ফুলবাড়ীয়া উপজেলা
ফুলবাড়ীয়া বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।
ফুলবাড়ীয়া | |
---|---|
উপজেলা | |
ফুলবাড়ীয়া | |
ফুলবাড়ীয়া ফুলবাড়ীয়া | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৮′১৪″ উত্তর ৯০°১৬′১″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | ময়মনসিংহ জেলা |
সংসদীয় আসন | ময়মনসিংহ-৬ |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | মোসলেম উদ্দিন (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
• উপজেলা চেয়ারম্যান | মালেক সরকার |
আয়তন | |
• মোট | ৩৯৯ বর্গকিমি (১৫৪ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৪,৪৮,৪৬৭ |
• জনঘনত্ব | ১,১০০/বর্গকিমি (২,৯০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | % |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২২১৬ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৬১ ২০ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীনকালে ফুলবাড়ীয়ায় ফুলখড়ি এক ধরনের লাকড়ী জাতীয় গাছ জন্মাত। যা অত্র এলাকার মানুষ লাকড়ী হিসাবে ব্যবহার করত। ফুলবাড়ীয়ার পূর্ব নাম ছিল গোবিন্দগঞ্জ। ধারণা করা হয়ে থাকে ফুলখড়ি থেকেই ফুলবাড়ীয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
ফুলবাড়ীয়া মুক্তদিবস হল ৮ ডিসেম্বর। এ অঞ্চল মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নাম্বার সেক্টরের অধীনে ছিল। ১৩ জুন সংঘটিত হওয়া লক্ষীপুর যুদ্ধ ফুলবাড়ীয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়। এতে শেখ মোজাফফর আলী এবং বাবু মান্নানের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিযুদ্ধা অংশ নেন। নিজেদের কোন রকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ২৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করা হয়। এছাড়াও ফুলবাড়ীয়াতে সংঘটিত হওয়া উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধ (১৭ জুন), আছিম যুদ্ধ (১৩ নভেম্বর), কেশরগঞ্জ যুদ্ধ ইত্যাদি।[2]
ভূগোল
ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ২০ কিলমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার অবস্থান। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার উত্তরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভালুকা উপজেলা ও টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা, পূর্বে ত্রিশাল উপজেলা, পশ্চিমে মুক্তাগাছা উপজেলা ও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা অবস্থিত।
প্রতিষ্ঠাকাল
১৮৬৪ সালে প্রশাসনিকভাবে ফুলবাড়ীয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে থানার সীমানা নির্ধারণ হয় ১৮৬৭ সালে। ১৯৮৩ সালের ০২ জুলাই ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আয়তন ৩৯৯ বর্গ কিলোমিটার।
প্রশাসনিক এলাকা
ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ফুলবাড়ীয়া থানার আওতাধীন।[3]
শিক্ষা
শিক্ষা সংক্রান্ত
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়→ ১০৬ টি
- বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়→ ৮২ টি (বর্তমানে গেজেট ভূক্ত)
- কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়→ ০৩ টি
- জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়→ ০৬টি
- উচ্চ বিদ্যালয়→ ৫৩টি
- উচ্চ বিদ্যালয়(বালিকা)→ ০৬টি
- দাখিল মাদ্রাসা→ ৪৫টি
- আলিম মাদ্রাসা→ ০১টি
- ফাজিল মাদ্রাসা→ ০৭টি
- কলেজ→ ০৭টি
- কলেজ(বালিকা)→ ০৩টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- সরকারি ফুলবাড়ীয়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
- ফুলবাড়ীয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- আল-হেরা একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়
- হরে কৃষ্ণ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়[4]
- ফুলবাড়ীয়া শহিদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ
- ফুলবাড়ীয়া ল্যাবরেটরি স্কুল
- মোহাম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়।
- ইন্জিনিয়ার শামছউদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়।
- আছিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- আছিম আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়
- আর্দশ উচ্চ বিদ্যানিকেতন
- কান্দানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
- রাধাকানাই উচ্চ বিদ্যালয়
- ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- রোকনউদ্দীন গার্লস স্কুল
- থানার পাড় উচ্চ বিদ্যালয়
- হরেকৃষ্ণ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়
- হাতিলেইট উচ্চ বিদ্যালয়
- পলাশীহাটা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
- শাপলা গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ।
- কাহালগাঁও দোলমা উচ্চ বিদ্যালয়।
- পলাশতলী আমরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়
- পলাশ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- ছনকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়
- আল আমীন উচ্চ দ্যিালয়
- শিবরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- জনতা উচ্চ বিদ্যালয়
- বাবুগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়
- বাক্তা উচ্চ বিদ্যালয়
- বরুকা উচ্চ বিদ্যালয়
- শুশুতি উচ্চ বিদ্যালয়
- এনায়েতপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- ৩৪. সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়
দাখিল মাদ্রাসা
- আছিম তালিমুলমিল্লাত দাখিল মাদ্রাসা
- কচুয়ারমোড় ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা
- পাটুলি দাখিল মাদ্রাসা
- কুশমাইল জলিলীয়া দাখিল মাদ্রাসা
- দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা, লক্ষীপুর।
- পলাশীহাটা ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা।
- ধুরধুরিয়া আলিম মাদ্রাসা
- ফুলবাড়ীয়া খাদিমুল ইসলাম (কে.আই.) ফাজিল মাদরাসা, ফুলবাড়ীয়া.
- চান্দের বাজার বালিকা দাখিল মাদরাসা, ফুলবাড়ীয়া
- ধামর আফাজিয়া দাখিলা মাদরাসা, ধামর.
- মুমিনুন্নিসা দাখিল মাদরাসা, ধামর
- পলাশতলী দাখিল মাদ্রাসা
- লেনজিরপাড় দাখিল মাদ্রাসা.
- কাহালগাঁও ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা।
- ফুলতলা দাখিল মাদরাসা।
উচ্চ মাধ্যমিক
- ফুলবাড়ীয়া কলেজ
- শাহাবুদ্দীন ডিগ্রী কলেজ
- বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়
- ফুলবাড়ীয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ
- ফুলবাড়ীয়া রয়েল কলেজ
- আখতার সুলতানা মহিলা কলেজ
- ভবানীপুর ফাজিল ডিগ্ৰী মাদ্রাসা
- কাতলাসেন কাদেরিয়া আলিয়া (ফাজিল) মাদ্রাসা
- কেশরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ
- বিদ্যানন্দ কামিল মাদ্রাসা
অর্থনীতি
ফুলবাড়ীয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর এছাড়াও বিভিন্ন রকমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং কল-কারখানা রয়েছে। হাতে প্রস্তুতকৃত লাল চিনি ও হলুদ আনারস,ড্রাগন ফল, মৎস চাষ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক খাত।
নদ-নদী
উপজেলার উপর দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত হয়েছে।। সেগুলো হচ্ছে উদমারী নদী,বাজান নদী, বানার নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলায়া নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী ও খিরো নদী[5][6]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- মোসলেম উদ্দিন, বর্তমান সংসদ সদস্য।
- প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য।
- নাজমুস সাকিব-তরুণ ইসলামিক ব্যক্তিত্ব।
দর্শনীয় স্থান
- ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নের ঐতিহাসিক বাসনা ঈদগাহ মাঠ এবং বাক্তা ইউনিয়নের কৈয়ারচালা গ্রামে অবস্থিত (কৈয়ারচালা,ভালুকজান,ও চাঁদপুর) ঈদগাহ মাঠ। যা ময়মনসিংহ (দক্ষিণ অঞ্চলের) বৃহত্তম ঈদগাহ মাঠ এবং দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান।
- ফুলবাড়ীয়ার আলাদীন'স পার্ক বহু লোকের জন্য দৃষ্টিনন্দন পার্ক।
- ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের দুলমা গ্রামে অর্কিড বাগান (দীপ্ত অর্কিডস)[7] অবস্থিত। মনোমুগ্ধকর এ বাগানে সাত জাতের একুশ ধরনের মোট তিন লাখ অর্কিড রয়েছে। অধিকাংশ অর্কিড বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। বাগানটি জুলাই ২০০২ সালে ১১ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
- হাজার বছরের প্রাচীন কারুকাজ সম্পন্ন পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় জোরবাড়ীয়া (পূর্ব) গ্রামে আঃ রশিদ খান সাহেবের বাড়ীতে (খান বাড়ীতে) অবস্থিত। ফুলবাড়ীয়া পুলিশ স্টেশন থেকে মসজিদটির দূরত্ব মাত্র ৩.৪ কিলোমিটার।
- ফুলবাড়ীয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বড়বিলা বিল [8] ,আনই রাজার দিঘী, নাওগাঁও ইউনিয়নের সন্তোষপুর রাবার বাগান ও বিস্তৃত বনভূমি। এছাড়াও এই অঞ্চলে ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহ্য হলুদ চাষ, আনারষ চাষ এবং গাছে দেখা মিলবে বানর। এবং রাবার প্রক্রিয়ার বিষয়টিও দেখা যাবে রাবার বাগানের ভিতরেই রয়েছে সরকারী একটি ইন্ডাস্ট্রী[9] ।
- পৌষ মাসের শেষ দিন ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নের দশমাইল নামক স্থানে খোলা মাঠে শুরু হয় ঐতিহাসিক হুম গুটি খেলা[10] । এই খেলা বিকাল চার ঘটিকায় শুরু হয় এবং হাজার হাজার জনগণ একত্রে এই খেলা খেলে এবং উপভোগ করে।
দেওখোলা ইউনিয়নের অন্তর্গত লক্ষীপুর বাজার সরকারী পুকুর পাড়ে অবস্থিত ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ।
সামাজিক সংগঠন
- উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে ফুলবাড়ীয়া"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১০ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫।
- রফিক আজাদ; নির্মলেন্দু গুণ; হেলাল হাফিজ; রহীম শাহ; ডঃ এম. এ. সাত্তার মন্ডল; প্রফেসর ড. মো. রফিকুল হক; সাযযাদ কাদির; ড. সেীমিত্র শেখর; জগলুল আলম; আনিসুর রহমান আনিস; সুবলকুমার বণিক; ফখরুল ইসলাম হারুণ; জিয়াউর রহমান; মার্জিয়া লিপি; মো. মনজুর-উল-হক; হামিদুল আলম সখা; খন্দকার ইফতেখার হাসান; ফয়সল মোকাম্মেল; মাহফুজুর রহমান (১৬ জানুয়ারি ২০১৩)। যুদ্ধদিনে ময়মনসিংহ। ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স এন্ড পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ ব্যাংক।
- "ইউনিয়নসমূহ - ফুলবাড়ীয়া উপজেলা"। fulbaria.mymensingh.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০২০।
- https://www.sohopathi.com/hare-krishna-union-high-school/
- ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৯-৪০০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬০৭। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
- BonikBarta। "ছুটির দিনে সন্তোষপুরে"। ছুটির দিনে সন্তোষপুরে (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪।
- Dhakatimes24.com। "অকাল মৌসুমে পদ্ম ফোটে ময়মনসিংহে"। Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪।
- "ফুলবাড়ীয়ায় গাছের সঙ্গে শত্রুতা!"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪।
- "ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা"। https://wwww.jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৪।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)