ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশ

ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশ (তিব্বতি: ཕག་མོ་གྲུ་པ་, ওয়াইলি: Phag-mo gru-pa) চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগ হতে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত মধ্য তিব্বত শাসনকারী একটি রাজবংশ। এই রাজবংশ তিব্বতে ইউয়ান সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতাশালী সা-স্ক্যা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রভাবকে অপসারিত করে নতুন শক্তি হিসেবে উঠে আসে এবং প্রায় সাড়ে তিনশত বছর ধরে মধ্য তিব্বতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করে।

রাজবংশ প্রতিষ্ঠা

ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শানইউয়ান সাম্রাজ্যের শেষ সময়েও তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শানের সঙ্গে ইউয়ান সম্রাটরা কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকারে সম্পর্ক রক্ষা করতেন।[1]:৪২ কিন্তু তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শানের উদ্দেশ্য ছিল ট্যাং রাজবংশের আমলে তিব্বত সাম্রাজ্যের অতীত গৌরব ফিরিয়ে এনে তিব্বতীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব সৃষ্টি করা এবং তিব্বতে মঙ্গোল শাসনের অবসান ঘটানো।[2]:২৬২ তিনি তিব্বত সাম্রাজ্যের মহান সম্রাট স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থার নীতি গ্রহণ করেন।[3]:৫০৪ তিনি ইউয়ান সাম্রাজ্যের দ্বারা প্রচলিত তিব্বতের তেরোটি প্রশাসনিক বিভাগকে বাতিল করে মধ্য তিব্বতকে বিভিন্ন র্দ্জোং (ওয়াইলি: rdzong) বা জেলায় বিভক্ত করেন।[3]:৫০৪র্দ্জোং-দ্পোন (ওয়াইলি: rdzong dpon) জেলার প্রধানদের প্রাচীন তিব্বত সাম্রাজ্যের সময়ের রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান পালন করতে হত এবং প্রাচীন পোশাক রীতি মেনে চলতে হত।[3]:৫০৪ তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শান দ্বারা প্রচলিত আইন ব্যবস্থা বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত তিব্বতে প্রচলিত ছিল।[4]:

পরবর্তী পঞ্চাশ বছর

১৩৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তা'ই-সি-তু-ব্যাং-ছুব-র্গ্যাল-ম্ত্শানের মৃত্যু হলে তার ভ্রাতা ব্সোদ-নাম্স-ব্জাং-পোর (ওয়াইলি: bsod nams bzang po) পুত্র 'জাম-দ্ব্যাংস-শা-ক্যা-র্গ্যাল-ম্ত্শান মধ্য তিব্বতের পরবর্তী রাজা হন। তিনি যখন সিংহাসনে বসেন তখন মঙ্গোল ইউয়ান সাম্রাজ্য এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে, যে তিব্বতের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব ছিল না বললেই চলে। ১৩৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউয়ান সম্রাট তোঘোন তেমুর তাকে গুশি উপাধি এবং নেদোং অঞ্চলের শাসনভার দান করেন। ১৩৬৮ খ্রিষ্টাব্দে মিং রাজবংশ চীন অধিকার করলে হেঝৌ অঞ্চলের সেনাপতির উপদেশে মিং সম্রাট তাকে পুনরায় উপাধি প্রদান করে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন।[n 1][6] এরফলে 'জাম-দ্ব্যাংস-শা-ক্যা-র্গ্যাল-ম্ত্শান চীনের হস্তক্ষেপ ব্যতীত নিজের পৃথক শাসনব্যবস্থার অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হন।[7]:৪৮,৪৯ তার শাসনকাল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল। শুধু একবার তাকে যুদ্ধযাত্রায় যেতে হয় এবং তাতে তিনি বিজয়ী হন। ১৩৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু হলে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শা-ক্যা-রিন-ছেন পরবর্তী রাজা হন।[8]:১০১ কিন্তু বেশিদিন তিনি রাজত্ব করে যেতে পারেননি। একটি দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে 'জাম-দ্ব্যাংস-শা-ক্যা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের ভ্রাতা রিন-ছেন-র্দো-র্জের (ওয়াইলি: rin chen rdo rje) পুত্র[9]:২১৩ গ্রাগ্স-পা-ব্যাং-ছুব ১৩৭৪ খ্রিষ্টাব্দে পরবর্তী রাজা হন কিন্তু ১৩৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্দান-সা-থেল বৌদ্ধবিহারে তন্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষাদান করবেন বলে তার রাজত্ব থেকে অবসর নেন।[8]:১০১ তার রাজত্বকাল হ্রস্ব হওয়ার কারণে মিং রাজবংশ তাকে কখনোই আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেননি।[5]:৬৯২ এরপর গ্রাগ্স-পা-ব্যাং-ছুবের ভ্রাতা ব্সোদ-নাম্স-গ্রাগ্স-পা (১৩৫৯- ১৪০৮) মাত্র চার বছরের জন্য রাজত্ব করেন। মিং সম্রাট হোংঊ তাকে গুশি উপাধি দান করেন।[5]:৬৯২ কিন্তু ১৩৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অপর এক পরিবারগোষ্ঠী ব্সোদ-নাম্স-গ্রাগ্স-পাকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করলে[8]:১০৩,১০৪ তিনি এই গোষ্ঠীর চাপে মিং সম্রাট হোংঊকে পত্র মারফত শা-ক্যা-রিন-ছেনের পুত্র গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানকে পরবর্তী রাজা হিসেবে ঘোষণা করতে অনুরোধ করেন। মিং সম্রাট এই অনুরোধ রাখলে তিনি গ্দান-সা-থেল বৌদ্ধবিহারে চলে যান এবং সেখানে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।[10] গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের রাজত্বকালে তিব্বতে সমৃদ্ধি আসে।[11] ঐ বংশের পূর্ববর্তী রাজারা যেরকম স্দে-স্রিদ উপাধি ধারণ করতেন, তিনি গোং-মা উপাধি ধারণ করেন।[12]:৮৫,৮৬ ১৩৮৮ খ্রিষ্টাব্দে হোংঊ তাকে গুশি উপাধি দান করেন এবং দুই রাজবংশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের রাজত্বকালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান প্রদানও বৃদ্ধি পায়। বিখ্যাত তিব্বতী বৌদ্ধ পণ্ডিত ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার অনুদানেই ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা ও তার অনুগামীরা দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করতে সক্ষম হন।[13] ১৪০৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা লাসা শহরে ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পাকে লো-গ্সার বা তিব্বতী নববর্ষের দিনে উদ্‌যাপন করার জন্য স্মোন-লাম-ছেন-মো নামক উৎসবের সূচনা করতে সহায়তা করেন।[12]:৮৫,৮৬

রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের সাথে বিরোধ

গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের ভ্রাতা সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শান রিং-স্পুংস-পা নামক গ্ত্সাং অঞ্চলের রিং-স্পুংস এলাকার এক আঞ্চলিক জমিদার পরিবারের দুইজন মহিলাকে বিবাহ করেন এবং তাদের গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাস এবং কুন-দ্গা'-লেগ্স-পা নামক দুই পুত্রের জন্ম হয়। গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের মৃত্যুর পর যখন মন্ত্রীরা পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোয়নের জন্য ঐকমত্য্যে পৌঁছতে পারছিলেন না, রিং-স্পুংস-পা পরিবারের প্রধান নোর-বু-ব্জাং-পো এই সুযোগে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে গ্দান-সা-থেল বৌদ্ধবিহারের প্রধানকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নির্বাচনের উপদেশ দেন। প্রধান লামা গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাসকে নির্বাচন করেন। যদিও সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শানের সিংহাসনের প্রতি নজর ছিল, কিন্তু তিনি প্রধান লামার নির্বাচন মেনে নেন।[8]:১০৪,১০৫দুই বছর পরে ১৪৩৪ খ্রিষ্টাব্দে গ্দান-সা-থেল বৌদ্ধবিহারের প্রধান লামার মৃত্যু ঘটলে সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শান সিংহাসনের দাবী জানাতে শুরু করেন। এরফলে এক বছর ব্যাপী এক গৃহযুদ্ধের সূচনা হয় ও সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শানকে পালিয়ে যেতে হয় এবং নোর-বু-ব্জাং-পো বিজয়ী হিসেবে উঠে আসেন।[8]:১০৪,১০৫ এবং ১৪৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সাম-দ্রুব-ত্সে নামক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল অধিকার করেন। এরফলে রিং-স্পুংস-পা গ্ত্সাং অঞ্চলটি নিজেদের অধিকারে নিয়ে এসে মধ্য তিব্বতের নতুন রাজবংশরূপে উঠে আসে।[12]:৮৬,৮৭ রিং-স্পুংস-পা নতুন শক্তিরূপে উঠে এলেও তারা গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাসকে ক্ষমতাচ্যূত করেননি, কিন্তু ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধিকার শুধু পূর্ব মধ্য তিব্বতের দ্বুস অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাস রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে কয়েকটি নীতিমালার প্রচলন করেন ও জনসাধারণের অত্যধিক ছাং পান করা নিয়ন্ত্রণ করেন।[5]:২৮,২৯[9]:২২০[14]:৩৫৫ ১৪৪৫ খ্রিষ্টাব্দে গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাসের মৃত্যু হলে উপযুক্ত বয়স না হওয়ার কারণে পরের তিন বছর পর কুন-দ্গা'-লেগ্স-পা সিংহাসনে বসেন। তিব্বতী বর্ণনানুসারে, ১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কুন-দ্গা'-লেগ্স-পার পিতা সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শানের মৃত্যু হয়। কিন্তু মিংশি গ্রন্থে কুন-দ্গা'-লেগ্স-পার অভিষেক সম্বন্ধে ভিন্ন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এই গ্রন্থানুসারে, গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাসের মৃত্যুর পর তার পিতা সাঙ্গেরজিয়ে জিয়ানজান বা চাংবু (সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যাল-ম্ত্শান) ১৪৬৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার মৃত্যুর পর মিং সম্রাটের আদেশে সাঙ্গেরজিয়ে জিয়ানজান বা চাংবুর পুত্র গোংগে লিয়েসিবা ঝোংনাই লিংঝান বের চাংবু (কুন-দ্গা'-লেগ্স-পা) সিংহাসনে আরোহণ করেন।[5]:৬৯৩ কুন-দ্গা'-লেগ্স-পা গ্ত্সাং অঞ্চলে ভ্রমণে গেলে রিং-স্পুংস-পা প্রধান নোর-বু-ব্জাং-পো তাকে স্বাগত জানালেও কুন-দ্গা'-লেগ্স-পা তার প্রতি ব্যবহারে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি রিং-স্পুংস-পা বংশের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও তিনি এই বিবাহে সুখী ছিলেন না। নোর-বু-ব্জাং-পোর পৌত্র দোন-য়োদ-র্দো-র্জে লাসা শহরের অদূরে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধিকৃত এলাকায় কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের জন্য বৌদ্ধবিহার স্থাপনের চেষ্টা করলে, দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের বৌদ্ধরা কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের সপ্তম র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা ছোস-গ্রাগ্স-র্গ্যা-ম্ত্শোকে প্রায় হত্যা করেই ফেলেছিলেন। অবশেষে ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে দোন-য়োদ-র্দো-র্জে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধিকৃত বেশ কিছু এলাকা দখল করে নেন এবং পরের বছর আবার আক্রমণ করে ব্যর্থ হন। ঐ বছর রাজ্যের মন্ত্রীরা কুন-দ্গা'-লেগ্স-পাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন[12]:৮৭গ্রাগ্স-পা-'ব্যুং-গ্নাসের পুত্র ঙ্গাগ-গি-দ্বাং-পো পরবর্তী রাজা হন। তার রাজত্বেও রিং-স্পুংস-পার সঙ্গে বিরোধ চলতে থাকে। ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে দোন-য়োদ-র্দো-র্জে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধীনে থাকা র্গ্যাল-র্ত্সে শহর আক্রমণ করেন এবং তিন বছর পর শহরটি অধিকার করে নেন।[12]:৮৮ ১৪৯১ খ্রিষ্টাব্দে ঙ্গাগ-গি-দ্বাং-পোর মৃত্যু হলে রিং-স্পুংস-পার রাজপুরুষ গ্ত্সো-স্ক্যেস-র্দো-র্জে ঙ্গাগ-গি-দ্বাং-পোর একমাত্র পুত্র ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পার নাবালকত্বের সুযোগে রাজ্যের অভিভাবক হয়ে যান।[5]:৬৯৩ ১৪৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দোন-য়োদ-র্দো-র্জের অনুমতিক্রমে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পা ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের পরবর্তী রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসলে গ্ত্সো-স্ক্যেস-র্দো-র্জে অভিভাবকত্ব থেকে সরে আসেন। পাঁচ বছর পরে তিনি সাংগে পাল জোম্মা নামক এক মহিলাকে বিবাহ করেন, যিনি তার স্বামীকে পরবর্তীকালে তার রাজ্যবিস্তারে সহায়তা করে তিব্বতের মহিলা শাসকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন।[14]:৭৬৩ গ্ত্সো-স্ক্যেস-র্দো-র্জেদোন-য়োদ-র্দো-র্জের মৃত্যুর পর রিং-স্পুংস-পার প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে। ১৫১৫ খ্রিষ্টাব্দে রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের অধীনে থাকা গ্যাখার্ত্সে তাদের আনুগত্য পাল্টে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের অধীনে চলে যায়।[9]:২৩১ লাসা থেকে রিং-স্পুংস-পার সৈন্যদল বিতাড়িত হয় এবং কুড়ি বছর পরে দ্গে-লুগ্স সম্প্রদায়ের বৌদ্ধদের লো-গ্সার বা তিব্বতী নববর্ষের দিনে উদ্‌যাপন করার জন্য স্মোন-লাম-ছেন-মো নামক উৎসব পালনের সুযোগ পান।[7]:৮৫[12]:৮৮ এরফলে রিং-স্পুংস-পা রাজবংশের প্রভাব শুধুমাত্র গ্ত্সাং অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

প্রভাব হ্রাস ও পতন

ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্ক্রা-শিস-গ্রাগ্স-পার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। ১৫৫৩ থেকে ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায় এবং লাসা শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলে ক্যিশোদপা নামক এক নতুন শক্তির উদ্ভব ঘটে।[14]:৭৬৭ এই সময় ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের মধ্যে বিভিন্ন পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হলে ১৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় দলাই লামার মধ্যস্থতায় তার পৌত্র ও গোংরি কার্পোর শাসক গ্রো-বা'ই-ম্গোন-পোর পুত্র ঙ্গাগ-দ্বাং-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানকে পরবর্তী উত্তরাধিকার নির্বাচিত করা হয়। ১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তুমেদ মঙ্গোলদের শাসক আলতান খানের পক্ষ থেকে দূত তৃতীয় দলাই লামাকে কোকোনর দর্শনের আমন্ত্রণ জানান। ঙ্গাগ-দ্বাং-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শান এই কাজে সহায়তা করেন এবং তৃতীয় দলাই লামার সাথে তার কিছু প্রতিনিধিকে সঙ্গী করে পাঠান।[12]:৯৩ ঙ্গাগ-দ্বাং-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শান স্বয়ং দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের বিশেষ করে তৃতীয় দলাই লামার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[5]:৬৪১ ঙ্গাগ-দ্বাং-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের মৃত্যুর পর তার পুত্র র্নাম-পার-র্গ্যাল-বা পরবর্তী রাজা হন। তার রাজত্ব সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তার রাজত্বে তৃতীয় দলাই লামাতুমেদ মঙ্গোলদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। পরবর্তী দলাই লামা মঙ্গোলিয়া থেকে নির্বাচিত হলে র্নাম-পার-র্গ্যাল-বা তাকে তিব্বতে আমন্ত্রণ জানান[15]র্নাম-পার-র্গ্যাল-বার জ্যৈষ্ঠ পুত্র মি-ফাম-ব্সোদ-নাম্স-দ্বাং-ফ্যুগ-গ্রাগ্স-পা-র্নাম-র্গ্যাল-দ্পাল-ব্জাং ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে তার আদেশে এক দল প্রতিনিধি মঙ্গোলিয়া থেকে চতুর্থ দলাই লামাকে তিব্বতে নিয়ে আসেন।[16]:১৮৪-১৯৩ দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্কের জন্য তিনি পূর্ব মধ্য তিব্বতের বেশ কিছু অংশ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন।[16]:১৯৩ এই সময় তিব্বতে প্রধান রাজনৈতিক বিবাদ ছিল দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের দুই পৃষ্ঠপোষক মঙ্গোল ও ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের সঙ্গে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক গ্ত্সাং-পা রাজবংশের মধ্যে। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মি-ফাম-ব্সোদ-নাম্স-দ্বাং-ফ্যুগ-গ্রাগ্স-পা-র্নাম-র্গ্যাল-দ্পাল-ব্জাংয়ের সৈন্যদল লাসা উপত্যকায় এক অভিযানে গেলে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের তৎকালীন রাজা ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল এই আক্রমণ প্রতিহত করে তার রাজ্য আক্রমণ করতে শুরু করেন।[16]:১৯৩ ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে ফুন-ত্শোগ্স-র্নাম-র্গ্যাল লাসা শহরের নিকটবর্তী ক্যিশোদ অঞ্চল দখল করে নেন। এরফলে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজ্যের অধিকাংশই গ্ত্সাং-পা রাজবংশের অধীনে চলে যায়।[5]:৫৫,৫৬ ১৬১৮ খ্রিষ্টাব্দে গ্ত্সাং-পা রাজবংশের আক্রমণে লাসা হাতছাড়া হয় এবং ১৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে মি-ফাম-ব্সোদ-নাম্স-দ্বাং-ফ্যুগ-গ্রাগ্স-পা-র্নাম-র্গ্যাল-দ্পাল-ব্জাংকে লাসা থেকে নির্বাসিত করা হয় ও সেই সঙ্গে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের পতন ঘটে।[17]

পাদটীকা

  1. In the beginning of the fifth year Hongwu [1372] the [commander of the] garrison of Hezhou said that in the country of Pamuzhuba [Phagmodrupa] in Ü and Tsang there was a monk who was called Zhangyang Shajia Jiancang [Jamyang Shakya Gyaltsen], to whom in the Yuan's times, had been given the title of Guanding Guoshi, and to whom the barbarians had been entrusted. Now Shangzhu Jiancang [Changchub Gyaltsen, another person than the regent's predecessor], the chief of Dogan [Do Kham], fought against Guan Wuer. If that monk of Pamuzhuba had been sent to persuade him, Dogan would certainly have become a subject of the Chinese Empire. The Emperor accepted this advice, and again appointed that monk Guanding Guoshi, and sent envoys to him to give him the jade seal and coloured silk.[5]:৬৯২

তথ্যসূত্র

  1. Wang, Jiawei and Nyima Gyaincain. (1997). The Historical Status of China's Tibet. Beijing: China Intercontinental Press. আইএসবিএন ৭-৮০১১৩-৩০৪-৮.
  2. Chan, Hok-Lam. (1988). "The Chien-wen, Yung-lo, Hung-shi, and Hsuan-te reigns", in The Cambridge History of China: Volume 7, The Ming Dynasty, 1368–1644, Part 1, 182–384, edited by Denis Twitchett and John K. Fairbank. Cambridge: Cambridge University Press. আইএসবিএন ০-৫২১-২৪৩৩২-৭.
  3. Dreyfus, Georges. (2003). "Cherished memories, cherished communities: proto-nationalism in Tibet", in The History of Tibet: Volume 2, The Medieval Period: c. AD 850–1895, the Development of Buddhist Paramountcy, 492–522, ed. Alex McKay. New York: Routledge. আইএসবিএন ০-৪১৫-৩০৮৪২-৯.
  4. Van Praag, Michael C. van Walt. (1987). The Status of Tibet: History, Rights, and Prospects in International Law. Boulder: Westview Press. আইএসবিএন ০-৮১৩৩-০৩৯৪-X.
  5. Giuseppe Tucci, Tibetan Painted Scrolls. Rome 1949.
  6. Chen, Qingying. (2003). Tibetan History. Beijing: China Intercontinental Press. আইএসবিএন ৭-৫০১০-১৬৬০-৭.
  7. Wang Furen & Suo Wenqing, Highlights of Tibetan History. Beijing 1984.
  8. A. Macdonald, 'Préambule à la lecture d'un Rgya-Bod yig-chan', Journal asiatique 1963.
  9. Giuseppe Tucci, Deb T'er Dmar Po Gsarma. Rome 1971.
  10. Giuseppe Tucci, Deb T'er Dmar Po Gsarma. Rome 1971, p. 214.
  11. Sarat Chandra Das, 'A short history of the House of Phagdu'. Journal of the Asiatic Society of Bengal 1905, p. 205.
  12. Tsepon W.D. Shakabpa, Tibet. A Political History. Yale 1967
  13. Laurent Deshayes, Histoire du Tibet. Paris 1997, p. 120.
  14. Per K. Sorensen & Guntram Hazod, Rulers of the Celestial Plain. Wien 2007.
  15. Tsepon W.D. Shakabpa, One Hundred Thousand Moons. Leiden 2009, p. 307.
  16. David Snellgrove & Hugh Richardson, A Cultural History of Tibet. New York 1968
  17. Günther Schulemann, Geschichte der Dala-Lamas. Leipzig 1958.

আরো পড়ুন

  • Norbu, Dawa (2001) China's Tibet Policy. RoutledgeCurzon 2001.
  • Tsepon W.D. Shakabpa (1981) “The rise of Changchub Gyaltsen and the Phagmo Drupa Period″ in Bulletin of Tibetology, 1981 Gangtok: Namgyal Institute of Tibetology
  • Tsepon W.D. Shakabpa (1967) Tibet: A Political History, Yale University Press, New Haven and London.
  • Ya Hanzhang, Biographies of the Tibetan Spiritual Leaders Panchen Erdenis. Beijing 1994.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.