ফরিদউদ্দিন আহমেদ

শহীদ ফরিদউদ্দিন আহমেদ (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]

ফরিদউদ্দিন আহমেদ
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ ফরিদউদ্দিন আহমেদের জন্ম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাগৈ গ্রামে। তার বাবার নাম আসাদ আলী ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম আমেনা বেগম। তার স্ত্রীর নাম রুপিয়া বেগম। তাদের এক ছেলে।

কর্মজীবন

ফরিদউদ্দিন আহমেদ চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে । ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ছুটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার কিছুদিন পর মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইংয়ে অন্তর্ভুক্ত হন।[2]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের তখন চূড়ান্ত পর্যায়। স্থলে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী দুর্বার বেগে এগিয়ে যাচ্ছে পিছু হটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ধাওয়া করে। জল ও আকাশেও পাকিস্তানিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এ সময় মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইংয়ে সদ্য যোগ হওয়া গানবোট ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ যাত্রা শুরু করে খুলনা অভিমুখে। তাদের লক্ষ্য খুলনার পাকিস্তানি নৌঘাঁটি দখল করা। একটি গানবোটে ছিলেন ফরিদউদ্দিন আহমেদ। তিনি গানবোটের আরইএন-১। ৬ ডিসেম্বর অভিযান শুরু হয় ভারতের হলদিয়া নৌঘাঁটি থেকে। দুই গানবোটেরই এটি দ্বিতীয় অভিযান। এর নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হটপ্যান্টস’। ৭ ডিসেম্বর রায়মঙ্গল নদী অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে গানবোটের মাস্তুলে পতাকা ওড়ানো হয়। ৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আকরাম পয়েন্টে পৌঁছে গানবোট দুটি রাতযাপন করে। এর মধ্যে মিত্রবাহিনীর দুটি জলযানও (গানবোট আইএনএস ‘প্যানভেল’ ও প্যাট্রোল ক্রাফট ‘চিত্রাঙ্গদা’) তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ১০ ডিসেম্বর ভোরে রণতরিগুলো নোঙর তুলে মংলার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। অভিযানের কমান্ডার মিত্রবাহিনীর মণীন্দ্রনাথ রায় সামন্ত (এম এন সামন্ত)। তিনি প্যানভেলের অধিনায়ক। রণতরিগুলো কোনো বাধা ছাড়াই সকাল সাড়ে সাতটায় মংলায় পৌঁছায়। ফরিদউদ্দিন আহমেদ ও তার সহযোদ্ধারা রণতরি থেকে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে নেমে মংলা হারবার ও কাস্টমস অফিস থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা তোলেন। সকাল নয়টায় শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। সামনে প্যানভেল, মাঝে পলাশ, শেষে পদ্মা। চিত্রাঙ্গদা মংলায় থেকে যায়। প্যানভেল সামনে থাকার কারণ, সেটি অত্যাধুনিক ও মজবুত। বেলা সাড়ে ১১টা। এমন সময় আকাশে দেখা গেল তিনটি জঙ্গিবিমান। শত্রুবিমান মনে করে মুক্তিবাহিনীর গানবোট থেকে নৌমুক্তিযোদ্ধারা বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে উদ্যত হন। কিন্তু কমান্ডার এম এন সামন্ত ওয়্যারলেসে জানান ওগুলো ভারতীয় বিমান। তিনি গুলি করতে বারণ করেন। এরপর বিমানগুলো কিছুটা নিচে নেমে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে যায়। তারপর হঠাৎ ঘুরে এসে বোমাবর্ষণ করে পদ্মার ওপর। পরক্ষণেই পলাশে। ভারতীয় বিমান মুক্তিবাহিনীর রণতরিকে পাকিস্তানি রণতরি মনে করে উপর্যুপরি বোমাবর্ষণ করতে থাকে। যদিও গানবোটগুলো মুক্তি বা মিত্রবাহিনীর কি না তা শনাক্তের জন্য ছাদে হলুদ কাপড় বিছানো ছিল। এ সময় প্যানভেল অনেক এগিয়ে। ওই জাহাজে ভারতীয় বিমান বোমা বর্ষণ করেনি। বোমার আঘাতে দুই গানবোটেই আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হন ফরিদউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন। বিপদ আন্দাজ করে অনেকে আগেই গানবোট থেকে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তারা বেশির ভাগ অক্ষত ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যাঁরা রণতরিতে ছিলেন তারা হয় শহীদ, নয়তো মারাত্মকভাবে আহত হন। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়া নৌমুক্তিযোদ্ধারা সাঁতার কেটে নদীর পাড়ে পৌঁছালে অনেকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। দুই-তিনজনকে তারা হত্যা করে। বাকিদের নির্যাতনের পর জেলে পাঠায়। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৮-০৭-২০১২"। ২০২০-০২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৯৫। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.