বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন

যখন কোনও জাতি বা জনগোষ্ঠী তাদের স্বদেশভূমি থেকে বিশ্বের অন্যত্র বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই ব্যাপারটিকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন (ইংরেজি: Diaspora) বলা হয়।[1][2]সাধারণত বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন পরিভাষাটি দ্বারা কোন জনগোষ্ঠীর তাদের স্বভূমি থেকে অনৈচ্ছিকভাবে ছড়িয়ে পড়াকে বোঝানো হয়। যেসব জাতি বা সম্প্রদায় বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন সম্পাদন করে, তাদেরকে বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু জাতি বা বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায় বলা হয়। প্রাচীনকালে যিহুদীয়া থেকে ইহুদিদের ছড়িয়ে পড়া এবং কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) থেকে গ্রিকদের পালিয়ে যাওয়া এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগরান্তর দাস বাণিজ্য, কুলি বাণিজ্যের সময় দক্ষিণ চীন এবং ভারতীয়দের বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন, আইরিশ দুর্ভিক্ষের সময় আইরিশ জাতির বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন, ফিলিস্তিনি বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন,[2][3] সারকেশীয়দের নির্বাসন, ইংল্যান্ডে নরমান বিজয়ের পর অ্যাংলো-স্যাক্সন যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের দেশান্তর ইত্যাদি।[4]

ইংরেজি "ডায়াস্পোরা" (Diaspora) পরিভাষাটি দিয়ে বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের ঘটনা এবং বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু জাতি উভয়কেই বোঝানো হয়ে থাকে।

সম্প্রতি, বিদ্বজ্জনগণ বিভিন্ন রকম বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ করেছেন। বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের কারণ, যেমন সাম্রাজ্যবাদ, বাণিজ্য বা শ্রমিক অভিপ্রয়াণের ভিত্তিতে, বা বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের মধ্যকার সামাজিক সংসক্তি ও পূর্বপুরুষের ভূমির সাথে তাদের বন্ধনের উপর ভিত্তি করে এই শ্রেণীবিভাগগুলো করা হয়। কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায় তাদের স্বভূমির সাথে শক্তিশালী রাজনৈতিক বন্ধন বজায় রাখে। বিক্ষিপ্ত উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে স্বভূমিতে প্রত্যাবর্তনের অভিলাষ, অন্যান্য সমজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক, এবং আশ্রয়দাতা দেশের সাথে পূর্ণাঙ্গভাবে একীভূত না হওয়া।[2]

শব্দটির উদ্ভব এবং বিকাশ

বিক্ষিপ্ত উদ্বাসন কথাটি "Diaspora"-র বাংলা পরিভাষা। "Diaspora" শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ διασπείρω (diaspeirō) থেকে, যার অর্থ "আমি বিক্ষিপ্ত হই" বা "আমি ছড়িয়ে পড়ি"। প্রাচীন গ্রীসে διασπορά (diaspora) শব্দটির অর্থ ছিল "বিক্ষিপ্ত হওয়া",[5] আর এর দ্বারা সমাজের শীর্ষস্থানীয় নাগরিকদের বোঝানো হত যারা উপনিবেশীকরণের উদ্দেশ্যে বা কোন অঞ্চলকে সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন স্থানে এসেছেন।[6] প্রাচীন যুগের বিক্ষিপ্ত উদ্বাসনের একটি উদাহরণ হচ্ছে স্পার্টানদের শাসনে মেসেনীয়দের শতাব্দীব্যাপী নির্বাসন যা থুসিডাইডসের গ্রন্থ "পেলপনেশিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস" গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

শব্দটির উৎপত্তিগত অর্থ থেকে বর্তমান অর্থে বিকাশ শুরু হয় যখন হিব্রু বাইবেলকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়;[7] এক্ষেত্রে সেপটুয়াজিন্ট (গ্রীক ভাষায় অনুদিত হিব্রু বাইবেল) এর যেসব স্থানে "diaspora" শব্দের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে:

  • ডিউটেরোনমি ২৮:২৫, বাক্যাংশটি "ἔσῃ ἐν διασπορᾷ ἐν πάσαις ταῖς βασιλείαις τῆς γῆς", (esē en diaspora en pasais tais basileiais tēs gēs), অর্থাৎ, "পৃথিবীর সকল রাজ্যে তোমরা ছড়িয়ে পড়বে"।

এবং

  • সালমস ১৪৬(১৪৭).২, বাক্যাংশটি "οἰκοδομῶν Ἰερουσαλὴμ ὁ Kύριος καὶ τὰς διασπορὰς τοῦ Ἰσραὴλ ἐπισυνάξει", (oikodomōn Ierousalēm ho Kyrios kai tas diasporas tou Israēl episynaxē), অর্থাৎ, "প্রভু জেরুসালেম তৈরি করেছেন: ইজরায়েল থেকে বহিস্কৃতদেরকে তিনি সেখানে একত্রিত করেছেন"।

তথ্যসূত্র

  1. "Diaspora"Merriam Webster। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১
  2. Melvin Ember, Carol R. Ember and Ian Skoggard, সম্পাদক (২০০৪)। Encyclopedia of Diasporas: Immigrant and Refugee Cultures Around the World. Volume I: Overviews and Topics; Volume II: Diaspora Communitiesআইএসবিএন 978-0-306-48321-9।
  3. Rozen, Mina (২০০৮)। Homelands and Diasporas: Greeks, Jews and Their Migrations (International Library of Migration Studies)। London, England: I. B. Tauris। আইএসবিএন 1845116429।
  4. "English Refugees in the Byzantine Armed Forces: The Varangian Guard and Anglo-Saxon Ethnic Consciousness » De Re Militari"
  5. διασπορά. Liddell, Henry George; Scott, Robert; পারসিয়াস প্রজেক্টে এ গ্রিক–ইংলিশ লেক্সিকন
  6. pp.1-2, Tetlow
  7. p.81, Kantor
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.