বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে যা বুটেক্স নামে অধিক পরিচিত) বাংলাদেশের বস্ত্র প্রকৌশল শিক্ষায় দেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে বুটেক্স ক্যাম্পাস অবস্থিত। উৎপাদনকেন্দ্রিক গবেষণা ও শিল্পায়নমুখী পাঠদান প্রতিষ্ঠানটিকে বরাবরই অন্যান্যদের মাঝে আলাদা করে তুলে ধরে। এটি বস্ত্রপ্রকৌশল শিক্ষায় বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
![]() প্রাতিষ্ঠানিক সিলমোহর | |
অন্যান্য নাম | বুটেক্স |
---|---|
প্রাক্তন নাম |
|
নীতিবাক্য | জ্ঞানই শক্তি |
ধরন | পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় |
স্থাপিত | ২২ ডিসেম্বর ১৯৭৮ |
বাজেট | ৳৪২.৭৪ কোটি (২০২১-২২ অর্থবছর) |
আচার্য | রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন |
উপাচার্য | অধ্যাপক ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ১৪৮ |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ | ৫৮ |
শিক্ষার্থী | ২৮৬০ |
স্নাতক | ২৬৪০ |
ঠিকানা | শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্মরণী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল , , ১২০৮ , |
শিক্ষাঙ্গন | শহরের কেন্দ্রস্থলে, ১১.৬৭ একর (৪.৭২ হেক্টর) |
ভাষা | ইংরেজি |
সংক্ষিপ্ত নাম | বুটেক্স |
অধিভুক্তি | |
ওয়েবসাইট | www |
![]() |
ইতিহাস
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে "ব্রিটিশ স্কুল অব উইভিং" নামে ঢাকার নারিন্দায় এই প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "পূর্ব বাংলা টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট"।
ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলের অবসান পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সরকারের হাতে নববিভক্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতা যাওয়ার পর ১৯৫০ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "পূর্ব পাকিস্তান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট"৷ এর কিছুকাল পর ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের পক্ষ থেকে কলেজে (মহাবিদ্যালয়) রূপান্তর করা হয়; নতুন করে নামকরণ করা হয় "বস্ত্রকৌশল ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়" এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে এখানে চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ইন সায়েন্স (বি.এস.সি.) ডিগ্রী কোর্স চালু করা হয়।
বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে তৎকালীন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উদ্যোগে ২০১০ সালে বস্ত্রকৌশল শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রস্তাব করা হলে বিলটি জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২০১০ সালের ৫ই অক্টোবর "বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় বিল" চূড়ান্তভাবে পাস হয়, যা ২২ ডিসেম্বর, ২০১০ থেকে কার্যকর হয়। এ জন্য প্রতি বছর ২২শে ডিসেম্বর দিনটিকে "টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস" হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। ২০১১ সালের ১৫ই মার্চ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা "বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়" তথা 'বুটেক্স' -এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।[1]
শিক্ষা কার্যক্রম
বুটেক্সে পাঁচটি অনুষদের অধীনে ১০টি বিষয়ের ওপর "বি.এস.সি. ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং" কোর্স চালু রয়েছে, যা সর্বমোট ৮ সেমিস্টারে বিভক্ত৷ প্রতিবছর ৬ মাস অন্তর ২টি সেমিস্টার অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত বছরগুলোকে "লেভেল" এবং সেমিস্টার গুলোকে "টার্ম" বলা হয়; অর্থাৎ ৪টি লেভেল, ৮টি টার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চালু থাকা অনুষদ এবং অধীনস্থ বিভাগ সমূহের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
- বস্ত্র উৎপাদন প্রযুক্তি অনুষদ
- ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
- ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
- বস্ত্র কেমিকৌশল অনুষদ
- ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
- ডাই ও কেমিকৌশল বিভাগ
- পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
- পোশাক ডিজাইন ও বয়নকৌশল অনুষদ
- অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
- ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগ
- পোশাকশিল্প ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ
- বস্ত্রকৌশল ব্যবস্থাপনা বিভাগ
- শিল্পোৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ
- বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ
- বস্ত্রকৌশল যন্ত্রাদি নকশা ও প্রস্তুত বিভাগ
- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
- রসায়ন বিভাগ
- গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগ
- মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ
এছাড়াও বুটেক্সের অধীনে ৮টি বস্ত্রকৌশল মহাবিদ্যালয় (কলেজ) রয়েছে যেগুলো চার বছর মেয়াদি বি.এস.সি. ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। প্রতিটি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বুটেক্সের সিলেবাস অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং পাশের সনদপত্র বুটেক্স কর্তৃক প্রদান করা হয়। কলেজগুলো সম্পূর্ণরূপে বুটেক্স নিয়ন্ত্রিত।
ইন্সটিটিউট
বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট
বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট বুটেক্স অধিভুক্ত বস্ত্রকৌশল ক্ষেত্রের তৃণমূল পর্যায়ের একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক দেখভাল করা হয়। বস্ত্র অধিদপ্তরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ মূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ ও যুগোপযুগী প্রকল্প বাস্তবায়নকার্যে বুটেক্সের কার্যকরী দিকনির্দেশনার আলোকে এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বদাই সরব ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ
তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল এলাকার সাতরাস্তার কোলঘেঁষে বুটেক্সের অবস্থান। শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের শুরুতেই চোখে পড়বে মূল ফটক ও অভ্যর্থনা তোরণ।
বুটেক্সে সকল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় তার মূল শিক্ষা ভবন থেকে। এর ক্যাম্পাসে রয়েছে ১৫ তলা বিশিষ্ট "বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন"। ক্যাম্পাস চত্বরে বুটেক্সের রয়েছে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ।
ক্যাম্পাস জীবন
সহশিক্ষা কার্যক্রম
শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গঠিত একাধিক ছাত্রসংগঠন বুটেক্স প্রাঙ্গণ জুড়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। তাদের সরব উপস্থিতিতে প্রায়শই ছোট্ট ক্যাম্পাসটি জীবনের আভা নিয়ে কোলাহল পূর্ণ হয়ে ওঠে। নানামুখী সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সকল সক্রিয় ছাত্রসংগঠন সমূহের নাম নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন), বুটেক্স শাখা[2]
- আর্টেক্স (বুটেক্স)
- বুটেক্স সাহিত্য সংসদ[3]
- একাত্তর সাংস্কৃতিক সংঘ
- বুটেক্স ডিবেটিং ক্লাব (বুটেক্সডিসি)
- বুটেক্স ফিল্ম সোসাইটি
- বুটেক্স সাংবাদিক সমিতি
- প্রথম আলো বন্ধুসভা (বুটেক্স শাখা)
- বুটেক্স বিজ্ঞান ক্লাব
- বুটেক্স ক্যারিয়ার ক্লাব (বিসিসি)
- বুটেক্স বিজনেস ক্লাব[4][5]
- সুহৃদ সমাবেশ
- পথিক বুটেক্স
- এক্স-ক্যা বুটেক্স
- বাউলিয়ানা
- ফটোগ্রাফি সংঘ
- ইলেকট্রনিক্স ক্লাব
- গেইমার্স মেইজ
- তরু, বুটেক্স শাখা
- রোবটিক্স ক্লাব
- বুটেক্স স্পিনার্স ক্লাব
- বুটেক্স আইটি সোসাইটি
- ক্যামিক্যাল ক্লাব
- ভ্রমণকারী সংঘ
- ফ্যাশনোভেশন
- এনভায়রনমেন্টাল ক্লাব
- ইয়ুথ এগেইন্স্ট হাঙ্গার
- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, বুটেক্স শাখা
আবাসন ব্যবস্থা


বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪টি আবাসিক হল রয়েছে। ছেলেদের জন্য রয়েছে তিনটি হল এবং মেয়েদের জন্য একটি। শহীদ আজিজ হল বুটেক্সের সবচেয়ে পুরাতন হল।
হলের নাম | বর্তমান প্রভোস্ট |
---|---|
শহীদ আজিজ হল | অধ্যাপক ড. মোঃ সাইদুজ্জামান |
এম এ জি ওসমানী হল | অধ্যাপক ড. সামিউল ইসলাম চৌধুরী |
সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল | অধ্যাপক ড. আহমেদ জালাল উদ্দিন |
শেখ হাসিনা হল | অধ্যাপক ড. হাসিনা বেগম |
উপাচার্যগণ
নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন:
ক্রম | নাম | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব হস্তান্তর |
---|---|---|---|
১. | প্রফেসর ড. নিতাই চন্দ্র সূত্রধর | ২০১০ | ২০১৫ |
২. | প্রফেসর মো. মাসউদ আহমেদ | ২০১৫ | ২০১৯ |
৩. | প্রফেসর মো. আবুল কাশেম | ২০১৯ | ২০২৩ |
৪. | প্রফেসর ড. শাহ আলিমুজ্জামান বেলাল | ২০২৩ | বর্তমান |
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট ও কলেজসমূহ
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট ও কলেজসমূহ:[6]
- বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নরসিংদী
- বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টাঙ্গাইল
- চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জোরারগঞ্জ
- শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল
- বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নোয়াখালী
- পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পাবনা
- শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঝিনাইদহ
- ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রংপুর
- শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, গোপালগঞ্জ
- শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেলান্দহ, জামালপুর
তথ্যসূত্র
- "PM opens first textile university"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৫।
- "BADHAN - A Voluntary Blood Donors' Organization"। badhan.com.bd। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৫।
- "বুটেক্স সাহিত্য সংসদ"।
- "Home" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৫-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-৩০।
- "BUTEX Business Club – BUTEX"। www.butex.edu.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-৩০।
- "Affiliated Colleges of Bangladesh University of Textiles – BUTEX"। www.butex.edu.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২০।
বহিঃসংযোগ
- বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট
- বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০
- বুটেক্স সাহিত্য সংসদ ওয়েবসাইট