প্রোস্টেট ক্যান্সার

পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সারকেই প্রস্টেট ক্যান্সার বলে। পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

প্রোস্টেট ক্যান্সার
প্রকারভেদ ও বহিঃস্থ উৎসসমূহ
আইসিডি-১০C৬১
আইসিডি-১৮৫
OMIM176807
রোগ তথ্যকেন্দ্র10780
MedlinePlus000380
eMedicineradio/574

প্রস্টেট গ্রন্থি

শুধুমাত্র পুরুষদেরই প্রস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। এর আকার অনেকটা কাজুবাদামের সমান। মুত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মুত্রনালী বের হয়েছে সেটির চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটি বিদ্যমান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের জন্য কিছুটা তরল পদার্থ তৈরি করা। যৌনকর্মের সময় যে বীর্য স্খলিত হয় সেটি আসলে শুক্রাণু এবং এই তরল পদার্থের মিশ্রণ।

প্রস্টেট সমস্যা

কোনো কারণে যদি প্রস্টেট বড় হয়ে যায় তাহলে মুত্রনালীর মুখ সংকুচিত হয়ে আসে। ফলে মুত্র বের হতে সমস্যা হয়। সাধারণত প্রস্টেটর তিন ধরনের সমস্যা দেখা যায়: সাধারণ প্রসারন (BPH), প্রস্টেটের প্রদাহ (একে প্রস্টাইটিস-ও বলে) এবং প্রস্টেট ক্যান্সার। এই সবগুলোর ক্ষেত্রেই সাধারণত একইরকম লক্ষণ দেখা যায়:

  • ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে রাতের বেলায়।
  • প্রস্রাবের প্রচন্ড বেগ পাওয়া, এমনকি মাঝেমাঝে বাথরুমে যাওয়ার আগেই প্রস্রাব করে ফেলা।
  • প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া।
  • প্রস্রাব করতে প্রচুর সময় লাগে।
  • প্রস্রাবে বেগ থাকে না।
  • প্রস্রাব করার পরো মুত্রথলিতে প্রস্রাব রয়েছে এমন অনুভব হওয়া।
  • 'ইরেকটাইল ডিসফাংশন' বা লিঙ্গ উত্থান না হওয়া

এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ মাঝে মাঝে দেখা যায়:

  • প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা হওয়া।
  • বীর্যপাতের সময় যন্ত্রণা হওয়া।
  • অন্ডকোষে ব্যাথা।

এই লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর এক বা একাধিকটি যদি আপনার মধ্যে দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে যাতে করে কি কারণে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেটা নির্ধারন করা যায়।

প্রস্টেট ক্যান্সার

পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সার খুবই সাধারণ। প্রস্টেট গ্রন্থির মধ্যে কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে শুরু করে তখনই ক্যান্সার হতে পারে। সাধারণত ৫০ বছরের পর পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর চাইতে কম বয়সেও প্রস্টেট ক্যান্সার হতে পারে, কিন্তু সেটা সচরাচর দেখা যায় না। বয়স যতো বাড়তে থাকে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততোই বেড়ে যায়। পরিবারের কারো যদি (ভাই কিংবা বাবার) প্রস্টেট ক্যান্সার থাকে তাহলেও ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।

প্রস্টেট ক্যান্সার হলে আগে যেসব লক্ষণ বলা হয়েছে সেগুলোর সাথে আরো যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  • পিঠের নিচের দিকে ব্যাথা।
  • লিঙ্গোত্থানে সমস্যা।
  • নিতম্ব বা তার আশেপাশে নতুন করে ব্যাথা দেখা দেয়া।
  • বীর্য কিংবা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া - কিন্তু এটা খুবই কম দেখা যায়।

ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য সবগুলো উপসর্গের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কারণ বেশিরভাগ সময়েই প্রস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। প্রস্টেট খুব ছোট একটা অঙ্গ হওয়ায় খুব বড় কোন ধরেনর লক্ষণ বুঝতে পারা যায় না। তাই উপরের উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক যদি দেখা যায় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষার জন্য যাওয়া উচিত।

ডাক্তারি পরীক্ষা

ডাক্তার যদি মনে করেন যে আপনার প্রস্টেট সমস্যা থাকতে পারে তাহলে আপনার মধ্যে কি কি লক্ষণ দেখা গেছে সেগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এর সাথে সাথে তিনি কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করতে পারেন। সাধারণত যেসব ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হচ্ছে:

  • রক্ত পরীক্ষা, একে সাধারণত পিএসএ পরীক্ষা বলে।
  • ডিআরই নামে এক ধরনের শরীর পরীক্ষা।
  • রক্ত এবং মুত্র পরীক্ষা।
  • ইউরোফ্লোমেট্রি বা মুত্রের প্রবাহ পরীক্ষা।
  • আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান। এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে আপনি ব্লাডার বা মুত্রথলি কতোটা খালি করতে পারছেন।

পিএসএ টেস্ট

প্রস্টেট গ্লান্ড থেকে পিএসএ নামে একধরনের আমিষ বা প্রোটিন তৈরি হয়, একে পিএসএ (প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন)। রক্তে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পিএসএ থাকে। কিন্তু কোনো সমস্যা দেখা দিলে এই মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ৬০ বছরের একজন পুরুষের রক্তে পিএসএ-র স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৪। এর জন্য কম বয়সীদের রক্তে এর মাত্রা একটু কম, এবং বেশি বয়সীদের রক্তে এর মাত্রা একটু বেশি থাকে।

ডিআরই (ডিজিটাল রেক্টাম এক্সামিনেশন)

পিএসএ টেস্ট করার পর সাধারণত এই পরীক্ষা করা হয়। মলদ্বার দিয়ে আঙ্গুল ঢুকিয়ে ডাক্তার প্রস্টেটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। প্রোস্টেটের ওপর কোন শক্ত জায়গা কিংবা প্রোস্টেটের আকার বড় হয়ে গেছে কিনা সেটাই তিনি বোঝার চেষ্টা করেন। এই পরীক্ষায় কোন ব্যথা অনুভূত হয় না। এই পরীক্ষার ব্যাপারে অনেকেরই বিব্রতভাব থাকলেও পরীক্ষাটার জন্য খুবই অল্প সময় লাগে।

রক্ত এবং মুত্র পরীক্ষা

মুত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ভেতরে সংক্রমনের কোন লক্ষন আছে কিনা সেটা নির্ধারন করার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত পিএসএ পরীক্ষার আগে এই পরীক্ষাটা করা হয়। কারণ মুত্রের সংক্রমনের কারেনও অনেকসময় পিএসএ লেভেল বেড়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে রক্ত পরীক্ষাও জরুরি। কারণ কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটা তখন নিশ্চিত হওয়া যায়।

ইউরোফ্লোমেট্রি

এই পরীক্ষায় একটি যন্ত্রের ভেতরে আপনাকে প্রস্রাব করতে বলা হবে। যন্ত্রটি আপনার প্রস্রাবের গতি পরিমাপ করে। যদি আপনি খুব ধীর গতিতে প্রস্রাব করেন তার কারণ এমনও হতে পারে যে প্রস্টেট আপনার মুত্রনালীকে সংকুচিত করে ফেলেছে।

আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান

আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান থেকে ডাক্তার নিশ্চিত হতে পারেন যে প্রস্টেট আপনার মুত্রথলি বা মুত্রনালীকে আটকে আছে কিনা। প্রস্রাব করার পর মুত্রথলিতে প্রস্রাব রয়ে গেছে কিনা সেটাও বোঝা যায় এই পরীক্ষা থেকে।

তথ্যসূত্র

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.