বক্ষ উন্মুক্ততা

বক্ষ উন্মুক্ততা (ইংরেজি: Toplessness) বলতে বিশেষত জনসম্মুখে বা কোনো দৃষ্টিগোচর মাধ্যমে নারীর কাঁধ থেকে কোমর বা নিতম্ব পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকা, অথবা অন্তত স্তন, অ্যারিওলা, স্তনবৃন্তের উন্মুক্ত অবস্থাকে বোঝানো হয়। পুরুষের ক্ষেত্রেও বক্ষ উন্মুক্ততা একই সমার্থক নির্দেশ করে, যাকে ইংরেজি ভাষায় শার্টলেসনেস বলে।

দুই তাহিতি(Tahiti) নগ্নবক্ষা নারী, (1899)

পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে

ইউজিন ডেলাক্রয়িক্স অঙ্কিত ওডালিস্ক (১৮৫৭)।

ধড় বিবস্ত্রা বা ধড় নিরাভরণ (ইংরেজি: Toplessness) ওই অবস্থাকে বলা হয় যখন একজন নারী তার উর্ধাংশে কিছু না পরে বিবস্ত্র থাকার ফলে তার স্তন দৃষ্টিগোচর যায়।

প্রচলন

খৃস্টান মিশনারিদের আমেরিকায় আগমনের পূর্বে আমেরিকা, আফ্রিকাইউরোপে বহুল পরিমাণে প্রচলিত ছিলো।[1] তাছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন অংশেও তা প্রচলিত ছিলো যা মুসলিম আক্রমণের ফলে বন্ধ হয়।[2]

হিন্দু সংস্কৃতিতে

ভারতীয় সংস্কৃতিতেও স্তন নগ্ন রাখার প্রচলন গাঙ্গেয় অববাহিকা থেকে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত স্তন নগ্ন রাখতো এবং এখানেও মুসলিম আক্রমণেরর ফলে তা বন্ধ হয়।[3][4] অবশ্য মুসলমানদের ভারতে আগমনের পরেও কেরলাকর্ণাটকে এর প্রচলন ছিল।[5][6]

অন্যান্য সংস্কৃতিতে

আধুনিকতা ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাবের পূর্বে থাই নারীগনও তাদের স্তন সার্বজনিকভাবে উলঙ্গ রাখতো।[7] লাওসে ও ১৮৫০ পর্যন্ত মহিলারা স্তন আবৃত করতেননা।[8] ইন্দোনেশীয়ার বোর্নিয়ো, জাভাদ্বীপ, বালী ইত্যাদি অঞ্চলের নারীরাও সেখানে ইসলামএর আগমনেরর পূর্বে স্তন উলঙ্গ রাখতো কিন্তু যাদের স্তন ঝুলে যেতো বা খুব বড় স্তন থাকলে তারা তা ঢেকে রাখতো।[6]

মধ্যপ্রাচ্যর দেশ আরব উপদ্বীপ, মিসর, মেসোপটেমীয় তেও সপ্তম শতাব্দীতে নগ্নতা চরমে ছিলো। যা হজরত মুহাম্মদ -এর সময়ে ইসলামীকরনের পর তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তিউনিশিয়ামিসরের সমুদ্র সৈকতে এখনও বিদেশি পর্যটকদের জন্যে তা বৈধ করা আছে।[9]

বৈধতা

নারীরা পুরুষের সম মর্যাদা প্রাপ্ত হওয়ার জন্য নগ্নবক্ষা হয়ে থাকে। [10]

বর্তমানে অধিকাংশ দেশে সার্বজনিক স্থানে স্তন উলঙ্গীকরণ নিষিদ্ধ। তবে কিছু স্থানে তা বৈধ।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

নারীরা মনে করে তাদের পুরুষের মত স্বাধীনতা পাওয়া উচিত এবং সে লক্ষ্যে তাদেরকেও নগ্ন বুকে ঘোরাফেরা করার অধিকার দেওয়া উচিত। 

I[11][12]

একটি প্রতিবাদের উপায় হিসেবে

নারীরা বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেও উন্মুক্ত বক্ষা হয়ে থাকে।[13][14][15][16][17]

নারীরা তাঁদের বক্ষ উন্মুক্ত করে যাতে পুরুষ আনন্দ পায় তাই।[18] ব্রাজিলের উৎসবে প্রায়ই উন্মুক্ত বক্ষের নারী দেখতে পাওয়া যায়।[19]

গণমাধ্যম ও কলায়

নারীরা প্রতিবাদ স্বরূপ বুক খুলে রেখেছে।

বিনোদন

ফরাসিরা ঐতিহ্যগতভাবে ১৯১০ এর পর থেকে সঙ্গীত থিয়েটার, চলচ্চিত্র, বিনোদন, নৃত্য এবং অভিনয় কলায় নগ্নতাকে ফুটিয়ে তুলেন। বক্ষ উন্মুক্ততার এই ধারা এখনো ফলিস বার্গেরেমাউলিন রাগেতে টিকে আছে। ১৯৬০ এর দশকে "দ্য লেডিবার্ড" এর ন্যায় কয়েকটি মহিলা দল (সান ফ্রান্সিসকোতে ও কোপেনহেগেনে) বক্ষ নিরাভরণ রেখে অনুষ্ঠান পালন করেন।[20]

গণমাধ্যম ও আলোকচ্চিত্র

অনেক পশ্চিমা সংস্কৃতিতে, আজকের দিনে নারীর বক্ষ নিরাভরণ ছবি নিয়মিতই সাময়িকী ক্যালেণ্ডার এবং অন্যান্য ছাপা কাগজে প্রকাশিত হয়। কখনো কখনো স্তনকে বা স্তনবৃন্তকে (এরিওলা) হাত দিয়ে ঢেকে রাখার মাধ্যমে ("হ্যান্ডব্রা") বিভিন্ন ছবি প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যের পত্রিকা দ্য সান এর মত মুলধারার ট্যাবলেট পত্রিকা তাদের ৩ নং পৃষ্ঠায় বিভিন্ন মডেলের ছবি প্রকাশ করতে থাকে। যা পেইজ থ্রি এর বালিকারা নামে বিখ্যাত। চাকচিক্যময় ছবি করার জন্য বক্ষ নিরাভরণ বিষয়টিকেও অনেক সময় ফুটিয়ে তুলা হত।

যদিও বক্ষ নিরাভরণ ছবির প্রভাব পশ্চিমা সাময়িকী ও চলচ্চিত্রগুলোতে বাড়ছে, তবুও ১৮ বছরের নিচে বক্ষ উন্মুক্ততা মডেলের আলোকচ্চিত্র বিতর্কিত। জক স্টার্জেসবিল হ্যানসন নামক আলোকচ্চিত্রী নিয়মিতভাবে উন্মুক্ত বক্ষের ও নগ্ন কিশোরীর চিত্রায়নের কাজ করেছেন। এসমস্ত কাজের জন্য আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে গেছেন ও বিতর্কিত হয়েছেন।[21]

তথ্যসূত্র

  1. Nida, Eugene A. (১৯৫৪)। "Customs and Cultures, Anthropology for Christian Missions"। New York: Harper & Brothers। ২৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০২২
  2. Fernando, Romesh (১৫ নভেম্বর ১৯৯২)। "The Garb of Innocence: A Time of Toplessness"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১০
  3. Hyecho. Wang ocheonchukguk jeon of AD 727
  4. A. L. Bhasham. "The Wonder That Was India"
  5. W. Crooke. "Nudity in India in Custom and Ritual", Journal of the Royal Anthropological Institute. 1919. p.239f
  6. Hans Peter Duerr. "Der Mythos vom Zivilisationsprozeß 4. Der erotische Leib"
  7. "Traditional Dress in Chiang Mai"
  8. M.H.Mouhot, "Travels in the Central parts of Indo-China, Cambodia and Laos" (1864)
  9. Rovere, Elizabeth। "Culture and Tradition in the Arab Countries: American Returns Touched by the Land and the People"। The Habiba Chaouch Foundation। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৮
  10. Borelli, Laird (১৭ সেপ্টেম্বর ২০০২)। "Imitation of Christ Runway Review"। Style.com। ২৯ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৮
  11. "Is nudity the new normal?"The Sun। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১০
  12. "Swedish city legalizes topless bathing....at public swimming pools"। Inquisitr.com। ২৭ জুন ২০০৯। ২০ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০০৯
  13. "Feminist group take topless protest to Davos"The Telegraph। ২৮ জানুয়ারি ২০১২। ২০ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৮
  14. Charleston, Beth Duncuff (অক্টোবর ২০০৪)। "The Bikini"Heilbrunn Timeline of Art History। New York: The Metropolitan Museum of Art। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৫, ২০১৩
  15. James Kitchling, "Short History of Bikinis and Swimsuits", Articles Central, August 2, 2008
  16. Walls, Jeannette (১৪ জানুয়ারি ১৯৯১)। High Fashion's Lowest NecklineNew York Magazine
  17. Alexander, Shana (১০ জুলাই ১৯৬৪)। "Me? In That!"। Life57 (2): 55–61। |access-date= requires |url= (help)
  18. "Mardi Gras New Orleans"The Times-Picayune। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১০
  19. "The Samba Parade"। Ipacom travel। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১০
  20. Hugues, Donal। "Pics: The Ladybirds. Ray Floyds Topless 60's Girl Band"golfcentraldaily.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৬
  21. Westwood, Matthew (২৩ মে ২০০৮)। "PM says Henson photos have no artistic merit"The Australian। ১৯ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১০
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.