বঙ্গভবন
বঙ্গভবন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বাসভবন ও কার্যালয়।[1] স্থাপনাটি দেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত। প্রাসাদটি মূলত ব্রিটিশ ভাইসরয় অফ ইন্ডিয়ার অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্থাপনাটি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
বঙ্গভবন | |
---|---|
সাধারণ তথ্য | |
স্থাপত্য রীতি | মুঘল স্থাপত্য |
শহর | ঢাকা |
দেশ | বাংলাদেশ |
নির্মাণ শুরু হয়েছে | ১৯০৫ |
কারিগরী বিবরণ | |
আকার | ৬,৭০০ বর্গমিটার |
নকশা এবং নির্মাণ | |
স্থপতি | অজানা |
ওয়েবসাইট | |
bangabhaban |
ইতিহাস
বাংলার সালতানাতের আমলে বঙ্গভবন যে স্থানে তা ছিল হযরত শাহজালাল দাখিনি নামক ঢাকার এক সুফিসাধকের। সুলতানের চরের দ্বারা সুফিসাধক এবং তার অনুসারীগণ নিহত হলে তাদের এখানে কবর দেওয়া হয়। স্থানটি জলদি সাধকের ভক্তদের মাঝে মাজার হিসেবে পরিচিত লাভ করতে থাকে। বঙ্গভবন এলাকায় মানুক হাউস নামে একটি ইমারত ছিল। জনশ্রুতি আছে ব্রিটিশ রাজত্বের সময় আর্মেনিয় জমিদার মানুকের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। ঢাকার নবাব খাজা আবদুল গনি মানুষের কাছ থেকে স্থানটি কিনে নেন এবং এখানে একটি বাংলো তৈরি করেন, যার নাম দেওয়া হয় দিলখুশা ।[2]
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পরে পূর্ববঙ্গ এবং আসামের সরকার এ স্থানটি কিনে নেয় এবং একটি প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করে যা ১৯১১ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেলের অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯১১ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটিকে গভর্নর হাউস নামে ডাকা হত এবং বাংলার গভর্নরের অস্থায়ী বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। ভারত বিভাগের পরে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হয় এবং প্রাসাদটি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসভবনে পরিণত হয়। ভবনটি বেশ কয়েক বার ১৯৬১ সালে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৬৪ সালে ভবনটি পুনঃনির্মাণ শেষ হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি ১২ তারিখে গভর্নর হাউসের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গভবন করা হয়। ওই দিনই আবু সাইদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি হন এবং এ স্থানকে রাষ্ট্রপতির বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ও ভবনটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন ছিল।
বঙ্গভবন বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। বঙ্গভবন যেহেতু রাষ্ট্রপতির বাসভবন সেহেতু এটি যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সমমর্যাদা বহন করে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে এর পরিচর্যা করা হয়। কারণ এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং এ সময় এটি জনসংযোগ মাধ্যমসমূহ ও পর্যটকদের মধ্যমনিতে পরিণত হয়। স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসে এখানে আমজনতার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এ প্রাসাদে বসবাস এবং কাজ করে থাকেন, এবং এখানে প্রায়ই বিভিন্ন সভা, সম্মেলন এবং রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং বৈদেশিক কূটনীতিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করা হয়।
নকশা
ব্রিটিশ আমলে ঢাকায় স্থাপিত অন্যান্য স্থাপত্যের মতো বঙ্গভবনও অনেকটা ভিক্টোরিয়া স্থাপত্যে নির্মিত। ১৯৬১ এবং ১৯৬৪ সালে সংস্কারের পর এখানে ইসলামি স্থাপত্য ও বাঙালি স্থাপত্যের সমন্বয় ঘটানো হয়। চারদিকে লম্বা প্রাচীর ঘেরা মূলভবন ত্রিতল। প্রাসাদোপম চত্ত্বরের চারপাশে সবুজ এবং বৃক্ষরাজি দ্বারা আবৃত। নিচতলার মেঝের চত্বরের ক্ষেত্রফল ৬৭০০ বর্গমিটার। রাষ্ট্রপতির বাসভবন উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত, এর দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি সুদৃশ্য শয়নকক্ষ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতির দপ্তর, সামরিক ও বেসামরিক সচিবালয়, অন্যান্য কর্মকর্তা এবং দর্শকদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কক্ষগুলো নিচতলায় অবস্থিত। এছাড়া এতে রয়েছে আসবাবপত্র রাখার কক্ষ, একটি সম্ভোজনকক্ষ, একটি দরবারকক্ষ, একটি ছোটো ভোজনকক্ষ এবং স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য একটি ছোটো সভাকক্ষ। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি অফিসকক্ষ, একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ এবং একটি স্টোডিও আছে। তৃতীয় তলায় বৈদেশিক কূটনীতিক এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে চারটি আলাদা কক্ষসমষ্টি।
বঙ্গভবনে রয়েছে ৪৭ একরের খোলা জায়গা, এখানে নিরাপত্তা-অফিস, ডাকঘর, ব্যাংক, ক্যান্টিন, দর্জির দোকান, একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ, রাষ্ট্রপতি নিরাপত্তা রেজিমেন্টের জন্য একটি ব্যারাক রয়েছে, যা বঙ্গভবনের প্রধান ফটকের কাছাকাছি অবস্থিত। বঙ্গভবনের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য থাকার কোয়ার্টার রয়েছে বঙ্গভবনের আলাদা তিনটি স্থানে। এখানে সামরিক সচিব এবং সহকারী সামরিক সচিবের জন্য রয়েছে আরও দুটি বাংলো।