বাসন্তী রায়

বাসন্তী রায় (বিবাহের পূর্বে বাসন্তী দাশগুপ্ত) (এপ্রিল ১৯১৩ - ২৭ মার্চ ২০০১) ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী। সম্ভবত তিনিই ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর কাছ থেকে সরাসরি লোক কল্যাণের এবং গ্রাম পুনর্গঠনের মন্ত্র নেওয়া শেষ বাঙালি নারী।[1] তিনি 'বাসন্তীবহেন' নামে খ্যাত ছিলেন। গান্ধীবাদীর মূল্যবোধ, সমাজ সেবা ও উন্নয়নের জন্য তিনি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ বাজাজ পুরস্কার লাভ করেন। [2]

বাসন্তী রায়
জন্মএপ্রিল ১৯১৩
মৃত্যু২৭ মার্চ ২০০১
নিমডি ঝাড়খণ্ড ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারত
পেশারাজনীতিবিদ
প্রতিষ্ঠানওয়ার্ধা মহিলা মণ্ডলে
পরিচিতির কারণব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা
উল্লেখযোগ্য কর্ম
লোক সেবায়তন আশ্রম
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন
অপরাধের অভিযোগকংগ্রেস আন্দোলন পরিচালনা
অপরাধের শাস্তি৪ বার কারাবরণ করেন
অপরাধীর অবস্থাঢাকাপুরুলিয়া
দাম্পত্য সঙ্গীসুবোধকুমার রায়
সন্তানদীপঙ্কর রায়
পিতা-মাতা
আত্মীয়বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত (ভ্রাতা)
চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত (ভ্রাতা)
অন্নপূর্ণা দাশগুপ্ত (ভগিনী)
পুরস্কারজামনালাল বাজাজ পুরস্কার (১৯৮৬)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

বাসন্তী দাশগুপ্তর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার ঝালদা শহরে গান্ধীবাদী পিতা ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত র কর্মস্থলে। ডাকনাম ছিল 'বাসু'। [3]পৈতৃক নিবাস ছিল তৎকালীন ঢাকা বিক্রমপুরের গাউপাড়া গ্রামে। বাসন্তীর আড়াই বৎসর বয়সে মাতা লাবণ্যময়ী দেবী মারা গেলে, তিনি ঢাকার মাতুলালয়ে দিদিমার কাছে প্রতিপালিত হন এবং স্থানীয় পাঠশালায় পড়াশোনা শুরু করেন। পরে এক মামার সঙ্গে পাটনায় যান এবং এক স্কুলে ভর্তি হন। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তার পিতা ঋষি নিবারণচন্দ্র সরকারি স্কুল ছাড়িয়ে পিতা ও অতুলচন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠিত পুরুলিয়ার লোকসেবক সংঘে তাকে নিয়ে আসেন। এখানেই তার বাড়িতে লেখাপড়া শেখা এবং সেই সঙ্গে পিতার প্রতিষ্ঠিত 'শ্রদ্ধানন্দ কর্মমন্দির' নামক ব্যায়াম সংঘে ছোরা খেলা ও লাঠি খেলা শেখেন।

রাজনৈতিক জীবন

তিনি পিতা ও অতুলচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন, প্রয়োজনে আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাবরণও করেছেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যর পর তিনি ওয়ার্ধায় চলে যান। সেখানকার সেবাগ্রামে গিয়ে মহিলাশ্রমে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরে বারো বছর সেখানকার সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে আশ্রম পরিচালনা করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিবাহ করেন এলাহাবাদ আর্ট কলেজের ছাত্র সুবোকুমার রায়কে। এরপর মহাত্মা গান্ধী নির্দেশিত পথে গ্রাম পুনর্গঠনের কাজের পরিকল্পনা নিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী বাংলা-বিহার সীমান্তের আদিবাসী অধ্যুষিত বিহারের নিমডিতে বহু বাধাবিপত্তির মধ্যে লোক সেবায়তন গড়ে তোলেন, যা পরবর্তীতে 'বাসন্তীবহেন'-এর আশ্রম নামে পরিচিত হয়। স্থানীয় গরীব মানুষের কল্যাণের জন্য এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে নিমডি ও আশেপাশের গ্রামে দিনের পর দিন ঘুরে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করেছেন আর নিজের আদর্শ, নিষ্ঠার সঙ্গে দিয়েছেন পরিশ্রম আর ভালোবাসা। অম্বর চরকা কেন্দ্র গড়ে বহু মহিলার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শিল্পী স্বামীও মহিলাদের চারুকলায় শিক্ষা দিয়ে স্বনির্ভর করেছেন। তিনি নিজে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় স্থানীয় মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও সামান্য সরকারি সাহায্য নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিল্পভবন ও মেয়েদের বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছিলেন। বহু প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে গ্রামে বসে গ্রামের বিশেষকরে শিশু ও মহিলাদের উন্নতিসাধন ও কল্যাণের স্বীকৃতিস্বরূপ জামনালাল বাজাজ ফাউন্ডেশন ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের জামনালাল বাজাজ পুরস্কারে সম্মানিত করে।[2] ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাভাষার জন্য লোকসেবক সংঘের নেতৃত্বে দূর মানভূম থেকে যে প্রায় এক হাজার জন মানুষ সাড়ে তিনশো কিলোমিটার পথ একটানা হেঁটে এসেছিলেন কলকাতায়। তাদের নেতৃত্ব যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন বাসন্তী রায়। [3]

বাসন্তী রায় ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মার্চ নিমডির আশ্রমে প্রয়াত হন। মহাত্মা গান্ধীর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী,সর্বোদয় নেতা আচার্য বিনোবা ভাবে বাসন্তীবহেনের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন - বাসন্তীবহেনের আশ্রম ছিল সমাজের দুর্বল অবহেলিতদের শক্তির স্তম্ভ, যা তাদের সহায়তা ও সান্ত্বনা প্রদান করত।[2]

তথ্যসূত্র

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৭১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Ms Vasanti S. Roy"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১০
  3. "ভাষা বাঁচাতে সুদূর মানভূম থেকে হেঁটে কলকাতায় এলেন বাঙালিরা, নেতৃত্বে বাসন্তী রায়ও"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১০
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.