প্রার্থনা সমাজ

ভারতেবোম্বাইতে (বর্তমান মুম্বই) প্রার্থনা সমাজ (সংস্কৃতে प्रार्थना समाज‌‌) নামে পূর্ববর্তী সংস্কার আন্দোলনগুলিকে ভিত্তি করে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সাধারণ মানুষকে একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী করানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে যখন কেশবচন্দ্র সেন মহারাষ্ট্রে যান, তখন দাদোবা পান্ডুরং এবং তার ভাই আত্মারাম পান্ডুরং প্রার্থনা সমাজ স্থাপিত করেন। মহাদেব গোবিন্দ রানাডে এর সঙ্গে যুক্ত হলে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রধান সংস্কারকরা ছিলেন বুদ্ধিজীবী যারা হিন্দুদের সমাজব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। প্রখ্যাত তেলুগু সংস্কারক ও লেখক বীরেশলিঙ্গম পান্তুলু (যাঁকে দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর বলে অভিহিত করা হয়) এটি দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে দেন ।

১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রার্থনা সমাজ মন্দির
প্রার্থনা সমাজের সদস্যগণ

ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের আন্দোলন হিসাবে মহারাষ্ট্রে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে এর সাদৃশ্য ছিল। মুম্বইয়ের প্রার্থনা সমাজের পূর্বসূরী ছিল পরমহংস সভা। মুম্বইয়ের রাম বালকৃষ্ণ জয়কর এবং অন্যরা উদার ধারণাগুলি প্রচারের জন্য একটি গোপন সমিতি তৈরি করেছিল, যা পরমহংস সভা নামে পরিচিত। শক্তিশালী এবং গোঁড়া মানুষদের ক্রোধ এড়ানোর জন্য এটিকে গোপন রাখা হয়েছিল।

ধর্মীয় সংস্কার

সমসাময়িক বাংলার ব্রাহ্মসমাজ, যুক্তিবাদী বা আস্তিক বিশ্বাস এবং সামাজিক সংস্কার এর সঙ্গে বিবেচনা করলে বোঝা যায়, প্রার্থনা সমাজ মারাঠি সন্ত মতবাদী নামদেব, তুকারামদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের অনুসারী ছিল । ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতারা প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থসহ অনেক বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধর্ম পরীক্ষা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে অমোঘ বা দৈব হিসাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। যদিও প্রার্থনা সমাজের অনুগামীরা ছিল আস্তিক, তারা বেদকে চূড়ান্ত বা অমোঘ বলে গণ্য করেননি। তাঁরা পুরাতন মারাঠি "কবি-সন্তগণ"-এর স্তবগুলি তাঁদের প্রার্থনায় ব্যবহার করেছিলেন।[1] তাদের ধারণাগুলি দক্ষিণ মহারাষ্ট্রে ত্রয়োদশ শতাব্দীর বৈষ্ণব ভক্তি আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিট্টলর [2] ভক্তিমূলক কবিতাগুলির সন্ধান দেয়। [3] মারাঠি কবিরা মুঘলদের প্রতিরোধের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন । তবে, ধর্মীয় উদ্বেগের বাইরে, প্রার্থনা সমাজের প্রাথমিক দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কারের দিকে।

সমাজ সংস্কার

প্রার্থনা সমাজ সমকালীন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে সম্পর্কের সমালোচনা করেছিল এবং ইতোমধ্যে ব্রিটিশ সরকারের শুরু করা রাজনৈতিক পরিবর্তনের তুলনায় সমাজ সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। তাদের ব্যাপক সংস্কার আন্দোলনগুলির মধ্যে ছিল পশ্চিম ভারতে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং সামাজিক সংস্কারের অনেক চিত্তাকর্ষক প্রকল্পকে, নারী ও পিছিয়েপড়া শ্রেণির উন্নতি, বর্ণ বিভাজনের অবসান, বাল্যবিবাহ এবং শিশুহত্যা, মহিলাদের শিক্ষার সুযোগ, এবং বিধবা পুনর্বিবাহ। এর সাফল্য পরিচালিত করেছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত রামকৃষ্ণ গোপাল ভান্ডারকর, আত্মরাম পান্ডুরং, নারায়ণ চন্ডবারকর, এবং মহাদেব গোবিন্দ রানাডে । রানাডে জোর দিয়ে বলেছিলেন,

আরো দেখুন

সাহিত্য

  • সুরেশ কে শর্মা এবং ঊষা শর্মা, Cultural and Religious Heritage of India (ভারতের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য) ,অষ্টম খণ্ড:Cultural and Religious Reform Movements (সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন), নিউ দিল্লি, মিত্তাল, (২০০৪) আইএসবিএন ৮১-৭০৯৯-৯৫৫-৩ ।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.