ফ্রস্ট/নিক্সন (চলচ্চিত্র)
ফ্রস্ট/নিক্সন ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ঐতিহাসিক/নাট্য চলচ্চিত্র। ২০০৬ সালে পিটার মর্গান রচিত একই নামের নাটক অবলম্বনে ছবিটি তৈরি করা হয়। তিনি এর চিত্রনাট্যও রচনা করেন। ১৯৭৭ সালে ডেভিড ফ্রস্ট ও রিচার্ড নিক্সনের সাক্ষাৎকারের কাহিনী এ ছবিতে পরিস্ফুটিত হয়েছে। রন হাওয়ার্ড ছবিটির পরিচালক ছিলেন। এটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহ-প্রযোজনায় ছবিটি তৈরি হয়। হাওয়ার্ডের ইউনিভার্সাল পিকচার্স, ইমাজিন এন্টারটেইনমেন্টের ব্রায়ান গ্রেজার এবং ওয়ার্কিং টাইটেলস ফিল্মসের টিম বেভান ও এরিক ফেলনার এর প্রযোজক ছিলেন। সেরা চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেতা ও সেরা পরিচালকসহ পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ছবিটি অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।
ফ্রস্ট/নিক্সন | |
---|---|
পরিচালক | রন হাওয়ার্ড |
প্রযোজক |
|
চিত্রনাট্যকার | পিটার মর্গান |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | হানস জিমার |
চিত্রগ্রাহক | সালভাতোরে তোতিনো |
সম্পাদক |
|
প্রযোজনা কোম্পানি |
|
পরিবেশক | ইউনিভার্সাল পিকচার্স |
মুক্তি |
|
দৈর্ঘ্য | ১২২ মিনিট |
দেশ |
|
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $২৫ মিলিয়ন[1] |
আয় | $২৭.৪ মিলিয়ন[1] |
নাটকের ওয়েস্ট এন্ড ও ব্রডওয়ে প্রোডাকশনের মূল তারকা মাইকেল শিন ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক ডেভিড ফ্রস্ট ও ফ্র্যাঙ্ক লানজেলা রিচার্ড নিক্সনের চরিত্রে এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ও ২০০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ছবিটি যুক্তরাজ্যে মুক্তি পায়।
কাহিনী
১৯৭২ সালের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ও ১৯৭৪ সালে নিক্সনের পদত্যাগের পর বিশ্বজুড়ে ৪০ কোটি মানুষ নিক্সনকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে দেখে। এদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট,যিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় টক শো রেকর্ড করছেন। তিনি নিক্সনের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।
নিক্সনের এজেন্ট আরভিং লাজার বিশ্বাস করেন,নিক্সন এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে হৃত সম্মান পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক লাভ অর্জনেও সক্ষম হবেন। লাজার ৫,০০,০০০ ডলার দাবি করেন এবং ফ্রস্ট ও তার মধ্যে সমঝোতা হলে তিনি ৬,০০,০০০ ডলার পান।
ফ্রস্ট তার বন্ধু প্রযোজক জন বার্টকে বলেন, সাক্ষাৎকারগুলো সফলতা পাবে। তারপর বার্ট ও ফ্রস্ট ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে নিক্সনের সাথে দেখা করতে যান। বিমানে ফ্রস্ট ক্যারোলিন কুশিং নামের এক নারীর সাথে হাস্য-পরিহাসে মেতে ওঠেন। তাদের মধ্যে সম্পর্কের সূচনা হয়।
ফ্রস্ট আমেরিকান নেটওয়ার্কগুলোর কাছে সাক্ষাৎকারগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাই তিনি ব্যক্তি অর্থায়নে সাক্ষাৎকারগুলো অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেন। বিজ্ঞাপনী সংস্থা এবং স্থানীয় টিভি স্টেশনের সাথেও তিনি চুক্তি করেন। তিনি এবং বার্ট বব জেলনিক ও জেমস রেস্টন জুনিয়র ফ্রস্টকে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করেন। রেস্টন ফ্রস্টকে নিক্সনের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য উৎসাহিত করেন।
নিক্সনের রাষ্ট্রপতিত্ব-উত্তর সময়কালের চিফ অব স্টাফ জ্যাক ব্রেনানের তত্ত্বাবধানে ফ্রস্ট ও নিক্সন প্রথম তিনটি রেকর্ডিং অধিবেশন সূচনা করেন। ফ্রস্টকে পূর্বে সম্মত একটি সময়সীমার মধ্যে সাক্ষাৎকার নিতে হবে। আবার সহকর্মীদের চাপের মুখে পড়ে তিনি কঠিন প্রশ্ন করারও চেষ্টা করেন। কিন্তু নিক্সন সম্পূর্ণ আলোচনাই ভিয়েতনাম যুদ্ধের দিকে নিয়ে যান এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। ফ্রস্টের সম্পাদনা দলের সদস্যরা সাংবাদিক হিসেবে তার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং নিক্সন কৌশলে নিজেকে দায়মুক্তি দিচ্ছেন-এটা ভেবেও রাগান্বিত হন।
চূড়ান্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির উপর। ফ্রস্ট মাতাল নিক্সনের কাছ থেকে ফোন পান। উন্মত্ত কণ্ঠে নিক্সন বলেন, এই সাক্ষাৎকার আমাদের উভয়ের কর্মজীবনকে গড়ে দেবে, কিংবা নষ্ট করে দেবে। ফ্রস্ট এ বিষয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন। নিক্সন বলেন, যেভাবেই হোক বাগযুদ্ধে তিনি ফ্রস্টকে পরাজিত করবেন।
পরবর্তী তিন দিন সাক্ষাৎকারের জন্য ফ্রস্ট প্রাণপণ প্রস্তুতি নেন। এদিকে রেস্টন ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালতভবন হতে গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করেন।
চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের সময় ফ্রস্ট নিক্সন ও চার্লস কোলসনের কথোপকথন পড়ে শোনান। এটিই হলো রেস্টনের সংগৃহীত আলামত। নিক্সন একসময় তার অন্যায়কার্য স্বীকার করতে বাধ্য হন এবং কুখ্যাত উক্তি করেন -"When the president does it, it is not illegal."(বেআইনি কাজ যদি একজন রাষ্ট্রপতি করেন, তাহলে সেটি বেআইনি নয়)। সাথে সাথে ব্রেনান এসে নিক্সনকে বাধা দেন। ব্রেনান ও নিক্সনের আলোচনা সমাপ্ত হওয়ার পর পুনরায় ফ্রস্ট ও নিক্সনের মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়। নিক্সন স্বীকার করেন, তার কর্মকাণ্ড আমেরিকান মানুষের মাথা নিচু করে দিয়েছে।
সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার পর ফ্রস্ট ও কুশিং নিক্সনের বাসভবনে তার সাথে বিদায়ী অভ্যর্থনা জানাতে যান। ফ্রস্ট নিক্সনকে ইতালীয় জুতো উপহার দেন। পাথরের রেলিংয়ের উপর জুতো রেখে নিক্সন সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ফ্রস্ট ও কুশিং নিজেদের গন্তব্যে পাড়ি দেন।
সাক্ষাৎকারগুলো ব্যাপক সফলতা লাভ করে। ১৯৯৪ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বিতর্ক এড়াতে পারেননি।
চরিত্রায়ণে
- ফ্র্যাঙ্ক লানজেলা (রিচার্ড নিক্সন)
- মাইকেল শিন (ডেভিড ফ্রস্ট)
- কেভিন বেকন (জ্যাক ব্রেনান)
- রেবেকা হল (ক্যারোলিন কুশিং)
- টবি জোনস (আরভিং লাজার)
- ম্যাথিউ ম্যাকফ্যাডেন(জন বার্ট)
- অলিভার প্ল্যাট (বব জেলনিক)
- স্যাম রকওয়েল (জেমস রেস্টন জুনিয়র)
তথ্যসূত্র
- "Frost/Nixon (2008)"। Box Office Mojo। ২০১০-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-২১।
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ফ্রস্ট/নিক্সন (ইংরেজি)
- রটেন টম্যাটোসে ফ্রস্ট/নিক্সন (ইংরেজি)
- মেটাক্রিটিকে ফ্রস্ট/নিক্সন (ইংরেজি)
- বক্স অফিস মোজোতে ফ্রস্ট/নিক্সন (ইংরেজি)