বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড

বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড হলো বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক সঞ্চয়ের লক্ষে প্রবর্তিত এক প্রকার কাগুজে মুদ্রা পদ্ধতি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম প্রাইজবন্ড চালু করে।[1] সরকারের পক্ষে প্রাইজবন্ডের যাবতীয় কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক (সরকারী, আধা-সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক), ক্যাশ অফিসডাকঘর থেকে কেনা ও ভাঙানো যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোথাও প্রাইজবন্ডের লেনদেন সাধারণত বেআইনি।

ইতিহাস

পৃথিবীতে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয় আয়ারল্যান্ডে ১৯৫৬ সালে, এবং একই বছর যুক্তরাজ্যে এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রিমিয়াম বন্ড নামে ছাড়া হয়।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে মূলত জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির করার লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা চালু করে। প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং তা কিনে সরকার সে ঋণ পরিশোধ করে থাকে।

বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড ভাগ্যপরীক্ষা পরিষদের সচিববাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মাছুম পাটোয়ারীর ভাষ্যমতে দেশে বর্তমানে মোট ৪ কোটি ৪০ লাখ টি প্রাইজবন্ড রয়েছে।

মূল্যমান

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হয়, তারপর ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু করা হয়। ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর পূর্বের ১০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানেরগুলো ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়।

সাধানরত একজন ব্যক্তি ৪৫ লাখ টাকার সমপরিমান প্রাইজবন্ড কিনতে পারেন।

ভাগ্যপরীক্ষা

বছরে চারবার প্রাইজবন্ডের ভাগ্যপরীক্ষা বা ড্র (draw) অনুষ্ঠিত হয়, তারিখগুলো হল:

  1. ৩১ জানুয়ারি
  2. ৩০ এপ্রিল
  3. ৩১ জুলাই
  4. ৩১ অক্টোবর

তবে উক্ত তারিখগুলোর কোনটিতে কোন সাপ্তাহিক ছুটি (বর্তমানে শুক্র ও শনিবার) বা সরকারি ছুটি (সাধারণ/নির্বাহী আদেশে/ঐচ্ছিক), অথবা অন্য কোন কারণে প্রাইজবন্ডের ভাগ্যপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে না পারলে পরবর্তী কার্যদিবসে তা সম্পন্ন করা হয়।

প্রাইজবন্ড কেনার দুই মাস পার হওয়ার পরই কেবলমাত্র এটি ভাগ্যপরীক্ষার আওতায় আসে।

ভাগ্যপরীক্ষার পূর্বে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে একটি পরিষদ গঠন করা হয়।

ভাগ্যপরীক্ষার ফলাফল সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব সাইট অথবা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।[2] গত ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডের ১১০ তম(এখন পর্যন্ত সর্বশেষ) ভাগ্যপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।৩০ শে এপ্রিল ২০২৩ তারিখে পরবর্তী ১১১তম ভাগ্যপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পুরস্কারের অর্থ

বর্তমানে প্রতিটি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার বিদ্যমান রয়েছে, যার মোট অর্থের পরিমান ১৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।[3]

পুরস্কারকয়টিঅর্থের পরিমান (প্রতিটি)
প্রথমএকটি৬ লাখ টাকা
দ্বিতীয়একটি৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা
তৃতীয়দুটি১ লাখ টাকা করে
চতুর্থদুটি৫০ হাজার টাকা করে
পঞ্চম৪০টি১০ হাজার টাকা করে

ভাগ্যপরীক্ষার দুই বছর পর্যন্ত প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের অর্থ দাবি করতে হয়, অন্যথায় এ অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়।

ভাগ্যপরীক্ষায় জেতার পর মূল প্রাইজবন্ডসহ সরকারের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ দেওয়া হয়।

প্রাইজবন্ডের পুরস্কারের অর্থ করমুক্ত নয় আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ৫৫ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই থেকে এ অর্থের ওপর সরকারকে ২০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হয়।

প্রাইজবন্ড ড্র থেকে বিজয়ী নির্বাচিত হলে পুরস্কার এর নেয়ার জন্য ফর্মে পুরস্কার দাবিকারীর যাবতীয় তথ্য জানাতে হবে। পুরস্কার দাবি কারীর নাম , তার পিতার নাম , ঠিকানা, ছবি সহ আরো কিছু তথ্য প্রদান করতে হয় সেই ফর্মে । পুরস্কার এর ফর্ম পুরন করার মাধ্যমে প্রাইজবন্ডের মালিক পুরস্কার এর দাবি করতে পারে।সেই ফরমে প্রাইজবন্ডের মালিক এর নাম এবং তার যাবতীয় ঠিকানা জানাতে হবে।

প্রাইজবন্ডের মেয়াদ

প্রাইজবন্ড অনেকটা লটারির মতো কিন্তু লটারি না। লটারি যেমন একবার ”ড্র” হয়ে গেলে সেটার আর মেয়াদ থাকেনা। লটারিটির মূল্যও থাকেনা। লটারিতে না জিতলে পুরো টাকাটাই লস। তাই লটারি হারাম। এদিকে প্রাইজবন্ড এর ”ড্র” হয়ে যাওয়ার পরও এর মেয়াদ শেষ হয়না। পরবর্তী ”ড্র” এর সময়ও এর মেয়াদ থাকে, অর্থাৎ প্রাইজবন্ডের মেয়াদ কখনো শেষ হয়না। তবে একবার যে নাম্বার পুরস্কার জন্য বিজয়ী হবে সেই নাম্বারটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

১০ টাকা ও ৫০ টাকা মুল্যমানের প্রাইজবন্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ১৯৯৫ সালে, ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড চালুর পর থেকে। কারো সংগ্রহে ১০ টাকা ও ৫০ টাকা মুল্যমানের প্রাইজবন্ড থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোন অফিসে ফেরত দেয়া যায়। বন্ডের মূল্যমান অনুযায়ী বন্ডের বিনিময় মুল্যে নগদ অর্থে পরিশোধ করা হয়।

ড্র রেজাল্ট সমূহ

প্রাইজবন্ডের ড্র রেজাল্ট ২ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। প্রতিবছর ৪ বার ড্র অনুষ্ঠিত হয়, ২ বছরের মোট ৮টি ড্র রেজাল্ট এক্টিভ থাকে।

ড্র এর রেজাল্ট জানার উপায়

ড্র এর রেজাল্ট ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে অথবা পিডিএফ ডাউনলোড করে দেখা যাবে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ড্র অনুষ্ঠিত হবে ৩০ এপ্রিল তারিখে। এটি ১১১ তম প্রাইজবন্ড ড্র

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.