প্রথম ধর্ম মাণিক্য
প্রথম ধর্মমাণিক্য পঞ্চদশ শতাব্দীতে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ছিলেন। ত্রিপুরা বংশাবলী অনুসারে তার রাজত্বকাল ছিল ১৪৩১–১৪৬২ খ্রিষ্টাব্দ।[1][2]
প্রথম ধর্মমাণিক্য | |
---|---|
ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা | |
রাজত্ব | ১৪৩১-১৪৬২ |
পূর্বসূরি | মহা মাণিক্যে |
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় প্রতাপ মাণিক্য |
বংশধর | ধন্য মাণিক্য দ্বিতীয় প্রতাপ মাণিক্য |
রাজবংশ | মাণিক্য রাজবংশ |
পিতা | মহা মাণিক্যে |
রাজত্ব
রাজমালা অনুসারে, প্রথম ধর্মমাণিক্য ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা মহামাণিক্যের চারজন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন। যৌবনে তিনি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে দেশ ত্যাগ করে তীর্থভ্রমণে বের হন। কাশীতে অবস্থান করার সময় তিনি পিতার মৃত্যুসংবাদ পান এবং এক কনৌজী ব্রাহ্মণের উপদেশে তাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ত্রিপুরা রাজ্যে ফিরে রাজসিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রথম ধর্মমাণিক্য রাজত্বলাভ করে বঙ্গদেশ আক্রমণ করে গৌড়ের নবাবকে পরাজিত করে সোনারগাঁ অধিকার করেন। ব্রহ্মদেশের শাসক মঘরাজ্য আক্রমণ করলে, ধর্মমাণিক্য মঘরাজকে সহায়তা করে তার রাজ্য ফিরে পেতে সহায়তা করেন।[3]:৬৪-৬৭
ধর্মসাগর
ধর্মমাণিক্য অধুনা কুমিল্লা অঞ্চলে ধর্মসাগর নামে একটি বিশাল জলাধার স্থাপন করেন। যে কনৌজী ব্রাহ্মণের উপদেশে তিনি সন্ন্যাস ত্যাগ করে দেশে ফিরে আসেন, ধর্মসাগরের তীরে তাকে তিনি জমি প্রদান করে প্রতিষ্ঠা করেন।[3]:৬৪-৬৬ এই রাজার ১৩৮০ শকাব্দের (১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) একটি তাম্রশাসন পাওয়া গেছে[4][5], যাতে তার পিতা হিসাবে রাজা মহামাণিক্যের নাম উল্লেখ করা আছে; এই তাম্রশাসন দিয়ে তিনি ধর্মসাগর দীঘি উৎসর্গ করেন।[6]
“চন্দ্রবংশোদ্ভবঃ স্বাপ মহামাণিক্যজঃ সুধীঃ।
শ্রীশ্রীমদ্ধর্ম্মমাণিক্য ভূপশ্চন্দ্র কলোদ্ভবঃ॥
শাকে শূন্যাষ্ট বিশ্বাব্দে বর্ষে সোমদিনে তিথৌ।
ত্রয়োদশ্যাং সিতেপক্ষে মেষে সূর্য্যস্য সংক্রমে॥
কৌতুকাদি দ্বিজাগ্র্যেষু পূজিতেষু চ চাষ্টসু।
ভূমিং দদৌ শস্যপূর্ণাং দ্রোণ বিংশ নবাধিকাং॥
জলাশয়ং দ্বিজায়ে মং ধর্ম্মসাগরমাখ্যয়া।
সভূমি ফল বৃক্ষাদি ভূষিতং দত্তবানহং॥
মমবংশ পরিক্ষীণে যঃ কশ্চিদ্ভূপতির্ভবেৎ।
তস্য দাসস্য দাসোঽহং ব্রহ্মবৃত্তিং ন লোপয়ৎ॥”
মর্ম:— চন্দ্রবংশোদ্ভব মহামাণিক্যের সুধীপুত্র, শশধর সদৃশ শ্রীশ্রীমান্ ধর্মমাণিক্য, ১৩৮০ শকের মেষ সংক্রমণে (চৈত্র মাসের শেষ তারিখে) সোমবার, শুক্লাত্রয়োদশী তিথিতে কৌতুকাদি অষ্ট বিপ্রকে শস্যসমন্বিত এবং ফল ও বৃক্ষাদি পূর্ণ ঊনত্রিশ দ্রোণ ভূমি ও ধর্মসাগর নামে জলাশয় দান করিলেন। আমার বংশ বিলুপ্ত হইলে যদি এই রাজ্য অন্য কোন ভূপতির হস্তগত হয়, তিনি এই ব্রহ্মবৃত্তি লোপ না করিলে, আমি তাঁহার দাসানুদাস হইব।[7]
রাজমালা
ধর্মমাণিক্যের পৃষ্ঠপোষকতায় ত্রিপুরার রাজপুরোহিত বা চন্তাই দুর্লভেন্দ্রনারায়ণের কাছে মৌখিক পরম্পরায় ত্রিপুরী ভাষায় প্রচলিত আখ্যান শুনে বাণেশ্বর চক্রবর্তী ও শুক্রেশ্বর চক্রবর্তী নামক দুই ব্রাহ্মণ পণ্ডিত রাজমালা নামক একটি বাংলা পদ্য রচনা করেন[3]:৬৮, যেখানে পৌরাণিক রাজা দৈত্য থেকে শুরু করে মহামাণিক্য পর্যন্ত ত্রিপুরার রাজবংশের কাহিনী বর্ণিত হয়। আনুমানিক ১৪৩১ থেকে ১৪৬২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই গ্রন্থ রচিত হয়।
তথ্যসূত্র
- Marriage and Customs of Tribes of India (১৯৯৮), জে. পি. সিংহ রাণা, ২১১ পৃঃ
- Encyclopaedia of North-East India (২০০৬), T. Raatan, ১৪৫ পৃঃ
- চক্রবর্তী, ভূপেন্দ্রচন্দ্র (১৯৪৭) [১৯৪১]। "ধর্ম্মমাণিক্য ও রাজমালা"। রাজমালা (দ্বিতীয় সংস্করণ)। টিচার্স এণ্ড কোং, আগরতলা, ত্রিপুরা।
- Marriage and Customs of Tribes of India (১৯৯৮), জে. পি. সিংহ রাণা, ২১০ পৃঃ
- Some Epigraphical Records of the Medieval Period from Eastern India (১৯৭৯), দীনেশচন্দ্র সরকার, ৯২ পৃঃ
- ত্রিপুরার স্মৃতি (১৯২৭), সমরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মণ, ২৯ পৃঃ
- শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর), কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত, ৯৩ পৃঃ
প্রথম ধর্ম মাণিক্য মাণিক্য রাজবংশ | ||
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মহামাণিক্য |
ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ১৪৩০-১৪৬২ |
উত্তরসূরী দ্বিতীয় প্রতাপমাণিক্য |