ফাদাক বিজয়
ফাদাক বিজয় (ফিদাক[1][2][3] বা ফিদক হিসেবেও পরিচিত) ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এবং হিজরী ৭ম সনের দ্বিতীয় মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।[4][5]
মুহাম্মাদ জানতে পারেন যে, ফাদাকের লোকেরা খাইবারের ইহুদীদের পাশাপাশি মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জমায়েত হচ্ছে। অতপরঃ তিনি আলীকে তাদের কাছে প্রেরণ করেন।
ফাদাকের লোকেরা বিনা লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের অর্ধেক জমি ও সম্পদ মুহাম্মাদকে দেওয়ার পরিবর্তে একটি শান্তিচুক্তির আবেদন জানায়।[6]
ফাদাক মুহাম্মাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি (আ’ফাই) হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ ফাদাক যুদ্ধের অর্জিত সম্পদে ভাগীদার কোনও মুসলিম যোদ্ধা ছিল না। মুহাম্মাদ এই সম্পদ এতিমদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন এবং অভাবী যুবকদের বিয়ের জন্য অর্থের সংস্থান করেছিলেন।[7][8][9]
ফাদাকের বিজয়
খাইবারের ইহুদিদের সাথে দর কষাকষির সময় মুহাম্মাদ, মাহাদিয়া বিন মাসউদকে ফাদাকের ইহুদীদের কাছে একটি বার্তাসহ প্রেরণ করেন এবং বলেন তারা যেন তাদের সয়-সম্পত্তি ও ধন সম্পদ (তাঁর শর্তাদি মেনে নিয়ে) সমর্পণ করে অন্যথায় আক্রমণ মোকাবেলা করে।[8]
খাইবারের ইহুদিদের কি দশা হয়েছিল তা শুনে ফাদাকের লোকেরা[10] আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাদের জীবন রক্ষার জন্য তাই তারা একটি শান্তিচুক্তির আর্জি জানাল এবং এর বিনিময়ে মুহাম্মাদকে তাদের সহায়-সম্পত্তির অর্ধেক অংশ নিয়ে তাদেরকে রেহাই দেবার অনুরোধ করল।[8][9]
খাইবারের ইহুদিরা মুহাম্মাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার পরে তাদের জীবিকার একমাত্র উৎসটি হারায়। তখন তারা ঐ সম্পত্তিতে উৎপাদিত অর্ধেক ফসলের বিনিময়ে তাদেরকে আবার কাজে নিয়োগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। মুহাম্মাদ লক্ষ্য করলেন যে, ভূমির নতুন দখলদার মুসলিমদের কৃষি এবং চাষাবাদ সর্ম্পকে প্রায় কোন অভিজ্ঞতাই নেই অন্যদিকে ইহুদিরা তাদের জমির বিষয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তাই তাদের পুনঃনিয়োগ দেয়াটাই অনেক বেশি সুবিধাজনক। তিনি খাইবারের ইহুদীদের সাথে একটি সমঝোতায় আসলেন এই শর্তে যে, তার এই অধিকার থাকবে যে, তিনি চাইলে যে কোন সময় তাদেরকে বরখাস্ত করতে পারবেন। ইহুদিদের একমত হওয়া ছাড়া আর তেমন কোন উপায় ছিল না। এই শর্তগুলোই ফাদাক ইহুদিদের ক্ষেত্রেও আরোপ করা হয়েছিল।[11]
ফাদাক মুহাম্মাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি (আ'ফাই) হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ ফাদাক যুদ্ধের অর্জিত সম্পদে ভাগীদার কোনও মুসলিম যোদ্ধা ছিল না।[11] মুহাম্মাদ এই সম্পদ এতিমদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন এবং অভাবী যুবকদের বিয়ের জন্য অর্থের সংস্থানও করেছিলেন।[12]
কুরআনের সূরা আল-হাশরের ৬ষ্ঠ এবং ৭ম আয়াতের এই ঘটনার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।[13][14]
উমর কর্তৃক বহিষ্কার
পরে, উমর যখন ইসলামের খলিফা হন, তখন তিনি খাইবার ও ফাদাক থেকে সমস্ত ইহুদীকে বহিষ্কার করেন। তিনি আবুল হাইসাম মালিক ইবনে আল তাইয়িহানকে তাদের মালিকানাধীন জমির ন্যায্য মূল্য (জমির অর্ধেক মালিকানা) নির্ধারণ করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন এবং জমির অর্ধেক মূল্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।[15]
ইসলামিক প্রাথমিক সূত্র
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-হাশরের ৬ষ্ঠ এবং ৭ম আয়াতের এই ঘটনার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মুহাম্মাদীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি (ফাই) সম্পর্কে বিধি রয়েছে:[13][14]
“ | আল্লাহ তা’আলা যে সব সম্পদ তাদের দখলমুক্ত করে তাঁর রসুলের কাছ ফিরিয়ে দিয়েছেন তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগনকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। [কুরআন ৫৯:৬] | ” |
“ | আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসুলের, তাঁর আত্মীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। রসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [কুরআন ৫৯:৭] | ” |
বিখ্যাত মুসলিম আলেম ইবনে কাসীরের আয়াতটির ব্যাখা (তাফসীর) নিম্নরূপ:
“ |
(আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন) এর অর্থ হলো, যে সব গ্রাম ও এলাকা থেকে যুদ্ধের কারনে অর্জিত সম্পদ নেয়া হয়েছিল, সেগুলো নেয়া হয়েছিল এর আগে ইহুদী গোত্র আন-নাদির যুদ্ধে বিজয়ী এলাকা থেকে যে রীতিতে সম্পদ সংগ্রহ করেছিল তার উপর ভিত্তি করে। এই জন্য মহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেন, (তা আল্লাহর, রসুলের, তাঁর আত্মীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে) এই আয়াত এবং তার পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে কীভাবে এরূপ ধন সম্পদ (ফাই) বন্টন হবে। ইমাম আহমাদ(রাঃ) লিপিভু্ক্ত করেছেন যে, উমর বলেছিলেন, “ আন-নাদির গোত্রের ধন সম্পদ অর্জিত ফাই শ্রেনীভুক্ত যা আল্লাহ তার রসুল(সাঃ) কে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এবং এর জন্য মুসলমানদের ঘোড়ায় চড়ে বা উটের পিঠে উঠে যুদ্ধ করতে হয় নি। তিনি তার পরিবারের এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় অংশ রেখে বাকী অংশ মহিমান্বিত ও সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী আল্লাহর পথে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন বর্ম এবং অস্ত্রশস্ত্র কিনতে ব্যবহার করেছিলেন। ইমাম আহমাদ (রাঃ) ঘটনার সংক্ষিপ্ত সার নিয়েছেন।[তাফসীর ইবনে কাসির ৫৯:৭][16] |
” |
ঘটনাটি সুন্নী হাদিস সংকলনে সহীহ মুসলিম হাদীসেও উল্লেখকরা হয়েছে:
“ |
হযরত উমর(রাঃ) এর অন্যতম প্রধান একটি যুক্তি ছিল যে, আল্লাহর রসুল(সাঃ) তিনটি জিনিস একক ভাবে প্রাপ্ত হয়েছিলেনঃ আন-নাদির গোত্র, কাহাইবার এবং ফাদাক। আন-নাদির গোত্র থেকে পাওয়া সম্পত্তি পুরোটা তার জরুরী প্রয়োজনের জন্য, ফাদাক ভ্রমণকারীদের জন্য এবং কাহাইবার রসুল(সাঃ) ভাগ করেছিলেন তিন ভাগেঃ দুই ভাগ মুসলমানদের জন্য এবং এক ভাগ তাঁর পরিবারের দান হিসেবে। তাঁর পরিবারে দান করবার পর যদি কিছু থেকে থাকে তা তিনি ভাগ করে দিয়েছেন দরিদ্র অভিবাসীদের মধ্যে। সহীহ মুসলিম, ১৯:২০৬১ (ইংরেজি) |
” |
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- গাটজে, হেলমুট (১৯৯৬)। দ্য কুর’আন এন্ড ইটস একজেসিস। ওয়ান ওয়ার্ল্ড পাবলিকেশনস। পৃষ্ঠা ৮১। আইএসবিএন 978-1-85168-118-1।
- বার্নার্ডস, মনিক (১৫ অক্টোবর ২০০৫)। প্যাট্রনাট এন্ড প্যাট্রনাজ ইন আরলি এন্ড ক্ল্যাসিকাল ইসলাম। ব্রিল। পৃষ্ঠা ৬১। আইএসবিএন 978-90-04-14480-4।
- আবু খলিল, শওকী (১ মার্চ ২০০৪)। এ্যাটলাস অব দি প্রফেটস বায়োগ্রাফিঃ প্লেসেস, ন্যাশনস, ল্যান্ডমার্কস। দার-উস-সালাম। পৃষ্ঠা ১৮০। আইএসবিএন 978-9960-897-71-4।
- আবু খলিল, শওকী (১ মার্চ ২০০৪)। এ্যাটলাস অব দি প্রফেটস বায়োগ্রাফিঃ প্লেসেস, ন্যাশনস, ল্যান্ডমার্কস। দার-উস-সালাম। পৃষ্ঠা ১৮০। আইএসবিএন 978-9960-897-71-4।
- হাওয়ারে, Mosab (২০১০)। দ্য জার্নি অব প্রোফেসি; ডেজ অব পিস এন্ড ওয়ার (এরাবিক)। ইসলামিক বুক ট্রাষ্ট্র। ২০১২-০৩-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৬-১৪।
- "হয়েন দি মুন স্পিল্ট"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- "অ্যাটলাস আল-স্যারাহ আল-নবা'ওয়িয়াহ"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- "দ্য লাইফ অব মুহাম্মদ"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- "দি অরিজিন অব দি ইসলামিক ষ্টেট"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- "এনসাইক্লোপিডিয়া অব হোলি প্রফেট এন্ড কম্প্যানিয়ন (সেট অব ১৫ ভলিউম।)"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ""দ্য রেস্ট অব খাইবার অলসো ফেল টু দি মুসলিমস। আল্লাহ কাষ্ট ফিয়ার ইন টু দি হার্টস।", Witness-Pioneer.com"। ২০১১-০৫-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৪-১০।
- "অ্যাটলাস আল-স্যারাহ আল-নবা'ওয়িয়াহ"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- "ফাতিমা দি গ্রেসিয়াস"। Al-Islam.org। ৭ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- "Tafsir ibn Abbas on Quran 59:6"। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০২০।
- "দি অরিজিন অব দ্য ইসলামিক স্টেষ্ট"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।
- তাফসীর ইবনে কাসির (সংক্ষিপ্ত), পৃষ্ঠা ৫৫৪, ইবনে কাসির, সফিউর রহমান আল মুবারকপুরী অনুবাদ করেছেন, আরও দেখুন তাফসির ইবনে কাসির ৫৯:.৭, পাঠ্য সংস্করণ