বেঙ্গালুরু

বেঙ্গালুরু (কন্নড়: ಬೆಂಗಳೂರು, প্রতিবর্ণী. বে˘ঙ্গল়ূরু, পূর্বনাম ব্যাঙ্গালোর) হল ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী। এই শহরকে "ভারতের সিলিকন ভ্যালি" বলা হয়ে থাকে।

বেঙ্গালুরু
ಬೆಂಗಳೂರು
ব্যাঙ্গালোর
মহানগর
ঘড়ির কাটার ন্যায় উপর থেকে:
UB City, Dodda Basavana Gudi, Halasuru Someshwara Temple, Infosys pyramid, Vidhana Soudha, Oracle Financial Services Software building, Lal Bagh Glass House, Bangalore Palace
ডাকনাম: ভারতের সিলিকন ভ্যালি
বাগানের শহর
স্থানাঙ্ক: ১২°৫৮′ উত্তর ৭৭°৩৪′ পূর্ব
Established১৫৩৭ (1537)
প্রতিষ্ঠাতাকেম্পে গৌড় প্রথম
সরকার
  ধরনপৌর সংস্থা
  শাসকবৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে
  মেয়রManjunath Reddy[1]
  কমিশনারজি কুমার নায়ক[2]
আয়তন
  মহানগর৭০৯ বর্গকিমি (২৭৪ বর্গমাইল)
  মহানগর৮,০০৫ বর্গকিমি (৩,০৯১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
  মহানগর৮৪,৪৩,৬৭৫
  মহানগর১,০৪,৫৬,০০০
  মহানগর জনঘনত্ব১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৪০০/বর্গমাইল)

জনবসতি

বেঙ্গালুরুর দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সমুদ্র সমতল থেকে ৯০০ মিটার(৩,০০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত।এটি মহীশূর মালভূমি অঞ্চলের অর্ন্তগত।এই শহরের আয়তন প্রায় ৭৪১ বর্গ কিলোমিটার (২৮৬ বর্গ মাইল)। ২০১১ সালের ভারতের জনগণনা অনুযায়ী, এই শহরের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ লক্ষ। জনসংখ্যার বিচারে ব্যাঙ্গালোর ভারতের পঞ্চম জনবহুল মহানগর এবং বিশ্বের অষ্টাদশতম জনবহুল শহর।ব্যাঙ্গালোর তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হওয়ায় দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে প্রচুর মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য এ শহরে আসে। ২০১১ সালের ভারতের জনগণনা অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুর মোট জনসংখ্যার ৭৮.৯% হিন্দু, ১৩.৯% মুসলমান, ৫.৬% খ্রীষ্টান এবং ১.০% জৈন ধর্মাবলম্বীর মানুষ বসবাস করেন।

কন্নড় বেঙ্গালুরুর প্রধান ভাষা।এছাড়া উত্তর ভারত ও পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য আসা লোকজনের মধ্যে ইংরাজী, তামিল, তেলুগু, উর্দু ও হিন্দি ভাষার প্রচলন রয়েছে।

একসময় কলকাতার পর বেঙ্গালুরুরে অ্যাঙ্গলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বসতি ছিল। বর্তমানে প্রায় ১০,০০০ জন অ্যাঙ্গলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।  

ইতিহাস

দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজবংশ যেমন - পশ্চিম গঙ্গা, চোল, হোয়সালা এখানে রাজত্ব করেছে। ১৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কেম্পে গৌড়া নামে এক জমিদার এখানে একটি মাটির দুর্গ তৈরী করেছিলেন। মনে করা হয় যে, এটি আধুনিক ব্যাঙ্গালোর শহরের প্রথম ভিত্তি স্থাপন। ১৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে মারাঠারা ব্যাঙ্গালোর অধিকার করে এবং প্রায় ৫০ বছর মারাঠা সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। এরপর মুঘলরা ব্যাঙ্গালোর দখল করে এবং তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে মহীশূর রাজ্যের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই সময় ওয়াডিয়ার রাজবংশ মহীশূরে রাজত্ব করছিল। ১৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে ব্রিটিশরা জয়লাভ করে এবং তারা মহীশূরের রাজাকে এই শহরের প্রশাসনিক দায়িত্বভার দেয়। বেঙ্গালুরু মহীশূর রাজ্যের রাজধানী হয়।মহীশূর রাজ্য যা কিনা নামেই স্বাধীন রাজ্য ছিল, এর তত্ত্বাবধানে পুরোনো ব্যাঙ্গালোর শহর গড়ে ওঠে। ১৮০৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশরা তাদের ক্যান্টনমেন্ট ব্যাঙ্গালোরে স্থানান্তরিত করে এবং পুরানো শহরের বাইরে নতুন একটি শহর গড়ে ওঠে যা ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট নামে পরিচিত হয়। এই নতুন শহর ব্রিটিশ ভারতের শাসনাধীন ছিল।১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ও মহীশূর রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালোর শহর ই থাকে। ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে ব্যাঙ্গালোর শহর ও ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট দুটিকে মিলিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দে কন্নড় ভাষাভুক্ত অঞ্চলগুলি নিয়ে নতুন কর্ণাটক রাজ্য স্থাপিত হলে রাজধানী ব্যাঙ্গালোরকে করা হয়।২০০৬ সালে ব্যাঙ্গালোর এর কন্নড় নাম বেঙ্গালুরু সরকারীভাবে গ্রহণ করা হয়।.   

অর্থনীতি

রাজাজিনগরে অবস্থিত 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ব্যাঙ্গালোর'

বেঙ্গালুরু ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পেরও রাজধানী। দেশের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা থাকায় ব্যাঙ্গালোর ভারতের সিলিকন উপত্যকা নামে ও পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সংস্থা ইনফোসিস, ইসরো, উইপ্রো প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর এই শহরে রয়েছে। এই শহরে ২০০০ টিরও বেশি তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা রয়েছে। কৃষি এবং উৎপাদন শিল্প থাকলেও তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প এই রাজ্যের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। চার দশক আগে এই শহরে যাত্রা শুরু করেছিল তথ্য-প্রযুক্তি। ভারতের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা কেন্দ্র- যেমন ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব্‌ সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব্‌ ম্যানেজমেন্ট ব্যাঙ্গালোর, হিন্দুস্তান এরোনটিকস্‌, ভারত ইলেকট্রনিকস্‌ প্রভৃতি ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত। ব্যাঙ্গালোর কন্নড় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান কেন্দ্র।[3]

প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান

এই শহরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন- জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের দূতাবাস রয়েছে। 

মহাবিদ্যালয়

চিকিৎসা ব্যবস্থা

এই শহরে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হাসপাতালগুলো হলো :

  1. ফোর্টিস হাসপাতাল , বানারঘাটটা রোড
  2. মণিপাল হাসপাতাল , হ্যাল বিমানবন্দর রোড
  3. কলম্বিয়া এশিয়া রেফারেল হাসপাতাল , যশবন্তপুর

খেলাধুলা

বিভিন্ন রকমের খেলাধুলার পরিকাঠামো শহরে গড়ে উঠেছে। ক্রিকেটের জন্য রয়েছে এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। তেমনি ফুটবলের জন্য রয়েছে শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়াম

কৃষ্টি সংস্কৃতি

এখানে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়। 'নাইট লাইফে'র জন্য বিখ্যাত বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে অভিজাত এলাকা তথা শহরের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত মহাত্মা গান্ধী রোড । আরেক 'পার্টি'র জন্য পরিচিত এলাকা কোরমঙ্গলা ।[4]

পরিবহণ

ব্যাঙ্গালোরের প্রধান বিমান বন্দর কেম্পেগৌড়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর শহরের মূলকেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০ কি.মি. (২৫ মাইল) দূরে দেভানাহাল্লিতে অবস্থিত।আগে এর নাম ছিল বেঙ্গালুরু আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর। এটি একটি বেসরকারী বিমানবন্দর। ২০০৮ সালের ২৪ শে মে এই নতুন বিমানবন্দরের বিমান ওঠা-নামা শুরু হয়।এর আগে শহরের পূর্বদিকে বিমানাপুরায় অবস্থিত  হাল(হিন্দুস্তান এরোনটিকস লিমিটেড)বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল করত।যাত্রী সংখ্যা ও বিমান ওঠা-নামার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দিল্লী ও মুম্বাইয়ের পর ব্যাঙ্গালোর ভারতের তৃতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।বিমানবন্দর থেকে শহরের সংযোগের ক্ষেত্রে ট্যাক্সি ও বিএমটিসি পরিচালিত শীততাপনিয়ন্ত্রিত ভলভো বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতীয় রেলপথের দক্ষিণ-পশ্চিম শাখার বিভাগীয় সদর দপ্তর ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত।  

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Manjunath Reddy is the new Mayor of IT City Bengaluru"The Times of India
  2. "Commissioner"Bruhat Bangalore Mahanagara Palike। ১১ ২ মে ০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 3 May 2015 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "এগোচ্ছে বেঙ্গালুরু"
  4. "Party location"
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.