বাকের ভাই

বাকের ভাই হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের রচনায় বরকত উল্লাহ্‌র পরিচালনায় পরিচালিত ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই এর প্রধান চরিত্র, যা ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।[1][2] আসাদুজ্জামান নূর এই চরিত্রে অভিনয় করেন। গল্পক্রম অনুযায়ী তার ফাঁসী হয়। কাল্পনিক চরিত্র হলেও এটি অনেক জনপ্রিয়তা পায়। দর্শকরা তার ফাঁসী রদ করার জন্য বাস্তবে আন্দোলন করেছিল।

বাকের ভাই
কোথাও কেউ নেই চরিত্র
চরিত্রায়ণআসাদুজ্জামান নূর
ডাকনামবাকের ভাই
পেশামূলত কিছুই করত না, সাধারণত মানুষদের বিপদে সাহায্য করত
পরিবারভাই এবং ভাবি
ধর্মইসলাম

চরিত্র পরিচিতি

বাকের (আসাদুজ্জামান নূর) কে স্থানীয় একজন গুন্ডা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে যিনি তার দুই সঙ্গী বদি (আবদুল কাদের) এবং মজনু (লুৎফুর রহমান জর্জ) - এর সাথে রাস্তায় টহল দেয়। এই ছোট্ট মোটরসাইকেলের দলটির নেতা হিসাবে, বাকের ভাই সমাজের ধারগুলি স্কার্ট করেন, সর্বদাই আইনের বাইরে এবং সমাজের মূলধারার বাইরে থাকেন। যদিও তিনি একজন দুর্বৃত্ত, গুন্ডা এবং বিদ্রোহী চেতনাযুক্ত লোক, কিন্তু তারপরেও তিনি সকলের কাছেই ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়বান ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। কেননা কখোনোই তিনি কোনও অন্যায়কে সংশোধন করতে বা সংশোধনহীনদের সাহায্যে আসতে দ্বিধা করবেন না।

নাটক চলাকালীন বাকের ভাই মুনা (সুবর্ণা মুস্তাফা) নামের এক মহিলার কাছে নিজের সম্মতি জানায়, যিনি প্রথমে তাকে একজন সাধারণ  ঠগ হিসাবে অসম্মান করলেও শেষ পর্যন্ত তার চৈতন্য মনোভাব এবং ন্যায়বিচারের বোধের কাছে ডুবে যায় আর যার জন্য তার মনে অনুভূতির বিকাশ ঘটে। একটি গ্যাংয়ের প্রধান হিসাবে, বাকের ভাইকে মাঠের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীর দাবীগুলিকে নিরস করতে হয়েছে। যাতে করে ভুক্তভোগীদের প্রতিরক্ষায় আসার তৎপরতা তাকে একের পর এক গুরুতর সংঘাত এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলে। শেষ পর্যন্ত তার নিজেরই এক বন্ধু তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে মিথ্যা খুনের অভিযোগে  ফাঁসিয়ে দেয় এবং তিনি নির্দোষ হওয়া সত্ব্যেও খুনের অভিযোগে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে বাকের ভাই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে তার বিশ্বাসঘাতককে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

দর্শক জনপ্রিয়তা

১৯৯৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয় বাকের নামে একজন মাস্তানের। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি সত্যিকারের কোনো ঘটনা নয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্র বাকের যে তার পরোপকারী স্বভাবের কারণে এলাকার লোকজনের কাছে 'বাকের ভাই' হিসেবে পরিচিত।

তার এই ফাঁসি দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দর্শকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। উপমহাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহিত্যিক কর্ম বা সাহিত্য থেকে উঠে আসা কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে নানা সময়ে আলোড়ন দেখা গেলেও বাকের ভাইয়ের ফাঁসি দেয়ার ঘটনাকে ঘিরে দর্শকদের মাঝে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল তাকে এর সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনই মনে করছেন বিরল এবং বিস্ময়কর।

বাকের ভাই চরিত্রের অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ধারাবাহিকের শেষ পর্ব প্রচারের দিনটিতে ঢাকার চেহারা যেন কারফিউর মতো রূপ নিয়েছিল। বাকের ভাইর ফাঁসি হয় যার সাক্ষ্য দেয়ার কারণে সেই খল চরিত্রের অভিনেতা আব্দুল কাদের বলেন, বাকের ভাইয়ের ফাঁসির প্রতিবাদে সৃষ্ট বিক্ষোভের মুখে তারা থানায় জিডিও করেছিলেন।

বাকের ভাইয়ের কুলখানির নিমন্ত্রণও পেয়েছিলেন বলে জানান মি. কাদের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাকের ভাইর ফাঁসির প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোর্শেদ নোমান বর্ণনা করেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। আর নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ দর্শকদের এমন প্রতিক্রিয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন[3]

তথ্যসূত্র

  1. "BanglaNatok.com"। ২৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৪
  2. "Bangladesh : Writers- Humayun Ahmed"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৬
  3. "He who told the best tales ..."The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৬
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.