বাংলার মন্দির স্থাপত্য

পাল শাসনের পর বাঙালি পৃথক ও তন্ত্র জাতি হিসাবে প্রকাশিত হয়। গুপ্ত যুগে স্থাপত্য ও শিল্পে যে উত্কর্ষতা লাভ করেছিল তা পাল যুগে আরও সমৃদ্ধ হয়। বাংলার শিল্পের এই ধারাটিকে পূরবী ধারা বলা হয়। সেই সময় বিতপাল, ধীমান ছিলেন পূর্বী ধারার বিখ্যাত শিল্পী। সেই সঙ্গে টেরাকোটা শিল্পেরও প্রভূত উন্নতি হয়। পাহাড়পুরের মন্দিরের (আনুমানিক খ্রিস্টিয় নবম শতক) টেরাকোটার অনেক উত্কৃস্ট নিদর্শন পাওয়া গেছে।[1]

বিস্তৃতি

পুরো বঙ্গ অঞ্চল ধরেই বাংলার মন্দির স্থাপত্য রীতির বিকাশ ঘটেছিল। বাংলার পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলে প্রথ দিকে বিস্তার একটু বেশি হলেও পরের দিকে সারা বাংলা জুড়েই মন্দির শিল্পরীতির নিদর্শন পাওয়া যায়।

বঙ্গীয় ধারায় যে সকল মন্দির হয়েছিল সেগুলো পূর্বে বর্তমান বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের পূর্বাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে বঙ্গীয় শিল্পরীতিতে মন্দির তৈরি হয়েছে।

প্রকারভেদ

বাংলার মন্দির গুলিকে স্থাপত্য শৈলী হিসাবে মূলত ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়।[2] যথাঃ

  • চালা
  • রত্ন
  • দালান
  • মঞ্চ
  • মঠ
  • দেউল
  • মিশ্র
  • নিজস্ব

এছাড়াও কিছু মৌলিক মন্দির দেখা যায়।

চালা

জোড় বাংলা, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, ১৬৫৫ খ্রি.

মূল নিবন্ধ: চালা শিল্পরীতি (বাংলার মন্দির স্থাপত্যরীতি)

জোড়-বাংলার একটি বাঁকানো দো-চলা শৈলী ছাদ বৈশিষ্ট্য

চালা শিল্পরীতির বাংলার সমাজজীবনের প্রতিফলন দেখা যায়। এটি খড়ের চালা দাওয়া মাটির ঘরের আদলে তৈরী। এই শিল্পরীতির প্রধান বৈশিষ্ট চলার বাঁকানো শীর্ষ ও কার্নিশ। এটিও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত।

  • দোচালা
  • জোড় বাংলা
  • চার চালা
  • আট চালা

রত্ন মন্দির

মূল নিবন্ধ: রত্ন শিল্পরীতি (বাংলার মন্দির স্থাপত্যরীতি)

পুঠিয়া পঞ্চরত্ন মন্দির

রত্ন মন্দির চালা মন্দিরের একটি সম্প্রসারিত শিল্পরীতি। চালা শিল্পরীতির মন্দিরের উপর চূড়া বসানো থাকলে তখন তাকে রত্ন মন্দির বলা হয়। রত্ন মন্দিরের বিশেষত্ব হলো চালার বাঁকানো কার্নিশ। চূড়ার সংখ্যা হিসাবে একে সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

  • একরত্ন
  • পঞ্চরত্ন
  • নবরত্ন
  • এগারো-রত্ন
  • তেরোরত্ন
  • একুশ রত্ন
  • পঁচিশ রত্ন

দালান

মূল নিবন্ধ: দালান শিল্পরীতি (বাংলার মন্দির স্থাপত্যরীতি)

চালা ও রত্ন রীতির শিল্পরীতিতে বাঁকানো কার্নিশ ও ঢালু ছাদের ব্যবহার করা হতো। পরবর্তিতে বাঁকানো কার্নিশ ও ঢালু ছাদের পরিবর্তন করে সোজা কার্নিশ ও সমতল ছাদের শিল্পরীতিকে দালান শিল্পরীতি বলা হয়। এইটকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ

  • দুর্গাদালান
  • চাঁদনী

এদেরও আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

মঞ্চ

মূল নিবন্ধ: মঞ্চ শিল্পরীতি (বাংলার মন্দির স্থাপত্যরীতি)

মঞ্চ বা স্টেজের মত করে মন্দির করাকেই মঞ্চ শিল্প ধারার স্থাপত্য বলা হয়। নানা ধর্মীয় উত্সবের সময় বিগ্রহ এনে মঞ্চে বসানো হত বলে চার দিক থেকে দেখতে পাওয়ার জন্য খিলান সহযোগে খোলা থাকে। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। এর কয়েকটি ধরন হলো -

  • তুলসী মঞ্চ-এটি সাধারনত চার কোনাকৃতি হয়।
  • দোল মঞ্চ - দোল মঞ্চ সাধারনত চার কোনাকৃতি হয়।
  • রাস মঞ্চ - এটি সধারনত আট কোনাকৃতি হয়।

মঠ

মূল নিবন্ধ: মঠ


দেউল

দেউল প্রতাপেশ্বর মন্দির, কালনা (সম্মুখ দৃশ্য়)

মূল নিবন্ধ: দেউল (স্থাপত্য)

বাংলার সবথেকে আগের মন্দিরগুলোর মধ্যে দেউল অন্যতম। খ্রিস্টিয় ষষ্ঠশতক থেকে দেউল শিল্পরীতির বিকাশ ঘটে।[5] এরপর মুসলিম শাসনেঁর পর অন্ত-মধ্য যুগে বাংলায় দেউল শিল্পে এক নবজাগরণ আসে। বাংলায় চালা শিল্পরীতি স্থানীয় মানুষের আপন হলেও পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ১৬ শতকের মধ্যে দেউল স্থাপত্য রীতির প্রভূত উন্নতি হয়।[6]

দেউল শিল্পরীতিকে মোটামুটি তিনটে প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।

  • পীরা দেউল
  • রেখা দেউল
  • বেগুনিয়া

মিশ্ররীতি

নিজস্ব

আরোও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. রায়, প্রণব (২৭ জানুয়ারী ১৯৯৯)। বাংলার মন্দির। তমলুক: পুর্বাদ্রী প্রকাশক।
  2. "Sthapatya" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১২
  3. "Joydebpur Moth, an old Hindu temple in Gazipur Bangladesh November 28, 2008"agefotostock (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৪
  4. "সমাধির সৌন্দর্য পঞ্চরত্ন মঠ"www.poriborton.news। ২০২১-০৭-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৪
  5. "Terracotta Temples of Bengal"Amit Guha (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-১৫। ২০১৮-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১১
  6. রায়, প্রণব (২৭ জানুয়ারী ১৯৯৯)। বাংলার মন্দির। তমলুক: পুর্বাদ্রী প্রকাশক। পৃষ্ঠা ৩৯।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.