বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৪)

বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৪) বলতে ১৭৪৪ সালে মারাঠা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত নাগপুর রাজ্যের মহারাজা প্রথম রঘুজী ভোঁসলে কর্তৃক বাংলায় পরিচালিত আক্রমণকে বোঝায়। রঘুজীর প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর পণ্ডিত এই অভিযানে মারাঠাদের নেতৃত্ব দেন[1][2]। এ অভিযানকালে মারাঠারা বাংলার নবাব আলীবর্দীর সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখসমর সুকৌশলে এড়িয়ে চলে[1]। ফলে যুদ্ধে তাদেরকে পরাজিত করা সম্ভব হয় নি। অবশেষে নবাব ছলনার আশ্রয় নেন, এবং সন্ধি স্বাক্ষরের জন্য ভাস্কর পণ্ডিতসহ ২২ জন মারাঠা নেতাকে আমন্ত্রণ করে এনে তাদেরকে হত্যা করেন[1][2]। এর ফলে মারাঠারা বাংলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়[1] এবং তাদের আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৪)
মূল যুদ্ধ: বর্গির হাঙ্গামা
তারিখমার্চ – এপ্রিল ১৭৪৪[1]
অবস্থান
ফলাফল

বাংলার নবাবের বিজয়[1][2]

  • বাংলায় মারাঠা আক্রমণ ব্যর্থ হয়[1]
  • মারাঠারা বাংলা থেকে সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়[1][2]
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
অপরিবর্তিত
বিবাদমান পক্ষ
বাংলা মারাঠা সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
আলীবর্দী খান
গোলাম মুস্তফা খান
প্রথম রঘুজী ভোঁসলে[1]
ভাস্কর পণ্ডিত 
শক্তি
অজ্ঞাত অজ্ঞাত
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজ্ঞাত, তবে সামান্য[1] ২২ সেনাপতি নিহত[1][2]
অজ্ঞাত সংখ্যক সৈন্য নিহত[2]

পটভূমি

১৭৪২ এবং ১৭৪৩ সালে বাংলায় মারাঠা আক্রমণ ব্যর্থ হয়। কিন্তু এসময় বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের সামরিক ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল, অন্যদিকে পেশোয়া বালাজী বাজী রাও কর্তৃক আদায়কৃত ভর্তুকির কারণে তার রাজকোষ প্রায় নি:শেষ হয়ে গিয়েছিল[1][2]। নবাব মারাঠা আক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পেশোয়াকে ২২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন[1][2]। কিন্তু বিনিময়ে নবাব প্রতিশ্রুত শান্তি পান নি।

১৭৪৩ সালের ৩১ অক্টোবর মারাঠাদের প্রধান নেতা রাজা সাহুর মধ্যস্থতায় দুই মারাঠা নেতা পেশোয়া এবং রঘুজী তাদের বিরোধ মীমাংসা করে নিয়েছিলেন। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী পাটনার পশ্চিমে শাহাবাদ ও তিকারি-সহ বিহারের অংশ (বাৎসরিক ১২ লক্ষ টাকা প্রদানকারী) পেশোয়াকে দেয়া হয়। রঘুজী ভোঁসলেকে বাংলা, উড়িষ্যা এবং পাটনার পূর্বের বিহারের অংশ দেয়া হয়[2]। অর্থাৎ, দুই মারাঠা নেতা বাংলাকে তাদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। এর মধ্য দিয়ে পেশোয়া বালাজী বাজী রাও নবাবকে বন্ধুত্বের এবং বাংলাকে মারাঠা আক্রমণ থেকে রক্ষা করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ভঙ্গ করেন[1]

মারাঠা আক্রমণ

১৭৪৪ সালের মার্চে যখন মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত উড়িষ্যামেদিনীপুরের মধ্য দিয়ে আবার বাংলা আক্রমণ করেন তখন নবাব আলীবর্দী সম্পূর্ণ হতভম্ব হয়ে পড়েন[1][2]। রঘুজীর সৈন্যবাহিনী বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং লুটতরাজ করতে থাকে। এদের যুদ্ধকৌশলের অংশ অনুযায়ী এরা সবসময় নবাবের সৈন্যদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ এড়িয়ে চলত[1]। এজন্য তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনো উপায় ছিল না। এ সুযোগে মারাঠাদের দৌরাত্ম্যের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে[1][2]

ভাস্কর পণ্ডিতের হত্যাকাণ্ড

মারাঠাদের সম্মুখযুদ্ধে বাধ্য করতে ব্যর্থ হয়ে আলীবর্দী এবার তাদের তাড়ানোর জন্য শঠতার আশ্রয় নেন[1]। আলীবর্দী তার অন্যতম প্রধান সেনাপতি গোলাম মুস্তফা খানের পরামর্শ অনুযায়ী ভাস্কর পণ্ডিতের নিকট মূল্যবান উপহারসামগ্রী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বাণী প্রেরণ করেন[3]। বাংলার চৌথ সম্পর্কে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তিনি ভাস্কর পণ্ডিত এবং তার ২২ জন সেনানায়ককে তার সঙ্গে আলোচনার জন্য তার শিবিরে আমন্ত্রণ জানান[1][2]। বৈঠকটি ১৭৪৪ সালের ৩১ মার্চ মাঙ্কারায় একটি বিশাল তাঁবুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তাঁবুতে প্রবেশ করার পরপরই পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা গুপ্তঘাতকেরা ভাস্কর পণ্ডিত এবং তার ২১ জন সেনানায়ককে হত্যা করে[1][2][3]। রঘুজী গায়কোন্ডে নামক ১ জন মারাঠা সেনানায়ক কোনোক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে কাটোয়ায় মারাঠা শিবিরে পৌঁছাতে সমর্থ হন।[3]

মারাঠাদের পশ্চাৎপসরণ এবং ফলাফল

ভাস্কর পণ্ডিত এবং অন্যান্য মারাঠা সেনানায়কদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে মারাঠাদের সকল সৈন্যদল কালবিলম্ব না করে বাংলা এবং উড়িষ্যা ত্যাগ করে স্বদেশে পলায়ন করে[1][2]। এই ঘটনা ১৫ মাসের জন্য বাংলায় মারাঠা আক্রমণের অবসান ঘটায়[2]

তথ্যসূত্র

  1. ড. মুহম্মদ আব্দুর রহিম, (বাংলাদেশের ইতিহাস), আলীবর্দী ও মারাঠা আক্রমণ, পৃ. ২৯৩–২৯৯
  2. মোহাম্মদ শাহ (২০১২)। "মারাঠা হামলা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743
  3. "Relation of Alivardi with the Marathas"
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.