বাঙালি মুসলমান
বাঙালি মুসলমান বা বাঙালি মুসলিম হচ্ছে একটি জাতিগত, ভাষাগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায় যারা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ,আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের বৃহত্তম সংখ্যালঘু।[14] জাতিগত বাঙালি যারা ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে এবং বাংলা অক্ষরে লিখিত বাংলা ভাষায় কথা বলে। আরব মুসলিমদের পরেই ভাষা-জাতিগত দিক থেকে তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমান সম্প্রদায়।[15][16] বাঙালি ও মুসলমান সংস্কৃতির সম্মিলনে বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় গঠিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ভারতভাগের পর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান (ঐতিহাসিক পূর্ব-বাংলা) বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা ছিল জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়।
বাঙালি মুসলিম (Bengali Muslim) | |
---|---|
মোট জনসংখ্যা | |
১৮৫ মিলিয়ন | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
বাংলাদেশ | ১৪৬,০০০,০০০ (২০১১)[3] |
ভারত | ৩৬,৪০০,০০০ (২০১১)[4] |
পাকিস্তান | ২,২০০,০০০ (২০১১)[5] |
সৌদি আরব | ১,২০০,০০০ (২০১০)[6] |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | ৭০০,০০০ (২০১৩)[7] |
মালয়েশিয়া | ৫০০,০০০ (২০০৯)[8] |
যুক্তরাজ্য | ৩৭৭,১২৬ (২০১১)[9] |
কুয়েত | ২৩০,০০০ (২০০৮)[10] |
ওমান | ২০০,০০০ (২০১০)[11] |
কাতার | ১৫০,০০০ (২০১৪)[12] |
যুক্তরাষ্ট্র | ১৪৩,৬১৯ (২০০৭) |
ইতালি | ১১৫,৭৪৬ (২০১৩)[13] |
ভাষা | |
বাংলা এবং এর বিভিন্ন উপভাষা |
বাংলাদেশে ইসলাম |
---|
পরিচয়
বাঙালিরা দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গ অঞ্চলে বসবাসকারী এবং বাংলাভাষী অনার্য জাতির লোক । ঐতিহাসিভাবে এ অঞ্চলটি গঙ্গা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা ভারত থেকে বিভক্ত, যা বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন ভাষা ও সংস্কৃতি তৈরি করতে সাহায্য করেছে। প্রথম সহস্রাব্দে এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে এবং তা বাঙালি সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। পারস্য, তুর্কি, আরব ও মুঘল শাসকদের আগমন বাংলার সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। ইতিহাসবিদ রিচার্ড ম্যাক্সওয়েল ইটন, আহমদ শরিফ, মুহাম্মদ মোহর আলী ও যদুনাথ সরকার একমত পোষণ করেন যে, ইসলাম ধর্মপ্রচারক দ্বারা নিম্ন বর্ণের হিন্দু থেকে অধিক সংখ্যায় বাঙালি মানুষ ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। আজকের দিনে অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে বসবাস করে।
বাঙালি মুসলমানদের অধিকাংশই দেওবন্দী ও বেরলভী মতবাদের অনুসারী । কিছু সালাফী, ফুলতলী, শিয়া, কাদিয়ানী ও নির্দিষ্ট কোন দর্শনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন মুসলিমও এখানে বাস করে।
ইতিহাস
প্রাক-ইসলামী ইতিহাস
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকে বাংলায় ধান চাষকারী সম্প্রদায়ের বসবাস। এই অঞ্চলটি একটি বৃহৎ কৃষিজীবী জনসংখ্যার আবাসস্থল ছিল, যাদের উপর ভারতীয় ধর্মের সামান্য প্রভাব ছিল।[17] প্রথম সহস্রাব্দে অঞ্চলটিতে বৌদ্ধধর্ম প্রভাব বিস্তার করে। বাংলা ভাষা অপভ্রংশ এবং মাগধী প্রাকৃত থেকে সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে বিকাশ লাভ করে। বাংলা, অসমীয়া ও ওড়িয়া; এই ভাষাগুলি আলাদা হওয়ার পূর্বে একটি একক ইন্দো-আর্য শাখা গঠন করেছিল।[18]
প্রাথমিক পর্যটকগণ
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রসার একটি বিতর্কিত বিষয় হতে পারে। [19] ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে প্রথম সহস্রাব্দে সিল্ক রোড অতিক্রম করার সময় প্রথম দিকের মুসলিম ব্যবসায়ী ও বণিকরা বাংলায় আসেন। দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম মসজিদগুলির মধ্যে একটি উত্তর বাংলাদেশে খনন করা হয়েছে, যা নবী মুহাম্মদের জীবনকালেই এই এলাকায় মুসলমানদের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। [20] নবম শতাব্দীতে মুসলিম বণিকগণ বাংলার সমুদ্রবন্দরগুলোতে বাণিজ্যিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে। বাংলা এবং আরব আব্বাসীয় খিলাফতের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে পাল শাসনামলে বাংলায় প্রথম ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। [21] এই অঞ্চলের অনেক জায়গায় আব্বাসীয় খিলাফতের মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। দশম শতাব্দীতে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় সমতটের লোকেরা বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসরণ করত। এই সময়ে, আরব ভূগোলবিদ আল-মাসুদি, যিনি দ্য মিডোজ অফ গোল্ডের লেখক, এই অঞ্চলে ভ্রমণ করেন এবং বাসিন্দাদের একটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেন। [22]
মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে, বাণিজ্যের পাশাপাশি, সুফি ধর্মপ্রচারকদের আগমনের মাধ্যমেও বাংলার মানুষের কাছে ইসলামের পরিচয় ঘটেছিল। প্রাচীনতম সুফি ধর্মপ্রচারক ছিলেন সৈয়দ শাহ সুরখুল আন্তিয়া ও তাঁর শিষ্যগণ, বিশেষ করে ১১শ শতাব্দীর শাহ সুলতান রুমি। রুমি বর্তমান নেত্রকোনা, ময়মনসিংহে বসতি স্থাপন করেন যেখানে তিনি স্থানীয় শাসক ও জনগণকে ইসলাম গ্রহণে প্রভাবিত করেন।
প্রাথমিক ইসলামি সাম্রাজ্য
বাংলা যখন হিন্দু সেন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল, পরবর্তী মুসলিম বিজয়, সমগ্র অঞ্চলে ইসলাম প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বখতিয়ার খলজি, একজন তুর্কি মুসলিম সেনাপতি, ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করেন ও বাংলার বিশাল অংশ দিল্লি সালতানাতের সাথে যুক্ত করেন। খলজি তিব্বতও অভিযান চালান। এই প্রাথমিক বিজয়ের পর বাংলায় ধর্মপ্রচারকদের আগমন ঘটে এবং অনেক বাঙালি ইসলামকে তাদের জীবনধারা হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। সুলতান বলখী এবং শাহ মখদুম রূপস উত্তরবঙ্গের বর্তমান রাজশাহী বিভাগে বসতি স্থাপন করেছিলেন ও সেখানকার মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। উত্তর-পূর্বের শহর উত্তর-পূর্বের শহর শ্রীহট্টে (সিলেট) বুরহানউদ্দিনের ছত্রছায়ায় ১৩টি মুসলিম পরিবারের একটি সম্প্রদায় বাস করত, তদের দাবি অনুযায়ী তাদের বংশধররা চট্টগ্রাম থেকে এসেছিল। [23] ১৩০৩ সাল নাগাদ, শাহ জালালের নেতৃত্বে শত শত সূফী প্রচারক বাংলার মুসলিম শাসকদের সিলেট জয় করতে সাহায্য করেন, যা ধর্মীয় কার্যকলাপের জন্য শহরটিকে জালালের সদরদপ্তরে পরিণত করে। বিজয়ের পর, জালাল ইসলাম প্রচারের জন্য তার অনুসারীদের বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেন এবং বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে একটি সুপরিচিত নাম হয়ে ওঠেন।
বাংলা সালতানাত
১৩৫২ সালে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ কর্তৃক একটি একক অখণ্ড বাংলা সালতানাত প্রতিষ্ঠার ফলে একটি সামাজিক-ভাষিক পরিচয় "বাঙালি"-র জন্ম দেয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বাংলায় বিদ্যমান ঐতিহাসিক ইসলামি সাম্রাজ্যগুলো স্থাপত্য, কৃষি, নির্মাণ প্রকৌশল, পানি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির মতো অসংখ্য ক্ষেত্রে বেশ কিছু চতুর প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। খাল ও জলাধার সৃষ্টি সুলতানি আমলের একটি সাধারণ রীতি ছিল। সেচের নতুন পদ্ধতি সুফিদের দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। বাঙালী মসজিদ স্থাপত্যে পোড়ামাটি, পাথর, কাঠ এবং বাঁশ, বাঁকা ছাদ, মিনার এবং একাধিক গম্বুজ রয়েছে। বাংলা সালতানাতের সময়, আরও একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক শৈলীর বিকাশ ঘটে যেটিতে কোন মিনার ছিল না, তবে মিহরাব এবং মিম্বরগুলি কুলুঙ্গি হিসাবে সমৃদ্ধভাবে ডিজাইন করা হত। [24]
ইসলামি বাংলার ১৭শ ও ১৮শ শতকে মসলিন রপ্তানি সহ বস্ত্র বয়নের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বর্তমানে, জামদানির বয়নকে ইউনেস্কো একটি অস্পষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা হয়। ১৮৬২ সালে রেলপথ চালু করা হয়েছিল, যা বাংলাকে একটি রেল নেটওয়ার্কের জন্য বিশ্বের প্রথমতম অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি করে তোলে। [25] সাধারণ জনগণের জন্য, বুনিয়াদি বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সীমিত ছিল। ঔপনিবেশিক সরকার ও বাঙালি অভিজাতরা বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। ঢাকার নবাবগণ আহসানুল্লাহ স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠা করেন যেটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়[26] নামে পরিচিত।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, মাকিন-বাঙালি মুসলমান ফজলুর রহমান খান বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য প্রকৌশলীদের একজন হয়ে ওঠেন, বিশ্বের উচ্চতম ভবনের নকশা তৈরিতে যার অবদান অনস্বীকার্য।[27] আরেকজন বাঙালি মুসলিম জার্মান-আমেরিকান, জাভেদ করিম ছিলেন ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। [28]
২০১৬ সালে, বাংলা সালতানাত-শৈলীর ইমারত দ্বারা অনুপ্রাণিত, আধুনিকতাবাদী বাইত-উর-রউফ মসজিদ, স্থাপত্যের জন্য আগা খান পুরস্কার জিতেছে। [29]
জনপরিসংখ্যান
বাঙালি মুসলমানরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জাতিসত্তা (আরব বিশ্বের পরে) এবং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়। [30] ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫২ মিলিয়ন বাঙালি মুসলমান বাস করে, যেখানে ইসলাম হল রাষ্ট্রধর্ম এবং জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠকে নির্দেশ করে। [31] ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ২০২১ সালের হিসাবে আনুমানিক ২৩-২৪ মিলিয়ন বাঙালি মুসলমান রয়েছে, বাকি ৬-৭ মিলিয়ন উর্দুভাষী মুসলমান এবং সুরজাপুরি ভাষী মুসলমান রয়েছে। [32] পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা – মুর্শিদাবাদ ও মালদহে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং উত্তর দিনাজপুরে বহুত্ব রয়েছে। [33] আসামের ১৩ মিলিয়ন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর মধ্যে ৯ মিলিয়নেরও বেশি বাঙালি মুসলমান।
আসামের তেত্রিশটি জেলার মধ্যে নয়টিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ।[35][36] [37][38][39] ভারতের উত্তর-পূর্বের আরেকটি রাজ্য ত্রিপুরায় প্রায় ৩.৮ লক্ষ বাঙালি মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯%। [40] পশ্চিম মায়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মাঝেও উল্লেখযোগ্য বাঙালি মুসলিম ঐতিহ্য রয়েছে। [41]
পারস্য উপসাগরের আরব রাষ্ট্রগুলোতে একটি বৃহৎ বাঙালি মুসলিম প্রবাসী পাওয়া যায়, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক মিলিয়ন প্রবাসী শ্রমিকের বাসস্থান। আরও সুপ্রতিষ্ঠিত ডায়াস্পোরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং পাকিস্তানে বসবাস করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাঙালি মুসলিম বসতি স্থাপনকারীরা ছিলেন জাহাজ জাম্পার যারা ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে হারলেম, নিউ ইয়র্ক এবং বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ডে বসতি স্থাপন করেছিলেন। [42]
সংস্কৃতি
নেতৃত্ব
বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কোনো একক পরিচালনা পর্ষদ নেই, ধর্মীয় মতবাদের জন্য দায়বদ্ধ কোনো একক কর্তৃপক্ষও নেই। যাইহোক, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন, একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান, উৎসবের তারিখ নির্ধারণ ও যাকাত সম্পর্কিত বিষয়গুলি সহ বাংলাদেশে ইসলামিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণ বাঙালি মুসলিম পণ্ডিতগণ গভীরভাবে গোঁড়া এবং রক্ষণশীল। পণ্ডিতদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে মাওলানা, ইমাম, উলামা ও মুফতিগণ ।
বাঙালি মুসলিম শিয়া সংখ্যালঘু ধর্মযাজগণ ১৮শ শতক থেকে পুরান ঢাকায় অবস্থান করছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ
মুহাম্মদ ইউনূস হলেন প্রথম বাঙালি মুসলিম নোবেল বিজয়ী যিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রধন ধারণার জনক, এবং যেকারণে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। [43] বেগম রোকেয়া ছিলেন বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারীবাদীদের একজন। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং ব্রিটিশ ভারতে বিদ্রোহী কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি । ইস্কান্দার মির্জা ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। খাজা সলিমুল্লাহ ছিলেন সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রুশনারা আলী ছিলেন যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের প্রথম মুসলিম এমপিদের মধ্যে একজন। ফজলুর রহমান খান ছিলেন একজন বিশিষ্ট মার্কিন-বাঙালি মুসলিম প্রকৌশলী যিনি আধুনিক আকাশচুম্বী নির্মাণের নকশায় অসাধারণ পরিবর্তন এনেছিলেন। [27] ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের একজন জাভেদ করিম। সাল খান খান একাডেমির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এম এ জি ওসমানী ছিলেন একজন চার তারকা জেনারেল যিনি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আলতামাস কবির ছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি। [44] নাফিসা আলী হলেন বিশিষ্ট বাঙালি মুসলমান যিনি ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করেন। আলাওল ছিলেন একজন মধ্যযুগীয় বাঙালি মুসলিম কবি যিনি আরাকানের রাজদরবারে কাজ করতেন। [45] মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেগম সুফিয়া কামাল ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় বাঙালি মুসলিম নারীবাদী, কবি এবং সুশীল সমাজের নেত্রী। জয়নুল আবেদিন ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশী শিল্পের পথিকৃৎ। মুজহারুল ইসলাম ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিকতাবাদী পোড়ামাটির স্থাপত্যের গ্র্যান্ড মাস্টার।
পরিচয়
বাঙালিরা দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গ অঞ্চলে বসবাসকারী এবং বাংলাভাষী অনার্য জাতির লোক । ঐতিহাসিভাবে এ অঞ্চলটি গঙ্গা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা ভারত থেকে বিভক্ত, যা বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন ভাষা ও সংস্কৃতি তৈরি করতে সাহায্য করেছে। প্রথম সহস্রাব্দে এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে এবং তা বাঙালি সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। পারস্য, তুর্কি, আরব ও মুঘল শাসকদের আগমন বাংলার সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। ইতিহাসবিদ রিচার্ড ম্যাক্সওয়েল ইটন, আহমদ শরিফ, মুহাম্মদ মোহর আলী ও যদুনাথ সরকার একমত পোষণ করেন যে, ইসলাম ধর্মপ্রচারক দ্বারা নিম্ন বর্ণের হিন্দু থেকে অধিক সংখ্যায় বাঙালি মানুষ ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। আজকের দিনে অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে বসবাস করে।
বাঙালি মুসলমানদের অধিকাংশই দেওবন্দী ও বেরলভী মতবাদের অনুসারী । কিছু সালাফী, ফুলতলী, শিয়া, কাদিয়ানী ও নির্দিষ্ট কোন দর্শনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন মুসলিমও এখানে বাস করে।
আরও দেখুন
অন্যান্য বাঙালি ধর্মীয় সম্প্রদায়
অন্যান্য মুসলিম জাতিগোষ্ঠী
- আরব মুসলিম
- পাঞ্জাবি মুসলিম
- উইঘুর মুসলিম
- কুর্দি মুসলিম
রূপরেখা
তথ্যসূত্র
- "The Calcutta review"। ১ জানুয়ারি ১৯৪১ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- Choudhury, A. K. (১ জানুয়ারি ১৯৮৪)। "The Independence of East Bengal: A Historical Process"। A.K. Choudhury – Google Books-এর মাধ্যমে।
- Muslim population in Bangladesh excluding Urdu-speakers
- 24.6 million Muslims in West Bengal and 10.7 million Muslims in Assam
- "Five million illegal immigrants residing in Pakistan"। Express Tribune।
- "Microsoft Word — Cover_Kapiszewski.doc" (PDF)। Un.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-০৭।
- "Labor Migration in the United Arab Emirates: Challenges and Responses"। Migration Information Source। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩।
- "Malaysia cuts Bangladeshi visas"। BBC News। ১১ মার্চ ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০০৯।
- CT0341_2011 Census - Religion by ethnic group by main language - England and Wales ONS.
- "Bangladeshis storm Kuwait embassy"। BBC News। ২৪ এপ্রিল ২০০৫।
- "Oman lifts bar on recruitment of Bangladeshi workers"। News.webindia123.com। ২০০৭-১২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-০৭।
- Snoj, Jure (১৮ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Population of Qatar by nationality"। Bqdoha.com। ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৬।
- "In pursuit of happiness"। Korea Herald। ৮ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৫।
- Kumar, Abhimanyu। "Protest poetry: Assam's Bengali Muslims take a stand"। www.aljazeera.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-১৪।
- Metcalf, Barbara D. (২০০৯-০৯-০৮)। Islam in South Asia in Practice (ইংরেজি ভাষায়)। Princeton University Press। আইএসবিএন 978-1-4008-3138-8।
- Guhathakurta, Meghna; Schendel, Willem van (২০১৩-০৪-৩০)। The Bangladesh Reader: History, Culture, Politics (ইংরেজি ভাষায়)। Duke University Press। আইএসবিএন 978-0-8223-5318-8।
- Richard Maxwell Eaton (31 July 1996)। The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204–1760। আইএসবিএন 9780520205079। সংগ্রহের তারিখ 10-07-2022। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "Bengali language"। Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ 10-07-2022। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - Reza, Mohammad Habib; Ahmed, Iftekhar (২০১৮)। "Re-imagining Bengal: Critical thoughts"। Re-Imagining Bengal:Architecture, Built Environment and Cultural Heritage (ইংরেজি ভাষায়)। Copal Publishing। আইএসবিএন 9789383419647।
- "Ancient mosque unearthed in Bangladesh"। Al Jazeera। ১৮ আগস্ট ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৬।
- Raj Kumar (২০০৩)। Essays on Ancient India। Discovery Publishing House। পৃষ্ঠা 199। আইএসবিএন 978-81-7141-682-0।
- Al-Masudi, trans. Barbier de Meynard and Pavet de Courteille (১৯৬২)। "1:155"। Les Prairies d'or [Murūj al-dhahab] (ফরাসি ভাষায়)। Société asiatique।
- Qurashi, Ishfaq (ডিসেম্বর ২০১২)। "বুরহান উদ্দিন ও নূরউদ্দিন প্রসঙ্গ" [Burhan Uddin and Nooruddin]। শাহজালাল(রঃ) এবং শাহদাউদ কুরায়শী(রঃ)।
- Perween Hasan; Oleg Grabar (২০০৭)। Sultans and Mosques: The Early Muslim Architecture of Bangladesh। I.B. Tauris। আইএসবিএন 978-1-84511-381-0।
- "History"। Bangladesh Railway। ১৫ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
- "About BUET"। BUET। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- Encyclopædia Britannica।
- "Surprise! There's a third YouTube co-founder"। USA Today। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৭।
- "China, Denmark projects among architecture award winners"। The Washington Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯।
- "Understanding the Bengal Muslims Interpretative Essays Hardcover"। Irfi.org। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৬।
- "Muslim Population by Country 2021"।
- Ghosal, Jayanta (19 April 2021). "Decoding the Muslim vote in West Bengal". India Today. Retrieved 22 January 2022.
- "Bengal beats India in Muslim growth rate"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৬।
- PTI (10 February 2020). "Assam plans survey to identify indigenous Muslim population". The Hindu. Retrieved 21 April 2022.
- "Assamese Muslims plan 'mini NRC'"। The Hindu। ১০ এপ্রিল ২০২১।
- "Population by religion community – 2011"। Census of India, 2012। The Registrar General & Census Commissioner, India। ২৫ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- "Muslim majority districts in Assam up"। The Times of India। ৪ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২২।
- "Assam Muslim growth is higher in districts away from border"। ৩১ আগস্ট ২০১৫। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫।
- "Census 2011 data rekindles 'demographic invasion' fear in Assam"। ২৬ আগস্ট ২০১৫। ৪ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫।
- "Tripura: Anti-Muslim violence flares up in Indian state"। BBC News। ২৮ অক্টোবর ২০২১।
- Topich, William J.; Leitich, Keith A. (১ জানুয়ারি ২০১৩)। The History of Myanmar। ABC-CLIO। আইএসবিএন 9780313357244 – Google Books-এর মাধ্যমে।
- Dizikes, Peter। "The hidden history of Bengali Harlem"। MIT News Office। MIT। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৬।
- "The Nobel Peace Prize for 2006"। Nobel Foundation। ১৩ অক্টোবর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০০৬।
- "Altamas Kabir to become CJI on Sept 29"। Hindustan Times। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- Rizvi, S.N.H. (১৯৬৫)। "East Pakistan District Gazetteers" (পিডিএফ): 353। ৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৬।