বাঙালি বিবাহ
বাঙালি বিবাহ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে, যা অনেকসময় কয়েক দিন ধরে পালিত হয়ে থাকে৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিবাহের অনুষ্ঠান শুরু হয় কাবিনের (বিবাহের নথিভূক্তকরণ ও দেন মোহর ধার্যকরণ) মাধ্যমে এবং শেষ হয় বৌ-ভাত(সাধারণত বর পক্ষের পরিবারের মাধ্যমে বৌ-ভাতের আয়োজন করা হয়ে থাকে) অনুষ্ঠানের মাধ্যমে৷ যদিও বাংলার বিভিন্ন অংশে বিবাহ অনুষ্ঠানের আচার-রীতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে, তবে বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এ আচার-রীতিকে দু-রকমভাবে ভাগ করা যেতে পারে৷ তা হল: ঘটি এবং বাঙাল আচার-অনুষ্ঠান৷
অনুষ্ঠান আয়োজন
ঐতিহ্যগতভাবে বিবাহের সম্পর্ক তৈরি হয় ঘটক বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে, যিনি সাধারণত পরিবারটির বন্ধু, আত্মীয় কিংবা শুধুমাত্র একজন মাধ্যম হতে পারেন৷ বিয়ের ঘটক পাত্র ও পাত্রী পক্ষের লোকজনকে পাত্র কিংবা পাত্রী সম্পর্কে অবহিত করেন৷ যদি বিয়ের সম্পর্ক ঠিক হয়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটককে একটা সন্মানী দেওয়া হয়ে থাকে৷ পরিবারের লোকজন বিয়ের জন্য সাধারণত তাদের একই জাত, ধর্ম এবং একই মর্যাদাসম্পন্ন পরিবার খুঁজে থাকে৷
পাকা-দেখা অথবা পাত্রী-পাত্র দেখা
বাঙালি সমাজে প্রেম-ভালোবাসার কোনো সরাসরি সামাজিক অনুমোদন নেই কিন্তু এরপরেও প্রেমিক-প্রেমিকার বিয়ের পূর্বে তাদের স্ব-স্ব পরিবার হতে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন এবং সম্মতির প্রয়োজন হয়, অন্যথায় পালিয়ে বিয়ের মত ঘটনা দেখা দেয়।[1][2][3] বিয়ের আগে অভিভাবকেরাই মেয়েদের জন্য বর এবং ছেলেদের জন্য কনে ঠিক করে। একটি অনুষ্ঠান ‘পাকা-দেখা’(ঘটিদের ক্ষেত্রে) অথবা পা্ত্রী-পা্ত্র দেখা, যা বাঙালদের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়, বিয়ের পূর্বে উভয়পক্ষকে আসন্ন বিয়ের পূর্ব প্রস্তুতি কিংবা পরিকল্পনা নিতে সাহায্য করে৷ যার ফলে উভয় পরিবার পক্ষ আসন্ন বিয়ের সঠিক দিন তারিখ কিংবা লগ্ন ইত্যাদি নির্ধারণ করে৷ পাত্র বা পাত্রী পক্ষের যদি কোনো চাহিদা থেকে থাকে তবে তাও সাধারণত এ দিনেই উল্লেখ করা হয়৷
গায়ে হলুদ
বিয়ের অনুষ্ঠানের পূর্বে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয়৷ বরের জন্য একটি গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান এবং কনের জন্য একটি গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে৷
বিবাহ অনুষ্ঠান
গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের পর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে৷ অনুষ্ঠানটি কনেপক্ষের মাধ্যমে আয়োজিত হয়ে থাকে৷ বর এবং বর এর বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজন একত্রে যাদেরকে বরযাত্রী বলা হয়ে থাকে, সাধারণত সন্ধ্যার পূর্বে কনের বাড়িতে উপস্থিত হয়৷ বরযাত্রী রওনা হওয়ার পূর্বে বর সাধারণত তার মার নিকট হতে আশীর্বাদ গ্রহণ করে৷ বরসহ বরযাত্রী যখন কনের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন কনেপক্ষের আত্মীয়স্বজন তাদেরকে অভ্যর্থনা জানায়৷ এসময় বরপক্ষের লোকজনকে আ্প্যায়িতও করা হয়ে থাকে৷ পরবর্তীতে পণ্ডিত বা কাজীর মাধ্যমে বর বা কনের ধর্ম অনুসারে নির্দিষ্ট আচার পালনের মাধ্যমে বিবাহ সুসম্পন্ন করা হয়ে থাকে৷ বিয়ের সময় সাধারণত উভয় পক্ষের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন৷
বৌ-ভাত
পরের দিন অর্থাৎ সাধারণত বরের বাড়িতে কনের দ্বিতীয় দিন বৌ-ভাত অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে৷ এ দিন কনে অর্থাৎ যে এখন বৌ, সে তার আত্মীয়স্বজনদের আপ্যায়িত করে৷ সাধারণত দুপূরের খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ সন্ধ্যায় সাধারণত বরের আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রন ও আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে৷ কনের আত্মীয়স্বজনরাও বরের আত্মীয়স্বজনদের অভ্যর্থনা জানিয়ে থাকেন৷ এ উপলক্ষ্যে একটি বড় ধরনের ভোজ অনুষ্ঠান, যাকে ‘প্রীতি ভোজ’ বলা হয়ে থাকে, অনুষ্ঠিত হয়৷ এছাড়াও কনে পক্ষ ও বর পক্ষের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান হয়ে থাকে৷
ফুল শয্যা
ফুল শয্যা হচ্ছে বর ও বধূর মিলনের রাত৷ কনের পক্ষ হতে দেওয়া ফুল দ্বারা কনে বা বধূ নিজেকে সজ্জিত করে এবং বাসর ঘরটিকেও ফুল ও অন্যান্য উপকরণ দ্বারা সজ্জিত করা হয়৷ এটি বিবাহিত দম্পত্তির জন্য একটি স্মরণীয় রাত৷
অষ্ট মঙ্গলা
বাঙালি হিন্দুদের ক্ষেত্রে বিয়ের আটদিন পরে সাধারণত এ অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে৷ এ ক্ষেত্রে বিবাহিত দম্পত্তি কনের বাড়িতে যায় এবং তিনরাত সেখানে অবস্থান করে৷
সিলেটের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানটি “ফিরা-যাত্রা” নামে পরিচিত৷
তথ্যসূত্র
- "Love, elopement, and all that"। dhakatribune.com। Dhaka Tribune। ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৯, ২০১৮।
- "BANGLADESH-CULTURE: Marriage is a Family Decision"। Inter Press Service।
- "6 Places In The World Where Arranged Marriages Is Traditional & Historically Practiced"। Elite Daily।