বারেচহরীয়া ভাওনা মহোৎসব
বারেচহরীয়া ভাওনা আসাম-এর শোণিতপুর জেলার জামুগুরি হাটে প্রতি ৫ বছরের অন্তরে অনুষ্ঠিত হওয়া ভাওনা উৎসব[1]। 'বারে' মানে 'অনেকে' এবং 'চহরীয়া' মানে 'নাগরিক'৷ পরে অনেক গাঁয়ের নাগরিক একসমবায় হয়ে যে ভাওনা উদ্যাপন করে সেটিই বারেচহরীয়া ভাওনা৷ এই ভাওনাই প্রায় ২১৩ বছর ধরে এই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে এসেছে। আনুমানিক ১৭৯৭-৯৮ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত জামুগুরিহাটে এই ভাওনা অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে[2]।
বারেচহরীয়া ভাওনা উৎসব | |
---|---|
অবস্থা | সক্রিয় |
ধরন | হিন্দু ধর্মোৎসব |
অবস্থান (সমূহ) | জামুগুরি হাট, শোণিতপুর, আসাম |
দেশ | |
প্রবর্তিত | ১৭৯৭-৯৮ (আনুমানিক) |
উপস্থিতি | ৫০,০০০ লোক (গড়) |
আয়োজনে | জামুগুরির নাগরিক |
ওয়েবসাইট | |
www.barechahariabhowna.com |
ইতিহাস
আনুমানিক ১৭৯৭-৯৮ সালে জামুগুরিহাটে প্রথমবার বারেচহরীয়া ভাওনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল[3]। কীভাবে এর সূত্রপাত হয় তার লিখিত বিবরণ নেই। কিন্তু বারেচহরীয়া ভাওনার পাতনিতে কলিয়াবর-এর "হেজারী ভাওনা", কামপুর-এর "বারেগঞা ভাওনা" ইত্যাদির প্রভাব থাকার অনুমান করা হয়[3]।
১৮৯৭ সাল থেকে মোট ২৪ বার এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণ জামুগুরির অন্তর্গত পাছিগাঁয়ের পশ্চিমে থাকা 'রঘুদলনি' পথারে প্রথম ২১টি ভাওনায় এর আরম্ভ হয়েছিল। ১৮০৭ সালে সেই গাঁয়ের বর্তমানের নামঘর থাকা স্থানের খুনখোয়াহাটের কাছে, ১৮১২ সালে বরভগীয়া গাঁয়ের পশ্চিমের 'ফাকুয়া পথার'-এ, ১৮১৭ সালে পুনরায় 'রঘুদলনি'তে, ১৮৯৫ সালে শলগুরি গাঁয়ের পশ্চিমে থাকা 'ডোমর বাকরে'তে এই বারচহরীয়া ভাওনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯০০ সালে কাঠবারী গাঁয়ের উত্তরে থাকা ঢাকরে পথারে ১৮টি খলাে ১৮টি ভাওনায় বারেচহরীয়া ভাওনা উদ্যাপিত হয়। ১৯০৫ সালে ২১টি খলায় ডেকাসুন্দর গাঁয়ের 'পকামূরা পথার'-এ বৃহৎ মন্ডপ সাজিয়ে এই ভাওনা উদ্যাপন করা হয়। তার পর ১৯১০ সালে বরহমপুর-সরুভগীয়া গাঁয়ের মাঝের বালিপরা পথারে এই ভাওনা পাতা হয়। ১৯১৭ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চোদ্দবার পকামূরা পথারে বারেচহরীয়া ভাওনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মধ্যে একবার ১৯৫৩ সালে পাতলের চুক গাঁয়ের উত্তরে থাকা 'ফুটুকাতলি' পথারে এই অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয়। এইবছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে পকামূরা পথারে ২৪-২৭ ফেব্রুয়ারিতে বারেচহরীয়া ভাওনা অনুষ্ঠিত হয়েছে[4]।
বারেচহরীয়া ভাওনার প্রসার এবং স্বীকৃতির ক্ষেত্রে 'শোনিতকোঁয়র' গজেন বরুয়া আগভাগ নিয়েছিলেন[1][5]।
গঠন
বারেচহরীয়া ভাওনার মূল মন্ডপটি পদ্ম ফুলের চাকার আদলে নির্মাণ করা হয়। পদ্মের প্রতিটি পাশে একটিকরে 'খলা' নির্মাণ করা হয়। একটি খলায় সাতজোড়া করে খুঁটি থাকে। বাঁশ-এর কামিরে নির্মাণ করা চালের ওপরে ন-খেরেরে চাঁবনি দেওয়া হয়। মন্ডপের ডানদিকে গম্বুজ সাজিয়ে তার ওপরে স্বর্ণাভ কলসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিটি খলার কেন্দ্রস্থল দৌলে সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। খলাগুলির সম্মুখে একটাকরে বাটসোরা থাকে এবং তার কাছে একটা ছোঁঘর থাকে। প্রত্যেক খলা, বাটসোরা এবং ছোঁঘরের আদল সম্পূর্ণ এক[3]।
গম্বুজর সঙ্গে রভা এবং খলাসমূহকে সাতটা ভাগে বিভক্ত করা হয়। সেগুলি হচ্ছে[3]:
(ক) গুরু আসন
(খ) বিশিষ্ট লোকদের আসন
(গ) গুরু আসন প্রদক্ষিণ পথ
(ঘ) রঙ্গভূমি বা অভিনয় ক্ষেত্র
(ঙ) বাটসোরা
(চ) মুকলি স্থান
(ছ) মূল বাটসোরা
বৈশিষ্ট্য
জাতি,ধর্ম,বর্ণ নিবির্শেষে সার্বজনীনভাবে উদ্যাপন করা শংকরী কলা-কৃষ্টির এমন ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক রঙ্গপ্রতিষ্ঠান খুবেমই জনপ্রিয় এবং কয়েক লক্ষ দর্শকের উপভোগ করা এর মূল বৈশিষ্ট্য। কোনো আনুষ্ঠানিক কারিগরী প্রশিক্ষণ না থাকা গাঁয়ের নাগরিক কোনো বিশেষজ্ঞ কিম্বা প্রকৌশলীর সহায়তা না নেওয়ায় নিজের সহায়তা এবং বুদ্ধি-অভিজ্ঞতায় একটি সর্ব্ব্যাঙ্গসুন্দর সুবৃহৎ মন্ডপ পরিকল্পনা করে তাকে বাস্তব রূপদান করে[4]। কারা প্রথম এমন রঙ্গমঞ্চ উদ্ভাবন করেছিলেন, কারো বিশেষত নাম জানা যায় না। এই ভাওনার মূল বৈশিষ্ট্য হল ১৪ থেকে ২১ টি ভিন্ন ভিন্ন খলায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত নাট ভাওনা। মূলমন্ডপকে কেন্দ্র করে চারিদিকে তৈরি করা ১৪ থেকে ২১ টি খলা এক বৃত্তাকার রূপ ধারণ করে। সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত মন্ডপের পশ্চিম দিকের খলাটিক মূল খলা হিসাবে গণ্য করে বাকী খলাগুলির নাম দেওয়া হয়। প্রতিটি খলাকে গাছ-লতা-ফুলে সুদৃশ্য করে তার সম্মুখে একটাকরে তোরণ সাজিয়ে মঞ্চসমূহকে এবং অধিক সুন্দর করে তুলতে যত্ন করা হয়৷ এই সমস্ত খলাতে একই সময়ে ডবা, বরকাঁসা বাজি ভাওনা আরম্ভ করা হয়। প্রথম খলার থেকেই গায়ন-বায়ন ঢেরাপাকো' দেওয়া আরম্ভ করেন। সাথে সাথে সমস্ত খলা থেকেই ডানহাতে দিয়ে প্রথম খলার গায়ন-বায়ন ক অনুসরণ করে সম্পূর্ণ কলাসমূহ তিনি পাক দেওয়ার পর নিজ নিজ খলায় অংকীয়ার কাজ শেষ করেন। গায়ন-বায়নের ঢেরাপাকো'র এই দৃশ্যটি বারে চহরীয়া ভাওনার এক অন্যতম দৃশ্য[4]। এরপর প্রতিটি খলাতে বিশেষ ভাওনা হয়৷ প্রতিটি খলায় গায়ন বায়ন, সূত্রধার, নাট ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন।
আরো দেখুন
- ভাওনা
- অংকীয়া নাট
- শোণিতকোবর গজেন বরুয়া
- জামুগুরি হাট
তথ্যসূত্র
- Syed Zarir Hussain। "Dance-drama extravaganza in Assam with 2,500 actors (FEATURE)"। india-forums.com। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৩।
- শাক্য সৌমিক। "Baresohoriya Bhaona"। এনাজরী ডট কম। ৮ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১২।
- কিশোর কুমার ভূঞা (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)। "বারেচহরীয়া ভাওনা – অনন্য সংস্কৃতির অপূর্ব নিদর্শন"। আমার আসাম – পূর্বাচল। পৃষ্ঠা ৮–১১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য); - ড০ প্রদীপ ভূঞা (২০১৩)। "বারেচহরীয়া ভাওনার ঐতিহ্য এবং মহত্ত্ব"। অসমীয়া খবর (দ্বাদশ বছর সংখ্যা ১০৩ দেওবার): পৃ:৪। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - অসমীয়া সংস্কৃতির কণিকা, সম্পাদনা – ডঃ নারায়ণ দাস, ডঃ পরমানন্দ রাজবংশী, পৃষ্ঠা – ২৪৫-২৪৬