বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞান
বংশাণুবিজ্ঞানের যে শাখাতে জীবসমূহের বংশাণুসমগ্র (জিনোম) নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করা হয়, তাকে বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞান বলে। ইংরেজি পরিভাষায় একে "জিনোমিক্স" (Genomics) বলে।
বংশাণুবিজ্ঞান |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
|
বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানটি ১৯৮০-র দশক থেকে বিকাশ লাভ করে। বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে (যেমন মানব বংশাণুসমগ্র প্রকল্প) স্বয়ংক্রিয় বিভিন্ন কৌশল ও কম্পিউটার-ভিত্তিক ব্যবস্থার চতুর ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবের কোষে অবস্থিত নিউক্লিওটাইড ও অ্যামিনো-অ্যাসিড অনুক্রমের উপর বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং এগুলিকে বিশ্লেষণ করা হয়। বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল একেকটি নির্দিষ্ট বংশাণু বংশসূত্রে কোথায় অবস্থান করে, এগুলির ডিএনএ নিউক্লিওটাইড অনুক্রম কী এবং যত বেশি সম্ভব বিভিন্ন বংশাণুর কী কাজ তা নির্ণয় করা। বিশেষত যে বংশাণুগুলি দেহের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ, বিপাকীয় কার্যকলাপে অপরিহার্য এবং যেসব বংশাণু বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক বৈকল্য বা রোগব্যাধির সাথে সম্পর্কিত বলে অনুমান করা হয়, সেগুলি নিয়ে গবেষণা করাই ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য।[1]
বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানের বেশ কিছু স্বতন্ত্র শাখা আছে, কিন্তু এগুলি একে অপরের সাথে সম্পর্কিতও বটে। সাংগঠনিক বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানে বংশাণুসমগ্রের মানচিত্রায়ন করাটাই মুখ্য এবং এর চূড়ান্ত লক্ষ্য কোন নির্দিষ্ট জীবের জন্য পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ অনুক্রমটি নির্ণয় করা। তবে প্রায়শই এই শাখাতে নিউক্লিয়িক অ্যাসিড ও প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক আণবিক কাঠামোও নির্ণয় করা হয়। কার্যমূলক বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানে বংশাণু অভিব্যক্তি এবং বংশাণু উৎপাদ কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে গবেষণা করা হয়। এটি অত্যন্ত জটিল একটি ক্ষেত্র, যেখানে বংশাণুগুলির প্রতিলিপি বিশ্লেষণ (প্রতিলিপিসমগ্র বিজ্ঞান) করে বংশাণু অভিব্যক্তি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ও সমন্বিত হয় এবং কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় (যেমন রোগাক্রান্ত অবস্থায়) বংশাণুর কাজ পরিবর্তিত হয়, সে ব্যাপারে গবেষণা করা হয়। তুলনামূলক বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানে বিভিন্ন প্রজাতির বংশাণুসমগ্রগুলির মধ্যে ডিএনএ অনুক্রমে সাদৃশ্য আছে এমন সব অঞ্চল শনাক্ত করা হয়। কোনও একটি প্রজাতির একটি নির্দিষ্ট ডিএনএ অনুক্রমের বাস্তব কার্যগত গুরুত্ব সম্বন্ধে জানা থাকলে অপর একটি প্রজাতির একই রকম বা খুব কাছাকাছি ডিএনএ অনুক্রমের কাজ কী হবে, সে ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। অধিকন্তু এরকম তুলনার সাহায্যে বংশাণুর বিবর্তনের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক অনুমিতি করা যায় এবং বিভিন্ন জীবের মধ্যকার বিবর্তনগত সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি লাভ সম্ভব হয়। অধিবংশাণুসমগ্র বিজ্ঞানে কোনও একটি নমুনা পরিবেশে, যেমন মাটি বা সমুদ্রের পানির নমুনাতে অবস্থিত সমস্ত অণুজীবের বংশাণুসমগ্র নিয়ে সামষ্টিকভাবে অধ্যয়ন করা হয়।[2][3]
তথ্যসূত্র
- Miquel Porta; John M. Last, সম্পাদকগণ (২০১৮), A Dictionary of Public Health (২য় সংস্করণ), Oxford University Press
- Elizabeth Martin; Robert Hine, সম্পাদকগণ (২০১৫), A Dictionary of Biology (৭ম সংস্করণ), Oxford University Press, পৃষ্ঠা ২৫২
- Elizabeth A. Martin, সম্পাদক (২০১৫), Concise Medical Dictionary, Oxford University Press, পৃষ্ঠা ৩১৩
আরও দেখুন
- প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান
- প্রতিলিপিসমগ্র বিজ্ঞান
- বিপাকীয় উৎপাদসমগ্র বিজ্ঞান
- জীবতথ্যবিজ্ঞান
- আণবিক জীববিজ্ঞান