বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি

বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি বাংলাদেশের একটি প্রশিক্ষণ ও সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ​​এটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মধ্যে কর্মকর্তা হতে প্রস্তুতদের এ প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সন্নিকটে এবং চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে ১৪ কি.মি. দূরে অবস্থিত।

বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি
বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির প্রতীক
নীতিবাক্যআল্লাহর পথে যুদ্ধ কর
ধরনসামরিক কলেজ
স্থাপিত১৯৭৬
অবস্থান
চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি
,
২২.২২৮৩৬৬° উত্তর ৯১.৭৯৯৭৩০° পূর্ব / 22.228366; 91.799730
ওয়েবসাইটbna.navy.mil.bd

ইতিহাস

বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির প্রধান ফটক

বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সেরা মিলিটারী একাডেমী। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমীর প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে এটিকে বিএনএস ঈশা খাঁ ঘাঁটি সংলগ্নে নিয়ে আসা হয়। এখানেই ১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী বাংলাদেশ নৌবাহিনী ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।[1] স্বাধীনতা যুদ্ধে মাইন অপসারনের সময় নিহত সোভিয়েত ইউনিয়নের নাবিক ইউরি ভি রেডকিনকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে।[2] তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমী গড়ে তোলা হয়। ১৯৮৮ সালের ২রা জুন কর্নফুলী নদীর মুখে স্বাধীন এবং পরিপূর্নভাবে নেভাল একাডেমীর কার্যক্রম শুরু হয়। 'আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করুন' এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী গত তিন দশক ধরে দেশের এবং দেশের বাইরের নৌ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে সর্ব প্রথম দেশের বাইরে থেকে নেভাল ক্যাডেটরা বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে প্রশিক্ষন নেওয়া শুরু করে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এখান থেকে বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিন, মালদ্বীপ এবং কাতারের মত দেশের প্রায় ১০০ ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিই সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে সর্বপ্রথম নারী ক্যাডেটদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে। ২০০০ সনের জানুয়ারিতে ১৬ জন নারী ক্যাডেট নিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন নারী ক্যাডেট বিএনএ থেকে কমিশন লাভ করেছেন। বিগত কয়েক দশক ধরে অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৩ সালের ২৪শে ডিসেম্বর এই একাডেমীকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড পুরস্কার প্রদান করেছেন।

প্রশিক্ষণ

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সকল ক্যাডেটদেরই সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর ক্যাডেটদের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীতে ১০ সপ্তাহের জয়েন্ট সার্ভিসেস ট্রেনিং এ অংশ নিতে হয়। তারপর বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে মিডশিপম্যান হিসাবে দায়িত্ব নেবার পূর্বে তারা ১৫ মাসের প্রশিক্ষণে অংশ নেন। মিডশিপম্যানদের ৬ মাসের সামুদ্রিক প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন যুদ্ধজাহাজে সমুদ্রে পাঠানো হয়। সামুদ্রিক প্রশিক্ষণ যথাযথভাবে সম্পন হবার পর তাদের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাব ল্যাফটেন্যান্ট পদে কমিশন প্রদান করা হয়। নৌবাহিনীর অফিসাররা একই সময়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রী অর্জন করেন[3]। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস অধিভূক্ত ৪ বছর ব্যাপী বিএসসি(অনার্স) ইন মেরিটাইম সায়েন্স এবং বিবিএ ইন লজিস্টিকস এন্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালু করা হয়েছে। ফিলিস্তিন, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং কাতারসহ অন্যান্য অনেক দেশের নৌবাহিনী ক্যাডেটরা বিএনএতে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেছেন। বি এন এতে ৪ টি প্রধান উইং রয়েছে, যা প্রফেশনাল উইং, একাডেমিক উইং, ট্রেনিং উইং এবং প্রশাসনিক উইং। এছাড়াও নৌসেনাদের জন্য বিএনএতে জুনিয়র স্টাফ কোর্স নামে একটি স্বতন্ত্র উইং রয়েছে। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে ফক্স’ল, মেইন টপ এবং কোয়ার্টার ডেক নামে ৩ টি ডিভিশন কার্যকর রয়েছে। বর্তমানে কমোডর মাসুদ ইকবাল, (সি), এনপিপি, পিএসসি, বিএন বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীর কমান্ড্যান্ট হিসাবে নিযুক্ত আছেন।

প্রশিক্ষন কোর্সসমূহ

বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে বর্তমানে নিন্মলিখিত কোর্সসমূহ চালু রয়েছেঃ

  • লং কোর্স – ৩ বছর.
  • ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার কোর্স – ২৪ সপ্তাহ.
  • জুনিয়র স্টাফ কোর্স - ১২ সপ্তাহ
  • ব্রাঞ্চ র‍্যাংক কমন কোর্স

প্রশিক্ষনের মানদন্ড

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অন্যতম প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী দেশের নৌবাহিনীর ভবিষ্যত কমিশন প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সার্বিক বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মূলত বি এন এ প্রশিক্ষণে ৪টি মৌলিক দিক নিশ্চিত করা হয়। নেতৃত্ব, শারীরিক শিক্ষা, নৌ শিক্ষা এবং একাডেমিক শিক্ষা নিশ্চিতে একাডেমীর প্রশিক্ষকবৃন্দ নিরলস পরিশ্রম করে থাকেন। এছাড়াও দেশী-বিদেশী নৌ কর্মকর্তাদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষন, ব্রাঞ্চ র‍্যাংক কমন কোর্স, ভাষা শিক্ষা এবং জুনিয়র স্টাফ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

বিভাগ

যুদ্ধজাহাজে কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে বিএনএতে নিন্মলিখিত বিভাগ চালু রয়েছেঃ

  •      মেইন টপ
  •      কোয়ার্টার ডেক
  •      ফক্স’ল

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Home"bna.navy.mil.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৩
  2. "Russia - Our sincere gratitude to them — I"www.observerbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৭
  3. ফরিদ হাবিব (২০১২)। "বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.