ফানুস
ফানুস (সরলীকৃত চীনা: 天灯; প্রথাগত চীনা: 天燈; ফিনিন: tiāndēng) (কংমিং লন্ঠন বা চীনা লণ্ঠন নামেও পরিচিত), হল বৌদ্ধধর্মীয় উৎসবে ব্যবহৃত এক প্রকারের আকাশ লন্ঠন যা কাগজে তৈরি একটি ছোট উষ্ণ বায়ু বেলুন, যেখানে নিচের দিকে একটি ছিদ্রে একটি ছোট অগ্নিকুণ্ড স্থাপন করা থাকে।[1]
ফানুস | |||||||
চীনা নাম | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 天燈 | ||||||
সরলীকৃত চীনা | 天灯 | ||||||
আক্ষরিক অর্থ | Parol na Panlangit | ||||||
| |||||||
বিকল্প চীনা নাম | |||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 孔明燈 | ||||||
সরলীকৃত চীনা | 孔明灯 | ||||||
আক্ষরিক অর্থ | Parol na Kongming | ||||||
| |||||||
থাই নাম | |||||||
থাই | โคมลอย | ||||||
RTGS | khom loi |
এশিয়া এবং বিশ্বের সর্বত্র, বহু শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যগতভাবে ফানুস তৈরি করা হয়েছে যা খেলা বা প্রাচীন উৎসবের অংশ হিসাবে উড়ানো হয়েছে।আকাশ লণ্ঠন নামটি একটি চীনা শব্দের অনুবাদ কিন্তু এটিকেআকাশ মোমবাতি বাঅগ্নি বেলুন নামেও উল্লেখ করা হয়েছে।
উড়ানোর কারণ
বৌদ্ধ পরিভাষায় এর নাম হলো, ‘আকাশ-প্রদীপ’। রাজকুমার সিদ্ধার্থ (পরবর্তীতে গৌতম বুদ্ধ) জাগতিক সকল দুঃখমুক্তি লাভের আশায় রাজ্য, রাজত্ব, ভোগ-বিলাস, ধনকুম্ভ সব ত্যাগ করে সংসার পরিত্যাগ করেছিলেন শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে। তিনি সারথি ছন্দককে সঙ্গে নিয়ে অশ্ব কন্থকের পিঠে চড়ে অনোমা নদীর তীরে পৌঁছালেন। রাজ-আবরণ ছন্দককে বুঝিয়ে দিয়ে তিনি সন্ন্যাস-ব্রত গ্রহণ করলেন। এরপর ভাবলেন, ‘আমি এখন সন্ন্যাসী, রাজকীয় বাহারি চুল কী-বা প্রয়োজন?’[2]
তরবারি দিয়ে চুলের গোছা কেটে নিয়ে মনে মনে অধিষ্ঠান করলেন, ‘যদি বুদ্ধ হওয়ার মতো গুণ আমার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে ঊর্ধ্বদিকে নিক্ষিপ্ত চুলের গোছা মাটিতে না পড়ে আকাশে স্থিত থাকুক।’[2][3]
এই সংকল্প করে তিনি চুলের গোছা উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন। বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার! একটা চুলও মাটিতে পড়ল না। বৌদ্ধধর্ম মতে, স্বর্গের ইন্দ্ররাজা চুলগুলো হীরা, মণি, মানিক্যখচিত স্বর্ণপাত্রে ধারণ করে তাবতিংস স্বর্গে উক্ত কেশ-ধাতু স্থাপন-পূর্বক একটি চৈত্য নির্মাণ করেন এবং এই চৈত্যের নাম রাখা হয় ‘চুলামনি চৈত্য’।[4] স্বর্গের দেবতারা এখনও এর পূজা করে থাকেন। কিন্তু পৃথিবীর বুদ্ধভক্ত পূজারীরা স্বর্গে তো আরোহণ করতে পারেন না। তাই তারা পরম শ্রদ্ধায় কাগুজে ফানুস তৈরি করে একটি বিশেষ দিনে ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চুলামনি চৈত্যকে পূজা করার উদ্দেশ্যে আকাশ-প্রদীপ হিসেবে ফানুস বাতি উত্তোলন করে থাকেন। ধর্মীয় গাথা বা মন্ত্র পাঠ করে উৎসর্গ করে খালি পায়ে বৌদ্ধরা ফানুস উড়িয়ে দেন।[5] মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে উৎসর্গ করে সাধু-ধ্বনির সুরে সুরে ফানুস উড়ানো হয়। যদি কোনো ফানুস উৎসর্গ না করা হয় তাহলে সে ফানুস উড়ানো হলে পাপ হয়। আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৃষ্টি ও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় অনেক সময় ফানুস ওড়ানোর পরিবেশ এবং সুযোগ কোনোটিই থাকে না। তাই প্রবারণা পূর্ণিমা বা আশ্বিনী পূর্ণিমায় দিনে ফানুস ওড়ানো হয়।[6] ফানুস উড়ানোর মন্ত্র বা সূত্র হলো:
«ইতিপি নিরোধ সমাপত্তিতো উট্ঠহিত্ব বিয় নিসিন্নস্স ভগবতো অরহতো সম্মাসম্বুদ্ধসস, ইমিনা আকাস্স পদীপেন চুলামনি চেতিয়ং উদ্দিসে, পূজেম, পূজেম, পূজেম।» |
«দুতিয়ম্পি ইতিপি নিরোধ সমাপত্তিতো উট্ঠহিত্ব বিয় নিসিন্নস্স ভগবতো অরহতো সম্মাসম্বুদ্ধসস, ইমিনা আকাস্স পদীপেন চুলামনি চেতিয়ং উদ্দিসে, পূজেম, পূজেম, পূজেম।» |
« ততিয়ম্পি ইতিপি নিরোধ সমাপত্তিতো উট্ঠহিত্ব বিয় নিসিন্নস্স ভগবতো অরহতো সম্মাসম্বুদ্ধসস, ইমিনা আকাস্স পদীপেন চুলামনি চেতিয়ং উদ্দিসে, পূজেম, পূজেম, পূজেম।» |
নির্মাণশৈলী
ফানুসের সাধারণ নকশা হল একটি ৩০ সেন্টিমিটার থেকে কয়েক মিটার মাপের পাতলা কাগজের খোল, যার নিচে একটি খোলা অংশ থাকে। খোলা মুখটি প্রায় ১০ থেকে ৩০ সেমি প্রশস্ত হয় (সবচেয়ে বড় খোলের জন্যেও), এবং শিখা থেকে দেয়ালের দূরত্ব বজায় রাখতে এর মুখটি একটি শক্ত বন্ধনী দ্বারা বেষ্টিত থাকে।
ফানুস জ্বালানোর পর, অগ্নিশিখা খোলের ভেতরের বাতাসকে উত্তপ্ত করে এর ঘনত্ব কমিয়ে দেয় যার ফলে ফানুস বাতাসে ভেসে ওঠে। যতক্ষণ পর্যন্ত আগুন জ্বলতে থাকে কেবলমাত্র ততক্ষণই ফানুস ভাসতে থাকে। আগুন নিভে গেলে এটি আবার মাটিতে পড়ে যায়।
- মেইনল্যান্ড চীন ও তাইওয়ানে, সাধারণত বাঁশের ফ্রেম ও তৈলাক্ত রাইস পেপার থেকে ফানুস তৈরি করা হয়। একটি ছোট মোমবাতি বা মোমের মতো দাহ্যপদার্থপূর্ণ প্রকোষ্ঠ থেকে গরম বায়ু তৈরি করা যেতে পারে।
- থাইল্যান্ডে, ফানুস সাধারণত প্রচলিত বাঁশের ফ্রেম ও তৈলাক্ত রাইস পেপার থেকে তৈরি করা হয়। এগুলো অন্যান্য হালকা কাগজ থেকেও তৈরি হতে পারে। গরম বায়ুর উৎস হিসেবে একটি ছোট মোমবাতি বা মোমের মতো দাহ্য প্রকোষ্ঠ ব্যবহার করা যায়, যা প্রায়শই বাতাসের প্রবাহের মধ্যেও জ্বলতে থাকে। থাই ভাষায় এর নাম খোম লোই। তবে এশিয়ার অনেক এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ও গবাদি পশুর নিরাপত্তার কারণে ফানুস উড়ানোর অনুমতি দেয়া হয় না।
- ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং সম্ভবত ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলোতেও কয়েকটি উজ্জ্বল রঙিন পাতলা ঈষদচ্ছ কাগজকে (স্থানীয়ভাবে "সিল্ক পেপার" নামে পরিচিত) আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে বহুতলক খোল তৈরি করে ফানুস তৈরি করা হয়। প্রচলিত একটি নকশা হচ্ছে একটি ভিত্তি আকারের দুইপাশে দুটি পিরামিডাকার খোল (একটি দ্বিপিরামিড, যেমন অষ্টতলক)। মাঝে মাঝে মাঝখানে একটি ঘনক বা প্রিজমও থাকতে পারে। শুধুমাত্র ছোট মডেলগুলোর সম্পূর্ণ ফ্রেম বাঁশ বা পাতলা তারের তৈরি হয়। গরম বায়ুর ফলে চাপের সামান্য আধিক্যের কারণে বড় আকারের ফানুসগুলো ফোলানো থাকতে পারে। নিচে খোলা অংশে তারের লুপের কাছে ফ্রেমটি ছোট হয়ে আসে। মোমবাতিটি সাধারণত প্যারাফিন বা রজনের একটি প্যাকেটকে শক্তভাবে কাপড় দিয়ে ঢেকে তার দিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি করা হয়।
ইতিহাস
সিনোলজিস্ট ও বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ জোসেফ নিধামের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে চীনারা যুদ্ধের সময় সংকেত প্রদানের লক্ষ্যে ছোট ছোট উষ্ণ বায়ু বেলুন নিয়ে পরীক্ষা করেছিল । তবে ঐতিহাসিকভাবে, তাদের এই উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেয়া হয় ঋষি এবং সামরিক কৌশলবিদ ঝুঝ লিয়াং (১৮১-২৩৪ খ্রি) কে,[3] যাকে শ্রদ্ধাস্বরূপ কংমিং নামে ডাকা হত। জনশ্রুতি আছে যে, শত্রু সৈন্যরা যখন তাকে ঘিরে ফেলেছিল, তখন তিনি ফানুসের গায়ে বার্তা লিখে সাহায্যের তলব করেছিলেন। এই কারণে, চীনে এগুলো এখনও কংমিং লণ্ঠন নামে পরিচিত (孔明燈, 孔明灯, কংমিং দেং)। এই নামটির আরেকটি প্রস্তাবিত উৎস হল এই ফানুসের সাথে কংমিং এর পরিধানকৃত টুপির সাথে মিল থাকায় এর নাম কংমিং লন্ঠন বলা হয়।
বিগত কয়েকটি ইউএফও দেখার ঘটনা ফানুসের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।[7][8]
উৎসব ব্যবহার
চীন
প্রাচীন চীনে, যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশলে ঘুড়ির মত ফানুস ব্যবহার করা হত, যেমন সামরিক যোগাযোগ (গোপন বার্তা প্রেরণ), সংকেত, নজরদারি বা গুপ্তচরবৃত্তি, শহর অবরোধের সময় রাতে আকাশকে আলোকিত করা ইত্যাদি। তবে পরবর্তীতে, শিশুদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় বিভিন্ন উৎসবে ফানুসের ব্যবহার শুরু হয়। এই ফানুসগুলি চীনা মধ্য-শরৎ উৎসব এবং লন্ঠন উৎসবে ব্যবহার করা হত।
ভারত
বড়দিনে স্টার অফ বেথলেহেমের প্রতীক হিসেবে, আকাশে ফানুস ওড়ানো হয় যা নতুন বছরের প্রত্যাশা নিয়ে আসে। বাংলা ও উত্তর-পূর্ব ভারতে, বৌদ্ধগণ ফানুস উড়িয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন করে যা তাদের তিন মাস ব্যাপী ব্রতের সমাপ্তি নির্দেশ করে। এটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। দীপাবলি উৎসবে আতশবাজির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ফানুস ব্যবহৃত হয়। এটি অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে ধর্মের নতুন (আলোকিত) পথের সূচনার অনুষ্ঠান।
পর্তুগাল এবং ব্রাজিল
ব্রাজিলে, জুনের শেষদিকে উদযাপিত শীতকালীন উৎসবে (Festas Juninas) ফানুস (পর্তুগীজ ভাষায় balão) একটি ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য ছিল। দাবি করা হয় যে, এই প্রথাটি ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগাল থেকে ঔপনিবেশিকদের দ্বারা ব্রাজিলে এসেছিল, এবং এখনও পর্তুগালে, বিশেষ করে পোর্টোতে এই প্রথাটি খুবই প্রচলিত। জুনের উৎসবের অন্যান্য ঐতিহ্যগত বিষয়গুলো হচ্ছে পটকাবাজি এবং আতশবাজি; তাই ধারণা করা হয় যে এই উপাদানগুলি ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ অভিযাত্রীদের দ্বারা চীন থেকে এসেছিল। ব্রাজিলীয় ফানুসের নকশা ও রীতিগুলো তাদের উৎসব অনুসারে পরিবর্তিত হয়েছে।
বার্টোলোমু ডে গুসমাও ছিলেন উষ্ণ বায়ু বেলুনে উড়ে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি। তিনি মাল্টগোলফিয়ার ভাতৃদ্বয়েরও দীর্ঘকাল আগে, ৮ আগস্ট ১৭০৯ সালে, একটি বড় আকারের ফানুস ব্যবহার করে পর্তুগালের লিসবনে কাসা দ্য ইন্ডিয়ার এর হল ঘরে উড়েছিলেন।
ব্রাজিলিয়ান ফানুস সাধারণত শিশু-কিশোরগণ ছোট ছোট দল গঠন করে তৈরি করে; তবে প্রাপ্তবয়স্করাও কখনও কখনও তাদের সাথে যোগ দেয়, বিশেষত বড় এবং বিস্তৃত বেলুনগুলির জন্য। একটি এক বা দুই মিটার আকারের বড় ফানুস ওড়াতে একাধিক মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। ২০ মিটার বা তার চেয়ে বড় ফানুসে প্রায়ই আতশবাজি এবং বড় পতাকা যুক্ত থাকে।
১৯৯৮ সাল থেকে ব্রাজিলে ফানুস ওড়ানো একটি পরিবেশগত অপরাধ, যাতে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।[9]
তাইওয়ান
তাইওয়ানের নিউ তাইপেই সিটির পিংজি জেলায় একটি বার্ষিক ফানুস উৎসব পালন করা হয়। এতে লোকেরা ফানুসের গায়ে তাদের মনের ইচ্ছা ও শুভেচ্ছা লিখে ঈশ্বরকে বার্তা পাঠায়। ফানুস উৎসবটি চান্দ্র নববর্ষের ১৫তম দিন হিসাবে পরিচিত, যা চান্দ্র নববর্ষ উদ্যাপনের শেষ দিন।
থাইল্যান্ড
উত্তর থাইল্যান্ডের লান না সম্প্রদায়ের মানুষ সারা বছর ধরেই উৎসব এবং অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে "ফানুস"(โคมลอย, খোম লোই ) ব্যবহার করেন । ফানুস সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হচ্ছে ইয়ি পেং উৎসব (ยี่เป็ง,ইয়ি পেং), যা লান না বছরের দ্বিতীয় মাসের পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয় (এটি থাই চান্দ্র বছরের ১২তম মাসের ঐতিহ্যবাহী উৎসব লোই ক্রাথং এর সাথে মিলে যায়)। ইয়ি পেং উত্সবের সময়, আকাশে প্রচুর পরিমাণে ফানুস উড়ানো হয়, যা আকাশে ভাসমান বিশাল আকারের জ্যোতির্ময় জেলিফিশের পালের মত মনে হয়। [10] প্রাচীন লান না রাজ্যের রাজধানী চিয়াং মাই এ, ইয়ি পেং উৎসবের সবচেয়ে বড় উদ্যাপন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মে এই উৎসবটি পুণ্যলাভের (ทำบุญ, থাম বান ) সময় হিসাবে মনে করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে, থাই জনগণের মধ্যে ফানুস এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে সারা দেশের মানুষ এই উৎসবে একত্রিত হয়ে থাকেন।
এছাড়াও, এই উৎসবে মানুষ তাদের ঘর, বাগান এবং মন্দিরকে বিভিন্ন জটিল আকারের কাগজ লণ্ঠন (โคมไฟ, খোম ফেই ) দিয়ে সাজায়। তাদের সমাজে ফানুস উড়ানোকে সৌভাগ্য বলে মনে করা হয়, এবং অনেক থাই নাগরিক বিশ্বাস করেন যে এগুলো তাদের সমস্যা এবং উদ্বেগকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবার প্রতীকস্বরূপ।
বিপদসমূহ
ফানুস জ্বলন্ত অবস্থায় মাটিতে পড়লে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। [11] ভাসমান অবস্থায়, প্রচলিত নকশার ফানুস যতক্ষণ সোজা থাকে ততক্ষণ চারপাশের কাগজে আগুন লাগার সম্ভাবনা কম। তবে ফানুসটি হেলে পড়লে (বায়ুপ্রবাহ অথবা কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগার ফলে), এটিতে বাতাসে ভাসমান অবস্থাতেই আগুন লেগে যেতে পারে। চারপাশের কাগজের খোলটি কয়েক সেকেন্ডেই পুড়ে যায়, তবে আগুনের শিখা মাটিতে না পড়া পর্যন্ত জ্বলতে পারে।
ফানুস মাটিতে পড়ার পর, অবশিষ্ট পাতলা তারের ফ্রেম খুব ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়, যা বন্য প্রাণীরা গিলে ফেললে তা বিপদের কারণ হতে পারে। [12] ২০০৯ সালে ব্রিটেনের স্কাই অর্বস চীনা লন্ঠন কোম্পানি ধাতু তারের জায়গায় জৈব-পচনশীল অগ্নিরোধক দড়ি দিয়ে ফানুস তৈরি করেছিল। [13] অন্যান্য ইউরোপীয় নির্মাতারাও এই নকশা গ্রহণ করেন। ফানুস থেকে অগ্নিকান্ডের কয়েকটি ঘটনার পরে ২০১২ সালে স্কাই অর্বস অগ্নিরোধক বেসযুক্ত ফানুসের একটি পেটেন্ট করা ডিজাইন বের করে। [14]
এছাড়াও ফানুস বিমানচালনার সময় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। [15]
২০১৩ সালের ১লা জুলাই ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে সেখানকার ' সবথেকে বড় অগ্নিকান্ডে ' ১০০,০০০ টন পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান পুড়ে যায় এবং আনুমানিক ছয় মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। স্মেথউইকের একটি প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং প্লান্টে জ্বলন্ত ফানুস এসে পড়ায় এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফানুসের কারণে আগুন লাগার ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। [16][17] এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, পাউন্ডল্যান্ড ফানুস বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০১৩ সালের ৬ই জুলাই তাদের সমস্ত মজুদ সরিয়ে নেয়। [18]
২০১৮ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরের কাছে রিওসেন্ট্রো কনভেনশন সেন্টারের একটি প্যাভিলিয়নের ছাদে জ্বলন্ত ফানুস এসে পড়ায় প্যাভিলিয়নটি সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়। [19]
আইনি অবস্থা
শতাব্দীকাল ধরে ফানুসের ব্যবহার সত্ত্বেও, এগুলো ফসল বা বাড়িঘরে আগুন লাগা এবং পশুদের ক্ষতির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, কারণ মনে করা হয় যে জন্তুরা ফানুসের পোড়া অবশিষ্টাংশ খেয়ে ফেলতে পারে। এসব কারণে অনেক এলাকায় ফানুসের যথেষ্ট প্রচলন না থাকলেও সেখানে এগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [20]
২০২২ সালের থার্টি-ফাস্ট নাইটে উড়ানো ফানুসের কারণে ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে আগুন লাগে। তাই শুধুমাত্র প্রবারণা পূর্ণিমা ছাড়া অন্য কোনো সময়ে ফানুস উড়ানো বাংলাদেশে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। [21]
চীন ও সানিয়া শহরে বিমান চালনা ও আকাশসীমা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ফানুস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [22]
জার্মানির বেশিরভাগ অংশে ফানুস উড়ানো বেআইনি। তবে হারফোর্ড শহরের মত যেসব স্থানে এগুলো অবৈধ নয়, সেখানেও ফানুস উড়াতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের থেকে অগ্রিম অনুমতি গ্রহণ করতে হয়। অস্ট্রিয়ায় ফানুস উৎপাদন, বিক্রয়, আমদানি বা বিতরণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। [23] আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, স্পেন এবং ভিয়েতনামেও ফানুস উড়ানো অবৈধ। ১৯৯৮ সাল থেকে ব্রাজিলে ফানুস উড়ানো একটি পরিবেশগত অপরাধ, যার ফলে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। [15]
২০১১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ায় উন্মুক্ত শিখাযুক্ত ফানুস খুচরা বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে (কিন্তু সাথে রাখা ও ব্যবহার অবৈধ নয়)। [24]
২০১৩ সালের ২০শে জুন ওয়াশিংটনের কিটিটাস কাউন্টিতে ফানুস নিষিদ্ধ করা হয় [25] এরপর, সমগ্র ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে ফানুস নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হাই পিক জেলার লেবার এমপি রুথ জর্জ ২০১৯ সালের ২৭শে মার্চ যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে ফানুস নিষিদ্ধ করার আহবান জানিয়ে একটি টেন মিনিট রুল বিল উত্থাপন করেন। বিলটি এর প্রথম পাঠে পাস করা হয়। [26]
গ্যালারি
আরো দেখুন
- বেলুন বাহিত হালকা প্রভাব
- ফায়ার বেলুন
- উষ্ণ বায়ু বেলুন
- লণ্ঠন
- অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু
তথ্যসূত্র
- "Sky lanterns"। web.archive.org। ২০১২-০৮-২৯। Archived from the original on ২০১২-০৮-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৯।
- টেলিভিশন, Ekushey TV | একুশে। "বৌদ্ধ প্রবারণা সম্প্রীতি উৎসব"। Ekushey TV (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৭।
- Yinke Deng (2005). 中国古代发明 (Ancient Chinese Inventions). 五洲传播出版社. ISBN 7508508378.
- "ফানুস উত্তোলন কেন?"। bibartanonline.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৯।
- প্রতিবেদক, নিজস্ব। "চট্টগ্রামে ফানুস উড়িয়ে প্রবারণা উৎসব উদ্যাপন"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১০।
- amadernotunshomoy.com (২০১৮-০৯-২৫)। "ফানুস উত্তোলন কী এবং কেন"। Amadernotun Shomoy। ২০২১-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৯।
- Speigel, Lee (4 April 2011). "Chicago UFO Mystery Solved: They Were Sky Lanterns in Honor of Child Abuse Victims". AOL News. Archived from the original on 20 January 2013. Retrieved 24 February 2013.
- Scribbens, Nicola (11 June 2009). "Readers say Burnham-On-Sea UFO was probably a Chinese lantern" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে. Burnham-On-Sea.com. Retrieved 2 February 2013.
- "Fabricar, vender ou soltar balões que possam provocar incêndio é crime — Especial Cidadania - Jornal do Senado"। www12.senado.leg.br (পর্তুগিজ ভাষায়)। ২০১৮-০১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৩।
- "Lantern Festival of the Yee Peng Month". Welcome to Chiangmai and Chiangrai magazine. 3 December 2012. Archived from the original on 28 February 2013. Retrieved 24 February 2013.
- Gancia, Barbara (6 August 2004). "Inconseqüência sazonal vitima mais um" (in Portuguese). Folha de São Paulo (online). Retrieved 2 February 2013.
Firefighters have been striving for five days to put out a criminal fire in the Guarulhos region. This time it was a tire recycling company; but it could have happened to my home, or to yours, dear reader.
- Hickman, Leo (31 July 2009). "What's the environmental impact of a sky lantern?". The Guardian. Retrieved 24 February 2013.
- "Sky's The Limit For Eco Friendly Chinese Lanterns" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুলাই ২০১১ তারিখে. Manchester Evening News. 15 June 2011. Retrieved 24 February 2013.
- "Sky Orbs wins £100k Russian order" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ অক্টোবর ২০১২ তারিখে. Manchester Evening News. 28 September 2012. Retrieved 24 February 2013.
- "Balão cai no aeroporto de Cumbica; Infraero faz campanha de prevenção" (in Portuguese). Folha de São Paulo (online). 14 May 2008. Retrieved 24 February 2013.
Only last year the state-owned company recorded at the Guarulhos [=Cumbica] airport 104 incident. In 2008 [...] there were already 17 incidents.
- http://www.itv.com/news/story/2013-07-01/major-blaze-at-recycling-plant-smethwick-west-midlands
- https://www.bbc.co.uk/news/uk-england-birmingham-23123549
- "Poundland Stops Selling Chinese Lanterns After Massive Fire In Smethwick". Huffington Post. 2013-07-06. Retrieved 2013-07-06.
- https://www.theguardian.com/world/2018/aug/01/fields-medal-award-stolen-brazil-maths-prize
- "Chinese lanterns pose danger to livestock, NFU says". BBC News. 1 February 2010. Retrieved 8 September 2010.
- "যে কারণে ঢাকায় ফানুস ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৮।
- Romana, Chito (27 March 2009). "Why Did China Ban Traditional Flying Lanterns? - World View". Blogs.abcnews.com. ABC News. Archived from the original on 30 March 2009. Retrieved 24 February 2013.
- "BUNDESGESETZBLATT FÜR DIE REPUBLIK ÖSTERREICH" (PDF) (in German). 9 December 2009. Retrieved 24 February 2013.
- "Sky lanterns". Australian Competition and Consumer Commission. 2012. Archived from the original ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে on 1 January 2012. Retrieved 1 January 2012.
- "Fire danger prompts ban of sky lanterns". 20 June 2013. Retrieved 12 July 2013.
- Cook, Allen (২৭ মার্চ ২০১৯)। "Move to ban sky lanterns after devastating fires"। BBC।
বহিঃসংযোগ
- কীভাবে চীনা ফানুস তৈরি করা যায়
- Chen, Melody (২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "Pingsi Festival Sends Lanterns Toward Heaven"। Taipei Times। পৃষ্ঠা 2। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮।