পৃথিবীর আহ্নিক গতি
পৃথিবীর নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘূর্ণনকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বলে। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে। মুক্তি বেগ ১১.২ km/s
ঘূর্ণনকাল
আপাত সৌর দিবস
সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনের সময়কে আপাত সৌর দিবস বলে। এই সময় পৃথিবীর আক্ষিক গতির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় পৃথিবীর কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ও নতির পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ও নতি হাজার বছর ধরে পরিবর্তিত হয় বলে পৃথিবীর আপাত সৌর দিবসও সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণতঃ বছরের দুইটি সময়ে আপাত সৌর দিবস গড় সৌর দিবস অপেক্ষা দীর্ঘতর এবং অপর দুইটি সময়ে হ্রস্বতর হয়। [n 1] সূর্য ক্রান্তিবৃত্তের মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোণে পরিক্রমণ করলে অনুসূরের নিকটে আপাত সৌর দিবস ১০ সেকেন্ডের মতো দীর্ঘতর হয়, অপরদিকে অপসূরের নিকটে আপাত সৌর দিবস ১০ সেকেন্ডের মতো হ্রস্বতর হয়। অয়নের নিকটবর্তী অঞ্চলে আপাত সৌর দিবস ২০ সেকেন্ড দীর্ঘতর এবং বিষুবের নিকটবর্তী অঞ্চলে ২০ সেকেন্ড হ্রস্বতর হয়। অনুসূর ও অয়ন এই দুই ধরনের দশা যৌথভাবে আপাত সৌর দিবসকে ২২ ডিসেম্বরের নিকটে ৩০ সেকেন্ড দীর্ঘতর করে। অপরদিকে ১৯শে জুনের নিকটে অয়নের প্রভাব অপসূর দ্বারা বিলোপিত হলে আপাত সৌর দিবস মাত্র ১৩ সেকেন্ড দীর্ঘতর হয়। বিষুবের প্রভাবে আপাত সৌর দিবস ২৬ মার্চ ১৮ সেকেন্ড ও ১৬ সেপ্টেম্বর ২১ সেকেন্ড কমে যায়। [1][2][3]
গড় সৌর দিবস
একবছরে মোট আপাত সৌর দিবসের গড়কে গড় সৌর দিবস বলা হয়। গড় সৌর দিবস ৮৬,৪০০ গড় সৌর সেকেন্ড নিয়ে তৈরি। পূর্বের চেয়ে বর্তমানে এই সেকেন্ড মানক সেকেন্ড অপেক্ষা আরো দীর্ঘতর হয়েছে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে গড় সৌর দিবস ৮৬,৪০০ মানক সেকেন্ড অপেক্ষা ০-২ মিলিসেকেন্ড দীর্ঘতর হয়েছে।
নক্ষত্র দিবস
স্থির নক্ষত্রের সাপেক্ষে নিজের অক্ষের চারিদিকে পৃথিবীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনের সময়কালকে স্থির নক্ষত্র দিবস বলা হয়। এর মান ৮৬,১৬৪.০৯৮৯০৩৬৯১ গড় সৌর সেকেন্ড বা ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯৮৯০৩৬৯১ গড় সৌর দিন। [4] চলায়মান নক্ষত্রের সাপেক্ষে পৃথিবীর একবার পূর্ণ ঘূর্ণনের সময়কালের মান ৮৬,১৬৪.০৯০৫৩০৮৩২৮৮ গড় সৌর সেকেন্ড বা ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯০৫৩০৮৩২৮৮ গড় সৌর দিন। [4] এই সময়কাল স্থির নক্ষত্র দিবস অপেক্ষা ৮.৪ মিলিসেকেন্ড হ্রস্ব।[5] এই দুই সময়কাল গড় সৌর দিবস অপেক্ষা ৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড হ্রস্ব।
কৌণিক বেগ
পৃথিবীর কৌণিক বেগ (৭.২৯২১১৫০ ± ০.০০০০০০১) ×১০−৫ রেডিয়ান/মানক সেকেন্ড। [n 2] এই মানকে পৃথিবীর বিষুব ব্যাসার্ধ ৬,৩৭৮,১৩৭ মিটার দিয়ে গুণ করলে পৃথিবীর বিষুব গতিবেগ হয় ৪৬৫.১ মিটার/সেকেন্ড বা ১,৬৭৪.৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা। [6] পৃথিবীর ওপর কোন স্থানের অক্ষাংশের কোসাইনের সঙ্গে পৃথিবীর বিষুব গতিবেগ গুণ করলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের স্পর্শক বরাবার গতিবেগ নির্ণয় করা যায়। [7] [n 3]
ঘূর্ণনের পরিবর্তন
পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ স্থির নক্ষত্র ও পৃথিবীপৃষ্ঠের সাপেক্ষে সচল থাকে। সূর্য, চাঁদ ও অন্যন্য মহাজাগতিক বস্তুর মাধ্যাকর্ষণের বাহ্যিক শক্তিতে পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষের পূর্বগামী ঘূর্ণন হয়ে থাকে। লক্ষাধিক বছর ধরে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণনশক্তি ও কৌণিক বেগ খুব ধীর গতিতে কমে চলেছে। অবশ্য পৃথিবী পৃষ্ঠে ২০০৪ ভারত মহাসাগর ভূমিকম্পের মতো বেশ কিছু বড় ঘটনা পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিবেগ তিন মাইক্রোসেকেন্ডের মতো বাড়িয়ে দিয়েছে। [8] হিমযুগের পরবর্তী হিমবাহ পশ্চাদপসরণের দ্বারা পৃথিবীপৃষ্ঠের ভরের বণ্টনের পরিবর্তনের ফলে কৌণিক ভরবেগের নিত্যতার দ্বারা পৃথিবীর ঘূর্ণনের পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। [9]
পাদটীকা
- পৃথিবীর কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.০৪৭ থেকে বেড়ে গেলে এবং অনুসূর যথার্থ বিষুব ও অয়নে অবস্থান করলে, কেবলমাত্র একটি শীর্ষযুক্ত সময়কাল দুইটি শীর্ষযুক্ত অপর সময়কালের সঙ্গে সমতা বজায় রাখে। [1]
- (১৮০°/π রেডিয়ান)×(৮৬,৪০০ সেকেন্ড/গড় সৌর দিবস) = ৩৬০.৯৮৫৬°/গড় সৌর দিবস - এর দ্বারা বোঝা যায়, এক সৌর দিবসে পৃথিবীর ঘূর্ণন স্থির নক্ষত্রের সাপেক্ষে ৩৬০° এর বেশি।[4]
- উদহারণ স্বরূপ, কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র ২৮.৫৯° উত্তরে অবস্থিত,সুতরাং সেই স্থানের স্পর্শক বরাবার গতিবেগ হবে ১৬৭৪.৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা × কোসাইন ২৮.৫৯° = ১৪৭০.২৩ কিলোমিটার/ঘণ্টা[7]
তথ্যসূত্র
- Jean Meeus, Mathematical astronomy morsels (Richmond, Virginia: Willmann-Bell, 1997) 345–6.
- Equation of time in red and true solar day in blue
- The duration of the true solar day
- IERS EOP Useful constants
- Explanatory Supplement to the Astronomical Almanac, ed. P. Kenneth Seidelmann, Mill Valley, Cal., University Science Books, 1992, p.48, আইএসবিএন ০-৯৩৫৭০২-৬৮-৭.
- Arthur N. Cox, ed., Allen's Astrophysical Quantities p.244.
- Butterworth and Palmer। "Speed of the turning of the Earth"। Ask an Astrophysicist। NASA Goddard Spaceflight Center।
- Sumatran earthquake sped up Earth's rotation, Nature, December 30, 2004.
- Wu, P. (১৯৮৪)। "Pleistocene deglaciation and the earth's rotation: a new analysis"। Geophysical Journal of the Royal Astronomical Society। 76 (3): 753–792। ডিওআই:10.1111/j.1365-246X.1984.tb01920.x। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)