পুঁটেকালী মন্দির

পুঁটেকালী মন্দির হল কলকাতার বড়োবাজার অঞ্চলে কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে তারাসুন্দরী পার্কের পাশে অবস্থিত একটি পুরনো কালীমন্দির। মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা তান্ত্রিক মানিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দিরটি চারচালা ও তিনটি চূড়াবিশিষ্ট। চূড়াগুলির উপর চক্র, ত্রিশূল ও পতাকার চিহ্ন আছে। মন্দিরটির তলায় একটি পাতালকক্ষ আছে।[1] মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীমূর্তিটি ছয় ইঞ্চি লম্বা।[2]

পুঁটেকালী মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
অবস্থান
অবস্থানকালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট, বড়োবাজার, কলকাতা
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীমানিকরাম বন্দ্যোপাধ্যায়

নামকরণ

পুঁটেকালী মন্দিরের নামকরণ নিয়ে দুটি মত প্রচলিত আছে। দীপ্তিময় রায়ের মতে, এই মন্দিরের কালীমূর্তিটির উচ্চতা মাত্র ছয় ইঞ্চি। "পুঁটি" অর্থে ছোটো মেয়ে বোঝায়। এত ছোটো মূর্তি বোঝাতেই তাই "পুঁটিকালী" বা "পুঁটেকালী" নামটির প্রচলন হয়েছিল।[1] অন্যমতে, এই মন্দিরের নামকরণের পিছনে একটি কিংবদন্তি গল্প প্রচলিত আছে। প্রতিষ্ঠাতা মানিকরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরপুরুষ তান্ত্রিক খেলারাম বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন হোম করছিলেন। এমন সময় নিকটবর্তী গঙ্গার খাদ থেকে একটি পুঁটিমাছ লাফিয়ে হোমকুণ্ডের মধ্যে পড়ে যায়। খেলারাম অর্ধদগ্ধ মাছটিকে তুলে জলে ফেলে দিতেই সেটি আবার জীবন্ত হয়ে হয়ে ওঠে। সেই থেকে দেবীর নাম হয় "পুঁটিকালী"। পরে কথাটি বিকৃত হয়ে হয় "পুঁটেকালী"।[1][2]

ইতিহাস

জনশ্রুতি অনুসারে, দেববংশীয় ভূস্বামীদের কোনো কর্মচারী কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে নববৃন্দাবন থেকে কালীমূর্তিটি এনে এই অঞ্চলে একটি গোলপাতার মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথম পাকা মন্দির স্থাপিত হয়েছিল ১৫৫৮ খ্রিষ্টাব্দে।[1] সেই সময় মন্দির-সংলগ্ন অঞ্চলটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। ডাকাতেরা এখানে নরবলি দিয়ে স্থানীয় একটি ইঁদারায় নরমুণ্ড জমা করত। কোনো কোনো মতে, দেবী মূর্তি এই ইঁদারা থেকেই পাওয়া যায়। মানিকরাম বন্দ্যোপাধ্যায় তা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। মানিকরাম ছিলেন অধুনা হুগলি জেলার অন্তর্গত ভুরসুট রাজ্যের বাসিন্দা।[1] ব্রিটিশ যুগে রাজপথ নির্মাণের জন্য এই মন্দিরটি ভাঙার চেষ্টা করা হলে মন্দির কর্তৃপক্ষ আদালতের কর্তৃপক্ষ হয়ে মন্দিরটি রক্ষা করেছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে মন্দিরের সংস্কার করা হয়। সেই সময় এটি বর্তমান রূপ পায়।[1]

পূজারীতি

মন্দিরে নিত্যপূজা এবং মাঝে মাঝে মানতপূরণের জন্য ছাগবলি হয়। পূজা হয় তন্ত্রমতে। দীপান্বিতা কালীপূজার রাতে প্রতিমার স্বর্ণবেশ হয়। সেই দিন ভৈরবী পূজা হয়ে থাকে। তার পরদিন কুমারী পূজা ও অন্নকূট উৎসব হয়।[2] এছাড়া প্রতি অমাবস্যায় ছাগবলি হয়। স্থানীয় অবাঙালিরা কালীকে নিরামিষ ভোগও নিবেদন করে।[1] কালীমূর্তির পাশে একটি শ্বেতপাথরের শীতলা মূর্তিও আছে।[1]

সূত্র তালিকা

  1. পশ্চিমবঙ্গের কালী ও কালীক্ষেত্র, দীপ্তিময় রায়, মণ্ডল বুক হাউস, কলকাতা, ১৪১৪ ব., পৃ. ৬২-৬৩
  2. "কয়েকটি অল্প পরিচিত জাগ্রত কালীমন্দিরের কথা", গৌতম বিশ্বাস, সাপ্তাহিক বর্তমান, ২ নভেম্বর, ২০১৩ সংখ্যা, পৃ. ১৪-২২

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.