বালিগ

ইসলামী আইনগত পরিভাষায়, বালিগ বা বুলুগ (আরবি: بالغ অথবা بُلوغ,অর্থঃ পরিপক্কতা) বা মুকাল্লাফ (আরবি তাকলিফ হতে, অর্থ দ্বায়িত্ববান) বা মুরাহিক (আরবি রাহাক হতে, অর্থঃ ভুল করা, মন্দকাজে তাড়াহুড়া করা) বা মুহতালিম (আরবি ইহতিলাম হতে, অর্থঃ বয়প্রাপ্তি) বলতে সে ব্যক্তিকে বোঝায় যে বয়ঃপ্রাপ্তি বা বয়ঃসন্ধিতে পৌছেছে, এবং ইসলামী আইনের অধীনে সে পূর্ণ দ্বায়িত্ববান।[1][2][3]

ইসলামে মানবজীবনকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়, প্রথমটি হল বয়ঃসন্ধি বা বুলুগিয়াতের আগে বা শিশুকাল, যখন মানুষ নিষ্পাপ গণ্য হয় এবং পরবর্তীটি বুলুগিয়াতের পরে বা প্রাপ্তবয়স্ক, যখন থেকে মানুষের উপর ইসলামী বিধান পূর্ণরূপে কার্যকর হয় ও ইহকালীন পরকালীন বিচারযোগ্য হয়। কোন মানুষ বালিগ হবার পূর্বে মারা গেলে স্বর্গবাসী বলে গণ্য হয়, এবং বালিগ দশা শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ শিশুকালে কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি ও অপরাধ হাদীস অনুযায়ী অধর্তব্য হিসেবে নেওয়া হয়।।[3][4]

আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরনের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, (৩) পাগল, যতক্ষণ না জ্ঞানসম্পন্ন হয়।

আবু দাউদ, ৪৪০৩, তিরমিযী ১৪২৩, সুনানে নাসায়ী ৩৪৬২,ইবনে মাজাহ ২০৪১[3]

আমর ইবনে শুয়াইবের দ্বারা তার পিতা হতে বর্ণিত, তার দাদা বলেছেনঃ আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ তোমাদের শিশুদেরকে সাত বছর বয়সে (ফরজ) নামাজের নির্দেশ দাও, আর দশ বছর বয়স থেকে তাদের প্রহার কর যদি তারা তা না করে, আর তাদেরকে নিজ নিজ বিছানায় আলাদা করে দাও।"

— আবু দাউদ (৪৯৫)

ইসলামী ফিকহশাস্ত্রবিদগণের মতে, বালিগ অবস্থার প্রাক্কালে অর্থাৎ সাত বছর থেকে (তামঈজ) এবং বালিগ দশার মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের ইরাদা বা নিয়ত বা ক্বাসদ বা স্বাধীন ইচ্ছা, আকল বা ভুলসঠিক বিচারের ক্ষমতা এবং হিম্মত বা সাহসিকতা তৈরি হয়, এবং বালিগ দশা শেষ হবার পর (তাক্বলিব) তার আকল অর্থাৎ প্রজ্ঞা ও বিচারবুদ্ধি পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই শিশুকাল অর্থাৎ সাত বছর বয়সের আগে থেকে শিশুকে কিতাব বা জ্ঞান, আদব বা শিষ্টাচার, ইবাদত বা উপাসনা ও তাহারাত বা পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা দেওয়া হয়, কারণ এসময় শিশু সহজে শিক্ষা গ্রহণের উপযুক্ত থাকে।[3][4][5][6]

ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেয়ীর মতে, ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির ন্যুনতম বয়স আনুমানিক প্রায় ১২ চন্দ্রবছর এবং লক্ষণ না পেলে আনুমানিক ১৫ চন্দ্রবছর থেকে সর্বোচ্চ ১৮ চন্দ্রবছর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, বা ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে; ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণগুলো হল কন্ঠস্বরে ভঙ্গুরতাসমেত পুরুষালী পরিবর্তন, বয়ঃসন্ধিক কেশোদ্গম, স্বপ্নদোষ ও স্ত্রী-নিষেকক্ষমতা লাভ। মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির ন্যুনতম বয়স আনুমানিক প্রায় ৯ চন্দ্রবছর এবং লক্ষণ না-পেলে আনুমানিক ১৫ চন্দ্রবছর থেকে সর্বোচ্চ ১৭ চন্দ্রবছর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, বা ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে। মেয়েদের বয়ঃপ্রাপ্তির বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণগুলো হল রজঃচক্র, সিক্ত স্বপ্ন ও গর্ভধারণের ক্ষমতা লাভ। তবে ইমাম নববীর মতে, ১৫ চন্দ্রবছর বয়সই ছেলে ও মেয়ে উভয়ের পূর্ণ বালেগ হওয়ার জন্য স্বতসিদ্ধ।[3][7][8]

বিয়ে সম্পর্কিত প্রসঙ্গে, বালিগ শব্দটি হাত্তা তুতিকাল-রিযাল নামক আরবি আইনগত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, যার অর্থ একজন নারী সহবাসের জন্য শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার বিয়ে দেয়া যাবে না। সে অর্থে, বালিগ বা বালাগাত বলতে যৌন বয়ঃপ্রাপ্তিতে পৌছানোকে বোঝায়, যা রজঃস্রাব শুরুর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। এই দুই মতবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত বয়স মিলে যেতে পারে, কিন্তু তা মিলতেই হবে এমন কোন বাধকতা নেই। একমাত্র "রুশদ" নামক একটি পৃথক পর্যায়ে বা নিজস্ব সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য বুদ্ধিমত্তাগত বয়ঃপ্রাপ্তি লাভের পর কোন নারী তার মোহর পাবে। [7][9]

তথ্যসূত্র

  1. Amanat, Abbas; Griffel, Frank (২০০৭)। Shari’a: Islamic Law in the Contemporary Context (ইংরেজি ভাষায়)। Stanford University Press। পৃষ্ঠা 100। আইএসবিএন 978-0-8047-7953-1। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  2. Netton, Ian Richard (২০১৩)। Encyclopaedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 110। আইএসবিএন 978-1-135-17960-1। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  3. Elementary Education and Motivation in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Cambria Press। ২০১০। পৃষ্ঠা 21,25। আইএসবিএন 978-1-62196-932-7। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  4. Meri, Josef W. (২০০৬)। Medieval Islamic Civilization: An Encyclopedia (ইংরেজি ভাষায়)। Psychology Press। পৃষ্ঠা 150। আইএসবিএন 978-0-415-96690-0। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  5. Tarazi, Norma (১৯৯৫)। The Child in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। American Trust Publications। পৃষ্ঠা ১২৯। আইএসবিএন 978-0-89259-158-9। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  6. Rassool, G. Hussein; Khan, Muhammad Aftab (২০২০)। Sexuality Education from an Islamic Perspective (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge Scholars Publishing। পৃষ্ঠা ১৮৯। আইএসবিএন 978-1-5275-4697-4। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  7. Hughes, Thomas Patrick (১৮৮৫)। A Dictionary of Islam: Being a Cyclopædia of the Doctrines, Rites, Ceremonies, and Customs, Together with the Technical and Theological Terms, of the Muhammadan Religion (ইংরেজি ভাষায়)। W.H. Allen। পৃষ্ঠা 476। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  8. Torab, Azam (২০০৭)। Performing Islam: Gender and Ritual in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ১০৯। আইএসবিএন 978-90-04-15295-3। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০
  9. Masud, Islamic Legal Interpretation, Muftis and Their Fatwas, Harvard University Press, 1996

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.