বারোমাস্যা
বারমাস্যা হল মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রের বছরের বারোমাসের জীবনচর্যার সুখদুঃখের আত্মবিবরণী। এই বিশেষ সংগীতে নারীর বাস্তব মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমসাময়িক সমাজচিত্র।[1]
বিবরণ
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্যের রচয়িতাগণ কাব্যের অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে বারোমাস্যায় নায়িকাদের জবানীতে তাদের বারো মাসের জীবনযাত্রার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তবে, এর বিষয়বস্তুতে নারীর দুঃখের বর্ণনাই সুখের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
এগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রধানা চরিত্র ফুল্লরার বারোমাস্যা। দেবী চণ্ডীকে ফুল্লরা বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত বারোমাসের তার যে কাহিনি বর্ণনা করেছে, সেখানে নিম্নবিত্ত সমাজজীবনের প্রাত্যহিক বাস্তবচিত্র ধরা পড়েছে। মঙ্গলকাব্য ছাড়াও বাংলায় অনূদিত মহাকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলিতে বারোমাস্যার অনুষঙ্গ রয়েছে। যেমন: কৃত্তিবাসী রামায়ণে, রামচন্দ্র বনবাসে যাওয়ার পর পুত্রবিহনে বেদনাতুর মাতা কৌশল্যার বারোমাসের দিনযাপনের পরিচয় পাওয়া যায় 'কৌশল্যার বারোমাস্যা'য়। আবার বৈষ্ণব পদাবলিতে, কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে যাওয়ার পর বিরহিণী রাধার দুঃখের বারোমাস্যা পরিবেশিত হয়েছে। বাংলা ছাড়াও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার প্রাচীন সাহিত্যে বারোমেস্যার সন্ধান পাওয়া যায়।[1]
তথ্যসূত্র
- চক্রবর্তী, ড. বরুণকুমার সম্পাদিত (১৯৯৫)। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিকোষ। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ২৫৫–২৫৬। আইএসবিএন 81-86036-13-X।