বাংলাদেশে বেকারত্ব

বাংলাদেশের শ্রমশক্তি সম্পর্কিত জরিপ (২০০২-০৩ এবং ২০০৫-০৬) অনুসারে বেকার হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার বয়স ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি এবং যে সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করা বা কাজের জন্য তৈরি থাকা সত্ত্বেও কোন কাজ করছে না। বাংলাদেশে বেকারত্বের এই সংজ্ঞা অনুসারে বাংলাদেশের শ্রমশক্তি ও জরিপে দেখা যাচ্ছে ২০০২-০৩ এবং ২০০৫-০৬ সালে দেশের মোট বেসামরিক শ্রমশক্তি ছিলো যথাক্রমে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ও ৪ কোটি ৯৫ লাখ। এর মধ্যে যথাক্রমে ৩ কোটি ৬০ লাখ ও ৩ কোটি ৭৪ লাখ ছিল পুরুষ এবং ১ কোটি ৩ লাখ ও ১ কোটি ২১ মিলিয়ন ছিল নারী। কিন্তু পরবর্তীতে কর্মজীবী শক্তি বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪ কোটি ৪৩ লক্ষ ও ৫ কোটি ৭৪ লক্ষ যার মধ্যে যথাক্রমে ৩ কোটি ৪৫ লক্ষ ও ৩ কোটি ৬১ লক্ষ ছিল পুরুষ এবং যথাক্রমে ৯৮ লক্ষ ও ১ কোটি ১৩ লক্ষ ছিল নারী। ফলে বেকার জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২০ লক্ষ ও ২১ লক্ষ যার মধ্যে যথাক্রমে ১৫ লক্ষ ও ১২ লক্ষ ছিল পুরুষ এবং ৫ লক্ষ ও ৯ লক্ষ ছিল নারী। দেশে কর্মজীবী শক্তির চেয়ে শ্রমশক্তির বেশি বৃদ্ধির কারণে বেকার সংখ্যার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ জরিপ মতে, বেকার সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লক্ষ ৮০ হাজার।[1]

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের প্রায় অর্ধেকই বেকার

কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না।

বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭% স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে, ৬৫%। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩%, নেপালে ২০%-র বেশি, পাকিস্তানে ২৮% এবং শ্রীলঙ্কায় ৭.৮%।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ মানুষের কাজ আছে। এর অর্থ মাত্র ২৬ লাখ মানুষ বেকার। তবে জরিপেই বলা আছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করে কিন্তু কোনো মজুরি পান না, এমন মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১১ লাখ। এ ছাড়া আছে আরও এক কোটি ছয় লাখ দিনমজুর, যাঁদের কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, সরকার কম দেখালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪.২%। এর ওপর এখন প্রতিবছর নতুন করে ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছেন। সুতরাং নতুন কর্মসংস্থান তৈরির চাপ রয়েছে অর্থনীতির ওপর। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার ২ শতাংশ বাড়ানো গেলে প্রবৃদ্ধির হার ৮%-এ উন্নীত হবে। আর তাহলেই ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বেকারত্বের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৫ সালে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। সংস্থাটির মতে, বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম।[2]

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.