প্রার্থনার পতাকা

প্রার্থনার পতাকা হলো চার কোণা আকৃতির এক টুকরা রঙিন কাপড়। হিমালয় পর্বতমালার বিভিন্ন উচ্চতায় এই কাপড়গুলো পতাকার মতো করে ওড়ানো হয় যেন পর্বতের চারিদিকের গ্রামাঞ্চলে ঈশ্বরের করুণা সবসময় থাকে। ধারণা করা হয় বন ধর্মে এই পতাকার সূচনা।[1] বন ধর্মে, বন ধর্মের বিশ্বাসী মূল রঙের পতাকাগুলো তিব্বতে ব্যবহার করে।[2] ঐতিহ্যগতভাবে এই পতাকাগুলোতে কাঠের ব্লক ছাপা দিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য এবং ছবি ছাপানো হয়।

লেহের দুইটি পর্বতের শীর্ষ সংযুক্ত করা হয়েছে প্রার্থনার পতাকা দিয়ে।

ইতিহাস

সারচুতে প্রার্থনা পতাকা

মূলত নেপালের সূত্র কাপড়ের ব্যানারের মতো লেখা হতো, যা পরে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রার্থনা পতাকা হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে।[3] প্রচলিত মতে, গৌতম বুদ্ধের মাধ্যমে এই প্রার্থনা পতাকার সূত্রপাত হয়। তার প্রার্থনার বাণী অশুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় পতাকায় দেবরা ব্যবহার করতো।[4] প্রচলিত মতানুসারে ভারতীয় ভিক্ষু এই স্বর্গীয় পতাকা অহিংসার প্রতি নিজের সংকল্পের প্রতীকস্বরূপ এই পতাকা বহন করতো।[5] এই জ্ঞান তিব্বতে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রবেশ করে এবং বর্তমানে প্রচলিত প্রার্থনা পতাকাগুলো ১০৪০ খ্রিষ্টাব্দে প্রচলন শুরু হয়। ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু অতীশ দীপঙ্কর (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ) তিব্বত ও নেপালের কাপড়ের পতাকায় ধর্মীয় বাণী প্রচারের আচার ভারতবর্ষে প্রবর্তন করেন।

প্রার্থনা পতাকায় বিভিন্ন বক্তব্য ছাপা থাকে।
নেপালের পাহাড়ী পথে প্রার্থনা পতাকা। 

বর্ণ ও বিন্যাস

নেপালে কাঠমাণ্ডুতে প্রার্থনা পতাকা। 

ঐতিহ্যগতভাবে প্রার্থনা পতাকা পাঁচটি রঙের এক সেটে পাওয়া যায়। একেকটি পতাকা একেকটি নির্দিষ্ট রঙের হয়ে থাকে। বাম থেকে ডানে একে নীল, সাদা, লাল, সবুজ এবং হলুদ রঙের পতাকা সুবিন্যস্ত থাকে। এই পাঁচ রঙ দিয়ে পাচটি উপাদান এবং পাঁচ খাঁটি আলো প্রকাশ করা হয়। নীল রঙ দিয়ে আকাশ ও মহাশূন্য, সাদা বর্ণ দিয়ে বায়ু, লা দিয়ে আগুন, সবুজ রঙ দিয়ে পানি এবং হলুদ রঙ দিয়ে ভূমি বোঝানো হয়। এই পাঁচ উপাদানের সঠিক সমন্বয়ে সুস্বাস্থ্য লব্ধি হয় বলে ঐতিহ্যবাহী তিব্ব্তীয় চিকিতসা পদ্ধতিতে বর্ণিত আছে।

পতাকা নিয়ে প্রচলিত সংস্কার

একটি প্রচলিত সাধারণ ধারণা এই পতাকার মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা পৌঁছে দেয়া যায়; যা একটি ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে, প্রার্থনা পতাকায় লিপিবদ্ধ ধর্মীয় বাণীর প্রভাব বাতাসে আশেপাশের অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়বে বলেই তিব্বতের জনগণের বিশ্বাস।

পতাকা উড্ডায়নের নিয়ম ও সময়

কারো কারো মতে, জ্যোতির্বিদ্যা মতে কিছু নির্দিষ্ট দিনে এই পতাকাগুলো ওড়ানোর উচিত নয়। এর ফলে পতাকাগুলো ঋণাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। পতাকার জন্য সেরা সময় হলো সূর্যোজ্জ্বল বায়ুপ্রবাহমান সকালে এই পতাকাগুলো ওড়ানোর জন্য সঠিক সময়।

তিব্বতের নতুন বছর শুরুর দিনে পুরনো প্রার্থনার পতাকা নতুন প্রার্থনার পতাকা দিয়ে স্থানান্তর করা হয়।

আরও দেখুন

টীকা

  1. Barker, page 14
  2. "Radiant Heart: The Prayer Flag Tradition" (পিডিএফ)prayerflags.com। ২০০৬-০৭-১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-২৯
  3. Barker, page 13
  4. Beer, page 60
  5. Wise, page 11-12

তথ্যসূত্র

  • Barker, Dian (2003). Tibetan Prayer Flags. Connections Book Publishing. আইএসবিএন ১-৮৫৯০৬-১০৬-০1-85906-106-0.
  • Beer, Robert (2004). Encyclopedia of Tibetan Symbols and Motifs. Serindia Publications Inc. আইএসবিএন ১-৯৩২৪৭৬-১০-৫1-932476-10-5
  • Wise, Tad (2002). Blessings on the Wind: The Mystery & Meaning of Tibetan Prayer Flags. Chronicle Books. আইএসবিএন ০-৮১১৮-৩৪৩৫-২0-8118-3435-2.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.