পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকায় ছিলেন। জুন, ১৯৪২ সালে তব্রুক পতন হলে মিত্রশক্তির ৩০০০০-এর অধিক সৈন্যের সাথে তিনিও আটক হয়েছিলেন। তিন বছর ইতালি ও জার্মান বন্দীশিবিরে অবস্থান করেন। এ সময়ে তিনি চার স্টোনের অধিক ওজন হারান।
যুদ্ধের পর আরও দুই মৌসুম খেলা চালিয়ে যান। অভিজ্ঞতায় ভাটা পড়ায় কেবলমাত্র মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ইয়র্কশায়ারে কোচের দায়িত্বে ছিলেন ও ক্রিকেট লেখক হিসেবে দি ইয়র্কশায়ার পোস্টে কাজ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
২৫ জুলাই, ১৯০৮ তারিখে ইল্যান্ডে বিল বোসের জন্ম। বাবা জন বোস ল্যাঙ্কাশায়ার ও ইয়র্কশায়ার রেলওয়েতে চাকরি করতেন। ফলে তাঁদের পরিবারকে প্রায়শঃই জায়গা বদল করতে হতো। ১৯১৪ সালে তারা লিডসের আর্মলি এলাকায় বসবাস করতে থাকেন। সেখানে তিনি মালামাল নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পান। ১৯৪৯ সালে নিজের আত্মজীবনীমূলকগ্রন্থ ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারিজে’ বোস লিখেছেন যে, পেশাদার ক্রিকেটার হবার কোন স্বপ্ন শৈশবকালে রোপন করেননি। নিতান্তই আকস্মিকভাবে এ খেলায় ঢুকে পড়েছেন।[1] অন্যান্য বালকের সাথে রাস্তায় ক্রিকেট খেলতেন ও ঐ সময় থেকেই বাড়ীর কাছাকাছি থাকা স্থানীয় আর্মলি ক্লাবের পক্ষে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। আর্মলির পেস বোলার টমি ড্রেককে আদর্শ হিসেবে মানতেন ও তার বোলিং ভঙ্গিমা অনুকরণের সিদ্ধান্ত নেন। ফলশ্রুতিতে শীর্ষস্থানীয় বোলার হওয়া সত্ত্বেও সর্বদাই টমি ড্রেকের বোলিংয়ের ধরনের কাছাকাছি পর্যায়ে থাকতো।[2] ক্রিকেটে আর্মলি পার্ক কাউন্সিল স্কুল ও ওয়েস্ট লিডস হাই স্কুল - এ দুটি বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিল বোস। শেষেরটিতে হ্যাট্রিক লাভের পর স্কুল ক্যাপ পান।
১৯২৪ সালে বিদ্যালয় থেকে চলে আসার পর লিডসভিত্তিক আবাসন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে থাকেন। এ সময়ে সপ্তাহ শেষে আর্মলিতে ওয়েসলিয়ান সানডে স্কুল দলের পক্ষে ক্রিকেট খেলতেন। এছাড়াও একসময় ক্লাবের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।[3] পরবর্তী দুইবছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯২৭ সালে ইস্টারের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর-পশ্চিম লিডসের কির্কস্টল এডুকেশনাল ক্রিকেট ক্লাবে খেলার জন্য আমন্ত্রিত হন।[4] কির্কস্টল দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে অভিষেক খেলায় মাত্র পাঁচ রান দিয়ে ছয় উইকেট দখল করেন। ফলে দর্শকেরা তাকে দেখার জন্য জমায়েত হতে থাকেন।[5] ক্লাব কমিটির অন্যতম সদস্য জন কেকে মন্ত্রণাদাতা হিসেবে পান। ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্তিতে জন কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯২৭ সালে বিল বোস কির্কস্টলের সাথে তার সফলতম মৌসুম পার করেন। লীগের অন্যান্য ক্লাবের কাছ থেকে আমন্ত্রণ আসতে থাকে যা তাকে পেশাদারিত্বের দিকে ধাবিত করে। কেউ কেউ আবাসন প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক উপার্জিত অর্থের বিপরীতে এক খেলায় অংশগ্রহণে অধিক অর্থ প্রদানের কথা বলে। তবে, কাউন্টি ক্রিকেটে পেশাদারী পর্যায়ে খেলার ব্যবস্থা করার পূর্বপর্যন্ত কে ও তার সহকর্মীরা তাকে ধরে রাখার পক্ষপাতী ছিল।[6]
লর্ডসে যোগদান
ঐ মুহূর্তে ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ তার প্রতি আগ্রহ না দেখালে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষ থেকে ডাক আসে তার। ঐ প্রেক্ষিতে এপ্রিল, ১৯২৮ সালে বোসকে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণ করতে হয়। ১৯২৭ মৌসুম শেষে এমসিসি ঘোষণা করে যে ১৯২৮ সালে সকল প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদাপ্রাপ্ত কাউন্টি দলের বিপক্ষে খেলবে। ফলে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পেশাদার মাঠকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথা জানায়। বোস আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন ও জানুয়ারি, ১৯২৮ সালে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হন।[7] প্রস্তুতি পর্বে তাকে জাল দিয়ে ঘেরা কংক্রিটের উপর বিছানো ম্যাচিং পিচে বোলিং করতে হয়েছিল।[8] ব্যাটসম্যান পেলহাম ওয়ার্নার ও এমসিসির সহকারী সচিব রনি এয়ার্ড তার বোলিং পরখ করে দেখেন।[8] বোস তাঁদেরকে মুগ্ধ করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯২৮ মৌসুমের জন্য সাপ্তাহিক £৫ পাউন্ড-স্টার্লিংয়ের বিনিময়ে লর্ডসের মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়।[8][9]
এর পরপরই জন কে’র অনুরোধক্রমে ইয়র্কশায়ারের সচিব ফ্রেডরিক টুন দেখা করেন ও ইয়র্কশায়ারে যোগ দেয়ার কথা জানান। [8] টুনের মতে ওয়ারউইকশায়ারে যোগ দেয়ার তুলনায় এমসিসিতে যোগ দেয়া অনেক ভালো। তার মতে লর্ডসে বোস ভালো সুযোগ পাবেন এবং এমসিসিতে দরকার না পড়লে ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে তাকে খেলাবে।[8] বোস এতে আকৃষ্ট হন ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। আবাসন সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন ও ১৫ এপ্রিল, ১৯২৮ তারিখে এমসিসিতে যোগ দেন। সপ্তাহান্তে তার পারিশ্রমিক £৬ পাউন্ড ধার্য করা হয়।[10]
লর্ডসে মাঠকর্মী হিসেবে শুরু থেকেই অভিজ্ঞতার ঝুলি পুরতে থাকেন। বিশেষতঃ ওয়াল্টার ব্রিয়ারলি’র কাছ থেকে মূল্যবান প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন।[11] ১৯২৮ সালে এমসিসির পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন। উনিশ বছর বয়সে ৩০ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত লর্ডসে ওয়েলসের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। খেলায় তিনি ৩/৩৭ ও ২/৩২ লাভ করেন।[12] ক্রিকেটআর্কাইভ কর্তৃক বর্তমানে প্রথম-শ্রেণীর খেলা হিসেবে স্বীকৃত এ খেলাটিতে বোস কিংবা জে. এম. কিলবার্ন - কেউই তাঁদের প্রতিভা প্রকাশ করতে পারেননি।[8][13] কিলবার্ন লিখেছেন যে, বোসের প্রথম-শ্রেণীর প্রথমটি ছিল ৪ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত লর্ডসে অনুষ্ঠিত এমসিসি বনাম কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাটি।[8] ঐ খেলায় বোস হ্যাট্রিকসহ ৪/২০ ও ২/১৮ লাভ করেছিলেন।[14] তার এই অসামান্য অর্জনের বিষয়টি ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য করে। ১৯২৮ সালে বোস আর কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেননি। তাস্বত্ত্বেও ক্লাবটি ১৯২৯ সালের জন্য তাকে অন্তর্ভুক্ত করে।[8]
ইয়র্কশায়ারে যোগদান
পরবর্তীতে জন কে’র পুণঃপুণ অনুরোধে বিল বোস নভেম্বরে ক্লাবের সভাপতি লর্ড হকের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি এমসিসির সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। সিদ্ধান্তে ঐকমত পোষণ করা হয় যে, এমসিসি দলের প্রয়োজন না পড়লে বোস ১৯২৯ সালে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলতে পারবেন।[15][16]
৮ থেকে ১০ মে পার্কসে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলার মাধ্যমে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে বিল বোসের। খেলায় তিনি ২/২৮ ও ০/৪০ লাভ করেন।[17] লেটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে ইয়র্কশায়ার পরবর্তী খেলায় এসেক্সের মুখোমুখি হন। এরফলে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে অভিষেক ঘটে বিল বোসের। তিনি পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর ইয়র্কশায়ার দলে যোগ দেন। দলটিতে উইলফ্রেড রোডস ও হার্বার্ট সাটক্লিফের ন্যায় সর্বকালের সেরা তারকা খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ ছিল। এছাড়াও নেভিল কারদাসের কাছ থেকে প্রশংসা বাক্যে উচ্ছ্বসিত এমট রবিনসনের ন্যায় খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ ছিল। রবিনসন স্বেচ্ছায় ইয়র্কশায়ারের শুরুতে অংশগ্রহণকারী বোসকে পরামর্শ প্রদানে অগ্রসর হয়েছিলেন। এসেক্সের প্রথম ইনিংসে বোস ৯/১৯ লাভ করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করেননি। অন্যদিকে, ৫১ বছর বয়সী রোডস ৯/৩৯ নিয়ে এসেক্সকে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করেন। তন্মধ্যে এক পর্যায়ে তিনি ২৮ বলের ব্যবধানে সাত উইকেট পেয়েছিলেন। খেলায় ইয়র্কশায়ার দল মরিস লেল্যান্ডের ১৩৪ রানের বদান্যতায় ইনিংস ও ৩৭ রানে জয়ী হয়।[18]
দলে খেলার জন্য ফ্রাঙ্ক ডেনিস তার প্রধান পেস বোলিং প্রতিপক্ষ ছিলেন। এছাড়াও, ল্যাঙ্কাশায়ার লীগ থেকে আসা হেডলি ভেরিটি ১৯৩০ সালে ইয়র্কশায়ারে অন্তর্ভুক্ত হন।
১৯২৯ সালে বিল বোস মাত্র আটবার ইয়র্কশায়ারের পক্ষে চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে খেলা প্রতি পাঁচ উইকেট নিয়ে সর্বমোট ৪০ উইকেট দখল করেন। গড়ে ১৭.৭৭ রান খরচ করে ইয়র্কশায়ারের বোলারদের মধ্যে রোডসের পরই তিনি অবস্থান করেন।[19] ১৯২৯ সালে জুলাইয়ের শেষদিকে বোস সেরা বোলিং করেন। ডিউসবারি ও সেভিল গ্রাউন্ডে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি ৮/৭৭ লাভ করেন।[20] তার অবদানের বিষয়টি ইয়র্কশায়ারের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে অস্পষ্ট ছিল।[8] এমসিসি কর্তৃপক্ষ লর্ডসের মাঠকর্মী হিসেবে নয় বছরের জন্য তার মেয়াদ বৃদ্ধি করে। ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ কোন বাঁধা প্রদান করেনি। ফলে বেশ কয়েকবার এমসিসির সদস্যরূপে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে খেলেন।[8]
১৯৩০ সালে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর হন। শুরুতে নিয়মিতভাবে খেলানো না হলেও প্রথমবারের মতো শতাধিক উইকেট লাভে সক্ষমতা দেখান। ১৯৩০-এর দশকে একবার বাদে প্রত্যেক মৌসুমেই এ মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে পায়ের গোড়ালিতে বড় ধরনের আঘাতের কারণে খেলায় অংশ নিতে পারেননি।[21] ১৯৩০ সালে ১৯.৫৪ গড়ে ১০১ উইকেট দখল করেন। ব্যক্তিগত সেরা করেন ৮/৬৯।[21]
১৯৩০ সালে বোস দলের উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিলেন। কিলবার্ন একে ইয়র্কশায়ারের পরিবর্তনের বছররূপে আখ্যায়িত করেন।[8] এ মৌসুম শেষে রোডস অবসর গ্রহণ করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন হেডলি ভেরিটি। আর্থার উড বোসের বলগুলো বেশ ভালোভাবে গ্লাভস বন্দী করেন ও নিজেকে ইয়র্কশায়ারের উইকেট-রক্ষক আর্থার ডলফিনের যোগ্য উত্তরাধিকারীরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সাটক্লিফ, হোমস ও মরিস লেল্যান্ড - এ তিনজনের সমন্বয়ে গড়া ইয়র্কশায়ারের ব্যাটিং মেরুদণ্ড বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে। তাস্বত্ত্বেও সর্বদাই উচ্চারিত হতে থাকে যে, বোলারের খেলায় জয়সহ চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপায় ভূমিকা রেখেছেন। বোস ও ভেরিটি বোলিং জুটি গড়ে ইয়র্কশায়ারকে জয়ের ধারায় নিয়ে আসেন। ভেরিটির দিক দিয়ে স্লো-মিডিয়াম বামহাতি বোলিং পোতানো উইকেটে দৃশ্যতঃ খেলার অনুপযোগী হয়ে উঠে। অন্যদিকে, বোস তার সহজাত পেসের শক্তিময়তা, উঁচুমানের লোফানো বল, ইন-সুইঙ্গারসহ সদ্যশেখা আউট-সুইঙ্গারে তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করেন।[8][15]
১৯৩১ মৌসুম থেকে ইয়র্কশায়ার দল আরও একবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এবার দলটি ধারাবাহিকভাবে তিনবার শিরোপা জয়ে সক্ষমতা দেখায়।[22] হেডলি ভেরিটি ও বিল বোস উভয়েই ইয়র্কশায়ারের পক্ষে শতাধিক উইকেট লাভ করেন ও অত্যন্ত শক্তিশালী বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন।[23][24] এ পর্যায়ে জর্জ ম্যাকাউলি স্পিন বোলিংয়ের দিকে ধাবিত হন ও পেস বোলিং থেকে দূরে সরে আসেন। বিল বোস ও আর্থার রোডস ইয়র্কশায়ারের বোলিং আক্রমণ উদ্বোধনে নামতেন।[25] ১৫.৬৬ গড়ে ১৩৬ উইকেট পান তিনি। সেরা বোলিং করেন ৭/৭১ ও চারবার খেলায় দশ উইকেট লাভের দাবীদার হন।[21] ১৯৩২ সালে ইয়র্কশায়ার তাদের ষোড়শ চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা পায়। এতে বিল বোস বিরাট ভূমিকায় অগ্রসর হয়েছিলেন। ১৫.১৪ গড়ে ১৯০ উইকেট লাভ করেন। খেলোয়াড়ী জীবনের ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৯/১২১। এছাড়াও, খেলায় তিনি পাঁচবার দশ উইকেট শিকার করেছিলেন।[21]
১৯৩৩ থেকে ১৯৩৫ সময়কালীন পরবর্তী দুই বছরে বিল বোস ক্রমাগত বাউন্সার মারার দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচনার সৃষ্টি করে। তাস্বত্ত্বেও, দেশের ভালোমানের পিচে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বোলার হিসেবে তাকে গড়ে তুলে। ১৯৩৩ সালে ইয়র্কশায়ার উপর্যুপরী তৃতীয়বার শিরোপা পায়। ১৭.৭৮ গড়ে ১৫৯টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পান। সেরা বোলিং করেন ৮/৬৯ ও পাঁচবার খেলায় দশ উইকেট লাভে সক্ষমতা দেখান।[21] ১৯৩৪ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের কাছে ইয়র্কশায়ার চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা খোঁয়ায়। ১৯.৪৫ গড়ে ১৪৭ উইকেট পান তিনি। খেলায় দুইবার দশ উইকেট লাভের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সেরা করেন ৭/৩৪।[21] ১৯৩৫ সালে ইয়র্কশায়ার তাদের অষ্টাদশ শিরোপা লাভ করে। বোস তার মৌসুমের সেরা সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেন। ১৯৩টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভ করেন ১৫.৪৪ গড়ে। সেরা করেন ৮/১৭ ও পাঁচবার খেলায় দশ উইকেট পান।[21]
১৯৩৬ মৌসুম শুরুর পূর্বে ইয়র্কশায়ার দল ফেব্রুয়ারি ও মার্চ, ১৯৩৬ সালে জ্যামাইকা সফরে যায়। সেখানে দলটি জ্যামাইকার বিপক্ষে তিনটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বহীন খেলা ছিল। বোস তিন খেলার সবকটিতেই জ্যামাইকার বিপক্ষে অংশ নেন। ১১ উইকেট দখল করেন ও ব্যক্তিগত সেরা করেন ৪/৬৪।[26] ১৯৩৬ সালে প্রতিবেশী ডার্বিশায়ারের কাছে শিরোপা স্থানান্তর করতে বাধ্য হয় ইয়র্কশায়ার দল। এ পর্যায়ে তিনি ১৩.৪০ গড়ে ১২৩টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত সেরা করেন ৮/৫৬ ও খেলায় দুইবার দশ উইকেট তুলে নেন।[21]
১৯৩৭ সালে মৌসুমের উদ্বোধনী খেলায় গুরুতরভাবে পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পান। ১ মে এ আঘাতের পর ২৩ জুন পর্যন্ত খেলার মাঠ থেকে বিশ্রামে ছিলেন তিনি। প্রায় দুই মাস ইয়র্কশায়ারের প্রধান পেস বোলারের অনুপস্থিতি স্বত্ত্বেও তারা উনিশতম শিরোপা জয় করে। ২১ খেলায় অংশ নিয়ে ১৯.৫৮ গড়ে ৮২ উইকেট পেয়েছিলেন বিল বোস। সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৭/৫৬ ও একবার খেলায় দশ উইকেট পান।[21]
১৯৩৮ সালে ইয়র্কশায়ার তাদের ২০তম শিরোপা লাভ করে। ১৫.২৩ গড়ে ১২১টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভে সক্ষমতা দেখান। ব্যক্তিগত সেরা করেন ৬/৩২।[21] ১৯৩৯ সালে ইয়র্কশায়ার উপর্যুপরী তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জয় করে। বোস ১৪.৪৮ গড়ে ১২২টি প্রথমশ্রেণীর উইকেট পান। ব্যক্তিগত সেরা করেন ৭/৫০ ও খেলায় একবার দশ উইকেট তুলে নেন।[21]
১৯৪৫ সালে বোস একটিমাত্র প্রথমশ্রেণীর ইনিংসে বোলিং করে ৩/২২ পেয়েছিলেন।[21]
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমন
১৯৩২-৩৩ মৌসুমে ইংরেজ দল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। জাহাজ নোঙর তোলার মাত্র তিনদিন পূর্বে বিল বোসকে শেষমুহুর্তে দলে নেয়া হয়। তিনি সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। সমগ্র সফরে একটিমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ হয় তার। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে প্রথম বলেই ডন ব্র্যাডম্যানের উইকেট লাভে স্বীয় সক্ষমতার পরিচয় দেন। তবে, খেলায় এটিই তার একমাত্র উইকেট প্রাপ্তি ছিল। স্বাগতিক দল ১১১ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।[27][28]
অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার। প্রথম দিনেই ৬/৩৪ লাভ করলে নিউজিল্যান্ড দল ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায়। ইংল্যান্ড ৫৪৮/৭ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ইনিংসের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ওয়ালি হ্যামন্ডের অপরাজিত ৩৩৬ রান। তিন দিনের ঐ টেস্টের চূড়ান্ত দিন বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়। নিউজিল্যান্ড বিনা উইকেটে ১৬ রান তুললে খেলাটি ড্রয়ে পর্যবসিত হয়।[29]
সমগ্র সফরে বারোটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩৭ উইকেট দখল করেন। ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন অকল্যান্ড টেস্টে ৬/৩৪।[21]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়া দল অ্যাশেজ সিরিজ খেলার জন্য ইংল্যান্ডে আসে। বোস সন্দেহাতীতভাবে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার ছিলেন। তিনি ওল্ড ট্রাফোর্ড ও ওভাল টেস্টে অসম্ভব ভালো খেলা উপহার দেন। ১৯৩৫ সালে অনুষ্ঠিত টেস্টগুলোয় বোস ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তবে, ইয়র্কশায়ারকে চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে তার বোলিং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
১৯৩৬ সালে বোস বেশ কয়েকবার আঘাতের কবলে পড়েন। তার শারীরিক সুস্থতার বিষয়ে সন্দিহান হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে দূরে রাখা হয়। তবে, কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের বোলিং গড়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন।
১৯৩৮ সালে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেন। প্রথমশ্রেণীর বোলিং গড়ে শীর্ষে আরোহণ করেন। ওভালে অনুষ্ঠিত সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে তার অসামান্য বোলিংয়ের পর লেন হাটন ৩৬৪ রান তুলে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। ১৯৩৯ সালে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে খেলার কম সুযোগ পান। কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ডের ভেজা পিচে তিনি দূর্দমনীয় হয়ে ওঠেন। ভেরিটির পিছনে অবস্থান করে টেস্ট গড়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন।
১৯৪৬ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম খেলায় সর্বশেষবারের মতো টেস্টে অংশগ্রহণ করে বিল বোস। ইয়র্কশায়ার দল চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখে ও ২২তম শিরোপা পায়। ১৫.১৮ গড়ে ৬৫টি প্রথমশ্রেণীর উইকেট পান। সেরা বোলিং করে ৫/১৭।[21] ১৯৪৭ সালে ইয়র্কশায়ার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে পড়ে এবং মিডলসেক্স ও গ্লুচেস্টারশায়ার চমৎকার আবহাওয়ায় শিরোপার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। বোস ১৭.৪৯ গড়ে ৭৩ উইকেট পান। ব্যক্তিগত সেরা করেন ৬/২৩।[21] এরপর ২৮ ও ৩০ জুন হেডিংলিতে মিডলসেক্সের বিপক্ষে আর্থিক সুবিধাগ্রহণের খেলার জন্য মনোনীত হন ও £৮,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন যা তৎকালীন রেকর্ড ছিল।[30]
বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বিল বোস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে গানারী কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন। জুন, ১৯৪২ সালে তব্রুক পতনের পর ফ্রেডি ব্রাউনের সাথে মিত্রশক্তির ৩০,০০০-এর অধিক সৈনিকসহ উত্তর আফ্রিকায় আটক হন। ইতালি ও জার্মানির বন্দীশিবিরে তিন বছর কারাভোগ করেন। সেখানে তারা ক্রিকেট, বেসবল ও রাগবি খেলা আয়োজন করেন। ১৯৪৫ সালে মার্কিনীদের হাতে মুক্ত হবার পর তিনি চার স্টোনের অধিক ওজন হারান।[30]
যুদ্ধের পর বিল বোস কেবলমাত্র স্বল্পকালীন সময়ের জন্য মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। এর প্রধান কারণ ছিল বয়স ও কারাভোগের প্রতিক্রিয়া। ১৯৪৭ মৌসুম শেষে খেলার জগৎকে বিদায় জানান বিল বোস।
খেলার ধরন
ক্রিকেট সংবাদদাতা কলিন বেটম্যান তার খেলোয়াড়ী জীবন সম্পর্কে লেখেন যে, বোসের টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং গড় উইকেট প্রতি ২২ রান খরচ করেন যা তার সময়কালে বেশ অসাধারণ বিষয় ছিল। কিন্তু, প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে এ গড় ১৬ ছিল যা সত্যিই বিষ্ময়কর। বারক্লেজ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডে বিল বোসকে বোলার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে তাকে শিক্ষা গ্রহণ ও পরীক্ষামূলক কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ হাতছাড়া না করার কথা তুলে ধরা হয়। নতুন বল হাতে নিয়ে অস্বাভাবিক সজীবতা প্রকাশে ও নিয়ন্ত্রণ আনয়ণে ব্যাপকভাবে নিজের উত্তরণ ঘটান।[31]
কলিন বেটম্যান বোস সম্পর্কে লিখেন যে, তাকে কখনো ক্রিকেটার হিসেবে মনে হয়নি। তার ফিল্ডিং বেশ অগোছালো ও উইকেট লাভের তুলনায় রান আরও কম তুলেছেন।[27] বোলার হিসেবে ১৯৩০-এর দশকে নিজের সেরা বছরগুলোয় বেশ কয়েকবার সমান সাক্ষরতা বজায় রেখেছিলেন। বেশ লম্বাটে ও সরু দৈহিক গড়নের অধিকারী হিসেবে বিল বোস তার শুরুর দিনগুলোয় শূন্যে ভাসিয়ে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। তবে নিজের সেরা দিনগুলোয় ইয়র্কশায়ারের পিচে অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন বাউন্স ছুড়তেন। দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং আক্রমণ কার্য পরিচালনা করার সক্ষমতা ছিল তার। নতুন বল নিয়ে উভয় দিক দিয়েই সুইং করতেন। একসময় পিচে খাঁটোমানের বল ছুঁড়তেন। তবে খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে পেসের অভাবহেতু স্ট্যাম্প বরাবর আঘাত শানতেন।[27]
ব্যক্তিগত জীবন
এপ্রিল, ১৯২৮ সালে লন্ডনে এমসিসি’র কর্মী হিসেবে যোগদানের পর তিনি পিনারে বিউমন্ট পরিবারের সাথে বসবাস করতেন। পরিবারটির সাথে স্বীয় পরিবারের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক ছিল। এমসিসিতে থাকাকালে অনেকগুলো বছর সেখানে অবস্থান করেছেন। সেখানেই তাঁদের বোনঝি এজমির সাথে পরিচয় ও পরিণয়পর্ব সম্পন্ন হয়।[32] ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৩ তারিখে হ্যারোর সেন্ট পিটার্স চার্চে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পাদিত হয়। তাঁদের সংসারে দুই সন্তান - টনি ও ভেরা জন্মগ্রহণ করে।[33] একনিষ্ঠ ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবে বিল বোস তার নিজ কুকুরকে সাথে নিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতেন।[34]
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর অনেক বছর ইয়র্কশায়ারের বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময়ে ফ্রেড ট্রুম্যানের ন্যায় তরুণ ক্রিকেটারদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।[35] লেখক হিসেবেও স্বীয় সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। লিডসভিত্তিক সংবাদপত্র দি ইয়র্কশায়ার পোস্টে ক্রিকেট সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।[34] উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকে অগণিত নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি বোলার হিসেবে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে নেতিবাচক বোলিংয়ের সমস্যা সমাধানে তার দায়বদ্ধতার কথা জানান। দৈনন্দিন ক্রিকেটারদের দিকে নজর রাখতেন ও বিশ্বাস করতেন যে, ক্লাব ক্রিকেট কাউন্টি কিংবা টেস্ট ক্রিকেট নয় এবং খেলার বিকাশে প্রধান অন্তরায়।[27]
৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের অটলি এলাকায় ৭৯ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটে বিল বোসের।[27]
তথ্যসূত্র
- Bowes, p. 11.
- Bowes, p. 12.
- Bowes, p. 13.
- Note – this club is a current member of the Airedale-Wharfedale Senior Cricket League.
- Bowes, p. 14.
- Bowes, p. 16.
- Bowes, p. 17.
- Kilburn, pp. 78—79.
- Bowes, p. 18.
- Bowes, p. 19.
- Bowes, p.22.
- "MCC v Wales in 1928"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- Bowes, p. 25.
- "MCC v Cambridge University in 1928"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- Hodgson, p. 126.
- Bowes, pp. 27—28.
- "Yorkshire v Oxford University in 1929"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- "Essex v Yorkshire in 1929"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- "Yorkshire in 1929 : first-class bowling"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- "Yorkshire v Leicestershire in 1929"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- "Bill Bowes : first-class bowling per season"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৪। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- "County Champions 1890–present"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১০।
- Woodhouse, p. 368.
- "First-class Bowling for Yorkshire in 1931"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১০।
- Hodgson, p. 132.
- "Yorkshire in Jamaica 1935–36 : first-class bowling"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৪। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- Bateman, pp. 30–31
- "Australia v England, Second Test 1932–33"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৪। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- "New Zealand v England, Second Test 1932–33"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৪। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- "Obituary: Bill Bowes"। Wisden Cricketers' Almanack। ১৯৮৮।
- Barclays, p. 469.
- Bowes, p. 21.
- ""Big Bill" Bowes married"। tips images। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৪।
- "A century for Bill Bowes, the legend who was my friend"। Yorkshire Post। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৪।
- Trueman, p. 35.
গ্রন্থপঞ্জী
- Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 30–31। আইএসবিএন 1-869833-21-X।
- Bowes, Bill (১৯৪৯)। Express Deliveries। London: Stanley Paul।
- Chandler, Martin (২০১২)। "Bill Bowes – The Elland Express"। cricketweb.net।
- Hodgson, Derek (১৯৮৯)। The Official History of Yorkshire County Cricket Club। The Crowood Press। আইএসবিএন 1-85223-274-9।
- Kilburn, J. M. (১৯৭০)। A History of Yorkshire Cricket। Stanley Paul। আইএসবিএন 0-09-101110-8।
- Swanton, E. W., সম্পাদক (১৯৮৬)। Barclays World of Cricket। Willow Books। আইএসবিএন 0-00-218193-2।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - Trueman, Fred (২০০৪)। As It Was। Macmillan। আইএসবিএন 0-330-42705-9।
- "Bill Bowes – Cricketer of the Year"। Wisden Cricketers' Almanack। ১৯৩২।
বহিঃসংযোগ
- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে বিল বোস (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে বিল বোস (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- Yorkshire Post tribute
- Obituary of Bill Bowes, The Times, 7 September 1987. Accessed 29 December 2010 via library subscription.