বিয়ানীবাজার উপজেলা
বিয়ানীবাজার বাংলাদেশের সিলেট জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এই উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করে দেশের রেমিট্যান্স খাতে অবদান রাখছে এ [1]
বিয়ানীবাজার | |
---|---|
উপজেলা | |
ꠛꠤꠅꠣꠘꠤꠛꠣꠎꠣꠞ | |
বাংলাদেশে বিয়ানীবাজার উপজেলার অবস্থান | |
বিয়ানীবাজার বিয়ানীবাজার | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৯′৩০″ উত্তর ৯২°৯′৪৫″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | সিলেট জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২৫৩.২৫ বর্গকিমি (৯৭.৭৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২,৫৩,৩৭০ |
• জনঘনত্ব | ১,০০০/বর্গকিমি (২,৬০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৯৫.৪০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৬০ ৯১ ১৭ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
এই উপজেলার উত্তরে কানাইঘাট উপজেলা, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে জকিগঞ্জ উপজেলা ও ভারতের আসাম, পশ্চিমে গোলাপগঞ্জ উপজেলা।[1]
নামকরণ
বিয়ানীবাজারের পূর্ব নাম ছিল পঞ্চখন্ড। তৎকালীন সময়ে পঞ্চখন্ড গহীন জঙ্গল ও টিলা বেষ্টিত ভূমি ছিল। সিলেটের প্রথম রায় বাহাদুর হরেকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর পুত্র কৃষ্ণ কিশোর পাল চৌধুরী এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু হিংস্র জীবজন্তুদের ভয়ে লোকজন সকালবেলা (স্থানীয়ভাষায়ঃ বিয়ানে) বাজার শেষ করে নিজ নিজ আশ্রয়ে ফিরতেন। বিয়ানবেলা এই হাট বসতো তাই এর নাম হলো বিয়ানীবাজার যা কালের আবর্তনে বিয়ানীবাজার নাম ধারণ করে।[1][2]
ইতিহাস
১৭৬৫ সালে মোঘল অধিকৃত সিলেট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট ঢাকা প্রশাসন স্বতন্ত্র হয়ে পড়ায় সিলেটকে ১০টি রাজস্ব জেলায় বিভক্তির সুপারিশ করা হয়। বিয়ানীবাজার লাতু রাজস্ব জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৭৪ সালে ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটকে আসামের সাথে সংযুক্ত করা হয়। আসাম ভুক্তির পর ১৮৭৮ সালে করিমগঞ্জ মহকুমা সৃষ্টি করা হলে বিয়ানীবাজার করিমগজ্ঞ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৯৩সালের ২২শে মে লর্ড কর্নওয়ালিসের সময় থানা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে জলঢুপ(বর্তমানে থানা বাজার নামে পরিচিত) থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হলে বিভক্ত ভারতের কোন অংশে সিলেট যোগদান করবে তা নির্ধারণের জন্য গণভোট হয়। ৬ ও ৭ জুলাই দু’দিনের গণভোটে সিলেটবাসী পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেয়। কিন্ত গণরায়কে উপেক্ষা করে রেড ক্লিফের রোয়েদাদ করিমগঞ্জ মহকুমার মুসলিম প্রধান তিনটি থানা (পাথার কান্দি,রাতাবাড়ি,বদরপুর ও করিমগঞ্জের অধিকাংশ অঞ্চল) পাকিস্তানের হাত ছাড়া হয়ে ভারতে থেকে যায়। এদিকে পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানাকে নিয়ে ’জলঢুপ’ নামে একটি থানা গঠিত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে ১৯৪০ সালের ২৮ মে সরকারি নোটিফিকেশনএর মাধ্যমে জলঢুপ’ থানাকে ভেঙে বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা নামে দু’টি থানা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেখান থেকেই এই ’ বিয়ানীবাজার’ স্বতন্ত্র থানা হিসাবে পরিচিত হয়।পরে ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী জেনারেল শামসুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ানীবাজারকে উপজেলায় উন্নীত করেন।[1]
প্রশাসনিক এলাকা
বিয়ানীবাজার উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম বিয়ানীবাজার থানার আওতাধীন।[3]
- ১নং আলীনগর
- ২নং চরখাই
- ৩নং দুবাগ
- ৪নং শেওলা
- ৫নং কুড়ারবাজার
- ৬নং বিয়ানীবাজার (বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ফলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম বর্তমানে বিলুপ্ত)
- ৭নং মাথিউরা
- ৮নং তিলপাড়া
- ৯নং মোল্লাপুর
- ১০নং মুড়িয়া
- ১১নং লাউতা
এ উপজেলায় মোট ১৪৪টি মৌজা রয়েছে।
জনসংখ্যার উপাত্ত
জনসংখ্যা -২,৫৩,৩৭০জন (২০১১ এর আদম শুমারী অনুযায়ী) জনসংখ্যার ঘনত্ব - ৮৩৯। [1]
শিক্ষা
- কলেজ - সরকারি - ০১ টি, বেসরকারী- ০৪ টি।
- মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৩৫টি।
- প্রাথমিক বিদ্যালয় - সরকারীঃ ১১৩ টি, বেসরকারীঃ রেজি: ১৮টি ও নন রেজি: ১০টি, স্বল্প ব্যায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ ৬টি।
- মাদ্রাসা - সিনিয়রঃ - ১টি, কওমিঃ - ১০টি, দাখিলঃ - ৫টি, ইবতেদায়ীঃ - ৩৮টি, ফোরকানিয়াঃ - ৩২৫টি, হাফিজিয়াঃ - ১৩টি।
দর্শনীয় স্থান
- খাসা হাজী বাড়ি দিঘি (বারো পালের দিঘী)
- সুতারকান্দি স্থল বন্দর
- মালিক মহল
- বি.ডি.আর ক্যাম্প
- মুড়িয়ার হাওর
- জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর।
- হযরত গোলাবশাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা (ইমামবাড়ী)
- কাকর ভিলা (কাকরদিয়া, তেরাদল)
- আংগারজুর বালুচর
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
- গোবিন্দ চন্দ্র দেব -উপমহাদেশের বিখ্যাত দার্শনিক
- কমরেড অজয় ভট্টাচার্য - বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং নানকার কৃষক বিদ্রোহের নেতা।
- খান বাহাদুর ডা. মৌলভী মুরাকীব আলী - প্রথম ভেটেরিনারি সার্জন,বিৃটিশ ভারতীয় সরকারের প্রথম শ্রেনী মহকুমা কর্মকর্তা।
- নুরুল ইসলাম নাহিদ -রাজনীতিবিদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী।
- শাকুর মজিদ - সাহিত্যিক, নাট্যকার, স্থপতি ও ভ্রমণকাহিনী লেখক।
- তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী -বীর বিক্রম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
- শহীদ মনু মিয়া -ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ
- মাওলানা জিয়া উদ্দিন- দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের সভাপতি, জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মহাপরিচালক (জ. ১৯৪১)
- মোহাম্মদ আজিজুর রহমান: বীর উত্তম।
- মুস্তাফিজ শফি -লেখক ও সাংবাদিক
- সেলিম উদ্দিন - জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ, সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনের সংসদ সদস্য।
- কবি ফজলুল হক - কসবা গ্রামের পণ্ডিতপাড়া নিবাসী আশির দশকের শক্তিশালী কবি।
- প্রফেসর মো: রস্তুম আলী খান - অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ দাসেরবাজার আদর্শ কলেজ, বড়লেখা, মৌলভীবাজার।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- "এক নজরে বিয়ানীবাজার উপজেলা"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২ জুলাই ২০১৯। ২ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৯।
- "বিয়ানীবাজার উপজেলা"। বাংলাপিডিয়া। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। ২ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৯।
- "ইউনিয়নসমূহ - বিয়ানীবাজার উপজেলা"। beanibazar.sylhet.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১১ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
বহিঃসংযোগ
- বাংলাপিডিয়া
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বিয়ানীবাজার উপজেলা