ফরিদা পারভীন

ফরিদা পারভিন (ডিসেম্বর ৩১, ১৯৫৪) বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী। তিনি মূলত পল্লীগীতি গেয়ে থাকেন বিশেষ করে তিনি লালন সঙ্গীতের জন্য বেশি জনপ্রিয়।[1] জন্ম নাটোরে হলেও বড় হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারে নজরুল সঙ্গীতের জন্য নির্বাচিত হন । নজরুলগীতি দিয়ে শুরু করলেও তিনি পরবর্তীতে দেশাত্মবোধক গেয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ১৯৭৩ সালের দিকে।

ফরিদা পারভীন

জন্ম ও পারিবারিক জীবন

কন্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর জেলার সিংড়া থানার শাঔঁল গ্রামে। শাঔঁল হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সুন্দর একটা গ্রাম কলম-এর অংশ। ফরিদা পারভীনের বাবা প্রয়াত দেলোয়ার হোসেন পেশায় ছিলেন সাধারণ চিকিৎসক। মা রৌফা বেগম। ফরিদা পারভীনের স্বামী প্রখ্যাত গীতিকার ও কন্ঠশিল্পী আবু জাফর। চার সন্তানের মধ্যে এক মেয়ে জিহান ফারিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাশ করেছেন আর তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইমাম নিমেরি উপল ফিলিপাইনের বাগিও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যায়নরত, মেজ ছেলে ইমাম নাহিল সুমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পড়ছেন এবং ছোট ছেলে ইমাম নোমানি রাব্বি কুষ্টিয়া থেকে এসএসসি পাশ করেছে। এর মাঝেই অধ্যাপক আবুজাফরের সাথে তার বিচ্ছেদ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের এক বিখ্যাত বংশীবাদকের সাথে ২বার পাণিগ্রহণ করেছেন।

শিক্ষাজীবন

তার প্রাতিষ্ঠানিক স্কুল জীবন কেটেছে বিভিন্ন শহরে। স্কুল জীবনের সূচনা হয়েছিল মাগুরায়। তিনি কুষ্টিয়া গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল, কুষ্টিয়ার মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় এবং মেহেরপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে অধ্যয়ন করেন। কুষ্টিয়ার মীর মোশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন এবং কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৬-৭৯ সালে অনার্স পাঠ করেন। গানের শিক্ষাজীবনেরও হাতখড়ি মাগুরা জেলায়। মাগুরায় তার গানে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তী। পরবর্তীতে তিনি কুষ্টিয়ার তখনকার গানের ওস্তাদ রবীন্দ্রনাথ রায়, মোতালেব বিশ্বাস এবং ওসমান গণি'র কাছে ক্ল্যাসিক্যাল শেখেন। প্রায় ছয়-সাত বছর তানপুরার সঙ্গে ক্ল্যাসিক্যাল চর্চা করবার পর তিনি নজরুল সঙ্গীত শিখতে শুরু করেন। তার নজরুল সঙ্গীতের প্রথম গুরু হচ্ছেন কুষ্টিয়ার ওস্তাদ আবদুল কাদের। এরপর তিনি মেহেরপুরে মীর মোজাফফর আলী'র কাছেও নজরুল সঙ্গীত শেখেন। স্বরলিপি দিয়ে নজরুলের গান হারমোনিয়ামে ও কন্ঠে তোলার কাজটি তিনি ওস্তাদ মীর মোজাফফর আলী'র কাছেই প্রথম শেখেন। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে লালন সাঁইজির গানের সঙ্গে ফরিদার যোগাযোগ। তখন তিনি কুষ্টিয়াতে থাকতেন। সেখানে তাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন গুরু মোকছেদ আলী সাঁই। ১৯৭৩ সালে ফরিদা তার কাছেই 'সত্য বল সুপথে চল' গান শিক্ষার মাধ্যমে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেন। পরে মোকছেদ আলী সাঁইয়ের মৃত্যুর পর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে লালন সঙ্গীতের শিক্ষা গ্রহণ করেন।

সংগীত জীবন

ফরিদা পারভীনের কর্মজীবন সঙ্গীতময়। শুধু লালনের গান নয়, তিনি একাধারে গেয়েছেন আধুনিক এবং দেশাত্মবোধক গান। ফরিদা পারভীনের গাওয়া আধুনিক, দেশাত্মবোধক কিংবা লালন সাঁইয়ের গান সমান ভাবেই জনপ্রিয়। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে 'এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা-সুরমা নদীর তটে' 'তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম', 'নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে প্রেমের কী সাধ আছে বলো', 'খাঁচার ভিতর', 'বাড়ির কাছে আরশি নগর' ইত্যাদি।[2] তার অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে-

  • ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে অচিন পাখি' নামে একটি লংপ্লে রেকর্ড বের হয়। স্পন্সার করে 'শ্রোতার আসর' বর্তমানে এসিআই কোম্পানি
  • ডন কোম্পানি থেকে 'লালনগীতি'
  • সারগাম থেকে 'লালনের গান'
  • দোয়েল প্রডাক্টস থেকে 'দেশাত্মবোধক/আধুনিক/লালন' মিলে একটা ক্যাসেট
  • আরশিনগর-এর ব্যানারে লালনের গান 'আমারে কি রাখবেন গুরু চরণে'
  • বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে 'সময় গেলে সাধন হবে না'
  • আবুল উলাইয়ার পরিবেশনায় 'আশা পূর্ণ হলো না'
  • 'লাইভ কনসার্ট ইন জাপান' নামে একটা এ্যালবাম বের করছে আবুল উলাইয়া
  • তোমার মতো দয়াল বন্ধু আর পাবো না
  • সমুদ্রের কূলেতে বসে
  • হিট সঙস অব ফরিদা পারভীন : মিলেনিয়াম /বহুদিন হলো ভেংগেছি ঘর
  • লাইভ কনসার্ট ইন ফ্রান্স (বাজারে আসছে)

অর্জন

তিনি ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজ ২০০৮ এ সেরা সঙ্গীতের জন্য পুরষ্কৃত হন। এছাড়া একুশে পদক ১৯৮৭ এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পদকে ছায়াছবির গানে সেরা কন্ঠদানকারী হিসাবে ১৯৯৩ সালে পদক পেয়েছেন।সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসঅনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার পেয়েছেন

তথ্যসূত্র

  1. "১"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.