বঙাইগাঁও

বঙাইগাঁও (/bɒŋˈɡɡ/ (এই শব্দ সম্পর্কেশুনুন)) শহর আসামের বঙাইগাঁও জেলার সদর ও আসামের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এটি বঙাইগাঁও ও চিরাং জেলা বিস্তৃত করে আছে। এটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে। এখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ রেলওয়ে স্টেশন নিউ বঙাইগাঁও জংশন রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। গুয়াহাটি, যোরহাট, ডিব্রুগড়শিলচর সহিত এটি আসামের জনবহুল পৌর এলাকাসমূহের অন্যতম এক শহর।

Bongaigaon
বঙাইগাঁও
City
দক্ষিণাবর্তে: মায়াপুরী অঞ্চলের বঙাইগাঁও রেলওয়ে ক্রসিং দৃশ্য, নিউ বঙাইগাঁও জংশন রেলওয়ে স্টেশনের রাত্রিকালীন দৃশ্য, বরপারাতে স্থিত চিলারায় ইন্দোর গেমস স্টেডিয়াম, শালাকাটি-তে এন.টি.পি.সি বঙাইগাঁও তাপীয় বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন প্রকল্প-এর আলো প্রজ্বলিত দৃশ্য, এ.এস.টি.সি বাস স্ট্যান্ডের সম্মুখে স্টেশন রোড-এর বায়ব দৃশ্য, চাপাগুরী সড়কের দৃশ্য এবং কঁয়া কুজীয়া পরিবেশ পর্যটন উদ্যান।
দক্ষিণাবর্তে: মায়াপুরী অঞ্চলের বঙাইগাঁও রেলওয়ে ক্রসিং দৃশ্য, নিউ বঙাইগাঁও জংশন রেলওয়ে স্টেশনের রাত্রিকালীন দৃশ্য, বরপারাতে স্থিত চিলারায় ইন্দোর গেমস স্টেডিয়াম, শালাকাটি-তে এন.টি.পি.সি বঙাইগাঁও তাপীয় বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন প্রকল্প-এর আলো প্রজ্বলিত দৃশ্য, এ.এস.টি.সি বাস স্ট্যান্ডের সম্মুখে স্টেশন রোড-এর বায়ব দৃশ্য, চাপাগুরী সড়কের দৃশ্য এবং কঁয়া কুজীয়া পরিবেশ পর্যটন উদ্যান।
ডাকনাম: আসামের শৈল্পিক ও বাণিজ্যিক হাব + নিম্ন আসামের রেলওয়ে রাজধানী
আসাম বঙাইগাঁও জেলা
আসাম বঙাইগাঁও জেলা
Bongaigaon
আসাম, ভারত-এ অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৬.৪৮° উত্তর ৯০.৫৬° পূর্ব / 26.48; 90.56
দেশ ভারত
রাজ্যআসাম
অঞ্চলনিম্ন আসাম
জেলাবঙাইগাঁওচিরাং জেলা (শহরটির ১০% অঞ্চল)
বিভাগ
বিভাগের নামমধ্য, উত্তর, দক্ষিণ, শৈল্পিক
শহরের ধরণপৌর এলাকা (UA, ভারত)
বঙাইগাঁও নগর নিগম২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯
প্রতিষ্ঠাতাআসাম সরকার
সরকার
  ধরননগরপ্রধান–নগরপালিকা
  শাসকবঙাইগাঁও নগর নিগম
  উপায়ুক্তএম.এস লক্ষ্মীপ্রিয়া, (আইএএস)
  জেলা পুলিশ অধ্যক্ষস্বপ্নিল ডেকা, (এপিএসসি)
আয়তন
  City১৪ বর্গকিমি (৫ বর্গমাইল)
উচ্চতা৬২.৬ মিটার (২০৫.৪ ফুট)
জনসংখ্যা
  City১,২৯,৮৯৪
  ক্রম৬তম
  জনঘনত্ব৯,৩০০/বর্গকিমি (২৪,০০০/বর্গমাইল)
  মহানগর১,৩৯,৬৫০
ভাষাসমূহ
  সরকারীঅসমীয়া, বড়ো ইংরেজি
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন
৩ পোস্টকোড
  • ৭৮৩৩৮০ (মধ্য),
  • ৭৮৩৩৮১ (নিউ বঙাইগাঁও),
  • ৭৮৩৩৮৫ (ঢালিগাঁও)
টেলিফোন কোড০৩৬৬৪-XXXXXX
যানবাহন নিবন্ধনAS-19, AS-26
স্বাক্ষরতা৯৬.৪২% (২০১১)
আইনসভা ধরননগর নিগম
পরিকল্পনা বিভাগ
লিঙ্গানুপাত৯৬১ প্রতি ১০০০ পুরুষে (২০১১ আদমশুমারি) /
জলবায়ুউপ-ক্রান্তীয় (কোপেন)
দিল্লি থেকে দূরত্ব১,৭২৫ কিলোমিটার (১,০৭২ মা)
মুম্বই থেকে দূরত্ব২,৬৫০ কিলোমিটার (১,৬৫০ মা)
বৃষ্টিপাত১,৭১৭.৭ মিলিমিটার (৬৭.৬৩ ইঞ্চি)
গড় বার্ষিক তাপমাত্রা২৫ °সে (৭৭ °ফা)
গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা৩৩ - ৩৮ °সে
শীতকালীন তাপমাত্রা৮ - ২১ °সে
বঙাইগাঁও পৌর এলাকা সহ আউট গ্রোথ (ওজি)
৯টি অঞ্চল
  • ঢালিগাঁও
  • কুকুরমারি
  • দোলাইগাঁও ১ম, ২য় ও ৩য় অংশ
  • ভোলাগুরী
  • চাপাগুরী ১ম ও ২য় অংশ
  • বিরঝরা
  • বর্ষণগাঁও
  • বরপাথার
  • দেউরীপারা
বঙাইগাঁও পৌর এলাকা সহ জনগণনা নগর (সিটি)
৩টি অঞ্চল
  • বিজিআর পৌরসভা সিটি
  • এনবিকিউ রেলওয়ে কলোনি সিটি
  • ছাতিবর গাঁও সিটি
ওয়েবসাইটbongaigaon.gov.in
† ২০১৫-এর আনুমানিক হিসাব

এটি কোচ হাজোদের শেষতম রাজধানী ছিল। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ আছে। এই নগরটি দুইটি ভাগে বিভক্ত – বঙাইগাঁও মূল নগর ও নতুন বঙাইগাঁও। শহরটি আসমের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ১৮০কিমি পশ্চিমে অবস্থিত। বড়ো জনগোষ্ঠীর দাবী স্বরূপ, ২০০৫ সালে বঙাইগাঁও-এর এক বিশাল অংশ চিরাং জেলাকে অর্পণ করা হয়। বঙাইগাঁও-এ একটি মুখ্য পেট্রোরাসায়নিক সংস্থা, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড[1][2](আইওসিএল বিজিআর)[3] আছে। ১৯০৮ সালে রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে এটি ভারতীয় রেলের মানচিত্রে স্থান পায়। আইটিআই, বঙাইগাঁও কলেজ, আসাম রাজ্যিয় বিদ্যুৎ পরিষদের[4][5] দপ্তর প্রভৃতি সংস্থাসমূহ এবং এই শহরটির নির্মাণের কাজও প্রধানত ১৯৬০ দশকের শুরুর দিকে আরম্ভ হয়। শালাকাটি-তে তাপীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং ১৯৭২ সালে ঢালিগাঁও-এ বঙাইগাঁও শোধনাগার ও পেট্রোরাসায়নিক লিমিটেড[6] (বিআরপিএল)[7] কমপ্লেক্স স্থাপনের সাথে শহর নির্মাণের কাজও অগ্রগতি লাভ করে। যদিও তখন এগুলো বঙাইগাঁও নগর নিগমের অধীনে ছিল না। শহরটি জনগণের দাবীসমূহও পূরণ করে। ১৯৬১ সালে প্রথমবারের মতন বঙাইগাঁও টাউন কমিটি গঠন করা হয় এবং ১৯৭৭ সালে নগর নিগম-এ উন্নত করা হয়। বর্তমান সময়ে, ২৫টি বিভাগ সহ ১৪.৩১ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে এই শহরটি বিদ্যমান।

শপিং মল, রেস্তোরাঁ, হোটেল, আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-এর বাড়তি সংখ্যার সাথে সাথে শহরটি আসামের শৈল্পিক ও বাণিজ্যিক হাব-এর অন্যতম অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও এখানে মানস জাতীয় উদ্যান[8][9] প্রভৃতি পর্যটনস্থল আছে যা এটিকে রাজ্যের পর্যটন-এর গুরুত্বপূর্ণ ভিত হিসাবে পরিগণিত করেছে। রাজ্যের মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থান করার দরুণ শহরটিতে অসমীয় সংস্কৃতির প্রচুর প্রকাশ পাওয়া যায়। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যেও শহরটি সমবেত হওয়ার পছন্দের স্থানগুলির মধ্যে একটি।

ব্যুৎপত্তি

লোককথা অনুসারে, বঙাইগাঁও নামটি বন(বন্য) ও গাঁই(গরু) শব্দদ্বয় থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সুদূর অতীতে,বন্য গরুরা গ্রামবাসীদের কাছে ভয়ের কারণ ছিল, যার ফলস্বরূপ অঞ্চলটি এই নাম লাভ করে।

ইতিহাস

নির্মাণ

১৯৮৯ সালে, আসাম সরকার গোয়ালপাড়া ও কোকড়াঝাড় থেকে কিছু জায়গা নিয়ে বঙাইগাঁও নামের নতুন একটি জেলা বানানোর সিদ্বান্ত নেয়, যেটির মুখ্যালয় বঙাইগাঁও শহরে অবস্থিত থাকবে। ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯ সালে আসাম সরকার বঙাইগাঁও জেলা নির্মাণের ঘোষণা করে। ২০০৫ সালে আসাম সরকার বঙাইগাঁও নগরটিকে একটি শহর হিসাবে ঘোষণা করে।

প্রেক্ষাপট

মূল গোয়ালপাড়া জেলাটি ১৮২২ সালে প্রথম নির্মাণ করা হয়। এটি নির্মাণ করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক কর্মচারী ডেভিড স্কোট, যিনি রংপুর নগরে (বর্তমান বাংলাদেশ-এ) মুখ্যালয় থাকা নবনির্মিত উত্তর পূর্ব রংপুর জেলার প্রথম আয়ুক্ত ছিলেন, এবং নবনির্মিত গোয়ালপাড়া জেলাটিকে উত্তর-পূর্ব রংপুর জেলার সাথে পরিচালনার জন্য যুক্ত করা হয়। প্রাক্তন বিজনী সাম্রাজ্য যেটিতে অবিভক্ত গারো পাহাড় অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেটি নিয়ে ১৮২২ সালে অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলা স্থাপিত হয়। ১৮৬৬ সালে, গারো পাহাড়কে গোয়ালপাড়া জেলা থেকে আলাদা করা হয়। সেই সালেই "বৃহত্তর কোচ বিহার" নির্মাণ করা হয় এবং গোয়ালপাড়া জেলার অবশিষ্টাংশ রংপুর জেলা থেকে তুলে নিয়ে কোচবিহার-এর সাথে লাগানো হয়। ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ সরকার (ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উত্তরসূরী) আসাম উপত্যকা প্রদেশ নামক একটি নতুন প্রদেশ গঠন করে এবং গোয়ালপাড়া জেলাকে কোচবিহার থেকে প্রতিসারণ করে উক্ত প্রদেশের সাথে জুড়ে দেয়, যেটি নগণ্য কিছু রাজনৈতিক বিরোধিতা বাদ দিলে এখন পর্যন্তও বহাল আছে। এই মূল গোয়ালপাড়া জেলা থেকে বর্তমানে পাঁচটি নতুন জেলার উৎপত্তি হয়েছে, যথা – (১) গোয়ালপাড়া (২) ধুবড়ি (৩) কোকড়াঝাড় (৪) বঙাইগাঁও এবং (৫) চিরাং

বিজনী সাম্রাজ্য

বিজনী সাম্রাজ্য ১৫শ শতাব্দী থেকে ১৯৫৬ সালে দেশীয় রাজ্যের সমাপ্তি পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। ইন্দো-মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত কোচ জমিদাররা এই সাম্রাজ্য শাসন করেন।

বিজনী সাম্রাজ্য ২৫০ ৫৩° ও ২৬০ ৩২° উত্তর এবং ৯০০ ৮৫° ও ৯১০ ৮৫° পূর্ব-এর মধ্যে অবস্থিত ছিল। জমিদারিটি বিজনী পরিবারের অধিকারে ছিল। বিজনী পরিবার কোচ রাজা নরনারায়ণ, যিনি ১৫৩৪ থেকে ১৫৮৪ পর্যন্ত কামতা রাজ্য শাসন করেন, তাঁর উত্তরপুরুষ ছিলেন। তাঁর প্রয়াণের পূর্বে, তিনি তাঁর পুত্র লক্ষ্মী নারায়ণ এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র রঘুরায়-এর (চিলারায়-এর পুত্র) মধ্যে ভাগ করে দেন। রঘুরায় বরপেটার (বর্তমানে আসামের একটি জেলা) বরনগরে রাজধানী স্থাপন করেন এবং সংকোশ নদীর পূর্বদিকের কোচ অঞ্চলসমূহ তাঁর অংশ হিসাবে প্রাপ্ত হন।

১৫৮৪ সালে নরনারায়াণের মৃত্যুর পর রঘুরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। রঘুরায় কর্তৃক সাম্রাজ্যের পূর্ব অংশ কোচ হাজো এবং পশ্চিম অংশ কোচ বিহার হিসাবে কথিত হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার পরে শীঘ্রই দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে শত্রুতা দৃশ্যমান হয়। রঘুরায়-এর পর তাঁর পুত্র পরীক্ষিত নারায়ণ রাজপদ প্রাপ্ত হন, এবং তিনি ১৬০২ সালে ঢাকার নবাব, যিনি লক্ষ্মী নারায়ণের(কোচ বিহারের রাজা) দ্বারা স্থানান্তরিত হন, তাঁর সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন। পরীক্ষিত ধুবড়ীতে পরাজিত হন এবং শান্তির প্রস্তাব দেন। কিন্তু পুনরায় তিনি তাঁর শত্রুতা শুরু করেন, যার জন্য ১৬১৪ সালে তাঁকে পাণ্ডু, বর্তমান গুয়াহাটি তে নিয়ে আশা হয়। সেখানে পরীক্ষিত আত্মসমর্পণ করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে থাকতে সম্মত হন। কিন্তু পদ গ্রহণের পূর্বেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তখন মুঘলেরা কবিশেখরকে কানুনগোর পদে নিযুক্তি দেন এবং শেখ ইব্রাহিম কারোরিকে মুঘলদের জন্য প্রশাসন পদ্ধতি নির্মাণ করতে নির্দেশ করেন। পরীক্ষিতের পুত্র বিজিত নারায়ণকে মানস এবং সংকোশ নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের জমিদার হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়, এবং তাঁর থেকেই বিজনী পরিবারের সূত্রপাত হয়। রাজা বিজিত নারায়ণ-এর নাম থেকে "বিজনী" নামটির উৎপত্তি, যা বর্তমানে বড়োল্যান্ড টেরিটরিয়াল এরিয়ার চিরাং জেলার মহকুমা।

মুঘল শাসনকালে, বিজনীর রাজা বিজিত নারায়ণ ৫,৯৯৮ টাকার কর প্রদান করেন, যা পরবর্তীতে বার্ষিক ৬৮টি হাতি প্রদানে পরিবর্তিত হয়। ১৭শ শতকের শেষের দুই দশকে, আসামে মুঘলদের প্রভাব কমতে থাকে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশ বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে থাকে।

১৭৬৪ সালে সংঘটিত হওয়া বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি প্রাপ্ত হয় এবং ১৭৯৩ সালে জমি থেকে আদায় করা রাজস্বের পরিমাণ সম্বন্ধে বাংলার জমিদারদের সাথে চুক্তি(স্থায়ী নিষ্পত্তি নামে কথিত) করে। ১৮২৬ সালের ইয়াণ্ডাবু সন্ধি র মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিশেষে পূর্ব ও পশ্চিম আসামের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নেয়। যদিও স্থায়ী নিষ্পত্তিতে গোয়ালপাড়া কখনও অন্তর্ভুক্ত ছিল কি না সেটা সন্দেহজনক। ইম্পারিয়াল গেজেটার অব ইন্ডিয়ার (অংশ ৮) মতে, জমির রাজস্বের পরিবর্তে বিজনী সাম্রাজ্যের একটি অংশ সবসময় স্বীকার করা হত, যদিও এটি অধীনতার চিহ্নস্বরূপ প্রদত্ত উপঢৌকন হিসাবে তর্ক করা হয়। ১৯০২ সালে প্রকাশিত ইম্পারিয়াল গেজেটার অব ইন্ডিয়া বিবৃত করে যে বিজনী পরিবার ১,৫০০ টাকার রাজস্ব প্রদান করেন এবং ৯৫০ বর্গ মাইল (২,৫০০ বর্গ কিমি) অঞ্চলের জন্য় ১৯,০০০ টাকার উপকর ও আনুমানিক ২ লাখ টাকা খাজনা প্রদান করেন।

১৮৬৪-১৮৪৫ সালে ব্রিটিশ ভারত এবং ভূটানের মধ্যে হওয়া ভূটান যুদ্ধের অন্তে, বিজনী পরিবার পূর্ব ডুয়ারের এক বৃহৎ অঞ্চল দাবী করেন এবং উক্ত অঞ্চলসমূহ ভূটান সরকারের অধীনে তাঁদের অধিকারে ছিল বলে বর্ণনা করেন। তাঁদের দাবী মঞ্জুর করা হয় এবং ১৮৭০ সালে নাবালক বিজনী রাজার পক্ষ হতে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের সাথে একটি চুক্তি করা হয়। ইদানীং কোন অঞ্চল অবধি তাঁদের জমিদারী ছিল সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে, কিন্তু ১৮৮২ সালে ভারত সরকার বলেন যে ১,৩০,০০০একর (৫৩০ বর্গ কিমি) জমি রাজার পাওয়া উচিত। এই জমিদারীসমূহ সাধারণত ভারত সরকারের সরাসরি ব্যবস্থাপনার অধীনে থেকেছিল, এবং সংগৃহীত রাজস্বের ৭.৫ শতাংশ লাভের অংশ হিসাবে রাজাকে প্রদান করা হয়েছিল।

বিজনী সাম্রাজ্যের শাসকসকল

  • বিজিত নারায়ণ (ওরফে চন্দ্র নারায়ণ)
  • জয় নারায়ণ
  • শিব নারায়ণ
  • বিজয় নারায়ণ
  • মুকুন্দ নারায়ণ
  • হরিদেব নারায়ণ
  • ইন্দ্র নারায়ণ
  • অমৃত নারায়ণ
  • কুমুদ নারায়ণ
  • জগেন্দ্র নারায়ণ
  • ভৈরবেন্দ্র নারায়ণ

পৌরসভা

মায়াপুরী ছবিগৃহের সন্মুখভাগ

১৯৭৭ সালে বঙাইগাঁও পৌরসভা গঠন করা হয়। বর্তমান এই অঞ্চলটিতে ২৫টি বিভাগ রয়েছে। বঙাইগাঁও বড়পেটা লোকসভা কেন্দ্র-এর অন্তর্গত।[10] ফণী ভূষণ চৌধুরী হলেন বঙাইগাঁও বিধানসভা কেন্দ্রের বর্তমান এম.এল.এ.

শহরের অন্তর্গত স্থানসমূহ

  • মায়াপুরী
  • বরপারা
  • পাগ্লা স্থান
  • মহাবীর স্থান
  • চাপাগুরী
  • ঢালিগাওঁ
  • নতুন বঙাইগাঁও
  • দেইরীপারা
  • দোলাইগাঁও
  • বর্ষনগাঁও
  • বি.ও.সি. গেট
  • রোলিং মিল
  • নতুনপারা
  • কুকুরমারি
  • হাতীমুত্র
  • মাজপারা

জনসংখ্যা

২০১১ সালের আদমশুরারি অনুযায়ী বঙাইগাঁও শহরে ১,৭৪,৮১০ জন লোক বসবাস করে। উক্ত নগরটিতে অসম সরকার অধীনস্থ নগর উন্নয়ন কমিটি রয়েছে। এখানকার মুল বসতি হচ্ছে হিন্দু ধর্মিয় ব্যক্তি। নগরের অধিকাংশ লোক বাঙালী ও কোচ রাজবংশী। বাঙালী ও কোচ রাজবংশী ছাড়াও এখানে বিভিন্ন জনজাতির লোক বসবাস করে।

আবহাওয়া

বঙাইগাঁও-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) ৩০
(৮৬)
৩৩
(৯১)
৩৮
(১০০)
৪০
(১০৪)
৩৮
(১০০)
৪০
(১০৪)
৩৭
(৯৯)
৩৭
(৯৯)
৩৭
(৯৯)
৩৫
(৯৫)
৩২
(৯০)
২৮
(৮২)
৪০
(১০৪)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ২৩
(৭৩)
২৫
(৭৭)
৩০
(৮৬)
৩১
(৮৮)
৩১
(৮৮)
৩১
(৮৮)
৩২
(৯০)
৩২
(৯০)
৩১
(৮৮)
৩০
(৮৬)
২৭
(৮১)
২৪
(৭৫)
২৯
(৮৪)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ১০
(৫০)
১২
(৫৪)
১৫
(৫৯)
২০
(৬৮)
২২
(৭২)
২৫
(৭৭)
২৫
(৭৭)
২৫
(৭৭)
২৪
(৭৫)
২১
(৭০)
১৬
(৬১)
১১
(৫২)
১৯
(৬৬)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা)
(৪১)

(৪৩)

(৪৩)
১১
(৫২)
১৬
(৬১)
১৮
(৬৪)
২০
(৬৮)
২১
(৭০)
২০
(৬৮)
১৫
(৫৯)
১০
(৫০)

(৪১)

(৪১)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১১.৪
(০.৪৫)
১২.৮
(০.৫০)
৫৭.৭
(২.২৭)
১৪২.৩
(৫.৬০)
২৪৮.০
(৯.৭৬)
৩৫০.১
(১৩.৭৮)
৩৫৩.৬
(১৩.৯২)
২৬৯.৯
(১০.৬৩)
১৬৬.২
(৬.৫৪)
৭৯.২
(৩.১২)
১৯.৪
(০.৭৬)
৫.১
(০.২০)
১,৭১৭.৭
(৬৭.৬৩)
উৎস: wunderground.com[11]

পরিবহন ও যাতায়ত ব্যবস্থা

বীর চিলারায় ওভার ব্রিজ

অসমের অন্যান্য স্থানের ন্যায় বঙাইগাঁও শহরের যাতায়ত ব্যবস্থা উন্নত। শহরটি ভারতীয় রেল ও স্থলপথ দ্বারা অসমের বিভিন্ন স্থান যেমন: গুয়াহাটি, তেজপুর, যোরহাট, ডিব্রুগড়, শিবসাগর প্রভৃতি স্থানের সহিত সংযুক্ত।

স্থল পরিবহন

বঙাইগাঁও শহর উত্তর ও দক্ষিণ ক্রমে ৩১নং ও ৩৭নং রাষ্ট্রীয় ঘাইপথের মাঝে অবস্থিত। রাষ্ট্রীয় ঘাই পথের সহিত মুখ্য ও উপপথ সংযুক্ত।

রেলপথ

রাজধানী এক্সপ্রেশ নিউ বঙাইগাঁও স্টেশনে

বঙাইগাঁও শহর ভারতীয় রেলওয়ে দ্বারা সম্পূর্ণ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সহিত সংযুক্ত। অঞ্চলটিতে দুইটি রেল স্টেশন বিদ্যমান:

  • নিউ বঙাইগাঁও রেল জংশন
  • বঙাইগাঁও টাউন স্টেশন

নিউ বঙাইগাঁও রেল জংশন

নিউ বঙাইগাঁও রেল জংশনটি শহরটির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এই জংশনটি অসমের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও নামনি অসমের বৃহত্তম জংশন। উক্ত রেল স্টেশনটিতে অসমের চলাচলকারী সকল যাত্রীবাহী রেল স্টেশনটি স্পর্শ করে। যেমন: রাজধানী এক্সপ্রেশ, নর্থ-ইষ্ট এক্সপ্রেশ ও কামরূপ এক্সপ্রেশ প্রভৃতি।

বিমান পরিবহন

বঙাইগাঁও শহরের নিকটবর্তী বিমান বন্দরটি হচ্ছে লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এর দূরত্ব প্রায় ১৬৫কিঃমিঃ।

সংবাদ মাধ্যম

অসমীয়া দৈনিক খবরের কাগজ অসমীয়া প্রতিদিন অসমের গুয়াহাটি, ডিব্রুগড়, উত্তর লখিমপুর ও বঙাইগাঁও থেকে প্রকাশিত হয়।

মনোরঞ্জন

বঙাইগাঁওয়ে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে মায়াপুর নামক একটি ছবিঘর রয়েছে।

হোটেল ও লজের তালিকা

  1. কণিস্ক হোটেল[12] (দুই তারকা), তরুনরাম ফুকন রোড
  2. হোটেল জাহ্নবী (তিন তারকা), চাপাগুরী রোড
  3. রাজ পেলেস, তরুনরাম ফুকন রোড
  4. মধুবন, মহত্মা গান্ধী রোড
  5. মহারাজা হোটেল, ষ্টেচন রোড
  6. হোটেল শিভালী, ষ্টেচন রোড
  7. চি.কে. হোটেল, বরপারা
  8. গেটয়াএ হোটেল, মায়াপুরী
  9. হোটেল ব্রমপুত্র ভেলী, মায়াপুরী
  10. হোটেল ডায়মন্ড, চাপাগুরী রোড
  11. মানস ল'জ

শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়

  1. ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
  2. সিক্কিম মণিপাল বিশ্ববিদ্যালয়

চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান

শহরটিতে ৯টি চিকিৎসালয় আছে, যথা -

বঙাইগাঁও সিভিল হাসপাতাল, হাতিমুত্রা (ওজি)
  • এস এম হাসপাতাল
  • নিম্ন আসাম হাসপাতাল এবং গবেষণা কেন্দ্র[13][14]
  • স্বাগত হাসপাতাল[15][16][17]
  • চিলারায় দাতব্য গৃহ
  • আরোগ্য হাসপাতাল এবং গবেষণা কেন্দ্র
  • সেইন্ট আগাসটাইন্স্ হাসপাতাল[18][19]
  • বঙাইগাঁও সিভিল হাসপাতাল
  • কাজলগাঁও সিভিল হাসপাতাল
  • নিউ বঙাইগাঁও রেলওয়ে হাসপাতাল[20][21]
  • বঙাইগাঁও রিফাইনারি হাসপাতাল[22][23]

খেলাধূলা

চিলারায় ইন্ডোর স্টেডিয়াম

সর্বার্থসাধক চিলারায় স্টেডিয়ামটি বঙাইগাঁও শহরের প্রান্তে বর্ষণগাঁও-এ অবস্থিত। এছাড়াও শহরটিতে চিলারায় ইন্দোর স্টেডিয়াম নামক একটি ইন্দোর স্টেডিয়াম, বরপারাতে একটি সুইমিং পুল এবং চাপাগুরী সড়কের কাছে একটি ছোটো স্টেডিয়াম আছে।

গ্যালারী

আরও দেখুন

  • বঙাইগাঁও তৈল শোধনাগার

তথ্যসূত্র

  1. "Global 500"Fortune Global 500। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৩
  2. "List of Maharatna, Navratna and Miniratna CPSEs"Dpe.nic.in। ২০১৩-০৭-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৮
  3. "IOC Raises 500 MN in Dollar Bond Issue"business-standard.com। Press Trust of India। ২৯ জুলাই ২০১৩।
  4. "Assam Electricity Department"assamgovt.nic.in। ২০১৪-০২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  5. "EMT-India"emt-india.net
  6. "Swaminomics"swaminomics.org
  7. "BRPL India"brplindia.com। ২০১৩-১১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  8. "WWF - Royal Manas National Park, Bhutan"panda.org। ২০০৯-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  9. Amelan, Roni। "Successful preservation of India's Manas Wildlife Sanctuary enables withdrawal from the List of World Heritage in Danger"। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১১
  10. "List of Parliamentary & Assembly Constituencies" (পিডিএফ)Assam। Election Commission of India। ২০০৬-০৫-০৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-০৫
  11. "Historical Weather for Delhi, India"। Weather Underground। জানুয়ারি ৬, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০০৮
  12. plus.google.com
  13. "Lower Assam Hospital And Research Centre — Bongaigaon"doctoralia.in। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৪
  14. "Lower Assam Hospital"Plus.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-৩১
  15. "Swagat Hospital - About"। ৪ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৪
  16. "Swagat Hospital & Research Centre"swagathospital.com
  17. "Swagat Hospital BONGAIGAON, Assam"hotfrog.in
  18. "St. Augustine Hospital — St. John's Rural Mission"stjohnsruralmission.org। ২০১৪-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  19. "Bongaigaon branch IMAASB" (পিডিএফ)imaasb.com। ২০১৪-০৮-০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
  20. "New Bongaigaon Railway Hospital"Plus.google.com। ২০১৪-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-৩১
  21. "New Bongaigaon Railway Hospital"wikimapia.org
  22. "BRPL Refinery Complex"wikimapia.org
  23. "The Telegraph - Calcutta : Northeast"telegraphindia.com

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.