পৌর এলাকা

পৌর এলাকা বা নগরায়িত এলাকা বলতে উচ্চ জনঘনত্ব ও উচ্চ পরিমাণের নির্মিত পরিবেশ অবকাঠামোবিশিষ্ট মনুষ্য বসতিকে বোঝায়। নগরায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৌর এলাকাগুলির সৃষ্টি হয়। এগুলিকে পৌর গঠনতত্ত্বে শহর, নগর, নগর সমবায় বা উপশহর, ইত্যাদি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। পৌরবিদ্যায় "পৌর এলাকা" পরিভাষাটিকে গ্রামীণ এলাকা-র বিপরীত অর্থে ব্যবহার করা হয়। আবার পৌর সমাজবিজ্ঞান বা পৌর নৃবিজ্ঞান ক্ষেত্রে এটিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধারণাটির বিপরীত অর্থে ব্যবহার করা হয়।

জাপানের বৃহত্তর টোকিও এলাকা বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল পৌর এলাকা, যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ লোকের বাস।

১৯৫০ সালে বিশ্বের নাগরিক এলাকাবাসী জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪ কোটি ৬০ লক্ষ। ২০০৯ সালে নাগরিক এলাকায় বাসকারী মানুষের সংখ্যা (৩৪২ কোটি) ইতিহাস প্রথমবারের মত গ্রামীণ এলাকাতে বাসকারী মানুষের সংখ্যা (৩৪১ কোটি) ছাড়িয়ে যায়। এই সময় থেকেই বিশ্ব অপেক্ষাকৃত বেশি পৌর এবং কম গ্রামীণ চরিত্রের অধিকারী।[1] তখন থেকেই বিশ্বে নাগরিক এলাকায় বাস করা লোকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়।[2] ২০১৪ সালে পৃথিবীতে বাসকারী ৭২০ কোটি মানুষের মধ্যে[3] ৩৯০ কোটি পৌর এলাকায় বাস করত। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের জনংখ্যা উপবিভাগ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৫০ সাল নাগাদ শহরবাসীদের সংখ্যা ৬৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এই বৃদ্ধির ৩৭%-ই আসবে তিনটি মাত্র দেশ থেকে; এগুলি হল চীন, ভারতনাইজেরিয়া[4]

পৌর এলাকার সাথে মহানগর এলাকার পার্থক্য হচ্ছে দ্বিতীয়টিতে কেবল পৌর এলাকাই অন্তর্ভুক্ত থাকে না, সেই সাথে একে ঘিরে থাকা বেশ কিছু উপগ্রহ শহর এবং এই দুইয়ের অন্তর্বর্তী গ্রামীণ এলাকাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। গ্রামীণ এলাকা ও উপগ্রহ শহরগুলি আর্থসামাজিকভাবে একটি পৌরকেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত থাকে। পৌরকেন্দ্রটি মহানগর এলাকাটির প্রধান শ্রমবাজার বা কর্মস্থলের ভূমিকা পালন করে এবং পৌরকেন্দ্রের বাইরের জনগণ চাকুরি করার জন্য কর্মস্থলে যাতায়াত করে থাকে।

সংজ্ঞা

ইউরোপীয় দেশগুলিতে নগর-প্রকারের জমি ব্যবহারের ভিত্তিতে শহুরে এলাকা সংজ্ঞায়িত করে, সাধারণত ২০০ মিটার (২২০ গজ) এর বেশি কোনও ফাঁকা ছাড় দেয় না এবং শহর অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণের জন্য আদমশুমারি ব্লকের পরিবর্তে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে। স্বল্প-উন্নত দেশগুলিতে জমি ব্যবহার এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াও, আরও একটি বিষয় প্রয়োজনীয় যে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ, সাধারণত ৭৫% কৃষিকাজ এবং/বা মাছ শিকারের (কখনও কখনও এটি) সাথে নিয়োজিত থাকে না।

পাকিস্তান

জনগণনা ফলাফল অনুসারে পাকিস্তানে যদি কোন জায়গায় এক লক্ষ বা তার বেশি বাসিন্দা থাকে তবে তা একটি প্রধান শহর এবং পৌরসভা এলাকা। শহর সংলগ্ন সেনানিবাসগুলি এর সাথে অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তানে নগরায়ন স্বাধীনতার সময় থেকে বেড়েছে এবং এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। দক্ষিণ পাকিস্তানের জনসংখ্যার অধিকাংশই সিন্ধু নদী বরাবর বসবাস করে। করাচী পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল শহর।[5] দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশিরভাগ জনসংখ্যা লাহোর, ফয়সালাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, ইসলামাবাদ, গুজরানওয়ালা, সিয়ালকোট, গুজরাত, জেলম, সরগোধ, শেখুপুর, নওশরা, মর্দন ও পেশ‌ওয়ার শহরগুলির মধ্যে বসবাস করে। ১৯৯০-২০০৮ সালে পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৩৬% শহরাঞ্চলে বসবাস করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নগরায়ীত জাতি।[6]

বাংলাদেশ

২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে বাংলাদেশে ৫,০০০ জন বসবাসকারী উপজেলা সদর বা বাজার এলাকাকে গ্রাম্য শহর এবং ৫০০০-১০০,০০০ জন বসবাসকারী পৌরসভা এলাকাকে শহর বলা যায় এবং ১ লক্ষ বা তার বেশি জনবহুল এলাকাকে বড় শহর বলে। বাংলাদেশে ১টি অতিমহানগরী, ৪৩টি বড় শহর ও ৪৬২টি শহুরে এলাকা রয়েছে। সবচেয়ে বড় ও জনবহুল শহর ঢাকা এবং দ্রুত বর্ধনশীল নগর হল চট্টগ্রাম

ভারত

২০১১ সালের ভারতীয় জনগণনার জন্য একটি শহুরে এলাকার সংজ্ঞা ছিল, একটি জায়গা সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪০০ জন (প্রতি বর্গমাইলে ১০০০ জন) বা তার চেয়ে বেশি জনঘনত্বের কম পক্ষে ৫০০০ জন লোক বসবাস করে এবং বসবাসকারী পুরুষ জনসংখ্যার ৭৫% অকৃষিকাজে নিয়োজিত আছে। একটি পৌর কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বা বিজ্ঞপ্তি নগরীর এলাকা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, এমন স্থানকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শহুরে এলাকা বিবেচনা করা হয়।[7] ২০১১ ভারতীয় আদমশুমারিতে "নগর সমষ্টি" শব্দের সংজ্ঞা দিয়েছে একটি মূল শহরকে সমন্বিত একটি নগর অঞ্চল হিসাবে এর "বিস্তৃতি" (সংলগ্ন শহরতলির)।[8]

যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই শ্রেণীর শহুরে এলাকা রয়েছে। একটি এলাকায় ৫০,০০০ বা তার বেশি লোকের বসবাস থাকলে তাকে শহুরে এলাকা নির্দেশ করে। ৫০,০০০ এর কম শহুরে এলাকাকে শহুরে ক্লাস্টার বলা হয়। ১৯৫০ সালের আদমশুমারির সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শহুরে এলাকা চিহ্নিত বা অঙ্কিত করা হয়, যখন ২০০০ সালের আদমশুমারিতে শহুরে ক্লাস্টার যোগ করা হয়। ১০,০০০ এর বেশি লোক রয়েছে এমন ২৩৭২টি শহুরে এলাকা এবং শহুরে ক্লাস্টার রয়েছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "United Nations Population Division – Department of Economic and Social Affairs"
  2. "Urban population growth"। World Health Organization।
  3. "Current world population"। United Nations, Department of Economic and Social Affairs। ২ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৪
  4. "City population to reach 6.4bn by 2050"Herald Globe। ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৪
  5. "The Urban Frontier—Karachi"। National Public Radio। ২ জুন ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০০৮
  6. Jason Burke (১৭ আগস্ট ২০০৮)। "Pakistan looks to life without the general"The Guardian। London। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১০
  7. "Provisional Population Totals Urban Agglomerations and Cities, Data Highlights" (পিডিএফ)। Census of India 2011। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
  8. "Urban Agglomeration"Arthapedia (ইংরেজি ভাষায়)। India Economic Service। ১০ এপ্রিল ২০১৫।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.