বদরুল আলম

বদরুল আলম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[1] ২০১৬ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৬ লাভ করেন।[2]


বদরুল আলম
স্থানীয় নাম
বদরুল আলম
জন্মমানিকগঞ্জ, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
আনুগত্যপাকিস্তান
বাংলাদেশ
সার্ভিস/শাখা পাকিস্তান বিমানবাহিনী
মুক্তি বাহিনী
 বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
পদমর্যাদাস্কোয়াড্রন লিডার
যুদ্ধ/সংগ্রামগোদানাইল হামলা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
পুরস্কার বীর উত্তম (১৯৭১)
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (২০১৬)
দাম্পত্য সঙ্গীনাদেরা আলম
অন্য কাজবাংলাদেশ বিমান

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

বদরুল আলমের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার বাড়াইয়ের চর গ্রামে। তার বাবার নাম খন্দকার মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা এবং মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। তার স্ত্রীর নাম নাদেরা আলম। তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে।

কর্মজীবন

পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে ফ্লাইং অফিসার ছিলেন বদরুল আলম। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের সারগোদা বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এ সময় নিজের ইচ্ছায় বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মে মাসের প্রথমার্ধে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে যান। প্রথম দিকে তিনি মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। পরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠিত হলে তিনি এতে যোগ দেন। বিমানবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় বৈমানিক ও এয়ারম্যান রিক্রুট ও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নভেম্বর থেকে প্রত্যক্ষ অপারেশন শুরু করেন। তিনি গোদনাইল ছাড়াও আখাউড়া, সিলেট ও নরসিংদীর রায়পুরাসহ আরও কয়েকটি স্থানে বিমান অপারেশন করেন। এসব হামলার বেশির ভাগ তার কমান্ডেই পরিচালিত হয়। বদরুল আলম ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি পরে বাংলাদেশ বিমানে চাকরি করেন।[3]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা ডিমাপুর থেকে উড্ডয়ন করল একটি হেলিকপ্টার। সেটি চালাচ্ছেন বদরুল আলম, সুলতান মাহমুদসাহাবউদ্দিন আহমেদ। তাঁদের সঙ্গে আছেন আরও দুজন। তারা অপারেটর। হেলিকপ্টারটি ছোট আকৃতির। নাম অ্যালুয়েট। এতে আছে ১৪টি রকেট ও একটি মেশিনগান। তারা যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল অভিমুখে। হেলিকপ্টারটির রাতে ওড়ার ক্ষমতা ছিল না। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে তারা অপারেশনে রওনা হয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য, গোদনাইলের তেলের ডিপো। এই ডিপো থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর স্থল, নৌ ও আকাশ যানগুলোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। ভারতের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে পাকিস্তানিরা এখানে মজুদ রেখেছিল বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা অনেক চেষ্টা করেও এই ডিপোর ক্ষতিসাধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ এর নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল অনেক শক্তিশালী। অবশেষে সেদিন পাকিস্তানিদের শক্তিশালী নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে সফল হামলা চালান বদরুল আলমেরা। তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ইলিয়টগঞ্জ থেকে প্রথমে কুমিল্লা ঢাকা-মহাসড়ক লক্ষ্য করে দাউদকান্দির দিকে অগ্রসর হন। পরে ঢাকার ডেমরার কাছে এসে গোদনাইল তেলের ডিপো লক্ষ্য করে দক্ষিণ দিকে মোড় নেন। পাকিস্তানিরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা গোদনাইলের তেলের ট্যাংকারের ওপর বোমা নিক্ষেপ করেন। মুহূর্তের মধ্যে ট্যাংকারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকল। আগুনের লেলিহান শিখা যেন আকাশ গ্রাস করে ফেলল। চারদিক আলোকিত হয়ে পড়ল। আশপাশের মানুষ বিস্ফোরণের শব্দে জেগে উঠে অবাক বিস্ময়ে দেখতে থাকল সেই আগুন। গোদনাইল তেলের ডিপোর আগুন জ্বলে পরের দিনও। কয়েক মাইল দূর থেকেও এই আগুন দেখা যায়।[4]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১০-০৭-২০১১"। ২০২০-০৭-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-১০
  2. "স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন ১৫ ব্যক্তি ও নৌ-বাহিনী"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৪ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৬
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১০১। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
  4. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ২৮। আইএসবিএন 978-984-90253-7-5।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.