প্রেমেন্দ্র মিত্র

প্রেমেন্দ্র মিত্র (৪ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ - ৩ মে ১৯৮৮) কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক। বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু[2]

প্রেমেন্দ্র মিত্র
জন্ম৪ সেপ্টেম্বর ১৯০৪
মৃত্যু০৩ মে ১৯৮৮
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯০৪-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৮৮)
পরিচিতির কারণকবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক
দাম্পত্য সঙ্গীবীণা মিত্র
পিতা-মাতাজ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র
সুহাসিনী দেবী[1]
পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার
অকাদেমি পুরস্কার
পদ্মশ্রী
দেশিকোত্তম

জন্ম ও বংশ-পরিচয়

প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে তার পিতার কর্মস্থল বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন৷[3] তার পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার রাজপুরে৷[3] তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের সম্ভ্রান্ত মিত্র বংশের সন্তান৷[1][3] তার পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র এবং তার মাতার নাম সুহাসিনী দেবী৷ খুব অল্প বয়সেই তিনি মাতৃহারা হন৷[1][3]

সাহিত্যকর্ম

প্রেমেন্দ্র মিত্র এক সময় কলকাতার ২৮ নম্বর গোবিন্দ ঘোষাল লেনের মেসবাড়িতে বাস করতেন৷ পরবর্তীকালে পড়াশোনার জন্য তিনি ঢাকাতে থাকতে শুরু করেন৷ একবার ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে এসে ওই মেসবাড়ির ঘরের জানলার ফাঁকে একটি পোস্টকার্ড আবিষ্কার করেন। চিঠিটা পড়তে পড়তে তার মনে দুটো গল্প আসে। সেই রাতেই গল্পদুটো লিখে পরদিন পাঠিয়ে দেন জনপ্রিয় পত্রিকা প্রবাসীতে। ১৯২৪ সালের মার্চে প্রবাসীতে 'শুধু কেরানী' আর এপ্রিল মাসে 'গোপনচারিণী' প্রকাশিত হয়, যদিও সেখানে তার নাম উল্লেখ করা ছিল না। সেই বছরেই কল্লোল পত্রিকায় 'সংক্রান্তি' নামে একটি গল্প বেরোয়। এরপর তার মিছিল(১৯২৮) এবং পাঁক(১৯২৬) নামে দুটি উপন্যাস বেরোয়। পরের বছর বিজলী পত্রিকায় গদ্যছন্দে লেখেন 'আজ এই রাস্তার গান গাইব' কবিতাটি।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রথম কবিতার বই ‌'প্রথমা' প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে। বৈপ্লবিক চেতনাসিক্ত মানবিকতা তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।[4] প্রথম জীবনে তার ছোটোগল্পের তিনটি বই বেরোয় - 'পঞ্চশর', 'বেনামী বন্দর' আর 'পুতুল ও প্রতিমা'। মানুষের সম্পর্কের ভাঙ্গা গড়া, মনের জটিলতা, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যথা বেদনার কথা প্রকাশে প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন স্বকীয়তায় অনন্য।[5]

ঘনাদা ও পরাশর

প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট জনপ্রিয়তম চরিত্র ঘনাদা, গল্পবাগীশ সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস আজো সব বয়েসের পাঠকদের কাছে প্রিয়। তার এই অমর চরিত্র ৭২ নং বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ির বাসিন্দা ঘনাদা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে[6]। এছাড়াও তিনি অনেকগুলি ছোট গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যার মুখ্য চরিত্র পরাশর বর্মা, যে পেশায় গোয়েন্দা হলেও নেশায় কবি। তার সৃষ্ট চরিত্র মামাবাবুকে তিনি বহু এডভেঞ্চার উপন্যাস ও ছোটগল্পে এনেছেন যেগুলি কিশোরদের ভেতর জনপ্রিয় ছিল।[7]

কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য

প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি নিয়মিত কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার বিজ্ঞান সাহিত্য রচনার শুরু ১৯৩০ সালে। রামধনু পত্রিকায় ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য তাকে ছোটদের জন্যে লিখতে অনুরোধ করলে 'পিঁপড়ে পুরাণ' কাহিনীটি লেখেন।[8] এটিই তার প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচনা[5]। 'কুহকের দেশে' গল্পে তার কল্পবিজ্ঞান ও এডভেঞ্চার কাহিনীর নায়ক মামাবাবুর আত্মপ্রকাশ। ১৯৪৮ সালে 'ড্র্যাগনের নিঃশ্বাস' বের হলে মামাবাবু পাঠক মহলে জনপ্রিয় হন। তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প ও উপন্যাসের নাম নিচে দেওয়া হল:

এছাড়া আকাশবাণীর উদ্যোগে লিখিত "সবুজ মানুষ" নামে একটি চার অধ্যায়ের বারোয়ারি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির প্রথম অধ্যায় রচনা করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। অবশিষ্ট তিনটি অধ্যায় লিখেছিলেন অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরীসত্যজিৎ রায়

চলচ্চিত্র জগৎ

পথ বেঁধে দিল, রাজলক্ষ্মী (হিন্দি), নতুন খবর, চুপি চুপি আসে, কালোছায়া, কুয়াশা, হানাবাড়ী, তার পরিচালিত ছবি। এছাড়াও তিনি বহু সিনেমার কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও উপদেষ্টা ছিলেন।

গ্রন্থ তালিকা

কাব্যগ্রন্থ

উপন্যাস

  • পাঁক (প্রকাশ - ১৯২৬)
  • মিছিল
  • উপনয়ন
  • আগামীকাল
  • প্রতিশোধ
  • কুয়াশা
  • পথ ভুলে
  • যখন বাতাসে নেশা
  • হৃদয় দিয়ে গড়া
  • জড়ানো মালা
  • পথের দিশা[9]
  • পা বাড়ালেই রাস্তা
  • হানাবাড়ি
  • মনুদ্বাদশ
  • সূর্য কাঁদলে সোনা
  • বিসর্পিল

ছোট গল্পসমগ্র

  • পঞ্চসর(১৯৩৪)
  • বেনামী বন্দর
  • পুতুল ও প্রতিমা(১৯৩১)
  • মৃত্তিকা(১৯৩৫)
  • অফুরন্ত(১৯৩২)
  • ধুলি ধূসর(১৯৩৮)
  • মহানগর(১৯৩৭)
  • জলপায়রা(১৯৫৭)
  • শ্রেষ্ঠ গল্প
  • নানা রঙে বোনা(১৯৬০)
  • “পুন্নাম”
  • “তেলেনাপোতা আবিষ্কার”
  • নির্বাচিত[9]

নিরুদ্দেশ

পুরস্কার

মৃত্যু

১৯৮৮ সালের ৩ মে পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণে অসুস্থ হয়ে কলকাতায় মারা যান। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়েও তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "নেশা ছিল পালিয়ে যাবার"। আনন্দবাজার পত্রিকা।
  2. অজ্ঞলি বসু সম্পাদিত সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান দ্বিতীয় খণ্ড, চতুর্থ সংস্করণ, তৃতীয় মুদ্রণ জানুয়ারি,২০১৯,পৃষ্ঠা ২৪০, সাহিত্য সংসদ,কলকাতা প্রকাশিত আইএসবিএন  ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  3. "প্রেমেন্দ্র মিত্রের স্কুলশিক্ষা হয়েছিল নলহাটিতে"। আনন্দবাজার পত্রিকা।
  4. "banglapedia Bangla Literature"। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১৩
  5. প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১০)। কল্পবিজ্ঞান সমগ্র। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। আইএসবিএন 978-81-295-1066-2।
  6. ghanada-samagra v.1 introduction by surajit dAsgupta p.5
  7. প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১০)। মামাবাবু সমগ্র। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৭, ৮।
  8. Jit, Dr Atanu (২০২২-০২-০২)। ঘনাদা: ছকভাঙা বাঙালির গল্প। Saptarshi Prakashan।
  9. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২৩৩।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.