বিল ডাকাতিয়া
বিল ডাকাতিয়া (ডাকাতিয়া বিল নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের খুলনা জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি নিম্নাঞ্চল। এই বিল গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা বিধৌত বদ্বীপীয় সমভূমির অন্তর্গত। খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানা এবং জেলার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা এবং যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার অভ্যন্তরের প্রায় ত্রিশ হাজার একর জমি নিয়ে গঠিত বিল ডাকাতিয়া। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিলটি আশির দশকে স্থানীয় মানুষের জন্য অভিশাপ হিসাবে দেখা দেয়।[1]
বিল ডাকাতিয়া | |
---|---|
অবস্থান | খুলনা জেলা |
স্থানাঙ্ক | ২২.৯১° উত্তর ৮৯.৪৫° পূর্ব |
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহ | সোলমারি, হামকুরা, হরি, সাল্টা, ভাদ্র ও ভৈরব নদী |
প্রাথমিক বহিঃপ্রবাহ | কৈয়া, ময়ূর, হাতিয়া |
অববাহিকার দেশসমূহ | বাংলাদেশ |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ৩০ হাজার একর |
গড় গভীরতা | ২ মি (৬.৬ ফু) |
নামকরণ
বাংলাদেশের তিনটি বড় বিলের মধ্যে একটি হচ্ছে বিল ডাকাতিয়া। বাকি দুটি হচ্ছে, চলনবিল ও তামাবিল।[2] প্রচলিত মতে, ডাকাতিয়া বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীতে চলাচলকারী মানুষের মালামাল ডাকাতরা ডাকাতি করে নিতো। এ কারণে এই এলাকাকে ডাকাতপাড়া এবং এই বিলকে ডাকাতিয়া বিল নামে ডাকা হয়।[3]
অবস্থান ও আয়তন
বিলটি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার প্রশাসনিক সীমান্তের ৮৯°২০´ পূর্ব থেকে ৪৮°৩৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ২২°৪৫´ উত্তর থেকে ২৩°০০´ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত। পোল্ডারটির মোট এলাকা প্রায় ১৯,৪৩০ হেক্টর। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯,০০০ হেক্টর বা মোট এলাকার প্রায় ৫০% স্বাভাবিকভাবে পানির নিচে থাকে।[4]
জলবায়ু
এই অঞ্চলের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভ্যাপসা গরম ও মৃদু শীত। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাধারণত ২৯° সেলসিয়াস থেকে ৪০° সেলসিয়াস এবং ৭° সেলসিয়াস থেকে ২৫° সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। এই এলাকায় বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,৭৫০ মিমি। শুকনা মৌসুমে গড় আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৭৫%। স্বাভাবিক অবস্থায় অঞ্চলটি সোলমারি, হামকুরা, হরি, সাল্টা, ভাদ্র ও ভৈরব নদীর পানিতে সিঞ্চিত হয়ে থাকে।
জলাবদ্ধতা
প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমির বিল ডাকাতিয়ায় ৮০’র দশকেও ফসল হতো তিনটি।[5] ১৯৮৪ সালে বন্যায় বিল ডাকাতিয়া অঞ্চল প্লাবিত হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা সাতক্ষীরা সড়কের শলুয়া এবং আমভিটা বেড়িবাধে আশ্রয় নেয়। দুর্যোগে ৭৬ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। ১২ বছর ধরে জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়।[6]
১৯৮৮ সালে কৃষক সংগ্রাম সমিতি এবং বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী বিশ হাজার লোকের সমন্বয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে এই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান। তৎকালীন শাসক এরশাদ সরকার ৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প করে গ্রহণ করলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ হয়। ১৯৯০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থুকড়া বাজারে মহাসমাবেশের ডাক দিলে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে এবং ১৬০০ পুলিশ মোতায়েন করে। এই বাধা অতিক্রম করে মহাসমাবেশ সফল করে। কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে ১৮ই সেপ্টেম্বর বিল ডাকাতিয়ায় অবাধ জোয়ার ভাটার র্কাযকর কৃষক জনতার আন্দোলন সফল করে। এই দিনটিকে বিল ডাকাতিয়া দিবস হিসেবে পালন করে ডুমুরিয়াবাসী।[6]
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ইমার্জেন্সি অ্যাকশন প্ল্যানের আলোকে ১৯৯২-৯৩ সালে নেয়া হয় খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্প (কেজেডিআরপি)। এর আগে আরো দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সরকারি প্রায় প্রতিটি প্রকল্পই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তবে শলুয়া স্লুইচ গেট হতে কৈয়া নদী খনন এবং শলুয়া থেকে বিল ডাকাতিয়ার মাঝখান দিয়ে ফুলতলা উপজেলার জামিরা পর্যন্ত ৮০ ফুট চওড়া খালটি খননের পর থেকেই বিল ডাকাতিয়ার পানি নিষ্কাশন শুরু হয়।[7]
তথ্যসূত্র
- "দুঃস্বপ্নের বিল ডাকাতিয়ায় স্বপ্নের হাতছানি - শেষ পাতা - The Daily Ittefaq"। ৯ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮।
- "বাংলাদেশের বিল-হাওর উপত্যকা"। www.jugantor.com।
- BanglaNews24.com। "ডাকাতিয়া বিলে চোরা শিকারির কবলে পরিযায়ী পাখি :: BanglaNews24.com mobile"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮।
- "বিল ডাকাতিয়া"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮।
- https://www.channelionline.com/amp/তিন-ফসলী-বিল-ডাকাতিয়া-এখন/%5B%5D
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- "খুলনার দুঃখ 'জলাবদ্ধ বিল ডাকাতিয়া' -"। www.shiromoni.com।