ফুসফুসের ক্যান্সার

ফুসফুসের ক্যান্সার (ইংরেজি: Lung cancer) বা ফুসফুস ক্যান্সার একটি রোগ যাতে ফুসফুসের টিস্যুগুলিতে অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধি ঘটে। এই বৃদ্ধির ফলে মেটাস্ট্যাসিস, প্রতিবেশী টিস্যু আক্রমণ এবং ফুসফুসের বাইরে সংক্রমণ ঘটতে পারে। প্রাথমিক ফুসুফুসের ক্যান্সারের অধিকাংশই ফুসফুসের কার্সিনোমা, যা ফুসফুসের এপিথেলিয়াল কোষগুলিতে ধরা পড়ে। ফুসফুসের ক্যান্সার পুরুষদের ক্যান্সার-জনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং মহিলাদের এরূপ মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। [10][11] ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ১৩ লক্ষ লোক মারা যান। [12] ফুসফুসের ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ শ্বাস নিতে সমস্যা, রক্তসহ কাশি এবং ওজন হ্রাস। [1]

ফুসফুসের ক্যান্সার
প্রতিশব্দফুসফুসের ক্যান্সার
একটি ফুসফুসের ক্যান্সারের বুকের এক্স রে এবং (→) তীর চিহ্ন দ্বারা টিউমার নির্দেশিত
বিশেষত্বক্যান্সার
লক্ষণরক্তসহ বমি,ওজন হ্রাস,শ্বাস-স্বল্পতা,বুকে ব্যাথা[1]
রোগের সূত্রপাত৭০ বছর[2]
প্রকারভেদSmall-cell lung carcinoma (SCLC), non-small-cell lung carcinoma (NSCLC)[3]
ঝুঁকির কারণতামাক সেবন,বংশগত,বায়ু দূষণ [4][5]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিমেডিকেল ইমেজিং, টিস্যু বায়োপ্সি[6][7]
চিকিৎসাসার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি[7]
আরোগ্যসম্ভাবনাপাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার হার ১৭.৪% (US)[2]
সংঘটনের হার৩৩ লক্ষ মানুষ (২০১৫)[8]
মৃতের সংখ্যা১৭ লক্ষ (২০১৫)[9]

ফুসফুস ক্যান্সারের ৮৫% এর জন্য দায়ী দীর্ঘমেয়াদি তামাক সেবন।[4] বাকি ১০-১৫% যারা কখনো ধূমপান করেন নি,তারা আক্রান্ত হন।[13] জেনেটিক ফ্যাক্টর,বায়ু দূষণ ইত্যাদি ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম প্রভাবক।.[4][5][7][14][15].[6][16] বুকের এক্স-রে পরীক্ষা এবং কম্পিউটার টমোগ্রাফির মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা যেতে পারে। পরবর্তীতে একটি বায়োপসির মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব। সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়। ৫ বছর চিকিৎসার পর রোগীর বেঁচে যাওয়ার হার ১৪% [1]

লক্ষণ ও উপসর্গ

  • কাশিঃ দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে কাশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে শুকনো কাশি অথবা ঘন ঘন কাশি হতে পারে, কাশির সাথে অতিমাত্রায় কফ যেতে পারে অথবা রাতের দিকে কাশি প্রচণ্ড বেড়ে যেতে পারে।
  • কাশির সাথে রক্ত যাওয়াঃ এটিও ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ এবং ধূমপানকারী পুরুষ রোগীদের ক্ষেত্রে লক্ষণটি বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে কফের সাথে অথবা থুতুর বা লালার সাথে রক্ত যায় এবং দেখা যায় ফুসফুস এর কোন না কোন জায়গায় বারবার ইনফেকশন হয়।
  • বুক ব্যথাঃ প্রায় ৩০% ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীর ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি দেখা যায়। টিউমার ফুসফুস ঝিল্লীর আশপাশে হলে মাঝে মাঝে হালকা বুক ব্যথা হয়ে থাকে কিন্তু টিউমারটি যদি ফুসফুস ঝিল্লী বা প্লুরা ভেদ করে তাহলে অনবরত বুকে ব্যথা থাকে।
  • জ্বরঃ ক্যান্সারের প্রদাহের কারণে জ্বর হয়ে থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি এর নিচে থাকে। এক্ষেত্রে কোন অ্যান্টিবায়োটিক ও কাজ করে না এবং বার বার জ্বর আসতে থাকে।
  • বুক ব্যথা এবং শ্বাস-কষ্টঃ ক্যান্সারের কারণে ফুসফুসের শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়।
  • আঙুল ফুলে যাওয়াঃ এক্ষেত্রে আঙুল ফুলে যায় এবং ব্যথা হয় বিশেষ করে আঙুলের গোঁড়ার দিক এবং নখের চারপাশ।
  • বাতঃ শরীরের জোড়া বা গাঁট যেমন হাঁটু,কনুই,কব্জি ইত্যাদিতে ব্যথা হতে পারে। এমনকি ব্যথার কারণে হাত নড়াচড়া করতে বা হাঁটতেও প্রচণ্ড অসুবিধা হতে পারে।

ফুসফুস ক্যান্সারের অনেক লক্ষণই(ক্ষুধামন্দা,ওজন হ্রাস,অবসাদ) সুনির্দিষ্ট নয়।[6] রোগ শনাক্ত হবার পূর্বেই অনেক রোগীর ক্যান্সার মেটাস্ট্যাটিস করে বা ছড়িয়ে পড়ে। [1][17] সাধারণত যেসব জায়গায় ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে,তা হল - মস্তিষ্ক,অস্থি,যকৃৎ,পেরিকার্ডিয়াম,বৃক্ক[17] প্রায় ১০% মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হবার সময় কোন লক্ষণই ধরা পড়ে না।এসব ক্যান্সার রোগীর নিত্য-নৈমত্তিক পরীক্ষা,যেমন বুকের এক্সরে করতে গিয়ে ধরা পড়ে।[16]

পর্যায় নির্ণয়

মূত্রথলি ক্যান্সারের T স্টেজ বা পর্যায়

চিকিৎসার ফলাফল তুলনাসহ অনেক কারণের জন্য,তার শারীরিক এক্সটেনশন অনুযায়ী ক্যান্সারের পর্যায় বা স্টেজ নির্ধারণের জন্য একটি অভিন্ন TNM পদ্ধতির অস্তিত্ব খুব দরকারী।

ফুসফুসের ক্যান্সারের পর্যায়
পর্যায় নির্ণায়ক
সুপ্ত কার্সিনোমা TX, N0, M0
স্টেডিয়াম ০ TIS, কার্সিনোমা ইন সিটু
স্টেডিয়াম I IA T1, N0, M0
IB T2, N0, M0
স্টেডিয়াম II IIA T1, N1, M0
IIB T2, N1, M0 অথবা T3, N0, M0
স্টেডিয়াম III IIIA T3 (অথবা T1 অথবা T2 ও N2), N0, N1 অথবা N2, M0
IIIB যেকোন T, N3 (অথবা যেকোন N ও T4), M0
স্টেডিয়াম IV যেকোন T, যেকোন N বা M1

প্রাথমিক টিউমার (T):

  • T0 - কোন প্রাথমিক টিউমার নেই ।
  • TX - সুপ্ত ক্যান্সার
  • TIS - কার্সিনোমা ইন সিটু
  • T1 -টিউমারের সবচেয়ে বড় ব্যাসের দৈর্ঘ্য ২ সে.মি বা এর কম।
  • T2 -টিউমারের সবচেয়ে বড় ব্যাসের দৈর্ঘ্য ২ সে.মি এর বেশি।
  • T3 -যে কোন দৈর্ঘ্যের টিউমার,যার বিস্তৃতি ডায়াফ্রাম,প্লুরা কিংবা পেরিকার্ডিয়াম পর্যন্ত।এরা হৃৎপিণ্ড,শ্বাসনালি,অন্ননালী এদেরকে আক্রান্ত করে না।প্লুরায় ফ্লুইড জমলেও তা ম্যালিগন্যান্ট নয়।
  • T4 -যে কোন দৈর্ঘ্যের টিউমার, যা হৃৎপিণ্ড,শ্বাসনালি,অন্ননালী এদেরকে আক্রান্ত করে।প্লুরায় ফ্লুইড জমলেও তা ম্যালিগন্যান্ট।

স্থানীয় লসিকা গ্রন্থি বা নোড (N):

  • N0 - স্থানীয় লসিকা গ্রন্থিতে মেটাস্ট্যাসিস নেই।
  • N1 - স্থানীয় লসিকা গ্রন্থিতে মেটাস্ট্যাসিস থাকলেও স্বল্প বিস্তৃতে।
  • N2 - মেটাস্ট্যাসিস,N1 এবং N2 এর বিস্তৃতির মাঝে।
  • N3 - মেটাস্ট্যাসিস দূরবর্তী লসিকা গ্রন্থিতে উপস্থিত।

মেটাস্ট্যাসিস (M):

প্রতিকার

ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি। অনেক সময় তিনটি পদ্ধতির সমন্বিত চিকিৎসা দেওয়া হয়।

টার্গেটেড থেরাপি বর্তমানে ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগ প্রতিকার করা সহজ হয়।


আরোগ্যসম্ভাবনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুসফুসের ক্যান্সারের সমস্ত লোকের মধ্যে ১৬.৮% রোগ নির্ণয়ের পর কমপক্ষে পাঁচ বছর বেঁচে থাকে।[2][18] ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে, ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য পাঁচ বছর ধরে বেঁচে থাকার আনুমানিক পরিমাণ ৯.৫% ।[19] উন্নয়নশীল বিশ্বের বেঁচে থাকার হার সাধারণত খারাপ।[20] ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্ত করার সময় রোগ অনেক দূর ছড়িয়ে পড়লে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। ইংরেজি তথ্য জানাচ্ছে যে প্রায় ৭০% রোগী অন্ততপক্ষে এক বছর বেঁচে থাকে যখন রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা হয় ।[21]

রোগতত্ত্ব

ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে আক্রান্ত এবং মৃত্যু্র ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে, এবং এটি মহিলাদের মধ্যে আক্রান্ত হবার তৃতীয়-সর্বোচ্চ ঘটনা (স্তন এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের পরে) এবং দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ মৃত্যুহার (স্তন ক্যান্সারের পরে)। ২০২০ সালে, বিশ্বব্যাপী ২.২ মিলিয়ন নতুন রোগী পাওয়া গেছে, এবং ১.৮ মিলিয়ন মৃত্যু ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে হয়েছে, যা ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ১৮.০% । সর্বোচ্চ হার মাইক্রোনেশিয়া, পলিনেশিয়া, ইউরোপ, এশিয়া, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে। আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকায় এ হার অনেক কম।

তথ্যসূত্র

  1. Minna, JD (২০০৪)। Harrison's Principles of Internal Medicine। McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 506–516। আইএসবিএন 0071391401। ডিওআই:10.1036/0071402357
  2. Alberg, AJ; Brock, MV; Samet, JM (২০১৬)। "Chapter 52: Epidemiology of lung cancer"। Murray & Nadel's Textbook of Respiratory Medicine (6th সংস্করণ)। Saunders Elsevier। আইএসবিএন 978-1-4557-3383-5।
  3. O'Reilly, KM; Mclaughlin AM; Beckett WS; Sime PJ (মার্চ ২০০৭)। "Asbestos-related lung disease"American Family Physician75 (5): 683–688। পিএমআইডি 17375514। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  4. Lu C, Onn A, Vaporciyan AA, ও অন্যান্য (২০১০)। "Chapter 78: Cancer of the Lung"। Holland-Frei Cancer Medicine (8th সংস্করণ)। People's Medical Publishing House। আইএসবিএন 978-1-60795-014-1।
  5. GBD 2015 Disease and Injury Incidence and Prevalence, Collaborators. (৮ অক্টোবর ২০১৬)। "Global, regional, and national incidence, prevalence, and years lived with disability for 310 diseases and injuries, 1990–2015: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2015."Lancet388 (10053): 1545–1602। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(16)31678-6পিএমআইডি 27733282পিএমসি 5055577অবাধে প্রবেশযোগ্য
  6. GBD 2015 Mortality and Causes of Death, Collaborators. (৮ অক্টোবর ২০১৬)। "Global, regional, and national life expectancy, all-cause mortality, and cause-specific mortality for 249 causes of death, 1980–2015: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2015."। Lancet388 (10053): 1459–1544। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(16)31012-1পিএমআইডি 27733281
  7. [[World Health Organization|WHO]] (২০০৪)। "Deaths by cause, sex and mortality stratum" (PDF)World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০১ |author-link1= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)
  8. "Lung Cancer Facts (Women)"। National Lung Cancer Partnership। ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৬
  9. [[World Health Organization|WHO]] (ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "Cancer"World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-২৫ |author-link1= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)
  10. Thun MJ, Hannan LM, Adams-Campbell LL, ও অন্যান্য (সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Lung cancer occurrence in never-smokers: an analysis of 13 cohorts and 22 cancer registry studies"PLoS Medicine5 (9): e185। ডিওআই:10.1371/journal.pmed.0050185পিএমআইডি 18788891পিএমসি 2531137অবাধে প্রবেশযোগ্য
  11. Carmona, RH (২৭ জুন ২০০৬)। "The Health Consequences of Involuntary Exposure to Tobacco Smoke: A Report of the Surgeon General"। U.S. Department of Health and Human Services। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Secondhand smoke exposure causes disease and premature death in children and adults who do not smoke. Retrieved 2014-06-16
  12. "Tobacco Smoke and Involuntary Smoking" (পিডিএফ)IARC Monographs on the Evaluation of Carcinogenic Risks to Humans। WHO International Agency for Research on Cancer। 83। ২০০৪। ১৩ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। There is sufficient evidence that involuntary smoking (exposure to secondhand or 'environmental' tobacco smoke) causes lung cancer in humans. ... Involuntary smoking (exposure to secondhand or 'environmental' tobacco smoke) is carcinogenic to humans (Group 1).
  13. Collins, LG; Haines C; Perkel R; Enck RE (জানুয়ারি ২০০৭)। "Lung cancer: diagnosis and management"American Family Physician। American Academy of Family Physicians। 75 (1): 56–63। পিএমআইডি 17225705। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  14. Ridge, CA; McErlean AM; Ginsberg MS (জুন ২০১৩)। "Epidemiology of lung cancer"Seminars in Interventional Radiology30 (2): 93–98। ডিওআই:10.1055/s-0033-1342949পিএমআইডি 24436524পিএমসি 3709917অবাধে প্রবেশযোগ্য
  15. "Lung cancer survival statistics"। Cancer Research UK। ৭ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  16. "Lung cancer survival statistics"। ৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৪
শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.